31/05/2025
কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যা মুসলিমদের জন্য ওয়াজিব। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসালা তুলে ধরা হলো:
১. কাদের উপর কুরবানি ওয়াজিব?
* প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যারা ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে, তাদের উপর কুরবানি ওয়াজিব।
* নেসাব হল: স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি। টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নেসাব হলো এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া।
* যদি সোনা, রূপা বা টাকা-পয়সার কোনো একটি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায়, তাহলেও কুরবানি ওয়াজিব হবে।
* মুসাফিরের ওপর কুরবানি ওয়াজিব নয়।
* অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান বা পাগল ব্যক্তির উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়, যদিও তারা নেসাবের মালিক হয়। তবে তাদের অভিভাবক যদি তাদের পক্ষ থেকে কুরবানি করেন, তা মুস্তাহাব হবে।
২. কুরবানির সময়:
* ১০ যিলহজ্ব থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই তিনদিন কুরবানি করার সময়।
* ঈদের নামাজের আগে কুরবানি করা জায়েজ নয়। ঈদের নামাজের পর কুরবানি করতে হবে।
* প্রথম দিন কুরবানি করা সবচেয়ে উত্তম, এরপর দ্বিতীয় দিন ও তারপর তৃতীয় দিন।
* রাতের বেলায়ও কুরবানি করা জায়েজ, তবে দিনের বেলায় করা উত্তম।
৩. কোন পশু দ্বারা কুরবানি করা যাবে?
* উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানি করা জায়েজ।
* এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্য কোনো পশু যেমন হরিণ, বন্য গরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানি জায়েজ নয়।
৪. পশুর বয়সসীমা:
* উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে।
* গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে।
* ছাগল কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে।
* ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয়, তাহলে তা দ্বারাও কুরবানি জায়েজ। এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।
৫. পশুর ত্রুটি:
* স্পষ্ট খোঁড়া, স্পষ্ট কানা, স্পষ্ট রোগী এবং জীর্ণশীর্ণ পশু দ্বারা কুরবানি করা জায়েজ নয়।
* অর্ধেক কান কাটা বা ছিদ্র করা এবং অর্ধেক শিং ভাঙ্গা পশু দ্বারা কুরবানি জায়েজ নয়।
* নিখুঁত পশু কেনার পর যদি নতুন করে কোনো খুঁত হয় বা পুরনো কোনো দোষ বেরিয়ে আসে, তাহলে ঐ পশু দ্বারাই কুরবানি বৈধ হবে।
* খাসি করা কোনো খুঁত নয় এবং খাসি দ্বারা কুরবানি করা জায়েজ।
৬. অংশীদারিত্ব:
* উট, গরু ও মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কুরবানি করা জায়েজ।
* কুরবানির পশুতে আকীকার নিয়তে শরীক হতে পারবে। এতে কুরবানি ও আকীকা দুটোই সহীহ হবে।
৭. গোশত বন্টন:
* উত্তম হলো কুরবানির গোশত তিন ভাগ করা। এক ভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতজনদের জন্য এবং এক ভাগ গরিব, অসহায়, অনাথ ও মিসকিনদের জন্য।
* যারা কুরবানির পশু কাটায় সহযোগিতা করেন, তাদের পারিশ্রমিক হিসাবে কুরবানির গোশত দেওয়া বৈধ নয়। বরং তাদের পারিশ্রমিক হিসাবে টাকা-পয়সা বা অন্য কিছু দিতে হবে।
৮. মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানি:
* মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানি করা জায়েজ। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কুরবানি হিসেবে গণ্য হবে এবং এর গোশত নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে।
* যদি মৃত ব্যক্তি কুরবানির ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না, বরং সদকা করে দিতে হবে।
৯. কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার পর আদায় না করলে:
* যে ব্যক্তির উপর কুরবানি ওয়াজিব, সে যদি কুরবানির তিনদিনে কুরবানি না করে পশু বা তার মূল্য সদকা করে দেয়, তাহলে কুরবানি আদায় হবে না।
* যদি কেউ কুরবানির দিনগুলোতে ওয়াজিব কুরবানি দিতে না পারে, তাহলে কুরবানির পশু ক্রয় না করে থাকলে তার উপর কুরবানির উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করেছিল, কিন্তু কোনো কারণে কুরবানি দেওয়া হয়নি তাহলে ঐ পশু জীবিত সদকা করে দিতে হবে।
এই মাসালাগুলো কুরবানির সময় বিশেষত জানা থাকা জরুরি। যেকোনো মাসআলার বিশদ ব্যাখ্যার জন্য নির্ভরযোগ্য আলেমদের সাথে পরামর্শ করা যেতে পারে।