31/12/2024
বিটকয়েন ই হচ্ছে প্রথম ক্রিপ্টোকারেন্সি যা ২০০৯ সালে সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত ক্রিপ্টোকারেন্সির জগতে রাজত্ব করতেছে।
গত বছর একটি বিটকয়েনের মূল্য $৬০ হাজার ডলারেরও বেশি ছিলো যা ১২ মাসে আট গুণ বৃদ্ধি পায়। আর তারপর এটি কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তার দামের অর্ধেক হয়ে যায়। অর্থাৎ, ধরেন আপনি বিটকয়েন ৭০ ডলার দিয়ে কিনেছিলেন যা কয়েক মাসের মধ্যে ১০০ ডলার হয়েছিলো, কিন্তু তখন আপনি তা বিক্রি না করার ফলে আরো কয়েক মাস পর বিটকয়েনের দাম কমে ৫০ ডলার হয়ে গেলো। অর্থাৎ, ৭০ ডলারে ক্রয় করা বিটকয়েনে আপনি ৩০ ডলার লাভ করতে পারতেন, কিন্তু আরো বেশি পরিমাণে লাভ করার আশায় আপনি আরো দাম বাড়ার জন্য অপেক্ষা করেন! কিন্তু আপনি বেশি লাভ করতে গিয়ে উল্টো শেষমেষ ২০ ডলার লসের মুখই দেখলেন।
ঠিক এমনিভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং সিস্টেম টা আসলে কাজ করে এবং মানুষ এই সিস্টেমের মাধ্যমেই লাভ বা লসের মুখ দেখে।
ইলোন মাস্কের ডোজকয়েনের মতো অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির মানও আরও তীব্রভাবে বেড়েছে এবং পড়েছে, যা প্রায়শই শুধুমাত্র ইলন মাস্কের টুইটের উপর ভিত্তি করে উঠানামা করে। ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য সাম্প্রতিক সময়ে কমে যাওয়ার পরেও সব ক্রিপ্টোকারেন্সির মোট বাজারমূল্য বর্তমানে $1.5 ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি। 😅তবে এটা আসলে সত্যিকার অর্থে কম্পিউটার কোড ছাড়া আর কিছুই না।😅
বিটকয়েন তৈরিই করা হয়েছিল ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়াই লেনদেন করার মাধ্যম হিসাবে যেটা পুরোপুরি illegal.
বিশ্ব যখন আর্থিক সংকটের মধ্যে ছিলো তখনই ক্রিপ্টোকারেন্সির আবির্ভাব ঘটে, যেটা আসলে ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দেয়।
কারন বিটকয়নের মাধ্যমে মানুষ অনেক বেশি সুবিধা পাচ্ছিলো।
যেমনঃ বিটকয়েনে শুধুমাত্র ডিজিটাল পরিচয় ব্যবহার করেই লেনদেন করা সম্ভব, যা ব্যবহারকারীদের অনেকটাই গোপনীয়তা প্রদান করে। আর এটাই বিটকয়েনকে অবৈধ কার্যকলাপের সবচেয়ে পছন্দের এবং সহজ transection system করে তুলে।
যেমনঃ কিছুদিন আগে র্যানসমওয়্যার হামলাগুলোর অর্থিক লেনদেন হয় ক্রিপ্টোকারেন্সিতে। ক্রিপ্টোকারেন্সিই মূলত অবৈধ অনলাইন বাণিজ্যের অন্ধকার জগৎকে Paypal এর মতো service দেয়। অর্থাৎ, ক্রিপ্টোকারেন্সি কে অবৈধ জগতের paypal বলা চলে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি আসলে যেভাবে আর্থিক ব্যবস্থায় বিপ্লব সৃষ্টি করতেছে তা শেষ পর্যন্ত আমাদের সকলের উপর ভালো এবং মন্দ দুই রকমেরই প্রভাব ফেলবে।
তবে ক্রিপ্টোকারেন্সির জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে, বিটকয়েন সহ অন্য সকল ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করা ধীরে ধীরে ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ হয়ে যাচ্ছে। এই ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে বেশিরভাগ লেনদেন যাচাই করতে প্রায় ১০ মিনিট সময় লাগে যায় এবং সম্প্রতি এর লেনদেন ফি প্রায় $২০ ডলার ছিল। বিটকয়েনের এই অস্থির মূল্য এটিকে লেনদেনের মাধ্যম হিসাবে অকার্যকর করে তুলেছে। প্রতিদিন এটির মূল্যের মান উঠানামা করার ফলে কোনোদিন $১০ হাজার ডলার সমপরিমান ক্রিপ্টো দিয়ে আগে উন্নত মানের গাড়ি কিনা গেলেও কোনো কোনো দিন নিম্ন মানের গাড়ি কিংবা বাইক কিনার মূল্যের মানে উপনিত হয় এটি। অর্থাৎ, ক্রিপ্টোর দাম আসলে ধুমধাম উঠানামা করে।
এছাড়াও, এটি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে বিটকয়েন আসলে সেই লেভেলে গোপনীয়তা প্রদান করে না।
যেমনঃ কিছুদিন আগে কলোনিয়াল পাইপলাইন র্যানসমওয়্যার Attack হইছিলো, যেখানে হ্যাকাররা বিটকয়েনে মুক্তিপন চেয়েছিলো যার কিছু অংশ কে আবার ট্র্যাক করে পুনরুদ্ধারও করা হয়।
অর্থাৎ, ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন করাও হেকারদের জন্য পুরোপুরি নিরাপদ না এটা প্রমাণ হয়েই গেলো এই ঘটনার মাধ্যমে।
বিটকয়েন তার মূল উদ্দেশ্যে তথা গোপনীয়তা রক্ষার উদ্দেশ্যে ব্যর্থ হলেও এটি একটি জল্পনামূলক বিনিয়োগে পরিণত হয়েছে। এটি রহস্যজনক কারেন্সি, কিন্তু আসলে এর সত্যিকার অর্থে কোনো মূল্য বা Value নেই। এবং এটি কোনো কিছুর দ্বারা প্রভাবিতও নয়। তার পরেও বিটকয়েনের সমর্থকরা এটিকে সোনার সাথে তুলনা করেন। এর মূল্য এবং এর দুষ্প্রাপ্যতা থেকে এটি জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু সত্যি বলতে কোনো কিছু পাওয়া কঠিন তার মানে এই না যে আমরা সেটাকে এই কারনে বেশি গুরুত্ব দিবো। তাই বলা যায় বিটকয়েন বিনিয়োগকারীরা এক ধরনের বোকা তত্ত্বের উপরেই নির্ভর করেই আছেন। কারন, বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করে আপনার লাভ তুলতে হলে আপনাকে কেবল এমন একজনকেই খুঁজে বের করতে হবে যিনি আপনার কাছ থেকে আরও বেশি দামে আপনার বিটকয়েন কিনতে ইচ্ছুক হবেন। অর্থাৎ, বলা যায় বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কেউ লাভ করবে তখনই যখন অপরপক্ষ বোকার মতো আপনার কাছ থেকে এটি কিনে নিয়ে ঠকে যাবে। ক্রিপ্টোকারেন্সি আপনাকে ততক্ষণই value হিসাবে support দিবে যতক্ষণ এটি আপনার কাছ থেকে অন্য কেউ কিনতে চাবে। যদি দুনিয়ার আর কেউ ক্রিপ্টো কিনতে না চায় এবং আপনার কাছে হাজার হাজার ক্রিপ্টো পড়ে থাকে, তাহলে সেই ক্রিপ্টো আসলে আপনার কোনো কাজেই দিবে না। সেই ক্রিপ্টোর আসলে কোনো দামই থাকবে না। সেইসব ক্রিপ্টো মাটিতে ফেলে দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
কাগজে-কলমে ক্রিপ্টোর উচ্চ মূল্যায়নের পরেও, ভবিষ্যতে বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির পতন যে আসলে দুনিয়ার আর্থিক ব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দেবে এমন সম্ভাবনা খুবই কম। ব্যাংকগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর বাইরেই অবস্থান করছে। ক্রিপ্টোর উত্থান দেখে যারা দেরিতে এসে বিনিয়োগ করতেছে, এইসকল বিনিয়োগকারীরাই ক্ষতির সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সি আসলে নিরীহ কোনো মূদ্রা ব্যবস্থা নয়। লেনদেনগুলো “মাইনার” দ্বারা প্রক্রিয়াকৃত হয়, যারা প্রচুর কম্পিউটিং শক্তি ব্যবহার করে এবং এর বিনিময়ে বিটকয়েন আকারে পুরস্কার পায়। বলা যায় যে, বিটকয়েন নেটওয়ার্ক আর্জেন্টিনা বা নরওয়ের মতো পুরো দেশগুলোর সমান ইলেকট্রিসিটি শক্তি খরচ করে, যা বিশেষ মেশিন থেকে প্রচুর ইলেকট্রনিক বর্জ্য তৈরি করে। এইসকল মেশিন প্রচুর বিদ্যুৎ খায় এবং দ্রুত পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়।
বিটকয়েনের চূড়ান্ত পরিণতি যাই হোক না কেন, এর ব্লকচেইন প্রযুক্তি সত্যিই উদ্ভাবনী এবং বিপ্লবী। বিটকয়েন দেখিয়েছে কীভাবে কম্পিউটারের নেটওয়ার্কে চলমান প্রোগ্রামগুলোকে ব্যবহার করে কোনো প্রতিষ্ঠানকে ট্রান্সফার ফি না দিয়ে নিরাপদে আন্তর্জাতিকভাবে অর্থপ্রদান করা যায় কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর নির্ভর না করেই। অভিবাসী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে, যারা তাদের দেশে রেমিট্যান্স পাঠায়, তাদের জন্য ফি দেয়া একটি বড় বোঝা। তাদের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সিতে টাকা পাঠানো সহজ, তবে এতে সরকার রাজস্ব হারাবে। ফেসবুক তাদের নিজস্ব ক্রিপ্টোকারেন্সি “ডিয়েম” চালু করার পরিকল্পনা করছে, যা ডিজিটাল অর্থপ্রদানকে সহজ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। বিটকয়েনের বিপরীতে, ডিয়েম মার্কিন ডলার বা অন্যান্য প্রধান মুদ্রার রিজার্ভ দ্বারা পুরোপুরি সমর্থিত হবে, যা এর মূল্যের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে। তবে, ফেসবুকের অন্যান্য উচ্চমনা উদ্যোগের মতো, তারা জনকল্যাণের চেয়ে নিজেদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে না এমনটি বিশ্বাস করার বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। একদিন বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলো তাদের নিজস্ব ক্রিপ্টোকারেন্সি বিশ্বব্যাপী চালু করবে যা মার্কিন ডলারের জন্য উদ্বেগজনক। এমন মুদ্রাগুলো মার্কিন ডলারকে হুমকিতে ফেলে দিবে আর ছোট এবং কম উন্নত দেশগুলোর মুদ্রাগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে।
বিটকয়েনের প্রযুক্তির বিভিন্ন রূপ অনেক আর্থিক পণ্য এবং পরিষেবাকে কম খরচে সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য করে তুলছে। সরাসরি সঞ্চয়কারী এবং ঋণগ্রহীতাদের সংযোগ করছে। এই উন্নয়নগুলো এবং নতুন প্রযুক্তি দ্বারা সৃষ্ট সম্ভাবনাগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে তাদের নিজস্ব মুদ্রার ডিজিটাল সংস্করণ চালু করার বিষয়ে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করেছে। চীন, জাপান এবং সুইডেন ইতোমধ্যে তাদের ডিজিটাল মুদ্রার পরীক্ষা চালাচ্ছে। বিটকয়েনের crazy মূল্য আকর্ষণ আর্থিক ব্যবস্থায় যে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে, তা শেষ পর্যন্ত আমাদের সকলের উপর ভালো-মন্দ উভয় দিকেই প্রভাব ফেলবে।