স্বামী ও স্ত্রীর আদর্শ জীবন

  • Home
  • Bangladesh
  • Feni
  • স্বামী ও স্ত্রীর আদর্শ জীবন

স্বামী ও স্ত্রীর আদর্শ জীবন আল্লাহর দ্বীন সঠিকভাবে প্রচার করাই এ পেইজের মূল উদ্দেশ্য

পুরুষ ও মহিলাদের পোশাক ও হিজাব▬▬◄❖►▬▬▬ইসলাম মানবিক স্বভাবজাত ও সুস্থ বিবেক-বিবেচনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এক পবিত্র জীবন ব্যব...
06/09/2025

পুরুষ ও মহিলাদের পোশাক ও হিজাব
▬▬◄❖►▬▬▬
ইসলাম মানবিক স্বভাবজাত ও সুস্থ বিবেক-বিবেচনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এক পবিত্র জীবন ব্যবস্থার নাম। তাই ইসলাম নারী-পুরুষ উভয়ের পোশাক-পরিচ্ছেদ, সাজসজ্জা, পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাৎ ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছে। মানুষ এ সকল নির্দেশনা মোতাবেক চললে সমাজ থেকে ধর্ষণ, ইভ টিজিং, জিনা-ব্যভিচার, হত্যাকাণ্ড, রক্তপাত এবং ফেতনা-ফ্যাসাদ নি:সন্দেহে কম হবে। আর তা উপেক্ষা করলে এ সকল অন্যায়-অপকর্মের কোনো শেষ থাকবে না। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে বিবাদ-বিশৃঙ্খলা। বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর এসব বিধানকে উপেক্ষা করার ফলে চতুর্দিকে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমীন।।

♻ পুরুষ ও নারীদের পোশাক ও হিজাব বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা:

ইসলাম পুরুষ ও নারী উভয়ের পোশাক ও পর্দা সংক্রান্ত কিছু মূলনীতি নির্ধারণ করে দিয়েছে সেগুলো তাদের উভয়ের জন্য অনুসরণ করা ফরজ। এর ব্যতিক্রম করা মারাত্মক গুনাহের। যেমন:
▪ নারী হোক বা পুরুষ হোক তাদেরকে এমন পোশাক পরিধান করতে হবে যা দ্বারা শরিয়ত নির্ধারিত সতর ঢাকা থাকে।

আর তা হল: পর পুরুষ দেখার সম্ভাবনা থাকলে একজন মহিলা বোরকা বা হিজাব দ্বারা সারা শরীর আবৃত করবে (মুখমণ্ডল ও দুহাতের কব্জি সহ)। পক্ষান্তরে একজন পুরুষ ন্যূনতম নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢাকবে এবং প্রয়োজন ছাড়া খালি গায়ে বাইরে চলাফেরা করবে না। খালি গায়ে চলাফেরা শরিয়তের দৃষ্টিতে অ পছন্দনীয় ও ব্যক্তিত্ব পরিপন্থী কাজ হিসেবে পরিগণিত।

▪ নারী হোক বা পুরুষ হোক তারা এতটা টাইট-ফিট পোশাক পরবে না যে, তাদের শরীরের গোপনাঙ্গগুলো ফুটে উঠে। বরং তারা ঢিলেঢালা পোশাক পরবে।

▪এতটা পাতলা পোশাক পরিধান করা জায়েয নাই যে, পোশাকের ভেতর দিয়ে শরীরের চামড়া পর্যন্ত বুঝা যায়। নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য এ মূলনীতি প্রযোজ্য।

▪ কোনো নারী পুরুষের জন্য নির্ধারিত জামা-কাপড়-জুতা ইত্যাদি পরিধান করবে না। অনুরূপভাবে পুরুষও নারীদের জন্য নির্ধারিত জামা-কাপড়-জুতা ইত্যাদি পরিধান করবে না।

▪ যদি হঠাৎ কোনো পরনারীর উপর দৃষ্টি পতিত হয় তাহলে তৎক্ষণাৎ একজন পুরুষকে চোখ নিচু করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইভাবে কোনো পরপুরুষের দিকে চোখ পড়লে মহিলাদের জন্যও তৎক্ষণাৎ চোখ নিচু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোনো নরীর জন্য কামনা-বাসনার দৃষ্টিতে পরপুরুষের দিকে তাকিয়ে থাকা বৈধ নয়।
আল্লাহু আলাম।
▬▬◄❖►▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

06/09/2025
যুবক-যুবতীরা যিনার নাম দিয়েছে রিলেশনশিপ!? -------- হে মুসলিম ভাই-বোন, আপনাকে হারাম সম্পর্ক [Relationship] থেকে যেকোন উপা...
25/08/2025

যুবক-যুবতীরা যিনার নাম দিয়েছে রিলেশনশিপ!?

-------- হে মুসলিম ভাই-বোন, আপনাকে হারাম সম্পর্ক [Relationship] থেকে যেকোন উপায়ে বের হতে হবে, হোক সেটা কারো মন ভাঙা, সিমকার্ড কিংবা সোস্যাল মিডিয়ার সমস্ত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে নিজেকে পরিবর্তন করতেই হবে, একথায় আপনাকে বের হতেই হবে, এতে যার মন ভাঙার ভাঙ্গুক, হারাম থেকে বের হওয়া ফরজ তাই এমন মন ভাঙাও ফরজ।
-------- আর এই "ভাঙা-ভাঙি" আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
-------- এই "ভাঙা-ভাঙি" জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য।

-------- অশ্লীলতা মানব চরিত্র ধ্বংসের অন্যতম হাতিয়ার। তাই এর নিকটবর্তী হতে কঠিনভাবে নিষেধ করা হয়েছে। মনে রাখবেন, চোখের জিনা হচ্ছে -অশ্লীল কিছু দেখা, কানের জিনা হচ্ছে- অশ্লীল কিছু শোনা, জিহ্বার জিনা হচ্ছে- অশ্লীল ভাষা বলা, হাতের জিনা হচ্ছে- অবৈধ স্পর্শ, পায়ের জিনা হচ্ছে- অশ্লীলতার দিকে পা বাড়ানো। এসবই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যভিচার। কুরআনে কারীম থেকে দুইটি আয়াত উল্লেখ করা হলো,
-------- মহান আল্লাহ বলেন,
‎ وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ
প্রকাশ্য বা গোপন কোন অশ্লীলতার নিকটবর্তী হবে না। [ সূরা আন‘আম: ১৫১ ] অশ্লীলতার চূড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে যেনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া। যা ইসলামে হারাম। এর কাছে যেতেও আল্লাহ নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,
‎وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيْلًا
তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট পথ। [ সূরা বনী ইসরাঈল: ৩২ ]

-------- ভাই-বোনেরা ভালো করে শুনে রাখুন, বিবাহ বহির্ভূত সকল রিলেশনশিপ তার নাম প্রেম-পিরিতি, কিংবা পবিত্র ভালোবাসা নাম দেননা কেন তা সবই যিনা। নাম পবিত্র দিলে কাজটাও পবিত্র হতে হয়, নাম দিবেন পবিত্র আর কাজ করবেন অপবিত্র এটা কিভাবে হয়, বলুন? তাই বলবো তাওবা করে ফিরে আসুন রবের দিকে, আমাদের রব ক্ষমাশীল ---
-------- মহান আল্লাহ বলেন,
‎قُلۡ یٰعِبَادِیَ الَّذِیۡنَ اَسۡرَفُوۡا عَلٰۤی اَنۡفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُوۡا مِنۡ رَّحۡمَۃِ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یَغۡفِرُ الذُّنُوۡبَ جَمِیۡعًا ؕ اِنَّهٗ هُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِیۡمُ
বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সূরা যুমার আয়াত : ৫৩

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, কিছু লোক ছিল, যারা অন্যায় হত্যা করেছিল এবং অনেক করেছিল। আরও কিছু লোক ছিল, যারা ব্যভিচার করেছিল এবং অনেক করেছিল। তারা এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আরজ করল: আপনি যে ধর্মের দাওয়াত দেন, তা তো খুবই উত্তম, কিন্তু চিন্তার বিষয় হল এই যে, আমরা অনেক জঘন্য গোনাহ করে ফেলেছি। আমরা যদি ইসলাম গ্রহণ করি, তবে আমাদের তওবা কবুল হবে কি? এর পরিপ্রেক্ষিতেই আলোচ্য আয়াত অবতীর্ণ হয় ৷ [বুখারী: ৪৮১০, মুসলিম: ১২২]

-------- আপনি কি চান আপনার কৃত পাপ গুনাহগুলো নেকি হয়ে যাক? তাহলে আপনি অন্তর থেকে খাঁটি বিশুদ্ধ তওবা করুন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আপনার পাপগুলোকে নেকী দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন, সুবহানাল্লাহ। "এ এক সুবর্ণ সুযোগ" আর দেরি নয়।
-------- মহান আল্লাহ বলেন,
‎اِلَّا مَنۡ تَابَ وَ اٰمَنَ وَ عَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَاُولٰٓئِكَ یُبَدِّلُ اللّٰهُ سَیِّاٰتِهِمۡ حَسَنٰتٍ ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا
তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে। পরিণামে আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পূণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

এখান হতে বুঝা যায় যে, বিশুদ্ধ তওবা দ্বারা পৃথিবীতে সমস্ত পাপ মোচন হতে পারে; তাতে তা যত বড়ই হোক না কেন। আর সূরা নিসার ৯৩ আয়াতে মু’মিন হত্যার শাস্তি যে জাহান্নাম বলা হয়েছে, তা ঐ পরিস্থিতির ক্ষেত্রে বুঝতে হবে, যখন সে তওবা করবে না; বরং বিনা তওবায় মৃত্যু বরণ করবে। কারণ হাদীসে আছে যে, একশত লোক হত্যাকারীকেও তওবার কারণে মহান আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। (মুসলিম তাওবা অধ্যায়)

-------- আসুন এবার জানি আসল সফল মুসলিম কারা? মনে রাখবেন মনের খেয়াল-খুশী ও প্রবৃত্তির কামনা বাসনা সবসময় সংযত রাখতে হবে এবং শয়তানের হাতে তা ছেড়ে দেওয়া যাবেনা, নিজের আত্মা মনকে সর্বদায় পবিত্র রাখা।
-------- মহান আল্লাহ বলেন,
قَدۡ أَفۡلَحَ مَن زَكَّىٰهَا- وَقَدۡ خَابَ مَن دَسَّىٰهَا
যে তার মনকে পবিত্র করবে, সে হবে সফলকাম এবং যে তা কলুষিত করবে, সেই হবে অসফল। [ সূরা আস-শামস: ৯-১০ ]

-------- নফসের বিরুদ্ধে লড়াই, শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয়ী হতেই হবে, ইনশাআল্লাহ।
আমার সাথে পড়ুন, "আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম" অর্থ, হে আল্লাহ, আপনার কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

-------- আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী, জামাল বিন ইদ্রিস।
-------- দাম্মাম, সৌদি আরব। --------

©

শ্বশুর বাড়ির লোকজন যদি আমাকে মেনে না নেয় তাহলে কী করণীয়?▬▬▬▬✪✪✪▬▬▬▬প্রশ্ন: আমার শ্বশুর বাড়ির লোক যদি আমাকে মেনে না নেয় ত...
23/08/2025

শ্বশুর বাড়ির লোকজন যদি আমাকে মেনে না নেয় তাহলে কী করণীয়?
▬▬▬▬✪✪✪▬▬▬▬
প্রশ্ন: আমার শ্বশুর বাড়ির লোক যদি আমাকে মেনে না নেয় তাহলে আমি কী আমল করলে তাদের মন গলবে? বা কি করলে তাদের মনে দয়া সৃষ্টি হবে এবং আমাকে মেনে নিবে?

উত্তর:

আপনার স্বামী যদি আপনাকে ভালোবাসে এবং আপনার প্রতি ভালো আচরণ করে তাহলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন। আর তার পরিবারের লোকজনের উচিৎ, আপনার স্বামীর পছন্দকে মূল্যায়ন করে আপনাকে মেনে নেয়া। কোন ভাবেই বিনা অপরাধে আপনার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন বা খারাপ আচরণ করা তাদের জন্য বৈধ নয়। এটি নি:সন্দেহে চরম অন্যায় এবং ইসলাম ও সামাজিক উভয় দৃষ্টিতে অগ্রহণযোগ্য।

যাহোক, আপনি যথাসম্ভব ধৈর্যের পরিচয় দিন এবং সবার সাথে উত্তম আচরণ করুন। সেই সাথে আন্তরিক সেবা, সুন্দর আচার-আচরণ ও নরম কথার সৌরভ ছড়িয়ে তাদের মন জয় করার চেষ্টা করুন এবং নিভৃতে তাদের অন্তর পরিবর্তনের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ। হয়ত তিনি এতে তাদের অন্তর পরিবর্তন করে দিবেন।

সব কিছু করার পরও তারা যদি আপনার সাথে অন্যায় আচরণ করে তাহলে আপনার অধিকার আছে, স্বামীর কাছে এর প্রতিকার চাওয়ার। এমনকি আপনি ইচ্ছা করলে তার পরিবার থেকে আলাদা থাকার কথাও বলতে পারেন। কারণ স্বামীর পরিবার কর্তৃক স্ত্রীর উপর কোন ধরণের অন্যায় আচরণ ইসলাম, সামাজিক দৃষ্টিকোণ এবং রাষ্ট্রীয় আইনে অপরাধ।

আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন। আমীন।
🔸🔹🔸🔹🔸🔹🔸
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব

কোনও ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীকে বা কোনও স্ত্রী তার স্বামীকে তার কোনও মাহরামের সাথে বা তার বিশেষ কোনও অঙ্গের সাথে তুলনা করে...
21/08/2025

কোনও ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীকে বা কোনও স্ত্রী তার স্বামীকে তার কোনও মাহরামের সাথে বা তার বিশেষ কোনও অঙ্গের সাথে তুলনা করে তাহলে তার বিধান কী?

কোন স্বামী যদি তার স্ত্রীর শারীরিক গঠন, সৌন্দর্য বা গুণ-বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করার উদ্দেশ্যে বলে যে, তোমার চোখ দেখতে আমার মায়ের মতো, তোমার চেহারা আমার বোনের মত ইত্যাদি অথবা কোন মহিলা তার স্বামীকে বলে, তোমার দেহের গঠন আমার ভাই বা পিতার মত তাহলে এতে কোন সমস্যা নেই। অনুরূপভাবে সম্মান-মর্যাদার ক্ষেত্রে বা বৈশিষ্টগত ভাবে তুমি আমার মা/বাবার অনুরূপ তাহলেও তা যিহারের অন্তর্ভুক্ত নয়। অর্থাৎ হারাম করার নিয়ত না থাকলে যিহার বলে গণ্য হবে না। [আল মুগনি-ইবনে কুদামা]

قال ابن قدامة وإن نوى به الكرامة والتوقير أو أنها مثلها في الكبر، أو الصفة، فليس بظهار,

👉বিস্তারিত পড়ুন:

যিহার: পরিচয়, কাফফারা এবং এ সংক্রান্ত জরুরি বিধি-বিধান
▬▬▬❂◉❂▬▬▬
ইসলামি ফিকহে যিহার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে স্থান পেয়েছে। কারণ এর সাথে দাম্পত্য জীবনের হালাল-হারামের মত অতি গুরুত্বপূর্ণ বিধান জড়িয়ে আছে। তা ছাড়া জাহেলি যুগ থেকে চলে আসা এর অপব্যবহার সম্পর্কে ইসলামের সঠিক নির্দেশনা জানাটাও গুরুত্বপূর্ণ।

তাই নিম্নে যিহারের সংজ্ঞা, এর কাফফারা এবং এ সংক্রান্ত জরুরি কিছু বিধান সম্পর্কে অতি সংক্ষেপে সহজ ভাষায় আলোচনা করা হল: وبالله التوفيق

❑ যিহার কী?

সম্মানিত ফিকাহবিদগণ যিহার এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন,
تشبيه الزوج زوجته في الحرمة بمحرمه
“স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে হারাম হওয়ার ক্ষেত্রে তার কোনও মাহরাম নারীর সাথে সাদৃশ্য দেওয়াকে যিহার বলা হয়।”
অথবা تشبيه المنكوحة بمن تحرم عليه “বিবাহিত স্ত্রীকে এমন মহিলার সাথে সাদৃশ্য দেওয়া যে তার জন্য হারাম।” [শারহু যাদিল মুস্তাকনি-শাইখ মুহাম্মদ মুখতার শানকিতি। শাইখ উক্ত গ্রন্থে বিভিন্ন মাজহাবের আলোকে যিহারের আরও একাধিক সংজ্ঞা উল্লেখ করেছেন]
উদাহরণ: কোনও পুরুষ যদি তার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলে যে, তুমি আমার জন্য হারাম যেমন আমার মা আমার জন্য হারাম বা যেমন আমার বোন আমার জন্য হারাম…বা এ জাতীয় বাক্য তাহলে এটাকে যিহার বলা হয়। এর বিভিন্ন রূপ আছে এবং সংজ্ঞার ক্ষেত্রেও কিছু ভিন্নতা আছে-যেগুলো ফিকহের কিতাব সমূহে সবিস্তারে আলোচিত হয়েছে।

যিহার প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন,
الَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِنكُم مِّن نِّسَائِهِم مَّا هُنَّ أُمَّهَاتِهِمْ ۖ إِنْ أُمَّهَاتُهُمْ إِلَّا اللَّائِي وَلَدْنَهُمْ ۚ وَإِنَّهُمْ لَيَقُولُونَ مُنكَرًا مِّنَ الْقَوْلِ وَزُورًا ۚ وَإِنَّ اللَّهَ لَعَفُوٌّ غَفُورٌ
“তোমাদের মধ্যের যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে 'যিহার’ (মায়ের মত হারাম বলে ঘোষণা করে) করে- তাদের স্ত্রীগণ তাদের মাতা নয়। তাদের মা তো কেবল তারাই, যারা তাদেরকে জন্মদান করেছে। তারা তো অসমীচীন ও ভিত্তিহীন কথাই বলে। নিশ্চয় আল্লাহ মার্জনা কারী, ক্ষমাশীল।” [সূরা মুজাদিলা: ২]

সাধারণত: স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মনোমালিন্য হওয়ার প্রেক্ষাপটে স্বামীর পক্ষ থেকে রাগ বশত: যিহার সংঘটিত হয়। যেমন: তাফসিরে উল্লেখ করা হয় যে, খাওলা বিনত সালাবা এবং তার অতিবৃদ্ধ স্বামী আউস ইবনুস সামিত রা. এর মাঝে মনোমালিন্য হওয়ার প্রেক্ষাপটে আউস রা. ক্রোধান্বিত হয়ে তার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, «أنتِ عليَّ كظهرِ أمِّي» “তুমি আমার জন্য আমার মায়ের পিঠের মত।” অর্থাৎ আমার মা যেমন, আমার উপর হারাম তেমনি তুমিও আমার জন্য হারাম। জাহেলি যুগে কেউ তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাইলে এভাবে বলতো।
যাহোক ঘটনাটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছলে তিনি তাদের মাঝে সমঝোতা করার চেষ্টা করছিলেন ইত্যবসরে তার উপর সূরা মুজাদালার জিহার সংক্রান্ত আয়াত সমূহ নাজিল হয়। তারপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে যিহারের কাফফারা প্রদানের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেন। [তাফসিরে ইবনে কাসির-সংক্ষেপায়িত]

❑ যিহারের বিধান কী?

ইসলামে যিহার একটি অন্যায় আচরণ এবং হারাম কাজ। কেউ এমনটি করলে তার জন্য কাফফারা আদায় করা আবশ্যক। কাফফারা আদায়ের পূর্বে স্বামী-স্ত্রী মিলন হারাম। জাহেলি যুগে যিহার করাকে তালাক হিসেবে গণ্য করা হতো। ফলে চিরস্থায়ী ভাবে স্ত্রী মিলন নিষিদ্ধ বলে গণ্য করা হত। যেমন: তাফসিরে কুরতুবিতে এসেছে,
وذلك كان طلاق الرجل امرأته في الجاهلية
“জাহিলি যুগে এটাই স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে তালাক ছিলো।” কিন্তু ইসলাম তা স্থায়ী হারামের পরিবর্তে অস্থায়ী হারামে রূপান্তরিত করেছে। অর্থাৎ কোনও স্বামী তার স্ত্রীর সাথে যিহার করলে কাফফারা প্রদান করলে তা হালাল হয়ে যাবে।

❑ যিহারের কাফফারা কী?

যিহারের কাফফারা প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِن نِّسَائِهِمْ ثُمَّ يَعُودُونَ لِمَا قَالُوا فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مِّن قَبْلِ أَن يَتَمَاسَّا ۚ ذَٰلِكُمْ تُوعَظُونَ بِهِ ۚ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ -‏ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ مِن قَبْلِ أَن يَتَمَاسَّا ۖ فَمَن لَّمْ يَسْتَطِعْ فَإِطْعَامُ سِتِّينَ مِسْكِينًا ۚ ذَٰلِكَ لِتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ۚ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ
“যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে যিহার করে ফেলে, অতঃপর তাদের বক্তব্য প্রত্যাহার করে, তাদের কাফফারা হল, একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একটি দাসকে মুক্তি দিবে। এটা তোমাদের জন্যে উপদেশ হবে। আল্লাহ খবর রাখেন তোমরা যা কর। যার এ সামর্থ্য নেই, সে একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে ধারাবাহিকভাবে দু মাস রোজা রাখবে। যে এতেও অক্ষম হয় সে ষাট জন মিসকিনকে আহার করাবে। এটা এজন্যে, যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তি। আর কাফেরদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণা দায়ক শাস্তি।” [সূরা মুজাদিলা: ৩ ও ৪]
অর্থাৎ যিহারের কাফফারা রমজান মাসে দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাসের কাফফারার অনুরূপ। তা হল:

● ১. একটি মুমিন দাস মুক্ত করা। কিন্তু বর্তমান যুগে দাস-দাসী প্রথা প্রচলিত না থাকার কারণে তা প্রযোজ্য নয়।
● ২. এটি সম্ভব না হলে ধারাবাহিকভাবে দু মাস রোজা থাকা। এ ক্ষেত্রে ঈদ উপলক্ষে রোজা রাখা নিষিদ্ধ দিনগুলোতে রোজা রাখা থেকে বিরত থাকবে। অত:পর রোজা রাখা নিষিদ্ধ দিনগুলো অতিবাহিত হলে যথারীতি রোজা রাখা শুরু করবে।
● ৩. তাও সম্ভব না হলে ৬০ জন মিসকিন (দরিদ্র-অসহায় মানুষ) কে এক বেলা খাবার খাওয়ানো অথবা খাদ্য দ্রব্য দান করা। খাদ্যদ্রব্যের পরিমাণ, প্রত্যেক দেশের প্রধান খাদ্যদ্রব্য (যেমন: আমাদের দেশে চাল) থেকে প্রায় সোয়া কেজি। এর সমপরিমাণ টাকা দেওয়া শরিয়ত সম্মত নয়। কারণ কুরআনে খাদ্যদ্রব্যের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং এর ব্যতিক্রম করা বৈধ নয়।

❑ স্ত্রীর পক্ষ থেকে কি স্বামীর সাথে যিহার হয়?

পূর্বোক্ত আয়াতের আলোকে অধিকাংশ আলেম বলেন, যিহার কেবল স্বামীর পক্ষ থেকে হয়; স্ত্রীর পক্ষ থেকে নয়। কারণ আল্লাহ উক্ত আয়াতে কেবল স্বামীদের কথাই উল্লেখ করেছেন।
অত:এব কোনও স্ত্রী যদি তার স্বামীকে এভাবে বলে যে, “তুমি আমার জন্য হারাম যেমন আমার জন্য আমার পিতা হারাম অথবা যেমন আমার ভাই আমার জন্য হারাম” তাহলে অধিক বিশুদ্ধ মতে তা ‘যিহার’ বলে গণ্য হবে না। বরং তা হালালকে হারাম করার অন্তর্ভুক্ত। এটিও হারাম ও গুনাহের কাজ।
এটি কসম হিসেবে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে তার করণীয় হল, কসম ভঙ্গের কাফফারা আদায় করা।

শাইখ বিন বায রাহ. কে প্রশ্ন করা হয়, কোন হতভাগা স্বামী স্ত্রীকে ‘তুই আমার মা বা মায়ের মত’ বললে ‘যিহার’ হয়। কিন্তু যদি কোন হতভাগী স্ত্রী ‘তুমি আমার পিতা বা পিতার মত’ বলে। তাহলে তার বিধান কি?
তিনি উত্তরে বলেন, “এ ক্ষেত্রে মহিলার পক্ষ থেকে যিহার হবে না। কেবল মহিলাকে কসমের কাফফারা আদায় করতে হবে।” [দ্বীনী প্রশ্নোত্তর, বিবাহ ও দাম্পত্য- শাইখ আবদুল হামীদ ফাইযী]
শাইখ আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রাহ. ও অনুরূপ কথা বলেছেন।

❂ কসম ভঙ্গের কাফফারা:

● দশজন মিসকিনকে মধ্যম ধরণের খাবার খাওয়ানো। (টাকা দেওয়া শরিয়ত সম্মত নয়)
● অথবা ১০ জন মিসকিন (দরিদ্র-অসহায় মানুষকে) পোশাক দেয়া।
● অথবা একটি দাস মুক্ত করা।
● এ তিনটির কোনটি সম্ভব না হলে (লাগাতার) তিনটি রোজা রাখা।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّـهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ وَلَـٰكِن يُؤَاخِذُكُم بِمَا عَقَّدتُّمُ الْأَيْمَانَ ۖ فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَاكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ ۖ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ ۚ ذَٰلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمَانِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ ۚ وَاحْفَظُوا أَيْمَانَكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّـهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
“আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অনর্থক শপথের জন্যে; কিন্তু পাকড়াও করেন ঐ শপথের জন্যে যা তোমরা মজবুত করে বাঁধ। অতএব, এর কাফফরা এই যে, দশজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করবে; মধ্যম শ্রেণির খাদ্য যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে দিয়ে থাক। অথবা, তাদেরকে বস্তু প্রদান করবে অথবা, একজন ক্রীতদাস কিংবা দাসী মুক্ত করে দিবে। যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে না, সে তিন দিন রোজা রাখবে। এটা কাফফরা তোমাদের শপথের, যখন শপথ করবে। তোমরা স্বীয় শপথসমূহ রক্ষা কর এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নির্দেশ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।” [সূরা মায়িদা: ৮৯]

সুতরাং কেউ যদি আর্থিক সংকটের কারণে উপরোক্ত তিনটি জিনিসের কোনটি দ্বারা কসম ভঙ্গের কাফফারা আদায় করতে সক্ষম না হয় তাহলে লাগাতার তিনটি রোজা রাখবে।

❑ কোনও স্বামী যদি সাধারণভাবে তার স্ত্রীকে নিজের জন্য হারাম ঘোষণা করে তাহলে তার বিধান কী?

কোনও স্বামী যদি তার স্ত্রীকে তার কোনও মাহরাম নারীর সাথে সাদৃশ্য না দিয়ে সাধারণভাবে হারাম ঘোষণা করে। যেমন: সে বলল, “তুমি আমার জন্য হারাম।” অথবা স্ত্রীকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে বলল, তুমি যদি এ কাজ করো তাহলে তুমি আমার জন্য হারাম বা এ জাতীয় বাক্য তাহলে তা যিহার বলে গণ্য হবে না।

এটিও ইসলামে হারাম। কারণ তা আল্লাহর হালাল কৃত বিধানকে হারাম করার শামিল। এটিও কসম হিসেবে গণ্য হবে এবং এ ক্ষেত্রেও কসম ভঙ্গের কাফফারা আদায় করা আবশ্যক।
আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكَ ۖ تَبْتَغِي مَرْضَاتَ أَزْوَاجِكَ ۚ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ - قَدْ فَرَضَ اللَّهُ لَكُمْ تَحِلَّةَ أَيْمَانِكُمْ
“হে নবী, আল্লাহ আপনার জন্যে যা হালাল করছেন, আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে খুশী করার জন্যে তা নিজের জন্যে হারাম করেছেন কেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময়। আল্লাহ তোমাদের জন্যে কসম থেকে অব্যাহতি লাভের উপায় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তোমাদের মালিক।” [সূরা তাহরিম: ১ ও ২]

উপরোক্ত আয়াতের আলোকে ইবনে আব্বাস রা. বলেন,

إِذَا حَرَّمَ الرَّجُلُ عَلَيْهِ امْرَأَتَهُ فَهِيَ يَمِينٌ يُكَفِّرُهَا
“যদি কোনও স্বামী তার স্ত্রীকে তার জন্য হারাম করে দেয় তাহলে তা হল, একটি কসম। যার জন্য কাফফারা আদায় করবে।” [বুখারি হা/৪৯১১ ও মুসলিম, হা/১৪৭৩]
উল্লেখ্য যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর হালাল কৃত কোনও খাবার, পানীয়, পোশাক বা অন্য যে কোনও কিছুকে নিজের জন্য হারাম বলে ঘোষণা দেয় তাহলে তার উপর একই বিধান বর্তাবে। অর্থাৎ তার জন্য কসম ভঙ্গের কাফফারারা আদায় করা আবশ্যক।

তবে কেউ যদি উক্ত বাক্য বলার মাধ্যমে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার নিয়ত করে তাহলে তালাক বলে গণ্য হবে। কারণ “নিয়তের উপর সকল কর্ম নির্ভরশীল।” [সহিহ বুখারি]

❑ কোনও ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীকে বা কোনও স্ত্রী তার স্বামীকে তার কোনও মাহরামের সাথে বা তার বিশেষ কোনও অঙ্গের সাথে তুলনা করে তাহলে তার বিধান কী?

কোন স্বামী যদি তার স্ত্রীর শারীরিক গঠন, সৌন্দর্য বা গুণ-বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করার উদ্দেশ্যে বলে যে, তোমার চোখ দেখতে আমার মায়ের মতো, তোমার চেহারা আমার বোনের মত ইত্যাদি অথবা কোন মহিলা তার স্বামীকে বলে, তোমার দেহের গঠন আমার ভাই বা পিতার মত তাহলে এতে কোন সমস্যা নেই। অনুরূপভাবে সম্মান-মর্যাদার ক্ষেত্রে বা বৈশিষ্টগত ভাবে তুমি আমার মা/বাবার অনুরূপ তাহলেও তা যিহারের অন্তর্ভুক্ত নয়। অর্থাৎ হারাম করার নিয়ত না থাকলে যিহার বলে গণ্য হবে না। [আল মুগনি-ইবনে কুদামা]
قال ابن قدامة: وإن نوى به الكرامة والتوقير، أو أنها مثلها في الكبر، أو الصفة، فليس بظهار, والقول قوله في نيته.
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ইসলামের বিধিবিধান সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানার্জন করে সে আলোকে জীবন যাপনের তওফিক দান করুন। আমিন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬❂◉❂▬▬▬
লেখক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব

হাসান বসরী (রহ.): كانوا يقولون: النظرة تزرع في القلب شهوة، وكفى بها فتنةসালাফেরা বলতেন, দৃষ্টি অন্তরে কামনা সৃষ্টি করে, ...
18/08/2025

হাসান বসরী (রহ.):
كانوا يقولون: النظرة تزرع في القلب شهوة، وكفى بها فتنة

সালাফেরা বলতেন, দৃষ্টি অন্তরে কামনা সৃষ্টি করে, আর এটুকুই ফিতনা হিসেবে যথেষ্ট।

[আল-জাওয়াবুল কাফি, ইবনুল কাইয়্যিম]

©কপি

জেনে নিন, স্বামীর পরিবারের কোন কোন পুরুষ আপনার জন্য মাহরাম এবং কোন কোন পুরুষ মাহরাম নয়:স্বামীর চাচা কি স্ত্রীর জন্য মাহ...
11/08/2025

জেনে নিন, স্বামীর পরিবারের কোন কোন পুরুষ আপনার জন্য মাহরাম এবং কোন কোন পুরুষ মাহরাম নয়:

স্বামীর চাচা কি স্ত্রীর জন্য মাহরাম?
বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন​ এবং বিশিষ্ট ফকিহ আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রহ. কে প্রশ্ন করা হয়-

স্বামীর চাচা কি স্ত্রীর জন্য মাহরাম? স্বামীর উপস্থিতিতে কি তার সাথে হাত মেলাতে অনুমতি আছে?
তিনি ​উত্তরে বলেন,
عم الزوج ليس محرمًا للزوجة ولا أخوه، وإنما المحرم أبوه وجده وابنه، أما عمه وأخوه فليسا محرمين للزوجة

"স্বামীর চাচা স্ত্রীর জন্য মাহরাম নন এবং তার ভাই (দেবর ভাসু্রও) নন।
মাহরাম হলেন, কেবল স্বামীর পিতা (শ্বশুর), দাদা-নানা (দাদা শ্বশুর ও নানা শ্বশুর) এবং তার পুত্র। কিন্তু তার চাচা (চাচা শ্বশুর)
এবং ভাই (দেবর-ভাসুর)
স্ত্রীর জন্য মাহরাম নন।' [binbaz]

​অর্থাৎ স্ত্রীর জন্য স্বামীর পিতা, দাদা-নানা, পুত্র, পুত্রের পুত্র এবং কন্যার পুত্র-এরা সকলেই মাহরাম।

কিন্তু স্বামীর চাচা বা ভাই মাহরামের অন্তর্ভুক্ত নন। অনুরূপভাবে স্বামীর মামা, খালু এবং ফুফাও মাহরাম নয়।

🔸সম্মানিত শায়খ অন্যত্র বলেন,
الخال والعم ليسا محرمين، بل ليس لها أن تكشف لعم الزوج، ولا لخال الزوج، ولا لأخي الزوج، وهو أقرب أيضًا، وإنما قوله : وَلا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ[النور:31] هذا يعم الآباء والأجداد، ولا يدخل فيه الأعمام ولا الأخوال،

" (স্বামীর) চাচা এবং মামা মাহরাম নন। বরং স্ত্রীর জন্য স্বামীর চাচার সামনে, স্বামীর মামার সামনে, এমনকি স্বামীর ভাইয়ের সামনেও পর্দা করা আবশ্যক। (স্বামীর ভাই তো আরও নিকটাত্মীয়, তবুও সে মাহরাম নয়।) আর আল্লাহ তা'আলার বাণী:
وَلا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ

"এবং তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তাদের স্বামী অথবা তাদের পিতা ও পিত্রব্যদের ব্যতীত।" [সূরা নূর: ৩১] এটি পিতা এবং দাদা-নানাদের অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু চাচা এবং মামাদের এর অন্তর্ভুক্ত করে না।" [Binbaz]

▪️উল্লেখ্য যে, মাহরাম বলতে বুঝায়, ইসলামে যে ব্যক্তির সাথে স্থায়ীভাবে বিবাহ নিষিদ্ধ। মাহরাম পুরুষদের সামনে পর্দা নেই। তবে তাদের সামনেও বেপরোয়া চলাফেরা করবে না বরং শালীনতা বজায় রেখে পোশাক পরবে এবং আদব ও সম্মান রক্ষা করে তাদের সাথে কথাবার্তা বলবে এবং চলাফেরা করবে।
আর নন মাহরামদের সামনে পর্দা রক্ষা করা আবশ্যক। তাদের সাথে নির্জন ঘরে অবস্থান করা, একাকী সফরে যাওয়া, তাদের শরীর স্পর্শ করা, মুসাফাহা করা বা হাত মেলানো, তাদের সাথে হাসি-মজাক করা, বেপর্দা চলাফেরা করা ইত্যাদি হারাম। তবে শরয়ী পর্দা সহকারে সামনে যাওয়া যাবে এবং প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা যাবে। আল্লাহু আলাম-আল্লাহ সর্বজ্ঞ।

- আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি

স্বামীর একাধিক বিয়েকে অপছন্দ করা কি ঈমান ভঙ্গের কারণ?প্রশ্ন: অনেক মহিলাই স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে অপছন্দ করে। এতে কি তাদের ...
09/08/2025

স্বামীর একাধিক বিয়েকে অপছন্দ করা কি ঈমান ভঙ্গের কারণ?

প্রশ্ন: অনেক মহিলাই স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে অপছন্দ করে। এতে কি তাদের ইমান নষ্ট হওয়ার বা মুনাফিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে?

উত্তর:

নিঃসন্দেহে আল্লাহর প্রতিটি বিধান মানুষের কল্যাণের জন্য। তাঁর প্রতিটি বিধানেই রয়েছে সুনিপুণ হেকমত ও সুগভীর প্রজ্ঞা।

সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং তাকে ভালোবাসে তার জন্য আবশ্যক হচ্ছে, আল্লাহর প্রতিটি বিধানের কাছে নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করা। এটি ঈমানের দাবি।

‌এর বিপরীতে আল্লাহর কোন একটি বিধানকে অপছন্দ করা বা ঘৃণা করা ঈমান ভঙ্গের অন্যতম একটি কারণ।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
ذَ ٰ⁠لِكَ بِأَنَّهُمۡ كَرِهُوا۟ مَاۤ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأَحۡبَطَ أَعۡمَـٰلَهُمۡ
"এটা এজন্যে যে, আল্লাহ যা নাজিল করেছেন তারা তা অপছন্দ করেছে। কাজেই তিনি তাদের আমলসমূহ বাতিল করে দিয়েছেন।" [সূরা মুহাম্মদ: ৯]

সুতরাং কেউ যদি মনে করে, ইসলাম পুরুষদেরকে একাধিক বিয়ের বিধান দিয়ে নারীদের প্রতি জুলুম করেছে, অথবা মনে করে, এই বিধানটি বর্তমান যুগে অনুপযোগী বা এটিকে কেউ ঘৃণার চোখে দেখে তাহলে সে ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত মুরতাদ ও কাফের বলে গণ্য হবে।

তবে কেউ যদি আল্লাহর বিধানের প্রতি সম্মান বজায় রাখে এবং এটিকে বৈধ মনে করে কিন্তু ব্যক্তিগত মানবিক দুর্বলতা ও অনিচ্ছার কারণে স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করুক এটা না চায় বা তার দ্বিতীয় বিয়েকে অপছন্দ করে তাহলে তাতে সমস্যা নেই। এ কারণে সে ঈমান থেকে বের হয়ে যাবে না বা মুনাফিক বলে গণ্য হবে না।
উদাহরণ হিসেবে, মানুষ রোগাক্রান্ত হলে অস্ত্রোপচার, ইনজেকশন নেওয়া বা ওষুধ খাওয়াকে স্বভাবগতভাবে অপছন্দ করে কিন্তু সুস্থতার স্বার্থে তা মেনে নেয়।
অনুরূপভাবে জি/হা/দ তথা কা/ফে/রদের সাথে যু/দ্ধে লিপ্ত হওয়া স্বভাবগতভাবে মানুষের অপছন্দনীয়। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন,
كُتِبَ عَلَیۡكُمُ ٱلۡقِتَالُ وَهُوَ كُرۡهࣱ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰۤ أَن تَكۡرَهُوا۟ شَیۡـࣰٔا وَهُوَ خَیۡرࣱ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰۤ أَن تُحِبُّوا۟ شَیۡـࣰٔا وَهُوَ شَرࣱّ لَّكُمۡۚ وَٱللَّهُ یَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ
"তোমাদের উপর কি/তা/ল (যুদ্ধ) করাকে ফরজ করা হয়েছে যদিও তোমাদের নিকট তা অপছন্দনীয়। কিন্তু তোমরা যা অপছন্দ কর হতে পারে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং যা ভালবাস হতে পারে তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর আল্লাহ জানেন তোমরা জান না।" [সূরা বাকারা: ২১৬]

অনুরূপভাবে, ঠাণ্ডার রাতে ঘুম থেকে উঠে অজু করে মসজিদে যাওয়া, সফরের কষ্ট, ক্লান্তি ও নানা রোগ-ব্যাধি সত্বেও পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা, নিজের সম্পদ থেকে জাকাত বের করে গরিবদেরকে দান করা, রমজান মাসে সারাদিন ক্ষুধা-পিপাসায় কাতর হয়ে রোজা রাখা ইত্যাদি মানুষের স্বভাবজাত অপছন্দনীয় বিষয়। কিন্তু তারপরও কেউ যদি আল্লাহর বিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন পূর্বক জাহান্নামের আগুনের ভয়ে এ কাজগুলো করে তাহলে তার জন্য রয়েছে অবারিত সওয়াব।

ঠিক তদ্রুপ কোন নারী যদি স্বামীর একাধিক বিয়ের প্রতি অন্তরে কষ্ট অনুভব করার পরেও আল্লাহর বিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং স্বামীকে সন্তুষ্ট করার স্বার্থে তা মেনে নেয় তাহলে সে আল্লাহর কাছে সওয়াবের অধিকারী হবে ইনশাআল্লাহ।

কিন্তু এর বিপরীতে স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে স্ত্রী যদি তার প্রতি কোন ধরনের জুলুম-নির্যাতন করে, খারাপ আচরণ ও গালাগালি করে, তার গোপনীয়তা প্রকাশ, গিবত‌ ও আমানতের খেয়ানত করে, তাকে অপমান-অপদস্থ করে বা অন্য কোন ভাবে তাকে কষ্ট দেয় তাহলে সে মারাত্মক গুনাগার হবে।‌ এই বিষয়গুলো সাধারণভাবেই কবিরা গুনাহ। কিন্তু স্বামীর সাথে করা হলে তার ভয়াবহতা আরও বেশি।

এক্ষেত্রে তার কর্তব্য হবে, আল্লাহর বিধানের প্রতি আত্মসমর্পণ এবং স্বামীর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দেওয়া। তা করা সম্ভব না হলে বুক ভরা সীমাহীন কষ্ট সহ্য করে সংসার অব্যাহত রাখা আবশ্যক নয়। ইচ্ছা করলে সে খোলা তালাকের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার অধিকার রাখে।

উল্লেখ্য যে, কোন স্বামী যদি একাধিক বিয়ে করে তাহলে তার সকল স্ত্রীর মাঝে রাত যাপন এবং খরচের ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা করা ফরজ। কেউ যদি তা করতে পারবে না বলে মনে করে তাহলে তার জন্য একাধিক বিয়ে করা হারাম। আল্লাহু আলাম।
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

Address

Feni

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when স্বামী ও স্ত্রীর আদর্শ জীবন posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Category