18/06/2025
নগ্নতা, নারী ও কবিতার আত্মপ্রকাশ......
নারী যখন নিজ হাতে খুলে ফেলে নিজের শরীরের অলংকার,
নিজের ইচ্ছেতে, নিজের স্বরে, নিজের শরীরের প্রতিটি স্তর উন্মোচন করে—
তখন সে আর শুধু শরীর থাকে না,
সে হয়ে ওঠে একটি কবিতা—
যার প্রতিটি ছন্দে স্বাধীনতা, প্রতিটি স্তবকে প্রতিরোধ।
সে নগ্ন হয়—নির্বস্ত্র নয়।
কারণ সে যা দেখায়, তা শরীর নয়—সাহস।
নগ্নতা এখানে কোনও পুরুষের লালসা নয়,
বরং তার আত্মার নিঃশব্দ ভাষা।
যেমন করে জল নগ্ন থাকে, অথচ সবকিছু ঢেকে রাখে—
তেমন করেই নারী নগ্ন হয়—
নিজেকে প্রকাশ করতে,
নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে।
শরীর এখানে ভিক্ষা নয়—
এই শরীর তার নিজস্ব গর্ব।
যে শরীর সমাজ হাজার প্রতীক আর লজ্জা দিয়ে আবৃত করতে চায়,
সেই শরীরই সে একদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে,
বলে—
“এই আমিই।
আমাকে গড়ে তুলেছে আমার যুদ্ধ, আমার যন্ত্রণা,
আর আমার শরীরের প্রতিটি ভাঁজে লিখে রেখেছে ইতিহাস।”
সে জানে, কেউ তাকে ‘বোল্ড’ বলবে, কেউ ‘বেহায়া’।
সে জানে—এই সমাজের চোখে নগ্নতা মানেই লজ্জা,
শরীর মানেই পাপ।
কিন্তু সে আজ নিজেই তার লজ্জাকে ভেঙে ফেলেছে,
নিজেকে ভালোবেসেছে।
সে যখন নগ্ন হয়—
সে তখন কেবল নগ্ন শরীর নয়,
সে নগ্ন এক সত্য—
যার দিকে তাকাতে ভয় পায় সমাজ,
কারণ এই নগ্নতাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
যে নারী প্রেমিকের চোখের জন্য নগ্ন হয় না,
সে হয়ত একদিন নগ্ন হয় নিজের আত্মার আলোয়।
সে যখন নিজেকে স্পর্শ করে, নিজেকে চেনে,
তখন সে আর কোনো পুরুষের কামনার প্রসাধন নয়—
সে নিজেই হয়ে ওঠে কামনার কবিতা।
তুমি যদি চাও তাকে ছুঁতে—
তবে প্রথমে তোমাকে ছুঁতে হবে তার সম্মতি।
তাকে উলঙ্গ ভাবার আগে,
তোমাকে উলঙ্গ হতে হবে—
তোমার ভয়, তোমার আধিপত্য,
তোমার পুরুষতান্ত্রিক সত্তার মুখোশ খুলে।
এই নগ্নতা, এই কবিতা—
শুধু চোখ দিয়ে নয়, হৃদয় দিয়ে পড়তে হয়।
এই নগ্নতা দেখে শুধু লালসা নয়, শ্রদ্ধা জন্মায়—
যেখানে শরীর আর আত্মা আলাদা হয় না,
আর নারী হয়ে ওঠে এক সম্পূর্ণ সৃষ্টি।
---শেষ কথাঃ
যদি কোনও নারী তোমার সামনে নিজেকে উন্মুক্ত করে—
শরীর নয়, আত্মা খুলে দেয়—
তবে চেয়ে থেকো না কেবল।
তাকে কুর্নিশ করো।
চোখ নামিয়ে নিও না, তাকিয়েও থেকো না গিলতে গিলতে—
শুধু বলো:
“ধন্য আমি।”
কারণ সেই মুহূর্তে
তুমি একজন নগ্ন ঈশ্বরীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছো—
যাকে স্পর্শ করতে হলে,
তোমাকেও হতে হবে এক কবিতা।
লেখায়: রুদ্র চৌধুরী