11/07/2025
সন্তানের পথচলায়, আপনিই সবচেয়ে বড় শক্তি…
সম্মানিত অভিভাবকবৃন্দ, অবশেষে আজ SSC বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। হয়তো আপনার সন্তান কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেয়েছে বা হয়তো পায়নি। যে সন্তানের সাফল্যের জন্য এতদিন আপনার অপেক্ষা, দুশ্চিন্তা আর নিরলস পরিশ্রম; আজ তার পরীক্ষার ফলাফল দেখে হয়তো আপনার মন ভরে উঠেছে গর্বে কিংবা এক গভীর বিষণ্নতা আপনাকে আচ্ছন্ন করেছে। আমরা জানি, যাদের সন্তান ভালো ফলাফল অর্জন করতে পেরেছে, তাদের আনন্দ যেমন গভীর; তেমনি যাদের সন্তান প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জন করতে পারেনি, তাদের ব্যথাও সীমাহীন।
আমরা বুঝি, সন্তানের স্বপ্ন শুধু তার একার নয়—এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে পরিবারের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, অপেক্ষা আর পরিশ্রম। যখন সে অক্লান্ত পরিশ্রম করে, একের পর এক নির্ঘুম রাত পার করে, স্বপ্নপূরণের পথে নিজেকে উজাড় করে দেয়—তখন সেই স্বপ্ন যদি অপ্রত্যাশীত কারণে বাধাগ্রস্থ হয়, তখন কেবল সে-ই নয়, বরং অভিভাবকের হৃদয়ও একই ব্যথায় ভারাক্রান্ত হয়। সন্তানের স্বপ্ন কখনো তার একার হয় না; এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে বাবা-মায়ের নিখাদ ভালোবাসা, গভীর প্রত্যাশা আর সীমাহীন ত্যাগ। সন্তান যখন নিজের ভবিষ্যতের জন্য স্বপ্ন দেখে, সেই স্বপ্ন অভিভাবকদের হৃদয়েও এক নতুন জীবনের আলো হয়ে জ্বলে ওঠে। আর তাই আজ যখন আপনার সন্তান কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে পারেনি; তখন কেবল তার নয়, আপনার হৃদয়েও হয়তো এক গভীর শূন্যতা ও বেদনাময় নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে। হওয়াটাই স্বাভাবিক, কারণ সন্তানের অনুভূতি তো আপনার অনুভূতিরই প্রতিচ্ছবি।
কিন্তু, জীবনের প্রকৃত অর্থ কি সামান্য হোঁচট খেলেই ম্লান হয়ে যায়? একটি মাত্র পরীক্ষার রেজাল্ট কি সত্যিই নির্ধারণ করে দিতে পারে কার ভবিষ্যৎ কেমন হবে? যে আজ পথ হারিয়েছে, সে কি আর কখনোই সঠিক পথের দিশা পাবে না? না এমন নয়। জীবন এগিয়ে যাওয়ার নাম, সংগ্রাম থেকে শেখার নাম। প্রকৃত জয়ী সে-ই, যে হোঁচট খেয়েও উঠে দাঁড়ায়, ব্যর্থতা থেকে শক্তি সঞ্চয় করে নতুন উদ্যমে স্বপ্নের পথে এগিয়ে যায়।
আপনার সন্তান হয়তো এখন গভীর বেদনায় ডুবে আছে, নিজেকে ব্যর্থ ভাবছে, ভেতরে-ভেতরে ভেঙে পড়ছে। এই মুহূর্তে তার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আপনার সান্ত্বনা, আপনার নির্ভরতার স্পর্শ। তাই এখন আর তাকে দোষারোপ করবেন না, অন্যদের সঙ্গে তুলনা করবেন না; কঠিন কোনো বাক্যে তার মনকে আরও ভারাক্রান্ত করবেন না। ভাবুন তো, যদি এই ফলাফল তাকে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান করে তোলে? যদি সে নিজেকে তুচ্ছ ভেবে আত্মবিশ্বাসের শেষ অবলম্বনটুকুও হারিয়ে ফেলে? আজ যখন সে নিজেকে একা মনে করছে, তখন যদি আপনার ভালোবাসার আশ্রয় না পায়, তাহলে কীভাবে সে আবার নিজেকে গুছিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখবে, নতুন করে পথচলা শুরু করবে?
জীবন যেমন এক দিনের নয়, তেমনি কেবল দু-একটি পরীক্ষার ফলাফলেই এর সীমা নির্ধারিত হয় না। সামনে এখনো বিস্তৃত পথ পড়ে আছে, অসংখ্য সম্ভাবনার দুয়ার অপেক্ষা করছে। আজ হয়তো প্রত্যাশার তুলনায় প্রাপ্তিটা আশানুরূপ হয়নি। কিন্তু এমনও তো হতে পারে, আগামীকাল সে এমন কিছু অর্জন করবে, যা আপনাকে আরও বেশি গর্বিত করবে। হতে পারে, আজকের এই ব্যর্থতা আসলে এক মহাসাফল্যের ভিত্তিপ্রস্তর—একটি শিক্ষা, যা তাকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে, আরও আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলবে।
এই মুহূর্তে আপনার সন্তানকে বোঝান যে, সে একা নয়। তার পাশে আপনি আছেন, আমরা আছি। তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরুন, তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলুন—“তোমার পথ এখনো শেষ হয়নি, তোমার লড়াই এখনো বাকি আছে।” তাকে উৎসাহ দিন; তাকে বলুন যে, তার সামর্থ্য আছে, তার মেধা আছে, তার নতুন করে জয়ের ক্ষমতা আছে। মনে রাখবেন, আপনার ভালোবাসাই তার সবচেয়ে বড় শক্তি, আপনার আশ্বাসই তার সবচেয়ে বড় প্রেরণা।
ধন্যবাদান্তে,
উদ্ভাস-উন্মেষ শিক্ষা পরিবার।