
27/05/2025
গল্প: ছায়ার মুখোশ
পর্ব ১: মেঘলা বিকেলে এক অতিথি
ফরিদপুর জেলার শেষ প্রান্তে এক নিভৃত গ্রাম—জমিলা কুড়ি। সবার চোখে এই গ্রাম যেন একটা পোস্টকার্ডের মতো সুন্দর, কিন্তু অদ্ভুত নিরবতা ঘিরে থাকে প্রতিটি বিকেল। এই গ্রামের দক্ষিণ মাথায় পুরনো একটা টিনের ঘরে থাকে মেহজাবিন, বয়স সতেরো, মুখে মায়া আর চোখে গভীর কিছু চাপা কথা।
তার বাবা-মা পাঁচ বছর আগে এক রাতেই নিখোঁজ হয়ে যায়। গ্রামে শোনা গিয়েছিল, ওরা নদীর চরে ডুবে গেছে। কিন্তু সে রাতে কিছু একটা ঘটেছিল—কিছু একটা, যেটা কেউ জানতে পারেনি। শুধু মেহজাবিন জানে, কিন্তু কাউকে বলতে পারে না।
সে থাকে তার খালা রহিমা বেগমের কাছে। খালা কিছুটা কড়া, কিন্তু ভালো মানুষ। তবে সব সময় বলে, “বেশি ঘাটাঘাটি ভালো না মেহু, অনেক পুরোনো জিনিস নাড়াচাড়া করলে অপশক্তি ঘুম ভাঙায়।”
সেই বিকেলে আকাশ ছিল মেঘলা, বাতাস ভারী, যেন কোনও কিছু ঘটার অপেক্ষা। হঠাৎ গ্রামের বাঁশবাগান দিয়ে একজন অচেনা লোক হেঁটে আসতে দেখা গেল। মুখ ঢাকা, চোখদুটো কেবল দেখা যাচ্ছে—তীব্র কালো চোখ। গায়ে পুরনো চাদর। কেউ চিনতে পারল না লোকটিকে।
লোকটা কারো বাড়িতে কিছু বলল না, বাজারে গেল না, মসজিদে নামাজ পড়ল না। সে এসে একেবারে চলে গেল মেহজাবিনদের বাড়ির পেছনের ডোবার পাশে। দাঁড়িয়ে রইল।
মেহজাবিন উঠানে ছিল তখন। সে টের পেল কেউ তাকিয়ে আছে। কিন্তু ফিরে তাকাল না। অদ্ভুত এক শীতলতা ঘিরে ধরল চারপাশ। এমন মুহূর্তে হঠাৎ… বাঁশঝাড়ের ভেতর থেকে শোনা গেল কান্নার শব্দ। ভারি, অস্পষ্ট, যেন একজন পুরুষ…
মেহজাবিনের শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেল। এই কান্না সে চেনে। এই কণ্ঠ সে শুনেছিল পাঁচ বছর আগে—যেই রাতে তার বাবা-মা হারিয়ে গিয়েছিল।
সে রাতে ঠিক এমন এক কণ্ঠ ভেসে এসেছিল জানালার বাইর থেকে। তাও এমন এক বিকেল ছিল—মেঘলা, ভারী, ভয়ানক নিঃশব্দ।
মেহজাবিন সেই রাতের কথা ভুলে থাকতে চেয়েছিল এতদিন, কিন্তু আজ… কেউ বা কিছু সেই স্মৃতি টেনে ফিরিয়ে আনছে।
রাতে ঘরের পেছনে শব্দ হয়।
একটা কাঠের বাক্স পড়ে থাকে দরজার পাশে।
তার ওপর লেখা —
“সত্যি জানতে চাও?”