27/02/2025
তাবলীগ নিয়ে তা?লিবান প্রজ্ঞাপনের নৈপথ্য কাহিনী এবং এতাআতীদের মিথ্যাচার
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম
আ?ফগা?নিস্তানের তাবলীগ জামাত নিয়ে ভুল অনুবাদসহ একটি ভিডিও এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য সহকারে একটি লেখা ফেসবুকে ঘুরছে। এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে অনেকেই আমাকে নক করেছেন। আমি নির্ভরযোগ্য সূত্রে যথাসাধ্য জানার চেষ্টা করেছি এবং এখানে তা পত্রস্থ করছি।
মাওলানা সা’দ সাহেবের অনুসারীরা প্রচার করছে ইমা?রতে ইসলামিয়া তা?লিবান সরকার নাকি আ?ফগানিস্তানে সবাইকে নেজামু্দ্দীনের অধীনে কাজ করার অধ্যাদেশ জারি করেছে। তারা তৃপ্তির ঢেকুর তুলে আনন্দসহকারে এ খবর প্রচার করছে এবং শূরায়ী নেজামের অনুসারীদের হেদায়াতের জন্যে খুব দুআ করছে।
আসলে তা@লিবান সরকার আ@ফগানিস্তানে এমন কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করেছে কি? সেখানে শূরায়ী নেজাম খতম করে সা’দ সাহেবের ইমারতে সবাই কাজ করার আদেশ করেছে কি?
উত্তর হল, না, উপরুক্ত মর্মে তা@লিবান সরকার এমন কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি। যা প্রচারিত হচ্ছে, তা অপপ্রচার মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর। এতে সত্যের অংশ খুব সামান্যই।
প্রচারিত প্রজ্ঞাপন জারির নৈপথ্য কাহিনী :
মাওলানা সা’দ সাহেবের চিন্তাগত বিচ্যূতি ও কর্মগত স্বেচ্ছাচারিতাকে কেন্দ্র করে তাবলীগবিভক্তির ধারাবাহিকতায় আফগানিস্তানেও এ জামাআত বিভক্ত হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের মত ওখানেও শূরায়ী নেজামের অনুসারীদের সংখ্যা বেশি, প্রায় ৯০ভাগ। বেশিরভাগ রাজ্যে তাবলীগ শূরার অধীনে চলছে। হাঁ, জালালাবাদ, খোস্ত সহ দু’চারটি রাজ্যে মাওলানা সা’দ সাহেবের অনুসারীদের কিছু প্রভাব রয়েছে। জালালাবাদের একজন প্রভাবশালী তাবলীগী আমীর ছিলেন খান যামান। স্থানীয় রাজনীতিতে তার বেশ প্রভাব রয়েছে। এ খানের মৃত্যুর পর তারপুত্র কারী আগা যামানকে সেখানকার নেজামুদ্দীনের অনুসারীরা আমীর বানায়। কিন্তু অল্পবয়সী আগা যামানের নেতৃত্ব মেনে নিতে নারাজ ছিলেন তাদের অনেকেই। তার ইমারতকে চ্যালেঞ্জ করে ইমারতে দাবী করে বসে ভাই রূহুল্লাহ। অর্থাৎ সা’দ সাহেবের অনুসারীদের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে জালালাবাদ মারাত্মক দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। স্থানীয় গোত্রীয় রাজনীতিতে যা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং উভয়পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। অবশ্যই এ সংঘর্ষের পেছনে তা@লিবান ও তাবলীগের ঘোর শত্রু আ/ই/এসের ইন্ধন রয়েছে। তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির জন্যে আভ্যন্তরীন এ ঝগড়ায় ইনভলব হয়, যদিও তাবলীগের কোনো পক্ষের প্রতি তাদের কোনো আগ্রহ নেই। তা@লিবান সরকার বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রথমে কঠিন হস্তে দমনের উদ্যোগ নেয়। এবং প্রত্যক্ষ সংঘর্ষে জড়িতদের অনেককেই গ্রেফতার করে। আমীরদাবিদার রুহুল্লাহসহ তখন অনেকেই জেলে যায় এবং আগা যামানসহ অনেকেই দীর্ঘদিন পলাতক ছিল। জালালাবাদ মারকায সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসবই হলো গতবছরের সেপ্টেম্বরের ঘটনা।
দ্বিতীয়ত, তাবলীগের কাজের জন্যে তারা নিজ উদ্যোগে বিশ সদস্যের একটি শূরা কমিটি গঠন করে দেয়। যাতে তাবলীগের সব পক্ষের নেতৃস্থানীয়দের রাখা হয়। সা’দ সাহেবের অনুসারী যে দুজন নেতৃত্ব নিয়ে মারামারি করেছিল, তাদের কাউকে ইমারত না দিয়ে তালিবান নিজেদের প্রতিনিধি এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলিম ও মুবাল্লিগ শাইখুল হাদীস মাওলানা মুহাম্মাদ কাসিমকে জালালাবাদের শূরাপ্রধান ঘোষণা করা হয়। এবং শৃঙ্খলার স্বার্থে স্থানীয় শূরায়ী নেজামের সাথী ও সা’দ সাহেবের অনুসারী সকলকে এই শূরার অধীনে কাজ করতে বলা হয়। এটাই হলো ওই প্রজ্ঞাপন জারির হাকিকত ও নৈপথ্য কাহিনী।
মোটকথা এবং আরও কিছু কথা :
১। এ প্রজ্ঞাপন জারির কারণ জালালাবাদে সা’দ সাহেবের অনুসারীদের স্থানীয় নেতৃত্ব নিয়ে অন্তর্দ্বনদ্ব ও মারামারি। এর সাথে শূরায়ী নেজামের কোনো সম্পর্ক নেই।
২। এ প্রজ্ঞাপন কেবলই জালালাবাদের জন্যে প্রযোজ্য, সারা আ@ফগানের জন্যে নয়। সারা দেশে আলামী শূরার সাথীসংখ্যাই বেশি এবং বেশিরভাগ মারকায শূরায়ী নেজামের অধীনে পরিচালিত।
৩। এর কারণ, আ@ফগানের তাবলীগ সরাসরি পা@কিস্তানের রাইবেণ্ড মারকাযের অধীনে। আ@ফগানিস্তানের তাবলীগ দেখভালের জন্যে রাইবেণ্ডে স্বতন্ত্র জামাআত রয়েছে। রাইবেন্ড মুরুব্বী মাওলানা নযরুর রহমান হাফি. আফগান তাবলীগের প্রধান ফয়সাল। উনার অনুপস্থিতিতে যথাক্রমে মাওলানা ওবায়দুল্লাহ খুরশিদ হাফি., মাওলানা আহমাদ বাটলা হাফি. ফয়সাল হবেন।
৪। জালালাবাদের জন্য গঠিত এ শূরায় এককভাবে কারও অধীনে ছেড়ে দেওয়া হয়নি। নিজামুদ্দীনের অধিনে ছেড়ে দেওয়ার গুজব সম্পূর্ণ মিথ্যা। বরং ২০সদস্যের এ শূরায় সবপক্ষের লোক রয়েছে। সা’দগ্রুপের উভয়পক্ষ এবং শূরায়ী নেজামের সাথীদের নিয়ে এ শূরা গঠিত হয়েছে। এর প্রমাণ হলো, গত সপ্তাহে ২০ফেব্রুয়ারী তারিখে শবগুজারিতে বয়ান করেছেন রাইবেন্ডের মুকিম মাওলানা আবদুর রহীম সাহেব।।
এই শূরার মধ্যে স্থানীয় প্রভাবশালী আলিম মাওলানা শরীফুল্লাহ ও মাওলানা মাদানী সাহেবও রয়েছেন। তারা ওখানকার শূরায়ী নেজামের পরিচিতমুখ। প্রচারিত ভিডিওতে ওই দুইজনের সাক্ষাতকার দিতে দেখা যায়।
৫। শূরার প্রধান শাইখুল হাদীস মাওলানা কাসেম সাহেব সম্পর্কে ওরা প্রচার করছে, তিনি নাকি এতাআতী এবং মাওলানা সা’দ সাহেবের হাতে বায়আত। আমি এর সত্যতা খুঁজে পাইনি। বরং তিনি রাইবেণ্ডের অধীনে সালওয়ালা আলিম এবং শূরায়ী নেজামের জিম্মাদার সাথী বলেই জেনেছি। তাঁকে বিশসদস্যের শূরার আমির হয়েছে। তিনি এতাআতী বলে তাকে শূরাপ্রধান করা হয়নি; বরং তিনি তালিবানদের মুখপাত্র সবপক্ষের মান্য ও শ্রদ্ধেয় আলিমে দীন।
৬। বাংলাদেশে এতাআতীরা প্রচারিত টিভিসংবাদের যে অনুবাদ করেছে, একজন পশতুভাষা বোদ্ধা আমাকে বলেছেন, ভিডিওবার্তার সাথে ওদের অনুবাদ ও ক্যাপশনের বহুলাংশের মিল নেই। অনেক কথাই মনগড়া।
অনুরূপভাবে জালালাবাদের স্থানীয় প্রশাসনের জারিকৃত পরিপত্রের যে অনুবাদ তারা প্রচার করছে, তাতেও অর্ধাঅর্ধি কথা বাড়ানো হয়েছে, তারপর তাদের মন্ত্রণালয়ের সাক্ষর যুক্ত করা হয়েছে। এভাবে তারা তাদের বানোয়াট কথাগুলিকেও তালিবানের ভাষ্যবলে প্রচার করছে, যা স্পষ্ট খেয়ানত। এই পরিপত্রকে সমস্ত আফগানিস্তানের বলা প্রচার করা তো আরও বড় মিথ্যা ও খেয়ানত।
মোটামোটি আমি আমার সামর্থ্যমতে যতটুকু জানতে পেরেছি, তা এখানে উল্লেখ করলাম। আমার উপস্থাপিত তথ্যের পক্ষে আমার কাছে অনেকগুলো অডিও রেকর্ড আছে। আমানত রক্ষার্থে তা পাবলিক করা গেল না। প্রকৃত সত্য আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।
সা ই ফু দ্দি ন গা জী
২৬।০২।২৫