
12/08/2025
ডিভোর্সের রাত
গতকাল এশার নামাজ শেষ করে মসজিদ থেকে ফিরেছি মাত্র, এমন সময় হঠাৎ চেয়ারম্যান সাহেবের ফোন :
“কাজী সাহেব, দ্রুত আসেন। একটা বিচার বসেছে… মেয়ের ডিভোর্সের ব্যাপারে।”
আব্বু তাড়াহুড়ো করে জামা গায়ে চাপালেন। সবসময় যেমন করেন, সাধারণত আব্বু রাতে সঙ্গী ছাড়া তিনি কোথাও যান না, তাই আমাকেও সঙ্গে নিলেন।
আমাদের গ্রাম থেকে দুই গ্রামের দূরত্ব—চাঁদের আলোয় আলোকিত সেই রাস্তায় যেতে যেতে ভাবছিলাম, নিশ্চয়ই কোনো বড় ঘটনা ঘটেছে।
ওখানে গিয়ে দেখি, চেয়ারম্যান, মেম্বার আর এলাকার বহু গুণীজন গম্ভীর মুখে বসে আছেন। পরিবেশে এক ধরনের টানটান উত্তেজনা।
আব্বু প্রথমেই বললেন,
“কী হয়েছে, সমস্যা বলুন।”
মেয়ের বাবা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
“চার বছর আগে আমার মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। আজ সেই বিয়ের ইতি টানতে হবে।”
আব্বু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“কারণটা কী?”
তিনি বললেন,
“দেড় মাস ধরে জামাই আমার মেয়ের সঙ্গে কথা বলে না, যোগাযোগও করে না। এক মাস আগে মেয়েকে আবার শ্বশুরবাড়িতে দিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু সেখানে তাকে ডিম দিয়ে ভাত খাওয়ানো হয়েছে! সে ক্ষোভে ফিরে এসেছে। অথচ জামাই বিদেশ থেকে এসেছে, কুরবানিও দেয়নি।”
আব্বু আরও জানতে চাইলেন,
“এগুলো ছাড়া আর কিছু?”
হঠাৎ পাশের ঘর থেকে মেয়েটি চেঁচিয়ে উঠল,
“এর থেকেও বড় কোনো কারণ থাকতে হবে নাকি?”
পরে জানা গেল, বিদেশ থেকে ফেরার পর জামাই মেয়েকে বলেছিল এয়ারপোর্টে এসে তাকে রিসিভ করতে। মেয়ে যায়নি—তাই রাগে জামাই কথা বলা বন্ধ করে দেয়। শ্বশুরবাড়িতে নেওয়ার চেষ্টা করেনি। আর যখন মেয়েকে সেখানে পৌঁছে দেওয়া হলো, তখন ডিম দিয়ে ভাত খাইয়েছে—এটাকে ধরে নেওয়া হয়েছে অপমানের হিসেবে।
আব্বু শান্তভাবে বললেন,
“সময় নিন, ছেলেকে এনে বসুন, কথা বলে সমাধান করুন।”
কিন্তু মেয়ের বাবা দৃঢ় গলায় উত্তর দিলেন,
“না, আর মেয়েকে ওখানে রাখব না। ছেলে ভালো না, ব্যবহার খারাপ। মেয়ে অনার্স পড়া, বুঝদার—সে যা বলছে, ভেবেচিন্তেই বলছে।”
এলাকার মুরুব্বিদের সমর্থনে সেই রাতেই ডিভোর্স হয়ে গেল।
আমি নিঃশব্দে বসে শুধু ভাবছিলাম—
কত তুচ্ছ কারণে আজকাল সম্পর্ক ভেঙে যাচ্ছে!
আমরা এমন এক যামানায় এসে দাঁড়িয়েছি, যেখানে ভালোবাসা, ধৈর্য আর ক্ষমা—সবই যেন বিলুপ্ত।
রাতে বাড়ি ফিরে আব্বুর সরকারি বলামগুলো ঘাঁটলাম,, পৃষ্ঠা গুলো উল্টাতে উল্টাতে চোখ আটকে গেল সংখ্যার ওপর
২৮ বছরে ১৩৪ জন স্বামী তাদের স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে, আর ১২৫২ জন নারীর পক্ষ থেকে