18/08/2025
#রেখো_তোমার_বাহুডোরে
#অভ্রায়ীনি_ঐশি
#পর্ব_২৪
সিক্ততার নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ কাবু হয়েই বাড়ি ফিরলো রাত।শরীরের শার্ট খানা ভিজে লেপ্টে আছে। বাইরেটায় তুমুল বৃষ্টি। আকাশের হঠাৎ এমন মন পরিবর্তন হবে বুঝতেই পারে নি কেউ। গাড়ি নিয়ে বের হলেও মিষ্টির দোকানে গিয়ে আবার গাড়িতে ফিরে আসতে আসতে বেশ অনেকটাই ভিজে গেছে সে। কিচেনে গিয়ে হাতের বড় ব্যাগটা টেবিলে রাখতেই কান্তা আর মিশি এসে জিজ্ঞেস করলো...
" এই ভর দুপুরে কি নিয়েছিস আবার?"
কান্তা ততক্ষণে নিজের শাড়ির আচল দিয়ে রাতের ভেজা চুল মুছতে ব্যস্ত।
" মিষ্টি এনেছি বড় মা। আলাদা প্যাকেটে দেখো লেমন বরফি আছে ৩ পিস, এই কয় পিসই ছিলো ইনটেক দোকানে।ওগুলোয় যেন কেউ হাত না দেয়, তিয়াসের জন্য এনেছি।"
মিশি প্যাকেট খুলে বললো...
"রাত বাবা,এত মিষ্টি যে? এখানে তো ৭/৮ রকমের আছে। "
রাত এবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো..
"তিয়াসের জন্য ক্ষীরমোহন,গোলাপজাম আর লেমন বরফি, এই তিনটা নিয়ে দিবা একটু? আর... রসগোল্লা গুলো এখনো গরম আছে। ওখান থেকেও দু পিস দিও,খাবে কিনা জানি না, তাও দেখি। "
মিশি "আচ্ছা " বলে কিচেন থেকে প্লেট আনতে ব্যস্ত হলো। কান্তা বললো...
" দুটো বাজতে চললো।এখন মিষ্টি খেলে মেয়েটা ভাত খাবে কখন? "
" পরে আমি খাইয়ে দিবো বড় মা। ওর মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে এখন।মিষ্টিই দাও।"
"আচ্ছা তুই যা চেঞ্জ করে নে।আমি ওর জন্য মিষ্টি নিয়ে যাচ্ছি। "
"আমাকেই দাও।ওকে দিয়ে তারপর চেঞ্জ করে নিবো সমস্যা নেই।"
কান্তা, মিশি হার মানলো। ট্রেতে করে কয়েকটি আলাদা বাটিতে করে সব রকম থেকেই মিষ্টি সাজিয়ে দিলো ইন্দুর জন্য। রাত ট্রে নিয়েই সিঁড়ি ডিঙিয়ে উপরে উঠলো ইন্দুর রুমের দিকে।
ঘরটায় বিরাট জ্যাম। তুরুলা বাহিনী উপস্থিত এখানেই। কিছু একটা নিয়ে বেশ হাসি তামাশা হচ্ছে সবার মাঝেই। দরজা দিয়ে রাতকে মিষ্টি হাতে ঢুকতে দেখেই সায়ন দ্রুত কদমে এগিয়ে এলো...
"ওহহো,রাত ভাই মিষ্টি নিয়ে এসেছে। দেখি দেখি..."
বলেই ট্রের দিকে হাত বাড়াতে গেলেই রাত সরিয়ে ফেললো সেটি।বললো..
"একদম নাহ।এগুলো তিয়াসের। তোদের সবার জন্য নিচে আছে, বড় মার থেকে নিয়ে নে যাহ।"
সায়নকে আর পায় কে,লাফাতে লাফাতেই ছুটলো সে। রাতের ইশারায় বাকিরাও বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। ইন্দু হাসি মুখে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে।রাত এগিয়ে গেলো বিছানায়।মিষ্টির ট্রে খানা ইন্দুর সামনে রাখতেই ইন্দু নজর দিলো রাতের উপর...
"ভিজে গেছেন তো আপনি। তারাতাড়ি চেঞ্জ করে নিন,ঠান্ডা লেগে যাবে তো আবার।"
রাত বা হাত ইন্দুর চুলে বুলিয়ে দিয়ে বললো...
"তুমি খাও যেটা মন চায়।এগুলো ভালো না লাগলে নিচে আরো কয়েক রকম আছে, ওগুলো থেকে টেস্ট করতে পারবে। আমি ৫ মিনিটেই আসছি।"
ইন্দু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।
-------
পৃথিবী নিজের ক্যামেরা দিয়ে টেবিলে সাজানো মিষ্টির ভিডিও নিচ্ছে নানা এঙ্গেল থেকে। ওদিকে তার এসবের জন্য তুরুলা বাহিনী মিষ্টিতে হাতও লাগাতে পারছে না। কলিংবেলের শব্দে সেদিকে ফিরে তাকালো সবাই। তারপর একে অপরের দিকে তাকিয়ে হুট করে এক সাথেই বলে উঠলো...
"আমি পারবো না..."
এদের এসব কান্ড রোজকার ঘটনা। মিশি কাছেই ছিলো,বিরক্ত হয়ে এগিয়ে গিয়ে সে নিজেই দরজা খুলে দিলো। সৌরাজি দাঁড়িয়ে, তাকে দেখেই মিশি হাসলো, আলতো করে জড়িয়ে ধরলো তাকে। জিজ্ঞেস করলো...
"কেমন আছিস সাজি মা?"
সাঁজি হেঁসে উত্তর দিলো...
"ভালো আম্মু,তুমি?"
"আমিও ভালো। ইশশ,ক'দিনেই কেমন শুঁকিয়ে গেছিস তুই? "
মিশির কথায় সাঁজি উত্তর দেওয়ার আগেই পেছন থেকে আরেকটি কন্ঠ ভেঁসে এলো..
"বাহ সাঁজিপু,,এটা বুঝি আনান ভাইয়ের আম্মু? তোমার হবু শাশুড়ী? "
তট মাত্রই একটা মিষ্টি মুখে পুরতে নিচ্ছিলো।কন্ঠটা শুনেই থেমে গেলো সে। চোখ দুটো গোলগোল হয়ে গেলো তার, মুখের সামনে মিষ্টিটা ধরে রেখে হা করেই দরজার দিকে ঘুরলো সে।
একজোড়া আঁখি যে তাকেই এতক্ষণ খুজছিলো,দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলতেই তটের এমন উদ্ভব ভাব দেখে ফিক করে হেঁসে দিলো মেয়েটি। তট ব্যতিব্যস্ত হয়ে এদিক ওদিক তাকালো। মিষ্টিটা সরিয়ে মুখ বন্ধ করে নিলো। বিরবির করে উচ্চারণ করলো..
"ও বাড়িতে কেন এলো?"
ছায়া ছবি এগিয়ে যেতে যেতে বললো...
"আরেহ, নদী যে। আসো আসো ভেতরে।"
নদী হেঁসে গিয়ে দু হাতে জড়িয়ে ধরলো ছায়া-ছবিকে। বাড়ির বড়রা নদীকে এই প্রথম দেখছে। চিনে উঠতে পারেনি ঠিক তারা। ছায়া সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিলো নদীর সাথে। মেয়েটা মিশুকে,কেমন যেন মুহূর্তেই মিশে গেছে বাড়ির বড়দের সাথেও।সাঁজি বললো....
"বিভাকে দেখতে আসছিলাম। পথেই নদী সাথে দেখা, ওকে বলতেই বললো সেও বিভাকে দেখতে আসবে। তাই নিয়েই এলাম।"
সাবিহা হেঁসে বললো...
"ভালো করেছিস সাঁজি মা। আয় একটু বসে জিরিয়ে নে।"
নদী এদিক ওদিক তাকিয়ে ফের তাকালো তটের দিকে। তট চোখের ইশারায় কিছু একটা জিজ্ঞেস করলো তাকে, বুঝতে পেরেই নদী বাঁকা হেসে ডান চোখ মারলো তটকে। ওখানেই থেমে গেলো তট। বিরক্ত লাগছে কিছুটা, তবে সেটা নদীকে বুঝতে দেওয়া যাবে না। নদী জিজ্ঞেস করলো...
" আপি কোথায়? দেখছি না যে?"
সাবিহা হেঁসে বললো...
"তিয়াস উপরেই আছে নিজের রুমে। সাঁজির সাথে যা,দেখাকরে আয়।"
দুজন মিলে এগিয়ে গেলো সিঁড়ি বেয়ে। যেতে যেতেই নদী আবার তটের দিকে তাকিয়ে একটু আড়ালে ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে মারলো, সাথে সাথেই তটের কাশি উঠে গেলো। এদিকে নদী মুখ টিপে হাসতে ব্যস্ত। তখনই পাশ থেকে সাঁজি বলে উঠলো...
"আমি কিন্তু সবটা দেখে ফেলেছি নদী।"
-----------
ফ্রেশ হয়েই রাত ইন্দুর রুমে ঢুকতে ঢুকতে দেখলো মেয়েটা ডান হাতে একপিস লেমন বরফি ধরে আছে আর বা হাতে চামচ নিয়ে রসগোল্লার শিরা নিয়ে খাচ্ছে। রাত আলতো হাসলো।এগিয়ে এসে বসলো ইন্দু বরাবর। প্লেটে তাকিয়ে দেখলো ক্ষীরমোহনের একটা থেকে একটু খেয়েছে, গোলাপজামেরও একই অবস্থা। লেমন বরফি দুটো হাপিস,তৃতীয়টাই অবস্থান করছে ইন্দুর হাতে। রসগোল্লা খায়নি মেয়েটা,তবে সেটায় থাকা শিরাগুলো প্রায় শেষের দিকে।
"শিরা খাচ্ছো কেন? পেট খারাপ করবে তো। "
ইন্দু মাত্রই আরেক চামচ মিষ্টির শিরা মুখে পুরলো। বললো...
"বরফির সাথে শিরাটা খেতে এত্তো দারুন লাগছে না,কি বলবো আর।খেয়ে দেখুন একটু?"
বলতে বলতেই ইন্দু আপন মনেই নিজের আধখাওয়া মিষ্টিটা রাতের মুখের সামনে ধরলো। রাত হাসলো।নীরবে এগিয়ে গিয়ে মিষ্টিতে কামড় দিতে যাবে তখনই ইন্দু সরিয়ে নিয়ে বলে উঠলো..
"এই এই,সরি সরিহ।। এটা আমার মুখের..."
বাকি কথা টুকু আর শেষ করতে দিলো না রাত তাকে। তার আগেই ইন্দুর হাত চেপে ধরে ঐ মিষ্টিটার থেকেই একটুকরো খেয়ে নিলো। ইন্দু ফের কিছু বলতে যাবে তখনই দরজায় টোকা পড়লো...
"আসবো আপি?"
রাত ইন্দু দুজনই তাকালো সেদিকে। সাঁজি আর নদীকে দেখে ইন্দু বিরল হাসলো।উৎসাহ নিয়ে ডাকলো তাদের...
"আরেহ,,তোমরা? এদিকে আসে,এদিকে আসো।"
অনুমতি পেয়ে তারাও প্রবেশ করলো ভেতরে। রাত নিরবে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। ওরা তিনজন যে গল্প জুড়ে দিয়েছে এতক্ষণে৷
------
আরজু পড়ার টেবিলে বসে। দরজায় বেল পড়ায় পেছনে ফিরে তাকালো একবার। দরজা দিয়ে আফরোজাকে দেখে আর উঠলো না সে। কে এসেছে তা আপাতত দেখার সময় নেই, নিজের মতোই পড়ায় মনোযোগ দিলো। একটু পরেই পাশে কারো হাতের দেখা মিলতেই চোখ তুলে তাকালো। আবির্ভাবের সেই অমায়িক হাসিখানা। সজ্জল দৃষ্টি তার কখনোই সরে না যেন৷ পড়নে হালকা রঙের শার্টটা যেন আটশাট হয়েই এটেছে আবির্ভাবের গায়ে। আরজু ভাবান্তর হলো,, কিছু অপ্রত্যাশিত আকাঙ্ক্ষারা যেন তাকে আবার ঘিরে ধরছে। কোন এক পথ নেহারির দৃশ্য তার চোখে ভাসছে।আপন মনেই নিজেকে নিজে প্রশ্ন ছুড়লো..
"নিবিড় ভাইকেও ঠিক এমনই দেখাতো, তাই না?"
ভেতর থেকে কোনো উত্তর এলো না,তবুও আরজু অপেক্ষা করলো,কিছু তো শুনবে সে। ইচ্ছে গুলো দমন হতে বেশি সময় নেয় না।তেমনি তার অতি প্রেক্ষিত ভেতরকার কথা গুলোও শুনা হলো না আবির্ভাবের কন্ঠে...
"আরজু রানী, আপনার খাতা গুলো। চেক করে নিন সব ঠিক ছে কিনা?"
আরজুর স্তম্ভিত ফিরলো। খেয়াল করলো আবির্ভাব তার প্রয়োজনীয় প্র্যাক্টিকেল খাতাগুলোই টেবিলে রেখেছে। ইন্দু তাকে আগেই বলে দিয়েছে এই ব্যপারে। তাই তেমন অবাক হলো না সে। উঠে দাঁড়িয়ে চোখ ফেরালো আবির্ভাবের দিক থেকে। খাতাগুলো উল্টাতে উল্টাতে আস্তে করে বললো....
"থ্যাংকস।"
আবির্ভাব ঠোঁট এলিয়ে হাসলো।বললো..
"এই শুকানো থ্যাংকসে তো চিড়ে ভিজবে না আরজু রানী।"
নির্মল আঁখি দুটি এবার উঁচু হলো। নিবদ্ধ হলো আবির্ভাবের দিকে।ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ কুঁচকানো। কি চাই লোকটার?..
আবির্ভাব টেবিলে হেলান দিয়ে দু হাত বুকে গুঁজে দাঁড়ালো আয়েশ করে।বললো...
"এত কষ্ট করে কমপ্লিট করলাম,বিনিময়ে কিছু তো প্রাপ্য আমার। তাই না?"
আরজুর ভয় হয়,লোকটা কি কোনো ভাবে অপ্রত্যাশিত কিছু চেয়ে বসবে? এই লোকটার অনুভূতি গুলো যে আরজু বেশ টের পায়। তাহলে কি এইবার সত্যি সত্যিই তেমন কিছু চেয়ে বসবে?..
আবির্ভাব নীরবে পর্যবেক্ষণ করলো আরজুর মুখাভাব। বেশ বুঝতে পারছে তার নির্মলা ভয় পাচ্ছে, অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু চাওয়ার যে এক বিশাল ইচ্ছে পোষন করে আবির্ভাব নিজেও। কিন্তু সময় তাকে বাঁধা দেয়, ভবিষ্যৎ আর অতীত মিশ্রিত কিছু পরিস্থিতি আবির্ভাববে জানিয়ে দেয় 'ইহা মোক্ষম সময় নয়ে,অপেক্ষা করো'
আবির্ভাব এবার ফিক করে হেঁসে দেয়। ঠোঁট দুটি প্রসারিত হয় তার, চোখ ছোট ছোট আকার ধারণ করে। আরজু মুগ্ধ নয়নে সেই হাসিখানাই দেখে যায়, এতো সুন্দর কেন এই লোকটার হাসি?
"কি ভাবছেন আরজু রানী? আপনার হৃদপিণ্ড চেয়ে বসবো আমি? "
আরজুর উত্তরের অপেক্ষা করলো, কিন্তু মেয়েটা কিছুই বললো না। শুধু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়েই রইলো আবির্ভাবের দিকে। আবির্ভাব এবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো...
"শুনুন,,হৃদপিণ্ড হচ্ছে চুরি করার জিনিস,চেয়ে নিতে হয় না। সময় হলে সেটি নিজেই হেটে হেটে চলে আসবে তার নিজ ঠিকানায়। আপাতত আমি এককাপ ধোঁয়া উঠা চা খেতে চাই। পাড়ার মোড়ের রবির টং এর চা। "
আরজু মনে মনে সস্থির নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর আবার সরাসরি আবির্ভাবের দিকে তাকিয়ে বললো...
"ঠিক আছে যান না? চা খেয়ে আসুন?"
আরজুর কথায় আবির্ভাব মাথার কাছটায় চুলকাতে চুলকাতে বললো..
"আপনার থেকে ট্রিট চেয়েছি আমি। আপনাকে সহ-ই যেতে হবে। যাবেন না?"
আরজু নীরবে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আবির্ভাবের দিকে। আবির্ভাবও যেন কত শত বছটের অশেষ উত্তরের আশায় কামুক পাখির ন্যায় চেয়ে আছে আরজুর দিকে। আরজু ভাবছে, আবির্ভাবের সাথে একা এভাবে যাবে এখন? টং এর চা, শব্দগুলো বেশ পুরোনো আরজুর। কতবার যে নিবিড় ভাইয়ের সাথে....
"আমি কি তাহলে ফিরে জাবো আরজু রানী?"
ভাবনায় ছেদ পড়লো আরজুর। দৃষ্টি এদিক ওদিক নাড়িয়ে মুখে হালকা হাসি এনে বললো..
"আপাতত ফিরেই যান। "
আবির্ভাবের মুখের হাসি খানা বিলুপ্ত হলো যেন। আরজু যে এভাবে না করে দিবে তা জানতো আবির্ভাব। তবুও কেন যেন মেয়েটাকো প্রস্তাবটা দিতে ইচ্ছে করলো তার। এখন আর কি, যা হওয়ার কথা ছিলো তাই তো হলো।
আবির্ভাব আস্তে করে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে রুম ত্যাগ করতে উদ্ধত হলো। তখনই পেছন থেকে আরজু বললো..
"ফিরে গিয়ে ড্রয়িং রুমে ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। আমি চেঞ্জ করেই আসছি। "
--------
"কি হয়েছে কি তোমার? এভাবে হুট করে আমাদের বাড়িতে কেন এলে?"
তটের হালকা রাগ মিশ্রিত হিসহিসে কন্ঠের প্রেক্ষিতে দারুন হাসলো নদী।একটু আগেই তট বেশ কায়দা করেই নদীকে নিয়ে সবার আড়ালে গিয়ে খোলা বারান্দাটার কোনে এসে দাড়ালো।মেয়েটার সাথে তার এখন প্রেম প্রেম খেলা চলছে। কিন্তু এতটা বাড়াবাড়ি হয়তো ঠিক হচ্ছে না, তাইতো নদীকে সাবধান করার উদ্দেশ্যেই এভাবে আলাদা নিয়ে আসা।
"আপনাকে দেখতে খুউউব ইচ্ছে করছিলো সুদৃঢ় সাহেব।তাই তো চলে এলাম। আজ সকালে দেখা করার কথা ছিলো। আসেন নি কেন?"
তট ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড বিরক্ত হলেও তা প্রকাশ করলো না। ধীর দৃষ্টিতে বা দিকে তাকিয়ে বললো..
"ব্যস্ত ছিলাম। "
"তাহলে আমাকে জানিয়ে দিলেই তো হতো। আমি দু ঘন্টা অপেক্ষা করছিলাম আপনার জন্য। আচ্ছা বাদ দিন,,আপনার নম্বরটা দিন তো।!"
তট সাথে সাথেই মানা করলো..
"নাহ, নম্বর দেওয়ার দরকার নেই।প্রতিদিনই তো দেখা করছি নাকি, ফোন নম্বর কেন আবার। "
নদী দু হাত কোমরে ঠেকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো..
"আজব,আমি তো আপনারই গার্লফ্রেন্ড নাকি? আমার কাছে আপনার নম্বরটা থাকবে না?"
"না থাকবে না। এখন তুমি যাও বাড়ি থেকে। আ্ আমি কাল দেখা করবো আবার৷ "
অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো নদী তার দিকে। কেমন যেন চোরা চোখে তাকিয়ে আস্তে করে মাথা দুলিয়ে বলে উঠলো...
"দু নৌকায় পা দিয়ে চললে কিন্তু নদীতেই পড়ে যাবেন জনাব সুদৃশ মির্জা "
চোখ তুলে তাকালো তট,,কি বললো মেয়েটা?
"কি বলতে চাইছো তুমি?"
হঠাৎই নদী ফিক করে হেঁসে দিলো। হাসতে হাসতেই বললো...
" যাচ্ছি আমি হুম? কালকে কিন্তু দদেখা করতে না এলে খুব রাগ করবো।টাটা.."
বলেই হুট করে তটের গাল দুটো টেনে দিয়ে দৌড়ে পালালো নদী। তট নিস্তব্ধ,কোথাও যেন নিজের ভেতরই প্রশ্নের আনাগোনা চলছে,আদেও সে কি ঠিক কাজ করছে? এক জনের শাস্তি কি আরেক জনকেই দিয়ে দিচ্ছে? না নাহ,,যা করছে সে, ঠিকই করছে। একই রক্ত যে তারা, এমনই করা উচিৎ।
তবুও কোথাও যেন একটা কিন্তু থেকে যায়। আচ্ছা,তট কি কোনো ভাবে তার অপরিচিতা কে ঠকাচ্ছে? কিন্তু এখনো যে তাকে মনের সুপ্তিসিদ্ধান্তটাই জানানো হয়নি তটের।জানানো হয়নি যে, স্বয়ং সুদৃশ মির্জা প্রেমে পড়েছে। টলটলে আঁখি, চিরল কোমল ঠোঁট, বাহ্যিক গঠন কোনোটাই নয়, বরং অপরিচিতার সুমিষ্ট কন্ঠের ব্যাকুলতর কথার প্রেমেই পড়েছে৷
--------চলবে-----------
[মাঝেমধ্যে নিজেই ঘুলিয়ে ফেলি কার সাথে কার সম্পর্ক বানিয়েছি। আমার আক্কেল হয়ে গেছে এত বিশাল পরিবার নিয়ে গল্প লিখতে গিয়ে।😑]