26/09/2025
মেহেরপুর জেলা:
প্রাচীন যুগ
১০ম–১২শ শতক: পাল ও সেন আমলে এ অঞ্চল গৌড় ও নদীয়ার অংশ ছিল। বৌদ্ধ ও হিন্দু সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করে।
১৩শ শতক: মুসলিম শাসনের প্রভাব বিস্তার; ধীরে ধীরে ইসলাম প্রচার শুরু হয়।
মোগল আমল
১৬শ–১৭শ শতক: মেহেরপুর মোগল প্রশাসনের অংশ হয়। কৃষি ও বাণিজ্যে উন্নতি ঘটে।
ঔপনিবেশিক যুগ
১৭৫৭: পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজরা নদীয়া ও পার্শ্ববর্তী এলাকা দখল করে।
১৮৬১: মেহেরপুরকে নদীয়া জেলার অধীনে থানার মর্যাদা দেওয়া হয়।
পাকিস্তান আমল
১৯৪৭: ভারত বিভক্তির পর মেহেরপুর পূর্ব পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হয়। তখন এটি কুষ্টিয়া জেলার অধীনে ছিল।
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল:
বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে (বর্তমান মুজিবনগর) বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদ শপথ নেন।
এ স্থানকেই ঘোষণা করা হয় মুজিবনগর।
এ কারণে মেহেরপুর পরিচিত হয় বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী হিসেবে।
স্বাধীনতার পর
১৯৮৩: মেহেরপুরকে আলাদা মহকুমা ঘোষণা করা হয়।
১৯৮৪: মেহেরপুর পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৮৪–বর্তমান: শিক্ষা, কৃষি, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে ধীরে ধীরে অগ্রগতি। বিশেষ করে লিচু ও আম উৎপাদনে সারা দেশে খ্যাতি অর্জন করে।
২০০০-এর দশক: মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মিত হয়।
বর্তমান মেহেরপুর
আয়তন: প্রায় ৭১৬ বর্গকিমি
উপজেলা: ৩টি (মেহেরপুর সদর, গাংনী, মুজিবনগর)
বৈশিষ্ট্য: কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, সংস্কৃতির বৈচিত্র্য।
1. মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে প্রতীকী নকশা
মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের তৈরি হয় ৯ ধাপের সিঁড়ি, যা ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসকে প্রতীক করে। এছাড়া স্মৃতিসৌধে কিছু রাউন্ড আকৃতি আছে যেগুলো হিন্দু হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত প্রায় এক কোটি বাঙালীর স্মৃতিকে তুলে ধরে।
2. রাজনৈতিক পরিবর্তন: মুজিবনগর প্রথম অস্থায়ী সরকার গঠন
১৭ এপ্রিল ১৯৭১-তে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা (বর্তমানে মুজিবনগর)-এ বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার শপথ নেয়। এই এলাকাটি তখন “বৈদ্যনাথতলা” নামে পরিচিত ছিল, পরে নাম পরিবর্তন হয়।
3. ব্রিটিশ আমলের নীলকুঠি: Bhatpara ও Amjhupi Nilkuthi
গাংনী উপজেলার Bhatpara-তে একটি নীলকুঠি রয়েছে যা ব্রিটিশ আমলে ১৭৭৮ সালে তৈরি। Amjhupi Nilkuthi ও অন্যান্য নীলকুঠি ঐতিহাসিক এবং পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
4. স্থানীয় নদীর অবস্থা ও নদীভিত্তিক পরিবর্তন
মেহেরপুরের বেশ কিছু নদী রয়েছে--যেমন ভৈরব নদী, কাজলা, মাথাভাঙ্গা প্রভৃতি। কিন্তু অনেক নদী আজ প্রায় মৃতপ্রায়, জল প্রবাহ কম, পুরাতন নদীপথ ও শাখাগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে।
5. বিভিন্ন বিল ও হাওড়
জেলার মধ্যে বহু বিল ও হাওড় আছে যেমন: ধরলার বিল, চাঁদবিল, কলার বিল, পটাপুকুর বিল, গোপালপুর বিল, বাদমানডি বিল, সালিকা, তেরাঘরিয়া বিল, এলাঙ্গি বিল ইত্যাদি। এগুলো স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য মৎস্য আহরণ, প্রচলিত পরিবহন বা সেচ ও কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
6. আবহাওয়া ও জলবায়ু বৈশিষ্ট্য
গরমের মাসে গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় ৩৭.১°C, শীতকালে সর্বনিম্ন প্রায় ১১.২°C। বার্ষিক বৃষ্টিপাত প্রায় ১,৪৬৭ মিলিমিটার।
7. প্রাচীনতম পৌরসভাগুলোর একটি
মেহেরপুর পৌরসভাটি অনেক পুরোনো; ইতিহাসে জানা গেছে এটি পুরাতন সময় থেকেই একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কেন্দ্র। যদিও কিছু উৎস বলেছে ১৮৫৯ সালে মেহেরপুর গ্রাম—নাদিয়া জেলার অংশ থাকাকালীন—এ অঞ্চলে পৌর প্রতিষ্ঠান শুরু হয়েছিল।
8. গ্রামীণ-লোকসংস্কৃতি ও গান
এখানে বাউল গান, মানিকপীরের গান, গাজীর গীতি, ভাবগান, কবিগান, পুঁথিপাঠ ইত্যাদি লোকসংস্কৃতির ধরণ এখনও ক্রিকেটে সক্রিয় আছে।
9. বাণিজ্যিক ও কৃষি বৈচিত্র্য
মেহেরপুরে ধান, গম, পাট, আলু, নানা ধরনের সবজি ও ফলের চাষ হয়। বিশেষভাবে লিচু ও আম জনপ্রিয়। এছাড়া মৎস্য আহরণও একটি বড় অর্থনৈতিক উৎস।