অভ্রায়ীনি ঐশি -Avrayini oishi

অভ্রায়ীনি ঐশি -Avrayini oishi Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from অভ্রায়ীনি ঐশি -Avrayini oishi, Digital creator, Feni.
(1)

"★"আলতো হাতে কোমল স্পর্শের আবেশ,দু দেহের মাঝে বিস্তর ফারাক রেখেও বুকে নিশ্চিন্তে মাথা রাখার অনুভুতি,,, আপনি হতেই আশা রাখি 'উষ্ণায়ন'

" আমি আপনার শ্যামাফুল বলছি"

30/10/2025

অনুমতি না নিয়ে গল্প চুরি করার জন্য এদের বকবো কি, আমি তো ভিডিও দেখেই হাসতে হাসতে শেষ🤣🤣🤣

আর নাম গুলা যাস্ট... কি সব ইয়ংজুম, ভি,ছি,ডি 😹
ভাইরে ভাই,এদের এই ভংচং ভিডিওতে যত হাজার ভিউজ হইছে আমার রিয়েল পোস্টে তো তার অর্ধেকও নাই মনে হয়।দুনিয়া গোল ভাই,আমার গল্প আমার কাছেই আসলো...😆😆 #অভ্রায়ীনি_ঐশি

29/10/2025

💙
#অভ্রায়ীনি_ঐশি
#বোনাস_পর্ব

চৌধুরী বাড়ির মূল ফটকে আজ বিশেষ সোরগোল। ড্রয়িং রুম ভর্তি আত্মীয় স্বজন। জিসানের মায়ের দিকের কাজিন মহলটা বরাবরই একটু বড়সড়। মামাতো বোন সানিয়া, মুনিয়া, খালাতো বোন তন্নি আর খালাতো ভাইয়েরা প্রলয়, টিটু, সাগর। ইতোমধ্যেই তারা উপস্থিত হয়েছে বাড়িতে। রান্না ঘরের দিকে ভীড় জমেছে, মামি খালাদের। আজ রাত বাদ কালই জিসানের হলুদ অনুষ্ঠান।

আহিশের রুমের বিছানায় আজ তারই একটু জায়গা হলো না। তিন রমনী সন্ধ্যার পর পরই যে এই ঘরে সে লেপ্টেছে, আর উঠার নামই নিচ্ছে না। আহিশ কম্বলের একপাশ ফ্লোরে বিছিয়ে সেটার উপর বসে আরেক সাইড টেনে টুনে গায়ে জড়িয়ে বসে আছে। বেশ বিরক্তি নিয়ে আরো একবার বিছানার উপর একটু জায়গা চেয়ে বললো...

"জেসির বাচ্চা, যা না বোইন। তোর সব কাজিন নিচে একা একা বোর হচ্ছে, তোকে খুব মিস করছে। যা তাদেরকে একটু চিয়ার আপ করে আয়... "

জেসি নাক কুঁচকে বলে উঠলো...

"হাট... ওরা মোর বা'লের কাজিন। শা'লার আত্মীয় স্বজন, আমি ভাই পালিয়েই বিয়া করমু, তবুও এদেরকে দাওয়াত দিনে আইনা ঘরে পালতে পারমু না ভাই। "

চড়ুই দোয়েলের কোলের উপর মাথা রেখে মুখ ঢেকে রেখেছিলো কম্বল দিয়ে সম্পূর্ণ, জেসির কথায় মুখের উপর থেকে কম্বলটা সরিয়ে বলে উঠলো...

"কিন্তু তুই পালাবি কার সাথে? তোর তো কোনো প্রেমিক নেই। "

জেসি ঠোঁট উল্টে বললো...

" তুইও শেষমেশ প্রেমিক নিয়া খোটা দিলি ছোটপাখি? এবার তুই শিউর থাক, ভাবির ভাইটা না সেই দেখতে, ওকে এবার আমি পটিয়েই ছাড়বো। দেখে নিস। "

জেসির কনফিডেন্স দেখে আহিশ ফোন থেকে মুখ তুলে বললো...

"ভাবির কোনো বোন নেই রে? "

দোয়েল সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে উঠলো...

"থাকলেও তোকে পছন্দ করবে না।"

আহিশ ভ্যাবলার মতো তাকায় দোয়েলের দিকে।। মুখ বেকিয়ে বলে...

"হুহ, নিজে একটু বেশি সুন্দরী হয়েছিস তো। পেছন পেছন ছেলেরা ঘুরছে তাই এভাবে বলতে পারছিস।একদিন আমিও তোদের মতো এক সুন্দরী পটিয়ে বিয়ে করে নিবো ডিরেক্ট।হুহ..."

দরজায় কড়াঘাতের আওয়াজ পেতেই সবাই মুখ তুলে তাকায় নিবিড়ের দিকে। নিবিড় হেঁসে বলে...

"কি ব্যপার আজ দেখি চাঁদের হাট আহিশের ঘরে... "

বলতে বলতেই ভেতরে এগিয়ে আসে নিবিড়। দোয়েলের সাথে চোখাচোখি হতেই চোখ মারে সে। দোয়েল দ্রুত মুখ সরিয়ে নেয়। জেসি বলে..

"আমাদের রুমে মিস ইরিন একটু রেস্ট নিচ্ছে। তিনি কড়া কডে বলে দিয়েছে তার ঘুমের সময় যেন ঐ রুমে কেউ না প্রবেশ করে৷ "

নিবির হেঁসে উল্টোদিকে ঘুরতে ঘুরতে বলে...

"ওহ, ইরিন এসেছে। যাই একটু দেখা করে আসি, কত বড় হয়েছে দেখতে হবে তো একটু... "

দোয়েল খপ করে তার হাতটা চেপে ধরে বলে...

"পাগল আপনি? একটা মেয়ের রুমে এভাবে কেন যাচ্ছেন? ঘুম থেকে উঠুক দ্যান..."

নিবিড় মিটিমিটি হেঁসে বলে...

"মনে হচ্ছে কেউ একজন আমাকে নিয়ে খুব ইনসিকিউর ফিল করছে? "

দোয়েলের কানে কথাটা যেতেই দ্রুত হাত ছেড়ে দেয় সে। নিবিড় ঠেলেঠুলে দোয়েলের পাশে একটু জায়গা করে বসতে বসতে বলে...

"বাই দা ওয়ে, ছোট পাখি কোথায়? "

চড়ুই কম্বল এমন ভাবে পেঁচিয়ে আঁকাবাকা হয়ে শুয়েছে যে এখানে কেউ একজন আছে তা বোঝারই উপায় নেই। হুট করে দেখে মনে হবে যেন কম্বল ফেলে রাখা হয়েছে এমনি। নিবিড়ের কথায় কম্বলের ভেতর থেকে ছোট্ট একটি হাত বের করে তুলে দেখিয়ে বললো...

"এই যে ছোটপাখি।"

নিবিড় হাফ নিশ্বাস ছেড়ে বলে ওঠে...

"তোমার এতটাও ছোট হওয়া উচিত হয়নি যে সামনে থেকেও খুঁজে পেতে কষ্ট হয়। যাই হোক,ভাই জিজ্ঞেস করেছে চুড়ি দেখেছো? পছন্দ হয়েছে? "

"ভীষণ পছন্দ হয়েছে। অনেক জোড়া চুড়ি ওখানে। দানাবলটা কোথায়? উনাকে তো থ্যাংকিউ বলা হয়নি। "

নিবিড় একটা নিশ্বাস ফেলে প্রসঙ্গ পালটে নেয় কথার। বেশ কিছুক্ষণ পর আবির পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই নিবিড় ডাকে তাকে...

"ভাই, আমি এদিকে... "

আবির ভেতরে তাকিয়ে দেখে সবাই- ই এখানে। আহিশ তাকে ডাকে...

"ক্যাটারিং এর কাজ করতে করতে বোর হয়ে গেছিস তাই না? আয় বোস এখানটায়। "

আবির একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নেয় চড়ুই পাখি নেই রুমে। তাই নীরবে ভেতরে ঢুকে খাটের কোনে বসে।

সেদিনের পর আবির এড়িয়ে চলেছে চড়ুইকে। যেখানে চড়ুই থাকে সেখান থেকে নীরবে উঠে চলে আসে, রাতে ইচ্ছে করেই বাড়ি ফিরে দেরি করে। হুটহাট দেখা হয়ে গেলে চড়ুই আপন মনে বেশ কথা বলে তার সাথে, কিন্তু আবির বারবারই এড়িয়ে যায় তাকে। বোকা চড়ুই তা বুঝতেও পারে না একদম।

শীতের প্রকোপে আবির বিছানায় পা তুলে বসে কম্বলটা পায়ের উপর টেনে দিলো। মাত্রই বলতে যাচ্ছিলো..

"জিসান ভাই কোথায়..."

ঠিক তখনই কম্বলের ভেতর থেকে ঠান্ডা কিছু একটা আবিরের পায়ে স্পর্শ করলো।চমকে উঠে আবির একটু পিছিয়ে যেতে নিলেই কম্বলের ভেতর থেকে আওয়াজ বের হলো...

"দানাবল,,আপনাকে এত্ত এত্ত এত্ত গুলা থ্যাংকিউ হ্যা... চুড়ির জন্য। থ্যাংকিউ সো মাচ..."

আবির নাক মুখ কুঁচকে কম্বলটা সরাতেই দেখলো চড়ুইকে। এক হাতে আবিরের পা চেপে কিটকিটিয়ে হাসছে সে। আবিরের মাথায় রাগ উঠে বসে। জোড়ে একটা ধমক দিতে গিয়েও পারে না নিবিড় তার হাত চেপে ধরে। আস্তে করে বলে ওঠে...

"আহ বকছিস কেন? থ্যাংকসই তো বলছে তোকে। "

আবির চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলায়। চড়ুইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে..

"দূরে যাও মেয়ে.. "

চড়ুইও বাধ্য মেয়ের মতো শোয়া থেকে উঠে দোয়েলের পাশে গিয়ে বসলো কম্বল মুড়িয়ে। সবাই ব্যস্ত হয় নিজের মতো করে। প্রত্যেকের হাতে ফোন, শুধু চড়ুই ছাড়া। সে নীরবে সবাইকে পর্যবেক্ষণ করছে শুধু। একবার একে তো একবার ওকে দেখেই যাচ্ছে।

আবিরের দৃষ্টি ফোনে নিবদ্ধ থাকলেও মন বারবার চড়ুইকেই দেখে যাচ্ছে। নিবিড় মিটিমিটি হেঁসে ফোনে কিছু টাইপ করছে আর আড়চোখে বারবার দোয়েলের দিকে তাকাচ্ছে। দোয়েলও একটু পর পর রাগী লুক নিয়ে তাকায়। কারন নিবিড় আজ সকালেই দোয়েলের ফেইসবুক আইডি খুঁজে পেয়েছে। সেই থেকেই দোয়েলকে এই সেই মেসেজ করেই যাচ্ছে। কথার টপিক খুজে না পেলে হুদাই ইমুজি পাঠাচ্ছে বার বার। দোয়েলকে ক্ষেপাতে তার ভালোই লাগে বেশ।
চড়ুইয়ের চোখ দোয়েলের ফোনে পড়ে, নিবিড় মাত্রই কোনো কিছু খুজে না পেয়ে একটি গাজরের ইমুজি পাঠায়। চড়ুই পাখি বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখে সেটা। তারপর অনেকক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে মনে মনে গাজরের রঙ লাল থেকে সাদা করে মুলার কথা মাথায় আনে। আবারো গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হয় সে। সময় কাটে ওভাবেই আরো প্রায় দশ বারো মিটিন। চড়ুই বেশ ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আবির আর নিবিড়ের দিকে। এর মধ্যে আবিরের সাথে একবার চোখাচোখি হতেই আবির বিরক্তিতে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। চড়ুইয়ের ভাবান্তর হয় না। বেশ কিছুটা সময় পর চড়ুই তাকায় দোয়েলের দিকে। তারপর বিজ্ঞদের মতোই নীরবতা ছাড়িয়ে হঠাৎ বলে ওঠে সে...

"বোন, একবার চিন্তা কর, এই যে এই দানাবলটা, নিবিড় ভাই। এনাদের মতো এতো হ্যান্ডসাম, ড্যাসিং লোকও পাঁদে.....!!!"

তৎক্ষনাৎ পাঁচ জোড়া চোখ বিস্ফোরিত নয়নে মুখ তুলে তাকালো চড়ুইয়ের দিকে। আহিশের হাত থেকে ফোন খসে পড়ে যায় ফ্লোরে। দোয়েল হতাশ হয়ে তাকিয়েই থাকে চড়ুইয়ের দিকে। এই মুহুর্তে এমন একটা কথা যে চড়ুইয়ের মুখ থেকে বের হবে, তা চিন্তাও করতে পারে নি সে।

আবিরের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়,চমকে ধমকে বলে ওঠে....

"ওয়াট...! "

নিবিড় মুহুর্তে আগেই হাসতে হাসতে খাটের পাশ থেকে নিচে পড়লো। এখন এক হাত পেটে চেপে রেখে আরেক হাত তুলে আবিরের থাইয়ের উপর বারবার বাড়ি দিয়ে তাকে শান্ত থাকার ইঙ্গিত দিচ্ছে যেন সে।

আবিরের ধমক কাজে লাগেনি একটুও। চড়ুই এবার সরাসরি দৃষ্টি দিলো আবিরের দিকে। কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলতে লাগলো...

" হ্যা, এই যে এখন শীতকাল। মুলার সিজন, স্বাভাবিক মুলা খেলে পাদ বেশি আসে। এখন আপনি আর আমি ইন্ডাইরেক্টলি হলেও একই কম্বলের ভেতরই বসে আছি।এখন আপনি যদি আস্তে করে একটা সাউন্ডলেস ধোঁয়া বের করেন, তাহলে সেটা আমি..... "

আবিরের ধৈর্য শক্তি রাশ পায়। থতমত খেয়ে যায় সে। হাত উঁচু করে চেঁচিয়ে বলে উঠলো...

"ঠাটিয়ে একটা চড় দেবো তোমাকে আমি। আর একটা ওয়ার্ড মুখ থেকে বের করে দেখো শুধু তুমি। "

নিবিড় কোনো মতে নিজেকে সামলে নিয়ে আবিরকে বলে...

"ভাই ভাই রিল্যাক্স। ইট’স নরমাল।ছোটপাখি তো বেশ গবেষনা করেই... "

আবির বিরক্ত নিয়ে বলে..

"স্টপ দিস ভাই। ইমব্যারেসিং... "

দোয়েল আস্তে করে চড়ুইয়ের হাতে চেপে ফিসফিসিয়ে বলে...

"বোন চুপ কর, এসব কেন বলছিস? লজ্জার বিষয়... "

চড়ুই নাকোচ করে জোরসে বলে ওঠে..

"আরেহ কিসের লজ্জা। এটা তো প্রকৃতির কাজ, সবারই হয়।.."

নিবিড় আহিশ একসাথেই সম্মতি জানিয়ে বলে...

"ঠিক ঠিক। "

আহিশ আরেকটু বাড়িয়ে বলে...

"আমি তো একদম লজ্জা পাই না, পাঁদ আসলে আমার গার্লফ্রেন্ডের সামনেও পেঁদে দিবো।"

চড়ুইও সম্মতি জানিয়ে বলে..

"সেটাই তো, নিবিড় ভাই.. আপনারও কি কালো ধোঁয়া বের হয়?"

আবারো হাসির রোল পরে পুরো রুমে। আবির আর সহ্য করতে না পেরে কম্বল সরিয়ে উঠে যেতে নেয়..

"ডিজগাসটিং... "

ওমনি চড়ুই তেড়ে উঠে আবিরের এক হাত চেপে ধরে বলে ওঠে...

"আরে আরেহ কোথায় যাচ্ছেন? আপনার কি পাঁদ আসতেছে? "

আবির দাঁতে দাঁত চেপে ঝাড়ি মেরে ছাড়িয়ে নেয় চড়ুইয়ের হাত। চড়ুই বিচলিত হয় না। বরং একদম জ্ঞানীদের মতো করে বা হাত তুলে আবিরের কাঁধে রেখে মাথা দু পাশে আলতো নাড়িয়ে বলে ওঠে...

" পাদাপাদি কোনো সরমের বিষয় না... "

আবির আর পারে না এখানে থাকতে। মেয়েটা এক যাতাকলেই ফেলে দিলো বেছে বেছে তাকেই। ঝাড়ি মেরে হাত সরিয়ে দ্রুত কদমে বের হয়ে যায় রুম থেকে। পেছন থেকে চড়ুই চেচিয়েই গেলো..

"আরে শুনুন না, শুনুন? এই যাহ, চলে গেলো? মনে হয় উনার খুব জোড়েই পাঁদ এসে গেছে... "

---------চলবে--------

29/10/2025

💙
#অভ্রায়ীনি_ঐশি
#পর্ব_১৭
সামান্য খাবারের বিল পরিশোধ করতেই হিমসিম খেয়ে গেলো জিসান। মাত্র ছয় জন মিলে কি আর কখনো বিশ হাজার টাকার খাবার খেতে পারে? কিন্তু যেখানে নিবিড় আহিশের মতো খাদক উপস্থিত সেখানে তা অবশ্যই সম্ভব। বেছে বেছে সব থেকে দামী খাবারগুলোই অর্ডার দিয়েছে দুটো মিলে। বেশিরভাগ খাবারই প্যাকিং করে নিয়েছে । সেগুলো দেখে জিসান করুন কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো...

"কিরে, বাড়িতে কি এক সপ্তাহ খাবার তৈরি করবে না? এখান থেকেই সব নিয়ে যাচ্ছিস? "

আহিশ দু হাত ভর্তি খাবারের প্যাকেট নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হতে হতে বললো...

"আবে, তুই বিল পে কর গিয়ে। এসব পথ শিশুদের জন্য নিয়েছে "

নিবিড় পকেটে দু হাত গুঁজে আস্তে করে জিসানের পাশে দাঁড়িয়ে বললো...

"ইয়ে মানে... ভাইয়াআআ... কোনো হেল্প লাগবে? "

জিসান ভোতা মুখে তারার দিকে তাকিয়ে দেখে মিটিমিটি হাসছে সে। মুখ ফিরিয়ে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে বললো...

"বিপদে ফেলে ভাইয়া বলে টান দিচ্ছিস নিবিড় ভাই? আবির ভাই থাকলে মোটেও এমন করতো না। "

নিবিড় ভাব নিয়ে বললো..

"কিন্তু আমি তো আবির না,নিবিড়। নিবিড় তো এমন করতেই পারে। "

জিসান মুখ ভোতা করে তারার দিকে তাকিয়ে বললো...

"আআ,তুমি জেসি আর পাখির সাথে যাও, গাড়িতে বসো। আমরা আসছি। "

তারাও হাসতে হাসতেই বেরিয়ে গেলো দোয়েল আর জেসির সাথে। নিবিড়ও হাসছে মিটি মিটি জিসানের অবস্থা দেখে। জিসান বলে উঠলো...

"বিশ হাজার টাকা বিল আসছে ভাই। ঝিল পাড়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম, পকেটে যাস্ট চার হাজার নিয়েই বেরিয়েছিলাম, কার্ডও বাড়িতে। "

নিবিড় হাসতে হাসতে পকেট থেকে ফোন বের করে বিল পে করতে করতে বললো...

"ভেবেছিলাম অন্তত দশ হাজার নিয়ে আসবি। তুই তো আমার চিন্তার থেকেও বেশি কিপ্টা।"

জিসান মাথা চুলকে তাকায় নিবিড়ের দিকে। নিবিড় এবার হাসি থামিয়ে বললো...

"ভাবির জন্য কিছু নিয়ে এসেছিস? "

"হ্যা, ফুল এনেছিলাম তো। "

নিবিড় বের হতে হতে বললো...

"ইডিয়েট। ফোন চেক কর.."

জিসান চেক করতেই দেখলো নিবিড় মাত্রই তার একাউন্টে দশ হাজার টাকা ট্রান্সফার করেছে।

"ভাবিকে এমন কিছু গিফট কর যাতে তোদের ফার্স্ট ডেটের চিহ্ন হিসেবে সব সময় রাখতে পারে।"

জিসান হেঁসে বলে ওঠে...

"থ্যাংকস ব্রো, আমার তো মাথায়ই ছিলো না এসব।"

"এত থ্যাংকস দিতে হবে না, এই দশ হাজার বাড়ি গিয়ে রিটার্ন করবি,বউকে নিজের টাকায় গিফট করতে হয়। আর.... খাবারের বিলটা... ওটা আমার পক্ষ থেকেই ট্রিট, ঐ টাকা দেওয়া লাগবে না যা। "

জিসান হেঁসে বলে..

"ওকেয় ওকেয় ভাই। তোরা দুটো ভুল করেই আমার থেকে পাঁচ মাস পরে এসেছিস দুনিয়ায়, তোদের আগে আসার কথা ছিলো। "

রেস্টুরেন্ট থেকে বের হতেই গাড়িতে দোয়েলকে অচেতন অবস্থায় দেখে হাসি উভে গেলো নিবিড়ের। দ্রুত কদমে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো...

"কি হয়েছে ওর.. "

আহিশ ঘন ঘন দোয়েলের মুখে পানি ছিটিয়ে দিতে দিতে বললো..

"হঠাৎ করেই সেন্সলেস হয়ে গেলো। বুঝতে পারছি না... "

নিবিড়ের মুখে চিন্তার ছাপ পড়ে।এগিয়ে গিয়ে বার কয়েক ডাকে দোয়েল কে। একটু পরে জ্ঞান ফিরতেই সস্থির নিঃশ্বাস ফেলে তারা। নিবিড়, দোয়েলের ডান হাত নিজের হাতে তুলে নিয়ে ইমিডিয়েট ট্রিট হিসেবে হাতের তালু ডলতে ডলতে জিজ্ঞেস করে...

"এটম.. ঠিক আছো? খারাপ লাগছে বেশি? "

বেখেয়ালি নিবিড়ের হাত দোয়েলের কব্জিতে লাগতেই দোয়েল ব্যথায় ' আহ' করে হাত ছাড়িয়ে নেয়।নিবিড় তাকায় তার দিকে চিন্তিত দৃষ্টিতে। দোয়েলও নিজের হাতের দিকেই কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। নিবিড় জিজ্ঞেস করে...

"কি হয়েছে হাতে? দেখি?..."

"ব্।বোন? বোনের নিশ্চয়ই হাতে আঘাত লেগেছে। এখানটায়... সেন্স হারালো কেন ও... "

দোয়েল উতলা হচ্ছে, এতক্ষণে সবাই বুঝতে পারে যে চড়ুইয়ের কারনেই দোয়েল হঠাৎ জ্ঞান হারিয়েছে। আহিশ তাকে থামানোর চেষ্টা করে বলে...

"আমি দেখছি কল করে। তুই শান্ত হ। "

আহিশ দ্রুত ফোন করে আয়েশার নম্বরে। রিসিভ হতেই আহিশ জিজ্ঞেস করলো...

"আম্মু, ছোট পাখি বাড়ি ফিরেছে? "

"হ্যা, একটু আগেই ফিরেছে.. "

"ও ঠিক আছে? কিছু হয়নি তো? বড় পাখি বলছে... "

" হ্যা, চুড়ি ভেঙে হাতে গেছে গিয়েছিলো। ব্লিডিং হয়েছিলো অনেক, তাই রক্ত দেখে জ্ঞান হারিয়েছিলো। তোরা চিন্তা করিস না, জ্ঞান ফিরেছে ওর। আবির হাত ড্রেসিং করেও দিয়েছে। দোয়েল ঠিক আছে? "

"হুম, আচ্ছা আমরা আসছি। "

"" ঠিক আছে, আস্তে ধীরে আয়, তারাহুরোর কিছু নেই। "

আহিশ সবাইকে সবটা জানাতেই একটু নিশ্চিন্ত হয় সবাই। কিন্তু দোয়েল চেয়েও নিজেকে শান্ত করতে পারে না, চড়ুইয়ের কিছু হলে যে মেয়েটা ভিষণ অস্থির হয়ে যায়। নিবিড় বুঝতে পেরে দোয়েলের মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে...

" এত চিন্তা করে না পাখি। শান্ত হও। আমরা বাড়ি যাচ্ছিই তো। "

দোয়েল মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিতেই নিবিড় গিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়, জিসানকে বলে...

"তুই ভাবিকে নামিয়ে দিস যা,.."

----------
হাতে ব্যান্ডেজ করে দিলেও আসেপাশে ছড়িয়ে যাওয়া রক্ত শুকিয়ে রয়েছে চড়ুই পাখির হাতে। আবির মাত্রই ভেজা তুলো দিয়ে রক্ত গুলো মুছে দিচ্ছিলো। সাথে জুলেখা দাঁড়িয়ে। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে সাবিহা। কিছুটা শান্ত হয়েছে সে,জিজ্ঞেস করে...

"কি অবস্থা ওর? "

আবির নিজের কাজে ব্যস্ত থেকেই উত্তর দেয়,

"জ্ঞান ফিরেছিলো,ঘুম পারিয়ে দিয়েছি, ক্লান্ততা কেটে যাবে। "

সাবিহা এগিয়ে গিয়ে চড়ুইয়ের আরেক পাশে বসে। ক্লান্ত মুখশ্রীতে আদুরে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে শান্ত স্বরে বলে...

"মেঝো.."

জুলেখা উত্তর দেয়..

"জ্বী ভাবি? "

"আবিরের সাথে একটু আলাদা করে কথা বলবো আমি। "

জুলেখা বুঝতে পারে, মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে দরজা ভিড়িয়ে বেরিয়ে যায়। সাবিহা আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে...

"ওর হাতটা ছাড় আবির... "

থমকে যায় আবিরের হাত। সাবিহার কথাটা যেন কানে এসেও আসতে চাইছে না। চমকে মায়ের দিকে তাকায় সে। সাবিহা আবারো চড়ুইয়ের হাতের দিকে ইশারা করে বলে...

"হাতটা ছেড়ে দে। "

আবির নীরবে মায়ের কথাই মেনে নিলো। চড়ুইয়ের হাতটা বিছানায় রেখে পাশ থেকে উঠে দাঁড়ায় সে। সাবিহা মুখ ঘুরিয়ে তাকায় চড়ুইয়ের ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে। ওভাবেই ভিষণ শান্ত স্বরে বলে...

" মা নিয়ে ওর মাথায় উল্টোপাল্টা কথা কেন ঢুকিয়েছিস তুই? "

আবির বলতে নেয়..

"আম্মু আমি তো যাস্ট..."

"কেন ওকে বলেছিস আমি ওর কেউ না?ওর মা না? আমি ওকে বিশ্বাস করবো না?"

আবির তাকিয়ে থাকে শুধু সাবিহার দিকে। সাবিহার চোখে পানি ভীর করে। ঘন ঘন চড়ুইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে...

"প্রায় আট বছর ধরে এই মেয়ে দুটোকে আমি দেখছি। ক্লাস সিক্সে যখন প্রথম আহিশের সাথে স্কুলে মারামারি করেছিলো, স্যার ভিষন বকেছিলো এই মেয়ে দুটোকে। সেদিন জেদের বসে আহিশের পিছু পিছু লুকিয়ে এই বাড়িতে আসে ওরা প্রথমবার। এই ছোট পাখি ইচ্ছে মতো বিচার দিয়ে গেছে আহিশের নামে। বাচ্চা দুটো এতো মিষ্টি ছিলো, আমরা বিচার শুনবো কি, চড়ুই পাখির পাকা পাকা কথা শুনেই হেঁসে কুটি কুটি হচ্ছিলাম। সেদিন আমি যদি ওদেরকে বকে দিতাম, তাহলে আজ এতটা জড়িয়ে যেতো না মেয়ে দুটো আমাদের সাথে। আমি বুকে জড়িয়ে ধরেছিলাম ওদের। মেয়ে দুটো এতো আদরের কাতর, ইচ্ছে করে আহিশের সাথে ঝগড়া করে বাড়ি আসতো বিচার দেওয়ার নাম করে শুধু আদর খেতে। আমারও ভীষন মায়া লাগতো ওদের। নিজেই আহিশকে বলতাম নিয়ে আসতে ওদেরকে। মাঝেমধ্যে আমি স্কুলে গিয়েও দেখে আসতাম মন চাইলে। তোদের বাবা চাচারাও যেতো এই মেয়ে দুটোকে দেখতে। তোরা যেই বয়সে আমার থেকে দূরে গিয়ে নিজেদের ক্যারিয়ার বেছে নিয়েছিলি, এই মেয়ে দুটো ওদের সেই বয়স থেকে আমার কাছে আসে। কেন আসে জানিস? কারন ওদের মা নেই, দ্বিতীয় বিয়ের পর বাবাও আর ওদের নেই। স্কুলে বাচ্চারা ওদের নিয়ে হাসতো মা নেই বলে। লাঞ্চ টাইমে ওদের কেউ এসে টিফিন দিয়ে যেতো না, ছুটি হলে বাড়ি থেকে কেউ নিতে আসতো না। স্কুলে কোনো বাচ্চার সাথে মারামারি হলে অন্য বাচ্চাদের মা বাবা এসে টিচারকে বিচার দিতো, এই মেয়ে দুটোর পক্ষ হয়ে কেউ কখনো যায় নি বলে দোষ না থাকলেও বকা শুনতো, মার খেয়ে নিতো। স্কুল ছুটির দু ঘন্টা পাড় হয়ে গেলেও বাড়ি থেকে খোঁজ নিতো না কেউ এই মেয়ে দুটোর। ওরা মায়ের আদর পায় নি, সেই একটু আদরের লোভে মেয়ে দুটো বন্ধুত্ব করেছে আহিশ জেসির সাথে। যাতে এই বাড়িতে যখন তখন বন্ধুত্বের খাতিরে ছুটে আসতে পারে, একটু সময় আদরে থাকতে পারে যেন। একদিন তোর ফুপি ওদের এই বাড়িতে আসা নিয়ে বেশ বকেছিলো। তারপর মেয়ে দুটো আর এক সপ্তাহে এই বাড়ি মুখো হয় নি। আমার মন মানে নি, নিজে গিয়ে স্কুল থেকে নিয়ে এসেছি ওদের, দোয়েল কথা বলতে ভেবে চিন্তে বলতো প্রথম থেকেই। কিন্তু এই চড়ুই সেদিন আমায় আপন মনে বলেই বসলো.. " আমরা যে বারবার তোমাদের বাড়িতে আসি, তুমি কি রাগ করো? আসলে আমাদের আম্মু নেই তো, তুমি আমাদেরকে আম্মুর মতো করে ভালোবাসো তো তাই আসি। তুমি বারণ করে দিলে আর আদর খেতে আসবো না। '... আর আজ তুই এই মেয়েটাকে বুঝিয়েছিস আমি ওর কেউ না? আমি ওর মা না? "

সাবিহা কাঁদছে, আবিরের বুক ভার হয়ে আছে। ছেলেটা তেজিয়ান, কিন্তু নিজের ভুলকে সঠিক বলে চালিয়ে দেওয়ার মতো শিক্ষা নিয়ে বড় হয়নি সে। তাইতো এই সময়ে সে নীরব ভুমিকাই পালন করছে, হয়তো প্রশ্ন গুলো তার জন্যই তৈরী।

" যে মেয়েটা সেই ছোট্ট থেকে আমার হাতে খাবে বলে আবদার করতো, সেই মেয়ে ঐ দিন প্রথম আমার হাতে খেতে চায়নি। আমার ঠিক কতটা কষ্ট লাগছিলো ঐ মুহুর্তে তুই বুঝতে পারছিস একটুও? পুরোটা রাত আমি এটা ভাবতে ভাবতেই কেঁদেছি, তোর আব্বু আমায় বুঝিয়েছে ঘুমের ঘোরে মানা করেছে, কিন্তু আমার মন মানছিলো না একটুও। গত কয়েকদিনে একটিবারও মেয়েটা আমার কাছে কোনো কিছু নিয়ে আবদার করে নি। একটিবার নিজ থেকে এসে জড়িয়ে ধরে নি। জন্মদিনের সারপ্রাইজ পাওয়ার পর আমার আশা ছিলো সবার আগে চড়ুই এসে জড়িয়ে ধরবে আমাকে, কিন্তু সেদিনও ও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে আমার থেকে। দোয়েল আসলেও ও আসেনি একটিবারও আমার কাছে। এই দিন গুলো আমার ঠিক কেমন লেগেছে তুই কি আদেও বুঝতে পারবি কখনো? ও নিজেকে আমার থেকে সরিয়ে নিচ্ছিলো ধীরে ধীরে, কারন কি? তুই ওকে বুঝিয়েছিস আমি ওর কেউ না, ওর মা না। কেন এমনটা করলি বাবা তুই? কেন এই বোকা মেয়েটাকে তুই এসব বুঝাতে গেলি? মা নিয়ে কেন খোঁটা দিলি ওকে তুই? "

আবির এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে চড়ুই আর সাবিহার দিকে। এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর সে দিতে পারে না। কিন্তু এতটুকু সে বুঝতে পারে তার মা তার থেকেও বেশি এই মেয়েটাকে ভালোবাসে। কেন যেন আজ নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে আবিরের। সেদিন যদি নিজের একটি ভালো ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমেরিকার পথে পা না বাড়াতো, তাহলে আজ সেও তার মায়ের এতটা আদর পেতো, বুঝতো মাকে। তার থেকেও বেশি এই মেয়েটা প্রিয় হয়ে যেত না তার মায়ের কাছে।

আবির পিছু হটে,, দ্রুত কদমে বেরিয়ে যেতে চায় ঘর থেকে, অসহ্য লাগছে তার। ভীষণ রাগ লাগছে, কিন্তু কার প্রতি এই রাগ? মায়ের প্রতি, চড়ুইয়ের প্রতি নাকি নিজের প্রতি? সে জানে না। শুধু এতটুকুই জানে পরিস্থিতি তাকে তার মায়ের থেকে দূর করে দিয়েছে। যেটা এই ষোলো বছরে বিদেশে থেকেও অনুভব হয় নি, সেটা আজ মায়ের এতটা কাছে থেকেই অনুভব করছে সে। ভীষণ ভাবে...

"দাঁড়া আবির... "

মায়ের কন্ঠে থেমে যায় আবিরের পা। সাবিহা চোখ মুছে নিজেকে শান্ত করে উঠে দাঁড়ায়। এগিয়ে আসে আবিরের সামনে। আলতো হাতে আবিরের চুলের ভাঁজে হাত বুলিয়ে দেয় তিনি। বলে ওঠে...

"তুই তো আমার রাজপুত্র বাবা,এতগুলো বছর মায়ের থেকে দূরে ছিলি। কিন্তু আমি তো তোদের সব সময় দূর থেকে হলেও ভালো শিক্ষা দিয়ে এসেছি। ঐ দিন তোর সাথে ছোটপাখিকে দেখে আমি ভেবেছিলাম তুইও হয়তো ওকে পছন্দ করিস, তোদের দুটোর একসাথে একটা ভবিষ্যৎ হবে।"

আবির বিরস মুখে বলে...

"এমন কিছুই না আম্মু,আমি ওকে হেইট করি, বিরক্ত লাগে ওকে দেখলেই আমার। ঐ দিন তো শুধু মাত্র সামান্য একটা......"

"সামান্য। আমেরিকায় এসব খুব সামান্য বিষয় আমি জানি বাবা, তোর কাছেও সামান্যই। আমাকে তোরা কেউ না বললেও আমি এটা কখনোই বিশ্বাস করবো না যে ছোটপাখি নিজ থেকে তোর কাছে এসেছে। ও খুব বোকা ধাঁচের মেয়ে, আজকালকার যুগে এসব লাভ গেইমে কত কত বুদ্ধিমতী মেয়েরাও ফেঁসে যায়, সেখানে এই চড়ুইতো দুধভাত। তুই ওকে পছন্দ করিস না,কিন্তু তোর কাজ গুলোর কারনে ও তোর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়বে, তোর প্রতি ওর মায়া জন্মে যাবে, ভালোবাসাও। আমার মেয়েটা অনেক কষ্ট পাবে তখন বাবা। তোর মনে যেহেতু ওর প্রতি কোনো অনুভুতিই নেই, তুই ওকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করিস না বাবা। ওকে নিজের এতটা কাছে টানিস না। ধরে নে এটা তোর মায়ের অর্ডার। "
আবির নিরবে তাকায় ঘুমন্ত চড়ুইয়ের দিকে। রাগ, ক্ষোব নাকি ক্লান্তি বুঝা গেলো না তার স্বরে, বলে উঠলো..

"ওকে নিজের কাছে টানার কোনো ইচ্ছেও নেই আমার। আই হেইট হার..."

আর থামে না আবির। গটগট পায়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।

----
নিবিড় সহ দোয়েল, জেসি, আহিশ ফিরে আসে। বেশ কিছুক্ষণ আগেই। এসেছে ধরেই দোয়েল বসে আছে চড়ুইয়ের পাশে। এসেছে ধরেই সাবিহাদের একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে..
ও কি হাতে খুব ব্যথা পেয়েছে? বেশি রক্ত বেরিয়েছে বোনের? তোমরা বলছো ফ্লোরে পড়ে গিয়েছিলো। মাথায় আঘাত লাগে নি তো ওর?...

আহিশ তাকে থামানোর জন্য বলে..

"আর কোথাও ব্যাথা পেলে তুই তো বুঝতিই বড়পাখি৷ শান্ত হ না একটু। ফ্রেশ হয়ে আয়,ছোটপাখি তো ঘুমাচ্ছে এখন৷ "

দোয়েল শোনে না, বোনের ঘুম ভাঙার আগে এক চুলও নড়বে না বলে জানিয়েছে। হলোও তাই। চড়ুইয়ের ঘুম ভাঙতেই বোনকে দেখে নিজেকে গুটিয়ে নেয় মেয়েটা। সাবিহাকে নিজের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দেখে আস্তে করে মুখ তুলে প্রশ্ন করে...

"ত্ তুমি কি আমার উপর রেগে আছো আন্টি? "

সাবিহাএকটু ভাব নিয়ে বলে...

"রেগে তো আছিই। শুধু তোর উপর না, তোদের দু বোনের উপরই। "

চড়ুই ভয় পায়, আন্টিকে এত করে অনুরোধ করার পরও কি তার সাথে সাথে বোনকেও খারাপ ভাবছে? করুন চোখে তাকায় মেয়েটা। এক্ষুনি হয়তো চোখ ভেঙে কান্না গড়িয়ে পড়বে।
এদিকে দোয়েল কিছু না বুঝতে পেরে প্রশ্ন করলো...

"কিন্তু আমরা কি করেছি আন্টি? "

"কি করেছিস মানে?শুনলাম আমার স্বামীকে বেশ আব্বু বলে ডাকা হচ্ছে দুজনার। আমি কোন দিক দিয়ে তোদের আদরে কমতি রেখেছি বলতো? এত কিছুর পরে আমার কি ইচ্ছে হয় না তোদের মুখে মা ডাক শুনতে? কই আমাকে তো একটাও একটু ভালোবেসে আম্মু বলে ডাকিস না তোরা। "

দোয়েলের বুক ভার হয়ে আসে৷ 'ড্রিমস কাম ট্রু ' কথাটা কি আসলেই প্রতিফলিত হয়েছে তার জীবনে? সাবিহার প্রতিটি কাজ দোয়েলের মন কাড়ে, মায়ের গায়ের মিষ্টি গন্ধটা কেমন ভুলে গেছে এই মেয়ে দুটো। কিন্তু এই যে এই মহিলাটার বুকে মুখ গুঁজলেই কেমন যেন মা মা গন্ধ পাওয়া যায়। আচরণ আবেগকে এগিয়ে দেয়, তেমনি এই মহিলাটার প্রতিটি আচরনও দোয়েলের মনে সুপ্ত এক ইচ্ছে জাগিয়েছে। বহু দিনের প্রতিক্ষ একটি ডাকের ইচ্ছে, একবার আন্টি থেকে সোজা আম্মু বলে ডাকতে। কিন্তু আর যাই হোক,মা ডাকার জন্য আবদার তো আর করতে পারে না দোয়েল, তাই মনের ইচ্ছেটা মনেই রয়ে গেছে এতগুলো দিন। আজ সাবিহা নিজ থেকে বলছে, হঠাৎ করে মনে হলো আন্টি দেখতে একদম তাদের মায়েরই মতো। হাসি কান্না সব একই রকম, কিন্তু এমন মনে হওয়ার কারন কি? ভাবতে চাইলো না দোয়েল, সে পূর্ণতা পেয়েছে নিজের স্বপ্নের৷ হুহু করে কেঁদে উঠলো সাবিহাকে জড়িয়ে ধরে। সাবিহাও আগলে নিলো তাকে৷

চড়ুই এগোয় না, শুধু নীরবে চেয়ে থাকে তাদের দিকে। সাবিহা তার দিকে এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে করুন কন্ঠে বললো...

"আর কত কষ্ট দিবি তুই আমায়? আর কত জ্বালাবি? এখন থেকে আমি আর তোদের মায়ের মতো না, মা-ই তোদের। আয় আমার বুকে আয় এবার? "

চড়ুই পারে না বারন করতে, ছোট্ট হৃদয়টা সাবিহার আবদারকে ফেরাতেও পারে না। ধীরে গিয়ে হালকা জড়িয়ে ধরে সাবিহাকে। সাবিহা লক্ষ্য করে তার পিঠে হাত দিয়ে বললো...

"শক্ত করে জড়িয়ে ধর? আমি তোকে বিশ্বাস করি তো মা। এত দূরত্ব কেন রাখছিস তুই আমার থেকে? আমার মেয়েদের আমি বিশ্বাস করবো না তো কে বিশ্বাস করবে আর? ভালো কাজে যেমন খুশি হই, খারাপ গুলোতে কি একটু ডাক দিতেও পারবো না আমি? আমার মেয়েদেরকে কি আমি শাসন করতে পারবো না নাকি বল? আমার থেকে দূরত্ব বাড়াতে চাইলে মারবোও তো আমি তোদের।বোকা মেয়ে আমার, দূরে সরতে চায়... "
----------চলবে---------

28/10/2025

💙
#অভ্রায়ীনি_ঐশি
#পর্ব_১৬

জেসির রুমে পিনপতন নীরবতা। খাটের উপর বসে নখ খাচ্ছে জেসি। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চিন্তিত হস্তে দ্রুত চুল বাঁধছে দোয়েল। আহিশও মাত্রই রুমে এসে বললো..

"আমি রেডি, তোদের হলো? "

জেসি বলে..

"বড় পাখি চুলটা বেঁধে নিলেই বেরোবো। "

ঐ সময় দরজার সামনে এসে বুকে দু হাত গুঁজে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো নিবিড়।...

"কোথাও যাওয়া হচ্ছে নাকি? "

দোয়েল পেছনে ফিরে তাকায়। চুল বাঁধা শেষ হতেই হাতব্যাগটা নিয়ে দ্রুত হাতে গুছিয়ে নিতে নিতে বললো...

" বোনকে কলে পাচ্ছি না। সেই সকালে বেরিয়েছে, এতক্ষণে চলে আসার কথা। কিন্তু আসেনি এখনো। ওকে খুঁজতে হবে... "

বলতে বলতেই নিবিড়ের পাশ কাটিয়ে বের হতে নিলেই নিবিড় এক হাতে দোয়েলকে আটকায়। রাগ হয় দোয়েলের, মুখ কুচকে বলে...

"কি সমস্যা আপনার? "

নিবিড় হেঁসে বলে..

"আমাকেও নিয়ে যাও? "

"তো চলুন না, আটকাচ্ছেন কেন? "

বলতে বলতেই দোয়েল আবার হাটা ধরে। নিবিড়ও তার পিছু পিছু সিড়ি বেয়ে নামে। সাথে আহিশ আর জেসিও। গাড়িতে উঠে বসে তারা। নিবিড় গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে একটু দূরে গিয়ে একটা গান চালিয়ে দিলো আরামসে। এমনিতেই চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে দোয়েলের, তার উপর নিবিড়ের এমন খাম খেয়ালিপনায় সে আরো রেগে যায়। চেচিয়ে বলে ওঠে...

"আমরা চিন্তায় মরে যাচ্ছি, আর আপনি কি শুরু করেছেন এসব? গান বন্ধ করুন এক্ষুনি। "

নিবিড়ও বলে ওঠে...

"ওমাহ, ঘুরতে যাচ্ছো, একটু মজা মস্তি হবে না? "

আহিশও বিরক্তি নিয়ে বলে...

"নিবিড় ভাই, এটা মজা করার সময়? "

"ছোটপাখি ভাইয়ের সাথে আছে। লাঞ্চ করছে বিরিয়ানি দিয়ে। ওর ফোন আর পার্স হারিয়ে গেছে তাই কলে পাওয়া যাচ্ছে না। সময় হলে চলে আসবে বাড়িতে। শান্তি? "

তিনজন একটু চিন্তা মুক্ত হলো। দোয়েল বলে উঠলো..

"তো আপনি এতক্ষণ বলেন কি কেন? আর এখন কোথায় যাচ্ছেন আবার? "

"ঘুরতে... "

আহিশ চেচিয়ে ওঠে...

"ইয়াহু, বহুদিন আউটিং এ যাই না ভাই। টাকা পয়সা তেমন নিয়ে বের হইনি। আজ সব তোর খরচ। "

জেসি বলে..

"তুই আগে বলবি না? জিসান ভাইয়ের জন্য ওয়েট করতাম.. "

"তোর ভাই, ভাবিকে নিয়ে ডেটে গেছে। আর আমরা এখন তার রোমান্টিক ডেট বাগরা দিতেই যাচ্ছি। "

তিনজন একসাথেই বলে ওঠে...

"ওয়াট!!!!"

নিবিড় হেঁসে বলে...

"ইয়েসস, তোরা কি ভদ্র হয়ে গেছিস? যেতে চাইছিস না? গাড়ি ঘুরিয়ে নিই তাহলে?"

আহিশ তারাহুরো করে বলে...

"না না না, আমরা যাবো ভাই। আজ তোর নাহ, জিসান ভাইয়ের পকেটে লাল বাত্তি জ্বালাবো। "

জেসি আপসোসের সুরে বলে উঠলো...

"ইশশ, আবির ভাই আর ছোটপাখি থাকলেও ভালো হতো। "

নিবিড় বিরবির করে বলে ওঠে...

"ওরাও তো ধরতে গেলে ডেটেই গেছে... "

--------

প্রায় দশ মিনিটের মতো জুতার সো রুমে উচু টুলের উপর বসে আছে চড়ুই। আবির একটার পর একটা জুতো এনে এনে চড়ুইকে পড়াচ্ছে আর মানায়নি বলে বলে রেখে দিচ্ছে। চড়ুই এবার বিরক্ত হয়েই বলে উঠলো...

"আরেহ এমনি এক জোড়া নিয়ে নিলেই তো হলো। এতো মানামানির কি আছে? "

আবির যেন শুনতেই পেলো না তার কথা। নিজের মতোই কাজ করতে লাগলো। বেশ অনেকক্ষণ পর এক জোড়া জুতা এনে পড়িয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ দেখে বলে..

"পার্ফেক্ট।"

চড়ুই তাকায় নিজের পায়ের দিকে। জুতো জোড়া ভীষন সুন্দর। ছেলে মানুষ হয়েও এতো ভালো চয়েজ, তারিফ না করে পারলো না আবিরের। আবির কাউন্টারে গিয়ে জিজ্ঞেস করে...

"প্রাইজ?"

" সিক্স থাউজেন, স্যার... "

"ওকেয়, সেইম জুতো আরেক জোড়া প্যাক করে দিন। "

জুতার দোকান থেকে বের হতেই চড়ুই প্রশ্ন করে....

"আপনি কি আপনার গার্লফ্রেন্ডের সাথে প্রায় সময়ই জুতার দোকানে আসতেন? "

অসময়ে এমন উদ্ভট প্রশ্নে ভ্রু কুঁচকে তাকায় আবির। চড়ুই তার দিকে একবার তাকিয়ে বললো...

" না মানে, এতো ভালো চয়েজ কি করে হুম? "

"তোমার পছন্দ হয়েছে? "

"হুম সুন্দর তো।"

"আমি মেয়েদের অনেক কিছুই চয়েজ করে নিতে পারি। জুতো, জামা, পাজামা, ওড়না, ইনার ট...."

"এই ছিহ!! "

বলতে বলতেই আবিরের মুখ চেপে ধরে চড়ুই। আবির বাঁকা হাসে। মুখ থেকে চড়ুইয়ের হাত সরিয়ে বলে...

"তুমি চাইলে, তোমার সব কিছুও চয়েজ করে দিতে পারি। যাস্ট সাইজটা বলো... "

"আপনি একটা চরম মাত্রার অসভ্য লোক। "

হেঁসে ফেলে আবির। চড়ুই উপরে উপরে রাগ দেখালেও গাল দুটো তার লালছে আভায় ছড়িয়ে যাচ্ছে, লজ্জায় কাবু হচ্ছে সে। আবির হাফ নিশ্বাস ফেলে প্রসঙ্গ পাল্টে বলে...

"এখান থেকে হেটে গেলে পাঁচ মিনিটের পথ, গাড়ি পর্যন্ত। এতক্ষণ আরামসে কোলে চড়েছো, এখন নিজের পায়ে হেটে যাবে। "

"যাবো না "

"কি যাবো না? বাড়ি যাবে না তুমি? "

"গাড়িতে করে যাবো না।"

"তো? "

"রিক্সা নিন। "

"মাথা খারাপ? রোদ দেখছো তুমি? "

"তো কি হয়েছে। শীতের রোদ ভালো তো। গেলে রিক্সায় চলুন, না হলে আপনি যান আপনার গাড়ি করে। আমি একাই চলে যাবো।"

রাস্তা ঘাটে ঝগড়াঝাঁটি করতে চাইলো না আবির। অগত্যা এই পুঁচকে মেয়ের কথা মেনেই রিক্সায় করে বাড়ির দিকে রওনা দেয় তারা।

----------
ঝিল পাড়ে জিসান বসে অপেক্ষা করছে তারার জন্য। পাশেই একগুচ্ছ লাল গোলাপ৷ তারার জন্যই নিয়েছে সে। মেয়েটার অভিমান হয়েছে জিসান এই কয় দিনে তাকে একটুও সময় দেয় নি বলে। তাই আজ দ্রুত অফিস থেকে বেরিয়ে তারার জন্য ছুটে এসেছে সে। ঠোঁটের কোনের মুচকি হাসি যেন সরছেই না তার।
বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর, দূর থেকেই দেখতে পায় তারা আসছে। শার্ট ঝেড়ে ঝুড়ে উঠে দাড়ায় ফুল হাতে জিসান। তারা সামনে এসে দাঁড়াতেই জিসান হাত নেড়ে বলে..

"হাই তারা.. "

সাথে সাথেই জিসানের পোছন থেকে সমোচ্ছ স্বরে ভেসে আসে...

"হাই ভাবি... "

ব্যস, চোখ গুলো গোল গোল হয়ে গেলো জিসানের। পেছন ফিরে তাকাতেই দেখলো আহিশ, জেসি, দোয়েল আর নিবিড় দাত কেলিয়ে হাসছে৷ জিসান কিছু বলতে নিলেই তারা আবার হাত নাড়িয়ে একটি সুরে জিসানকে বলে উঠলো...

"হাই জিসান ভাইয়া..."

-------

বাড়ি ফিরেই ফ্রেশ হয়ে নিলো আবির। রুম থেকে বের হয়ে এসে নিবিড়ের রুমে একবার চেক করলো নেই সে। নিচ তলায় এসে খোলা বারান্দার কাছে যেতেই দেখলো সাবিহা হাতে বই নিয়ে বসে সেখানটায়। আবির গিয়ে আরেকটা চেয়ার টেনে বসে...

" ভাই ফেরেনি আম্মু? "

"ফিরেছে তো। বাকিদের নিয়ে ঘুরতে গেছে একটু। "

"আচ্ছা। "

বলেই আবির চুপ করে বসে থাকে কিছুক্ষণ। সাবিহা বই থেকে মুখ তুলে আবিরকে এক পলক দেখে জিজ্ঞেস করে..

" কিছু বলবি? "

"হ্যা আম্মু... "

সাবিহা বইখানা বন্ধ করে টেবিলের উপর রাখে। সরাসরি আবিরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলে..

"বল না কি বলবি? "

"আম্মু, নিবিড় বড় পাখিকে ভালোবাসে৷ "

সাবিহার মুখে হাসি ফুটে উঠে। চমৎকার হেসে বলে...

"সে তো খুব ভালো কথা। আমারও পাখিদের খুব পছন্দ। ভীষন লক্ষ্মী মেয়ে দুটো। "

" ভাই স্টেবল এখন আম্মু। আমি চাইছি তুমি আব্বুর সাথে কথা বলো, দোয়েলের পরিবারকে জানিয়ে ওদের বিয়ের ব্যবস্থাটা করে রাখতে৷ "

সাবিহা খুশি হয়ে বলে ওঠে...

"আলহামদুলিল্লাহ, আমি আজই তোদের আব্বুর সাথে কথা বলবো। আমার দুই ছেলে বড় হয়ে গেছে, পছন্দ সই পাত্রীও বেছে নিয়েছে। এর থেকে বড় আর কি হতে পারে। পাখিদের আব্বুর সাথে কথা বলতে বলবো আমি, যেন উনারা উনাদের দুই মেয়েকে আমার দুই রাজপুত্রের জন্য দিয়ে দেয়... "

এতক্ষণ সব ঠিক থাকলেও আবির এবার মুখ তুলে তাকায় সাবিহার দিকে। আপত্তি জানিয়ে বলে...

"তোমার বুঝতে ভুল হচ্ছে আম্মু। আমি ভাই আর দোয়েলের কথা বলছি। আমি এই মুহুর্তে বিয়ে করছি না। "

সাবিহা এবারও হেঁসে বলে...

"আচ্ছা বাবা, তোরা নিজেদের সময় দে। এখন না হয় তোদের এঙ্গেজম্যান্টটা করিয়ে রাখবো, তারপর সময় দেখে বিয়ে..."

"আম্মু, আমি তা বলতে চাই নি। "

সাবিহার ভ্রু কুঁচকে যায়..

"তা হলে? "

"আমি শুধু বলতে চাইছি, ভাই দোয়েলকে ভালোবাসে। এতে আমায় কেন আনছো? আচ্ছা, তোমাদের যদি মনে হয় যে আমরা এক সাথে বিয়ে করি, তাহলে এখন ভাই আর দোয়েলের এঙ্গেজম্যান্টটা করিয়ে রাখো, তারপর আমার মেয়ে পছন্দ হলেই বিয়েটা একসাথে...

" মেয়ে পছন্দ হলে মানে? তুই ছোট পাখিকে পছন্দ করিস না? "

"আম্মু কি সব যা তা বলছো। ওই মেয়ে বিয়ে করার মতো নাকি? ওকে কেন আমি পছন্দ করবো। "

সাবিহার চোখ সরু হয়, চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ায় তিনি। জিজ্ঞেস করে...

"কি বলতে চাইছিস তুই? "

"আম্মু আমি এটাই বলতে চাই যে, দোয়েল যথেষ্ট বুঝদার মেয়ে, ভাইয়ের জন্য ও পার্ফেক্ট। কিন্তু চড়ুই পুরোটাই উল্টো। কোনো ম্যাচিউরিটি নেই, কথা বার্তার ধরন ঠিক নেই, সারাক্ষণ বাচ্চাদের মতো লাফালাফি, এসব আমার সাথে একদম যায় না আম্মু। আমার ওকে সহ্যই হয় না, রইলো তো বিয়ে। "

"তাহলে ঐ দিন রাতে ফার্ম হাউজে শিউলি তলায় ওটা কি ছিলো? "

থমকে যায় আবির। চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে চোখ তুলে তাকায় সাবিহার দিকে। অবাক হয়ে বলতে নেয়...

"আম্মু তুমি... "

"সেদিন বারান্দা থেকে আমি সবটা দেখেছি। তুই আর ছোটপাখি শিউলি তলায় একে অপরের সাথে.... "

কথা থেমে যায় সাবিহার, দৃষ্টি আটকায় বারান্দার প্রবেশদারে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা চড়ুইয়ের দিকে। খোলা সিল্কি চুলগুলো মৃদু বাতাশে উড়ছে। হাত থেকে চিরুনিটা ইতোমধ্যেই ফ্লোরে পড়ে শব্দ হয়, সেই শব্দেই কথা থামে সাবিহার। মাত্রই হেলেদুলে আয়েশার কাছে আসছিলো চুল বেধে দেওয়ার জন্য সে। কিন্তু এমন কিছু শুনে ওখানেই থেমে যায় ছোট্ট পাখিটা। আবির আর সাবিহার দৃষ্টি তার দিকে পড়তেই মাথা নত করে নেয় মেয়েটা লজ্জায়, নিজের প্রতি ঘৃণায়।

সাবিহা এক পলক আবিরের দিকে তাকিয়ে আবার তাকায় চড়ুইয়ের দিকে। কিছুটা রাগী গলায়ই বললো...

"এদিকে আয়..."

চড়ুই মুখ নিচু করেই এগিয়ে যায় সাবিহার কাছে। কিছু একটা হচ্ছে তার ভেতর, কিছু ভয়, কিছু হারিয়ে ফেলার আশঙ্কায় হাত কাঁপছে তার। কম্পমান হাতের চুরি গুলো রিনরিনে আওয়াজ তুলছে। সেদিকে ধ্যান দেয় না চড়ুই পাখি। তবে সাবিহার চোখ যায় সেথায়। আস্থা দিয়ে মেয়েটার হাত আঁকড়ে ধরতে নিলেই চড়ুই নিজেই দু হাতে সাবিহার এক হাত আঁকড়ে ধরে। মাথা তুলে তাকানোর সাধ্যি নেই তার, ভাঙা গলায় বলে ওঠে...

"আ্ আমি জানি তুমি এখন কি ভাবছো। আ্ আমি উনাকে সিডিউজ করেছি, এটাই তো ভাবছো তুমি তাই না?... "

সাবিহা করুন কন্ঠে ডেকে ওঠে...

"ছোটপাখি... "

"হ্যা, ছ্ ছোটপাখি খারাপ। খুব খারাপ আমি। সেদিন আমার কি হয়েছিলো, আ্ আমি নিজেও জানি না। কিন্তু আমি এটা জানি, যা হয়েছে তা মোটেও ভালো কাজ নয়। ত্ তুমি তো আমার মা নও, উনার মা। তাই উনার কোনো দোষ দিবেও না তুমি। সবটা আমারই দোষ। আমার ম্ মা থাকলে এখানে তোমার মতোই আমার দোষ দিতো না, বলতো সবটা উনার দোষ। এখন তো আমার মা নেই, আমাকে নিয়ে লড়ার মতোও কেউ নেই। ত্ তাই আমি শিকার করে নিচ্ছি যে আ্ আমারই দোষ। আমিই খারাপ। তুমি, তোমরা সবাই আমাকে ঘৃণা করবে, আমাকে পঁচা মেয়ে বলবে আমি তাও জানি। কিন্তু আন্টি... আ্ আমার বোনের এতে কোনো দোষ নেই, বিশ্বাস করো। আ্ আমার বোন এসবের কিচ্ছু জানে না। বারণ করার পর আমি কাউকে কিচ্ছু জানাইনি, বোনকেও জানাইনি। আমার বোন খুব ভালো আন্টি, আমি খারাপ।... "

সাবিহার হাতের উপর একের পর এক টুপ টুপ করে চড়ুইয়ের অশ্রু কণা গড়িয়ে পড়ছে। সে বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে, এই বাচ্চা মেয়েটা এত কথা বলছে তাকে। কেন বলছে এসব?

চড়ুই মুখ তুলে চায় সাবিহার দিকে। কিন্তু তার কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে মেয়েটার ভয় যেন আরো এক ধাপ বেড়ে যায়। হুট করেই চড়ুই নিচে বসে পড়ে, সাবিহার দু পা জড়িয়ে ধরে সে। আবির হতভম্ব হয়ে যায় চড়ুইয়ের এমন কাজে, কি করছে মেয়েটা...
চড়ুইয়ের কান্নার বেগ বেড়ে যায়। মেয়েটা হাইপার হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। সাবিহার পা জড়িয়েই বলে উঠলো...

"আ্ আমি বোনকে নিজের মতো বুঝিয়ে এ্ এখান থেকে চলে যাবো আন্টি, আর কখনো তোমাদের কারোর সামনে পড়বো না সত্যি বলছি। তুমি আমার বোনকে কিছু বলো না প্লিজ। ব্ বোন এসব জানলে খুব কষ্ট পাবে, আ্ আমার সাথে সাথে বোনেরও অসম্মান হবে, আমার বোন তো ভালো, ওর তো কোনো দোষ নেই। ওর অসম্মান আমি চাই না আন্টি। তোমার পায়ে পড়ি আন্টি, দয়া করে বোনকে কিছু বলো না। বোনও যদি আ্ আমাকে ভুল বুঝে আমি কি নিয়ে থাকবো আর, আমার তো কেউ নেই ও ছাড়া। ত্ তোমরা হয়তো ভাবছো, আমরা অনাথ, মা ছাড়া বড় হয়েছি, বাবা তো থেকেও না থাকার মতো, ত্ তোমরা ভাবছো মা বাবার থেকে শিক্ষা পাইনি আমরা, বিগড়ে গেছি, খারাপ মেয়ে হয়েছি। কিন্তু তা মোটেও না আন্টি, আ্ আমি খারাপ হলেও আমার বোন একটুও বাজে মেয়ে না। আ্ আমরা তো তোমার ক্ কেউ না, তাই এসব বলেও তোমাকে বিশ্বাস করাতে পারবো না আমি, কিন্তু আমায় একটু দয়া করো আন্টি, প্লিজ তুমি বোনকে এসব বলো না ও ভেঙে পড়বে, আমি ওর ঘৃণা সহ্য করতে পারবো না আন্টি, ওর চোখে খারাপ হতে পারবো না আমি, আমি আজই চলে যাবো এখান থেকে, প্লিজ আন্টি... প্লিজ বোনকে এসব কিছু বলো না.... "

চড়ুইয়ের কন্ঠ মিলিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে... কান্নার বেগ, হেচকি সব মিলিয়ে যেন একাকার অবস্থা তার। সাবিহা চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেছে যেন। বুক ভার হয়ে আসছে তার। ছলছল চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে অবিশ্বাস্য স্বরে বলে উঠলো...

"ও্ ও কি বললো? আ্ আমি ওকে বিশ্বাস করবো না? আমি ওর মা না? কেউ না আমি ওর? এই মেয়েটা এ্ এসব বলতে পারলো? এত গুলো কথা বলতে পারলো ও...?"

আবির উত্তর দিতে পারে না। নিটেল দেহে শুধু স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে মায়ের দিকে। সাবিহার পা আলগা হতে থাকে চড়ুইয়ের হাত থেকে। এতক্ষণের উতলা কন্ঠ মিলিয়ে গেছে একেবারেই। মুহুর্তেই ঝনঝন আওয়াজ তুলে জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে চড়ুই। সাবিহা তাকাতেই আৎকে উঠে, ' আম্মুরে.." বলে চেচিয়ে বসে চড়ুইয়ের কাছে। আবিরও ছুটে আসে দ্রুত, চড়ুইয়ের মাথাটা দ্রুত নিজের কোলে তুলে নেয়।

চোখের পানিতে এলোমেলো চুল গুলো সারা মুখে লেপ্টে আছে তার। আবির দ্রুত হস্তে মুখ থেকে চুলগুলো সরিয়ে দেয় তার। গালে আলতো চাপড় দিয়ে ত্রস্ত কন্ঠে বার কয়েক ডাকে...

"ওয়াইফি? এই ওয়াইফি? এই মেয়ে.... "

সাবিহা ফ্লোর থেকে চড়ুইয়ের রক্ত মাখা হাতটা তুলে নেয়। চিৎকার করে বলে উঠে...

"আবির, ওর হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে তো।"

আবির দ্রুত হাতে চড়ুইকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরের দিকে ছুটে যায়। খোলা বারান্দা থেকে সর্ব প্রথম সাবিহাদের রুমটাই পরে, আবির এদিক সেদিক না তাকিয়ে সেই রুমে নিয়েই চড়ুইকে শুইয়ে দেয় বিছানায়। সাবিহার চিৎকারে নিজ নিজ ঘর থেকে আয়েশা আর জুলেখাও ছুটে আসে এ ঘরে। চড়ুইয়ের এই অবস্থা দেখে তারাও বিচলিত।

সাবিহার মন মানে না, মেয়েটার মাথা নিজের কোলে তুলে নিয়ে ঘন ঘন আদুরে হাত বুলিয়ে ডাকতে থাকে তাকে। এদিকে তার হাত থেকে এক প্রকার ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। জুলেখার দেওয়া চুড়ি গুলো সেদিনের পর থেকে একবারের জন্যও হাত থেকে খুলে নি। আজ সেই চুড়ি গুলোই চুর্ণ বিচূর্ণ হয়ে আছে, মুঠো ভর্তি চুড়ির মাঝে মাত্র তিনটা চুড়ি অক্ষত হয়ে চড়ুই পাখির হাত দখল করে আছে এখনো। বাকি গুলো রক্তে রঞ্জিত হয়ে ছড়িয়ে আছে খোলা বারান্দার শুভ্র ফ্লোরে। আবির ভীষন খেয়াল নিয়ে হাতের চুড়ি গুলো খুলে রাখে টেবিলে, ইতোমধ্যে তার হাতও ভরে গেছে চড়ুইয়ের রক্তে।
নিজেকে শান্ত করে আবির, বুক কাপছে তারও, অজানা এক ভয়, কিন্তু এই সময় এসব ভাবলে চড়ুই পাখির কিছু হয়ে যেতে পারে। বুকে সাহস সঞ্চার করে ঢোক গিলে চড়ুইয়ের হাতের কাটা স্থানটা একটু ছড়িয়ে দেখে.. শিরা কেটেছে কিনা কোনোভাবে...
আবিরের এমন কান্ড দেখেই সাবিহা কান্নারত কন্ঠে চিৎকার করে ওঠে...

"আবির, কি করছিস এটা।।রক্ত পড়া বন্ধ না করে তুই... "

"আম্মু প্লিজ তুমি শান্ত হও। চাচি ফাস্টএইড বক্সটা এনে দিবে প্লিজ? "

আয়েশা ছুটে গিয়ে এনে দেয় তা। আবির প্রথমেই রক্ত পরিষ্কার না করেই হাতে চিমটা তুলে নেয়। জুলেখা চিন্তিত কন্ঠে আবিরকে বাঁধা দিতে গিয়ে বলে...

"আবির বাবা, এটা কি করছিস? "

"কাচ ঢুকে গেছে মাংসে, এটা বের না করলে পরে সমস্যা হবে। "

বলতে বলতেই চিমটার সাহায্যে ছোট্ট কাচের টুকরোটা টেনে বের করে নেয় আবির।ভাগ্য ভালো শিরায় আঘাত লাগেনি, পাশ দিয়েই অল্পের জন্য কেটে গেছে। তারপর দ্রুত রক্তপাত বন্ধ করে হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়। সাবিহার উতলা ভাব বেড়েই যাচ্ছে, কাঁদতে কাঁদতেই বললেন...

"আম্মুকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে, আবির চল না। ওর কিছু হয়ে যাবে...."

আবির পানির গ্লাস থেকে চড়ুইয়ের পানি ছিটিয়ে দিতে দিতে বলে...

"আম্মু প্লিজ তুমি শান্ত হও, ঠিক আছে ও। একটু পরেই জ্ঞান ফরিে আসবে। চাচি আম্মুকে একটু সামলাও প্লিজ..."

আয়েশা আর জুলেখা মিলে বেশ অনেক কষ্টে সাবিহাকে বুঝিয়ে রুম থেকে বাইরে নিয়ে যায়। আবির ব্যস্ত হয় চড়ুইকে সামলাতে...

-------চলবে--------

Address

Feni

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when অভ্রায়ীনি ঐশি -Avrayini oishi posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share