09/07/2025
#রেখো_তোমার_বাহুডোরে
#অভ্রায়ীনি_ঐশি
#পর্ব_২৩
"রাত জেগে কথা বলছো, ঘুমাবে না?"
"আপনিও তো জেগে। "
"হুমম,আচ্ছা আর জাগতে হবে না তোমাকে,এখন ঘুমিয়ে পরো।আমিও ব্লা'ড দিতে যাবো এখন।"
"আচ্ছা, সাবধানে থাকবেন।আর আপডেট দিয়েন আপুর।"
"গুড নাইট অপরিচিতা।"
"গুড নাইট।"
কান থেকে ফোন নামিয়ে মিষ্টি হাসলো তট। আজকাল মেয়েটার সাথে একটু বেশিই জড়িয়ে যাচ্ছে যেন সে। নাহ,তট জানে না তার নাম কি,কোথায় থাকে, কি করে।ছবিও দেখেনি সে। তবে প্রেমে পড়েছে তার কথার। তটের প্রতি এত উতলা হয় মেয়েটা, সে পারেই না উপেক্ষা করতে।
ভাবতে ভাবতেই আবির্ভাবের পেছন পেছন কেবিনে ঢুকতেই ইন্দুর হাসিমাখা মুখটি দেখে দুজনেরই চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। আবির্ভাব ওভাবে থেকেই হাসালো, বলে উঠলো...
"তুই জেগেছিস কখন?"
কথার মাঝেই ইন্দু নিজের ঠোঁটের উপর তর্জনী আঙুল ঠেকিয়ে আবির্ভাবকে বোঝালো চুপ করতে। চোখের ইশারায় পাশে ঘুমন্ত রাতকে দেখাতেই আবির্ভাব বুঝলো ইন্দু কেন মানা করছে।
রাত নীরবে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। একহাতে ইন্দুর বাহু ধরে আছে, যেন ছেড়ে দিলেই মেয়েটা পালিয়ে যাবে।
আবির্ভাব এবার ফিসফিসিয়ে বললো...
"বাবাহ,ঘুমাচ্ছে তাহলে একটু। তুই ভয় পেয়েছিস?"
ইন্দু দু পাশে মাথা নেড়ে বললো...
"উহুম,উনি আমাকে সব বুঝিয়ে বলেছে। "
আবির্ভাব আস্তে করে আনানকে জাগালো। বললো...
"সাঁজিকে ডাক।হয়ে গেছে। "
আনান মাথা নাড়িয়ে আস্তে করে সাঁজিকে জাগালো।ইন্দু তাদের বললো...
"আনান ভাইয়া,তুমি আপুকে নিয়ে বাড়ি চলে যাও এখন।এখানে থাকতে হবে না আর।"
সাঁজি বলতে নিলো...
"সমস্যা নেই বিভা,আমি ঠিক আছি।"
"নাহ আপু,তুমি যাও বাড়িতে। দূর্বল লাগবে তোমার।আর থ্যাংকিউ।"
সাঁজি হাসলো আস্তে করে। আনানের সাথেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। আবির্ভাব এবার তটের থেকে র'ক্ত নেওয়া শুরু করলো। কাজ শেষ হতেই ইন্দু বললো...
"আরজু কি করছে ভাইয়া?"
আবির্ভাব মিষ্টি হেঁসে বললো...
"চিন্তা করিস না,ও ঘুমাচ্ছে। "
"তুমিও যাও,একটু রেস্ট নিয়ে নাও। "
আবির্ভাব মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।যাওয়ার আগে তটের দিকে একবার তাকিয়ে বললো...
" অনেক রাত হয়েছে। আর ফিসফিসিয়ে কথা না বলে একটু ঘুমা।"
-------
নিজের চেম্বারে ঢুকতেই মিষ্টি ঘ্রাণ এসে নাকে লাগলো আবির্ভাবের। ঘ্রাণটা চেনা তার। ঐ যে ডিভানে আরজু ঘুমিয়ে আছে গুটিসুটি মেরে তার শরীরের পার্ফিউমের ঘ্রাণ। আবির্ভাব একপা দু পা করে এগিয়ে গেলো সেদিকে। ডিভানের সামনে হাটু গেড়ে বসলো আরজুর মুখ বরাবর। সে কি বুঝলো আবির্ভাবের আগমন? নাহ,কি করে বুঝবে? মেয়েটা যে গভীর নিদ্রায় বিভোর।
আলতো হাতে আরজুর মুখের উপর পড়া চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিলো আবির্ভাব। নিরবে নিভৃতে তাকিয়েই রইলো ঘুমন্ত মেয়েটির দিকে। কত শত জনমের অভিলাষ যেন তার, এই দেখার স্বাধ কি আদেও এই জন্মে আর মিটবে?
"কি নাম দিবো আপনারে আমি? প্রেম, মায়া নাকি শুধুই এক অনাকাঙ্ক্ষিত ধ্বংস? "
কি হৃদহরনকারী প্রশ্ন ছুরলো আবির্ভাব মেয়েটাকে।কিন্তু আরজু নীরব,উত্তর পাওয়া গেলো না তার থেকে। কি করে পাবে? সে যে শুনলো না আবির্ভাবের হৃদ গহীনের প্রশ্ন ,বুঝলো না তার আকুলতা, শুধু নিরলস চোখ বুঝে রইলো নরম বালিশে।মস্তিষ্ককে অচল করে রাখলো ঘুম নামক এক অভিনব উপায়ে।
আবির্ভাব নিজে নিজেই হাসলো।সে তো জানে সামনে থাকা মেয়েটি উত্তর দেবে না,শুনবে না তার কথা। তবুও কেন প্রশ্ন করলো? সামনের আরজু উত্তর না দিলেও আবির্ভাবের বুকের ভেতর থাকা আরজু উত্তর দিলো ঠিকই...
"আমি আপনার ভালোবাসা।"
আবির্ভাব ফের বললো...
"তুমি ভালোবেসেছো বসন্তের কোকিল,আদতে আমি তো হেমন্তের কাকতাড়ুয়া।"
এমাহ,কথাটা কি এবার সামনের আরজু শুনে ফেললো? ঘুমের মধ্যেই নড়েচড়ে উঠলো মেয়েটা।একবার ঘুম ঘুম চোখে তাকালো আবির্ভাবের দিকে। পরক্ষণেই গায়ের চাদরটা আরেকটু জড়িয়ে নিয়ে ঘুমুঘুমু কন্ঠে বললো...
"একটা গান গেয়ে শুনান,আপনিও বসন্তের কোকিল হয়ে যাবেন।"
মেয়েটা অজান্তেই রম্য করছে আবির্ভাবের সাথে।হাসলো আবির্ভাব, হাসি বজায় রেখেই রুক্ষ, বেনামি কন্ঠে গান ধরলো...
"Agar tum mil jao,
Jamana chor denge hum.!!
Tumhe pakar jamana bharse rishta
Tor denge hum....
Agar tum mil jao,jamana chor denge hum.."
---------
রজনী কাটে নেহারি প্রণয়ে।কারোর শান্তিময় নিদ্রা,কেউ নিজের অল্প বিস্তর ভালো লাগার যত্নে,কেউ এক অপরিচিতার প্রেমে মত্ত হয়ে,দুরান্তে কেউ আবার সেই অপরিচিতার প্রণয়পুরুষকে নিজের ভাবতে ভাবতে এবং অবশেষে কেউ একটি প্রহরকে এক যুগের মতো ভেবে মায়াবিনীর মুখ দেখে গান গেয়ে।
ঘুম হালকা হতেই উঠে বসলো রাত।ইন্দুকে অবলীলায় নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো...
"ঘুমাও নি পাখি?"
ইন্দুর কন্ঠে চাপা আর্তনাদ, চেপে চেপে বললো...
"ঘুমিয়েছি।একটু আগেই জেগেছি। "
রাত আস্তে করে ইন্দুর হাতের ক্যানোলার উপর হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো...
"হাতে টান পড়ছে কোথাও?ব্যথা হচ্ছে? "
ইন্দু দু পাশে মাথা নাড়ে। ব্লাড দেওয়া শেষ হয়েছে ভোররাতেই। তখন থেকেই ইন্দু জেগে।আরজুও এসেছিলো একবার,ইন্দু তখন জোর করে মেয়েটাকে তটের সাথে বাড়ি পাঠিয়ে দিলো।আবির্ভাবকেও যেতে বললো,কিন্তু সে জানালো ইন্দুকে একেবারে ডিসচার্জ করিয়ে তারপরই ফিরবে।
পাশের বেড আপাতত শূন্য রইলো। রাত উঠে দাঁড়ালো। ইন্দুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো...
"খিদে পেয়েছে তোমার?"
ইন্দু না জানালো।
"তাহলে একেবারে বাড়ি ফিরেই নাস্তা করা যাবে। আমি আবির্ভাবের সাথে কথা বলে দেখছি। একা থাকো একটু হুম?"
ইন্দু বললো...
"একজন নার্সকে ডেকে দিবেন?"
রাত তাকালো ইন্দুর দিকে। জিজ্ঞেস করলো...
"নাহ,এমনি আরকি.."
"আচ্ছা ডেকে দেবো।"
বলেই রাত বাইরে যেতে উদ্ধত হলো।কিন্তু দরজার কাছে গিয়েই পা থামলো আবার ইন্দুর ডাকে।
"শুনুন?"
পেছন ফিরে জিজ্ঞেস করলো...
"বলো?"
ইন্দুর চোখে মুখে কিঞ্চিৎ ইতস্ততবোধ।রাত ভ্রু কুচকে দু কদম এগিয়ে এলো মেয়েটির কাছে। বললো...
"কি হয়েছে পখি? বলো আমায়?"
"আ্ আমার একটা ড্রেস লাগবে। আর একটা...."
কথাখানা সম্পূর্ণ করতে পারলো না ইন্দু,মাথা নুইয়ে নিলো। কন্ঠরোধ হচ্ছে তার, কি করে বলি?
আর বলতেও হয়নি। মিনিটখানেক নিরব থেকে রাত নিজেই বুঝে নিলো বিষয়টি।উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললো...
"এই কথা এখন বলছো তুমি? এতক্ষণ চুপ ছিলে কেন?"
ইন্দু উত্তর দিলো না।কৌনিক দৃষ্টিতে শুধু একটু চাইলো রাতের পানে।রাত ঠোঁট গোল করে নিঃশ্বাস ফেলে বললো...
"পাঁচ মিনিট সময় দাও,আমি আসছি। "
বলেই কেবিনের দরজা ভিরিয়ে বেরিয়ে গেলো ত্রস্ত পায়ে। ঠিক পাঁচ মিনিটের মাথায়ই আবার ফিরে এলো হাতে দুটো ব্যাগ নিয়ে। সাথে একজন নার্সও আছে। এগিয়ে এসে ইন্দুকে ধরে বিছানা থেকে উঠালো রাত নিজেই।মেয়েটা এখনো আড়ষ্ট হয়ে আছে কেমন একটা।রাত বললো...
" উনি তোমাকে হেল্প করবে তিয়াস। সাবধানে,হাতে যেন ব্যথা না লাগে।"
বলতে বলতেই ওয়াশরুমের সামনে পর্যন্তই দিয়ে আসলো ইন্দুকে। তারপর আবারো তারাহুরো পায়ে বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে সে।
একটু পরেই ফিরলো আবার।মাত্রই নার্সটিকে কেবিন থেকে বেরোতে দেখেছে সে।কিন্তু তিয়াস এখনো ওয়াশরুমে কেন।ওদিকে তাকাতেই দেখলো দরজা খোলাই আছে।এগিয়ে গেলো রাত। ডাকলো...
"তিয়াস পাখি?"
বলতে বলতেই ভেতরে চোখ যেতে দেখলো ইন্দু অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে হাতের ক্যানেলা খুলার চেষ্টা করছে।তা দেখেই রাত ব্যস্ত হয়ে হাত চেপে ধরলো ইন্দুর...
"এই মেয়ে,করছো কি তুমি?"
ইন্দু ক্যাবলার মতো তাকালো রাতের মুখপানে। বললো....
"জামা কাপর গুলো ধুতে হবে।এটার জন্য পারছিলাম না।একটু পরেই তো খুলে ফেলতেই হতো,সমস্যা নেই।"
"বললেই হলো? আর জামা ধুতে হবে মানে কি,নার্সটাকে বললেই তো ধুয়ে দিতো।"
ইন্দু বিরবির করে বললো...
"উনি এমনিতেই কেমন নাক সিটকাচ্ছিলেন। তাই আর বলিনি।"
"তো একটা ড্রেসই তো।ফেলে দিই,পরে আরো কিনে নেবো।"
সাথে সাথেই ইন্দু কন্ঠ তড়িৎ করে বাঁধা দিলো..
"নাহ, ওটা ফেলা যাবে না।আমার খুব পছন্দের জামাটা।"
শেষের কথাটা মিনমিনিয়েই বললো ইন্দু।রাত আড়চোখে তাকালো ফ্লোরে থাকা ড্রেসটার দিকে। রাতই কিছুদিন আগে নিয়ে এসেছিলো মেয়েটার জন্য। আহামরি তেমন কিছুই নেই জামাটার মধ্যে, তাও ফেলবে না ইন্দু। আচ্ছা, শুধু কি রাতের দেওয়া বলেই ইন্দু জিনিসটার এতো যত্ন নিচ্ছে?
ভেবেই মনে মনে পুলকিত হলো রাত।আর ফেলে দেওয়ার নাম নিলো না জামাটা।ইন্দুর হাত ধরে বাইরে নিয়ে এসে বললো..
"তুমি বসো গিয়ে,আমি ধুয়ে দিচ্ছি।"
সাথে সাথেই আন্ডামান নামক দ্বীপের অদেখিত আন্ডার মতোই যেন বড় বড় হয়ে গেলো ইন্দুর চোখ।বিষ্ময় নিয়ে বললো...
"এমাহ,আপনি কেন করবেন এসব,ছি ছিহ।আমি করে নিচ্ছি,সমস্যা হবে না আমার।"
"তুমি গিয়ে বেডে বসো,যাও।"
ইন্দু অনেক করে চাইলো বাঁধা দিতে।কিন্তু রাত কি তার কথা মানার মানুষ? শেষমেশ না পেরে ইন্দু বললো...
"আচ্ছা ঠিক আছে,পাজামাটা ফেলে দিই,আপনি জামা ধুয়ে দিয়েন পরে...."
"জামা ধুতে পারলে, বাকি সবও ধুতে পারবো। ফেলতে হবে না।"
বলতে বলতে এবার রাত মুখের উপর ওয়াশরুমের দরজাটাই বন্ধ করে দিলো।বাইরে ইন্দু হা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যাচ্ছে তার। মনে মনে নিজেকেই গালি দিচ্ছে বারংবার,কেন যে তখন লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বলতে গেলো লোকটাকে।এবার ইন্দু রাতকে মুখ দেখায় কেমন করে?..
আবির্ভাবকে কড়া করে নির্দেশ দিয়েছে সাবধানে গাড়ি চালাতে। মাত্র ২০ মিনিটের পথ প্রায় এক ঘন্টা লাগিয়ে বাড়ি এসে পৌছালো তারা।পুরোটা রাস্তায় রাত ইন্দুকে জড়িয়ে রেখেছে নিজের সাথে।
বাড়ি এসে পৌছাতেই তার কি তোড়জোড়। সাবিহাদের বারবার ইন্দুর খেয়াল রাখার কথা বলে যাচ্ছে ছেলেটা। বেশ কিছুক্ষণ পর একেবারে তৈরি হয়ে হাতে একটা ট্রে নিয়ে ইন্দুর রুমে এসে দাঁড়ালো রাত। বিভিন্ন রকমের চকলেট দেখে ইন্দু মুখ তুলে চাইলো রাতের দিকে। তা দেখেই রাত বললো....
"যেটা মন চায় খাবে। আর কিছু লাগবে কিনা বলো,আমি আসার সময় নিয়ে আসবো। "
"আপনি এখন বের হবেন?"
"হুম,কাজ আছে অনেক।"
ইন্দু আবদার ছুড়লো...
"কাল সারারাত কষ্ট করেছেন।এখন একটু রেস্ট নিলে হয় না?"
রাত আস্তে করে এসে বসলো ইন্দুর পাশে। মেয়েটির চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো...
"আমি ঠিক আছি। চলে আসবো দ্রুত,,তুমি সাবধানে থেকো হুম?"
"আচ্ছা। "
"কিছু আনবো তোমার জন্য? "
ইন্দু দু'পাশে মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো।রাত এবার উঠে দাঁড়িয়ে ইন্দুর চুলের ভাজেই চুমু খেয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
------------
"আমি কিছু করিনি স্যার,আমার দোকানটা উঠাইয়া দিয়েন না দয়া করে।"
কলেজ ক্যান্টিনের বিক্রেতা লোকটি হাতজোর করে রাতের সামনে বসে। রাত চোখ কঠিন করে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে তার দিকে।কিন্তু তার যে মন গলার নয়। আরজু শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো...
"ভাইয়া, আপনি এনার কথা একদম বিশ্বাস করবেন না,এই লোকটাই প্রতিদিন ইন্দুর খাবার নিয়ে আসতো। আমরা দুজন একই খাবার খেতাম,উনিই আলাদা করে ইন্দুর খাবারে বি'ষ মিশিয়ে দিতো।"
ক্যান্টিনের সামনে স্টুডেন্টদের জটলা বেঁধে গেছে। বহু পুরোনো এই বিক্রেতা যে এমন কাজ করতে তা যেন কারোরই বিশ্বাস হচ্ছে না।প্রিন্সিপাল স্যার লোকটিকে হালকা ধমক দিয়ে বললো...
"সত্যিটা স্বীকার করো জামশেদ মিয়া।কেন এরকম একটি জঘন্য কাজ করেছো তুমি আমার কলেজের ছাত্রীর সাথে।"
লোকটি কান্না করে প্রিন্সিপালকে বললো...
"আমারে মাফ করে দেন স্যার,,আমি আর কোনোদিন এমন করমু না।দয়া কইরা আমার দোকানটা বন্ধ কইরা দিয়েন না।আমি বউ বাচ্চা নিয়া কই যামু?"
রাত নীরবে হুঙ্কার ছুড়লো...
"এরকম কাজ কেন করেছেন আপনি? কে বলেছে এমন করতে?".
" দুইটা মেয়ে স্যার,,ওরা আমাকে অনেক টাকার লোভ দেখিয়েছে স্যার,,আমি লোভে পড়ে ওদের কথায় রাজি হয়ে যাই। ওরাই আমাকে ঐ ঔষধগুলো দিয়ে গিয়েছে। ব্ বলেছে যখনই বিভা মেয়েটা কিছু কিনতে আসবে,আমি যেন এখান থেকে একটা করে ঔষধ মিশিয়ে দিই তার খাবারে।"
ভ্রু কুঁচকে এলো সবার।আনান ধীর স্বরে বললো...
"আমি তো ভেবেছিলাম তুরাগের কাজ এটা।তাহলে এখানে এই মেয়ে দুটো কোত্থেকে এলো ভাই?"
রাত উত্তর দিলো না। বিক্রেতাকে প্রশ্ন করলো...
"কোন মেয়ে? দেখতে কেমন ওরা?"
"বিভাদের থেকে বয়সে বড় হবে স্যার।দেখে মনে হয় না এই কলেজে পড়ে। তেমন ভাবে দেখিনি তাদেরকে আমি৷ "
আরজুর মাথায় কিছু চলছে।নীরবে একবার আবির্ভাবের দিকে তাকালো সে। নিরীক্ষণ করার চেষ্টা যাকে বলে।আবির্ভাবও তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো আগে থেকে। আরজুর চোখে চোখ পড়তেই আস্তেধীরে এগিয়ে এসে দাঁড়ালো তার পাশে।বললো...
"তুমি আমাকে কিছু বলতে চাইছো আরজু।বলে ফেলো?"
আরজু খেই হারালো,লোকটা কিভাবে বুঝে ফেললো? এখন কি কথাটা বলা ঠিক হবে তার?
"বলো আরজু?"
"প্ পরে বলবো।"
আবির্ভাব মেনে নিলো। আর জোর করলো না আরজুকে।বিক্রেতা লোকটির কোনো অনুরোধই মানলো না রাত। আর যাই হোক,যেখানে তার স্বপ্নদর্শীর ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে, সেখানে কোনো ভাবেই ছাড় দেওয়া যায় না।লোকটিকে এখান থেকে দোকান উঠিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। দুইদিনের মধ্যে এখান থেকে না গেলে, তার দোকান ভেঙে ফেলা হবে।
পকেটে থাকা ফোনটা বেজে উঠতেই, হাতে তুলে নিলো রাত। স্ক্রীনে ছায়া নামটি জ্বলজ্বল করছে। খুব একটা গুরুত্ব দিলো না রাত। কেটে দিয়ে ব্যস্ত হলো প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলতে । পরপরই আবার কল এলো।এইবার রাত রিসিভ করে বলতে নিলো...
"ছায়া, একটু ব্যস্ত আছি..."
তখনই ওপাশ থেকে পরিচিত কন্ঠের ঘুমঘুম স্বর কানে লাগলো তার।
"আমি ইন্দু বলছি।"
থেমে গেলো রাত। ঠোঁটের কোনে কেন যেন নিজের অজান্তেই এক চিলতে হাসি দেখা দিলো তার। সকল ব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে জিজ্ঞেস করলো...
"ঘুমাচ্ছো পাখি?"
"হুম,আমার না গোলাপজাম খেতে ইচ্ছে করছে। "
হাসলো রাত,তার মিষ্টি পাখি মিষ্টি আনতে বায়না করছে। ইশশ,রাতের অন্তরে যে খুশির জোয়ার বইছে।
"আর কি খেতে ইচ্ছে করছে তোমার?"
"উমম,,লেমন বরফি,ক্ষীরমোহন,আররর...."
"আর?"
"আর মনে পড়ছে না।"
"মনে করে বলো?"
"পড়ছে না তো মনে,এগুলোই ইচ্ছে করছে। "
"আচ্ছা।"
"আনবেন আপনি?"
"আনতে পারি তবে একটা শর্তে। "
"কি শর্ত?"
"সেটা আসার পরই বলবো।"
"আচ্ছা,, রাখছি।"
"রেখে দিবে?"
"ঘুম পাচ্ছে তো।"
"ঠিক আছে ঘুমাও।"
ইন্দু কল রেখে দিলো। রাতও কান থেকে পোন নামিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো আনান কোমরে হাত গুঁজে ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে।রাত জিজ্ঞেস করতেই বললো...
"এখানে প্রিন্সিপাল স্যার দাঁড়িয়ে, আর তুই প্রেমালাপ করছিস,পাখি পাখি করছিস।শা* সব ভাঁওতাবাজি। "
রাত আস্তে করে উত্তর দিলো...
"সি ইজ মাই ফার্স্ট প্রায়োরিটি। "
---------চলবে--------
[ তারাহুরোয় কি লিখেছি আবোলতাবোল নিজেও বুঝতেছি না।পরিক্ষা, বন্যা পরিস্থিতির কারনে আসলেই খুব সমস্যায় আছি।কেউ মনে কষ্ট নিবেন না দয়া করে।
★★★ পাঠকমহল,অনেকেই চাইছিলেন একটা রিভিউ গ্রুপ,সেই সুবাদেই নতুন গ্রুপটি খুলেছি।আশা করছি পাঠকমহলের সবাই যুক্ত হয়ে নিজের মতামত শেয়ার করবেন।এছাড়াও নিজেদের পড়াকু বন্ধুদের ইনভাইট দিতে ভুলবেন না যেন।ধন্যবাদ সবাইকে😊]
গ্রুপ লিংক....👇
https://www.facebook.com/share/p/1Az7EbQZrz/