02/07/2025
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৫টি বিখ্যাত ভ্রমণস্থান
১. কালভৈরব মন্দির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মেড্ডা এলাকায় তিতাস নদীর তীরে অবস্থিত প্রাচীন কালভৈরব মন্দির একটি ঐতিহাসিক হিন্দু তীর্থস্থান। এই মন্দিরের প্রধান আকর্ষণ হলো বিশালাকৃতির কালভৈরব বা শিবমূর্তি, যা প্রায় ২৮ ফুট উঁচু এবং ১৯০৫ সালে নির্মিত। উপমহাদেশের অন্যতম উচ্চতম শিবমূর্তির জন্য বিখ্যাত এই মন্দির প্রতি বছর হাজারো ভক্ত ও পর্যটক আকর্ষণ করে। শহর থেকে রিকশা বা সিএনজি যোগে সহজেই এখানে পৌঁছানো যায় এবং শিবরাত্রি ও দুর্গাপূজার সময় বিশেষ উৎসবের আয়োজন мন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়।
২. হরিপুর জমিদার বাড়ি, নাসিরনগর
নাসিরনগর উপজেলার হারিণবের গ্রামে তিতাস নদের তীরে অবস্থিত হরিপুর জমিদার বাড়ি (হরিপুর বড়বাড়ি নামে পরিচিত) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি ঐতিহাসিক জমিদার প্রাসাদ। অষ্টাদশ শতকে জমিদার কৃষ্ণপ্রসাদ রায় চৌধুরী এই বিশাল প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। তিনতলা বিশিষ্ট ও বহুগম্বুজযুক্ত এই প্রাসাদের চত্বরে প্রায় ৬০টিরও বেশি কক্ষ (থিয়েটার হল, দরবার কক্ষ, মন্দির ইত্যাদি সহ) রয়েছে, যা তৎকালীন জমিদারির ঐশ্বর্য ও স্থাপত্যশৈলীর সাক্ষ্য বহন করে। নাসিরনগর সদর থেকে প্রায় ১৫ কিমি দূরে অবস্থিত এ জমিদার বাড়িটি বর্ষাকালে চারপাশে পানিতে নিমজ্জিত হয়ে মনোরম দ্বীপের মতো দৃশ্য সৃষ্টি করে, যা দর্শকদের মুগ্ধ করে। পর্যটকরা সড়কপথে সহজেই এখানে পৌঁছে ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপত্যকীর্তির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
৩. আড়িফাইল মসজিদ, সরাইল
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলায় অবস্থিত আড়িফাইল মসজিদ একটি ঐতিহাসিক মুগল যুগের মসজিদ, যা সুফি সাধক শাহ্ আরিফের নামে প্রতিষ্ঠিত বলে ধারণা করা হয়। আনুমানিক ১৬৬২ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত এই মসজিদটি তিনটি গম্বুজ ও متر厚 প্রাচীরসহ চমৎকার ইসলামী স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন প্রদর্শন করে। রঙিন টেরাকোটার নকশা, বহির্ভাগের কারুকাজ এবং অভ্যন্তরের মিহরাব ও গম্বুজের অলংকরণ মসজিদটির প্রধান আকর্ষণ, যা তাজমহলের সৌন্দর্যের কথাও মনে করিয়ে দেয় বলে অনেকে উল্লেখ করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে প্রায় ১৫ কিমি দূরে সরাইল থানার নিকট অবস্থিত এ মসজিদটি বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীন সংরক্ষিত স্থাপনা এবং যথেষ্ট ভালো অবস্থায় আছে। ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য আড়িফাইল মসজিদে দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের নিয়মিত আগমন ঘটে।
৪. ধরন্তি হাওর, সরাইল
সবুজ প্রকৃতি ও নিরিবিলি পরিবেশের সমন্বয়ে ধরন্তি হাওর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একটি মনোরম প্রাকৃতিক ভ্রমণস্থল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার উত্তরে সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নে অবস্থিত এ বিশাল হাওর এলাকাটি তার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য সুপরিচিত। বর্ষাকালে টইটম্বুর পানি আর আকাশে মেঘের লুকোচুরি মিলে ধরন্তি হাওরের দৃশ্য নয়নাভিরাম হয়ে ওঠে। অনেকেই এর অসাধারণ সৌন্দর্যের জন্য একে “মিনি কক্সবাজার” বলে থাকেন। দুপুর-বিকেলে সরাইল-নাসিরনগর সড়কের ধারে প্রচুর মানুষ হাওরের দৃশ্য উপভোগ করতে ভিড় করেন এবং চাইলে ছোট নৌকায় বা স্পিডবোটে হাওরের বুকে ভ্রমণ করতে পারেন। পর্যটকদের বসার স্থান ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের কাজও চলছে স্থানীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে।
৫. ফারুকি পার্ক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের অফিসার্স কোয়ার্টার এলাকার কাছে অবস্থিত ফারুকি পার্ক একটি জনপ্রিয় পারিবারিক বিনোদনকেন্দ্র ও মনোরম উদ্যান। শহরের কোলাহল থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এই পার্কে সাজানো বাগান, সবুজ ঘাসের মাঠ এবং শিশুখেলনার ব্যবস্থাসহ নির্মল পরিবেশ রয়েছে। পরিবার ও বন্ধুসহ পিকনিক করা, অবসর সময়ে হাঁটা বা বসে সময় কাটানোর জন্য পার্কটি আদর্শ স্থান। শিশুদের জন্য বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন, ঝর্ণা ও ফোয়ারা ইত্যাদির সুব্যবস্থা থাকায় এটি স্থানীয়দের পাশাপাশি বাইরের দর্শনার্থীদের কাছেও আকর্ষণীয়। শহরের মাঝখানে অবস্থান এবং সহজযোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে কম সময়ে ফারুকি পার্ক ভ্রমণ সেরে নেওয়া যায়, তাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলে স্বস্তিকর বিনোদনের জন্য অনেকেই এই পার্কে যেতে পরামর্শ দেন।