18/05/2025
একটা বয়স পেরিয়ে মানুষ বুঝে যায়...
কারো সঙ্গে অকারণ তর্কে যাওয়াটা বোকামি। কেউ যদি বলে "পৃথিবী গোল নয় লম্বা",তাতেই সায় দিয়ে হেসে চলে আসাটা বরং বেশি দরকারি। একটা বয়সের পর আপনি বুঝে যাবেন,কেউ কারো ভাবনা-চিন্তা বা মতামত আসলে বদলায় না,অন্তত তর্ক করে আপনি তা বদলাতে পারবেন না। যে যার মতামত নিয়ে আনন্দে থাক। তাই তর্ক এড়িয়ে সরে এসে নিজের কাজ করে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। একটা বয়সের পর বোঝা যায় যে কোনো মূল্যে আপনার ব্যক্তিগত শান্তি,সময় আর এনার্জি নষ্ট হতে না দেওয়াটা বেশি প্রয়োজনীয়।
একটা বয়স পেরিয়ে আপনি বুঝে যাবেন,বাইরের লোক তো ছেড়েই দিলাম,আপনার খুব কাছের মানুষজনও আসলে আপনার মনের মতো হবে না। আপনি যেমন করে তাদের ভালোবাসা চান,তারা তেমন করে আপনাকে কখনোই ভালোবাসবে না,আপনাকে তেমন করে গুরুত্ব দেবে না। আসলে সব মানুষই নিজের ইচ্ছে,বিবেচনা,ভাবনা ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলে,আর এটাই বাস্তব। প্রত্যেকটা মানুষের বিচার,বুদ্ধি আর বিবেকবোধ আলাদা—এটাই কঠিন সত্যি। আপনার মতামত,আপনার চিন্তা-ভাবনা,আপনার জীবনবোধ,আপনার অনুভব একান্তই আপনার নিজস্ব,আর কারো তা নিয়ে ভাববার বা বোঝবার দায় নেই। একথা যত সহজে বুঝবেন,তত আঘাত কম পাবেন,আর একটা বয়সের পর যেখানে বা যাদের কাছে আপনার গুরুত্ব নেই সেখান থেকে নীরবে দূরে সরে আসতে শিখে যাবেন।
একটা বয়সের পর মানুষ বুঝে যায়,মানুষের কাছে বেশি ভালো হওয়ার চেষ্টা করে,কারো প্রতি বেশি আপনতা দেখিয়ে,বেশি কর্তব্য করে বা কাউকে বেশি ভালোবেসে সবসময় কারো কাছের মানুষ,কারো নিজের মানুষ,কারো ভরসার মানুষ হওয়া যায় না। মানুষ আপনাকে ঠিক ততটুকুই ভালোবাসবে,ততটুকুই গুরুত্ব দেবে,ততটুকুই সম্মান বা অগ্রাধিকার দেবে—যতটা তার নিজের জীবনে আপনার প্রয়োজন,গুরুত্ব বা স্বার্থ থাকবে,তার বেশি একচুলও নয়। তাদের জীবনে আপনার থেকে যদি অন্য কারও প্রভাব,প্রয়োজন বা গুরুত্ব বেশি থাকে তবে সেই অন্য লোকটি যেমন ধরণের মানুষই হোক না কেন,সে'ই কিন্তু এগিয়ে থাকবে,আপনি নন—তাই একটা বয়সের পর আপনি বুঝবেন—কারো জন্য কোনো কিছুই বেশি করে,তার অযাচিত উপকার করে বা আগ বাড়িয়ে তাকে নিজের বড় মন-মানসিকতা দেখিয়েও আসলে কোনো লাভ হয় না। তাই তখন আপনি মন থেকে ভালোমানুষ হলেও যার জন্য ঠিক যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু করতে শিখে যাবেন। একটা সময় আপনি বুঝে যাবেন,আপনি নিজে একজন ভালো মনের মানুষ হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ,কারো কাছে তা প্রমাণ করার কোনো প্রয়োজন বা দায় নেই আপনার।
একটা বয়সের পর আর কারো উপর কিছু চাপিয়ে দিতে ইচ্ছে করবে না,নিজেকেও সবরকম চাপমুক্ত,ভারমুক্ত রাখতে ইচ্ছে করবে। কারো কাছে কোনোকিছু আশা করে কোনো লাভ হয় না—একটা বয়স তা ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিয়ে যায়। তখন নিজের হাতে,নিজের ক্ষমতার মধ্যে যেটুকু আছে শুধু সেটুকু করে মানুষকে ভালো থাকার চেষ্টা করে যেতে হয় অবিরাম,আর বাকিটা ঈশ্বরের উপর ছেড়ে দিতে হয়।
একটা বয়সের পর কে আপনার সম্পর্কে কী ভাবলো,আপনাকে নিয়ে কী মন্তব্য করল,আপনাকে কে কী বলল না বলল—কিছুই আর তেমন যায় আসে না। একটা বয়সের পর আপনি বুঝে যাবেন প্রত্যেকটা মানুষ তার নিজের জীবনের গন্ডী,নিজের মনোভাব,নিজের স্বভাব,দৃষ্টিভঙ্গি বা শিক্ষা অনুযায়ী চিন্তা-ভাবনা করে। কারো চিন্তা-ভাবনা আপনাকে নয়,বরং সেই লোকটিকে চেনায়। তাই একটা বয়সের পর আপনি নিজে এবং যাদের আপনার ব্যক্তিগত জীবনে গুরুত্ব আছে তারা ছাড়া পৃথিবীর আর কেউ আপনাকে নিয়ে কী ভাবছে তা অর্থহীন হয়ে যায়।
একটা বয়সের পর মানুষ আর সকলের সঙ্গে একটা বিরাট দূরত্ব তৈরি করে নেয়। এমনকি অনেক লোকজনের মধ্যে থাকলেও আসলে তাদের সকলের আর তার নিজের মধ্যে এমন এক বিরাট বড় খাদ,বিরাট এক শূন্যতা তৈরি হয়ে যায় যা আর পার করা যায় না। চারপাশের মানুষের প্রতি গভীর নিরাশা আর বহুকালের জমা ক্ষোভ,অভিমান এই বিরাট দুর্ভেদ্য গহ্বর টা তৈরি করে।
একটা বয়সের পর মানুষ বুঝে যায়—পৃথিবীর কারো কাছে তার আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু বাকি নেই। একটা সময় পর রাগ,ক্ষোভ,বিরক্তি,অভিমানও হারিয়ে যায়।
একটা বয়স ধীরে ধীরে মানুষকে নির্বিকার তৈরি করে,শান্ত হতে শেখায়,নিরুত্তাপ হতে শেখায়। কারো সাথে দেখা করার তাগিদ,কথা বলার তেমন আগ্রহ আর থাকে না। তখন তার একমাত্র প্রিয় বন্ধু,তার একমাত্র কাছের মানুষ সে নিজে। সে নিজেকে ভালোবাসতে শেখে,নিজেকে সময় দিতে শেখে,নিজের গভীরে ডুব দিতে শেখে। অন্য কোনোকিছুই আর তাকে তেমন আনন্দ দেয়না তখন,উৎসাহ দেয় না। কিছুই আর যেন তেমন টানে না তাকে। তখন শুধু নিজের মতো করে ভালো থাকতে পারা,নিজের সঙ্গে একান্তে সময় কাটানো আর মনের অপরিসীম শান্তি ছাড়া তার বোধহয় আর চাওয়ার কিছুই থাকে না।
#সংগ্রহ