31/03/2023
২০০৪ সালে সুমাত্রার কাছে হওয়া ৯.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল জাপান, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, শ্রীলঙ্কা থেকে আফ্রিকার উপকূল পর্যন্ত। সারা পৃথিবী নাকি সেদিন এক সেন্টিমিটার কেঁপে উঠেছিল! এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ইন্দোনেশিয়ার কাছে সমুদ্রগর্ভের ৩০ কিলোমিটার নিচে, এবং তা থেকে তৈরি ৩০ মিটার উঁচু সুনামির ঢেউয়ে মারা গিয়েছিল ২ লাখেরও বেশি মানুষ। এটি ছিল আমাদের রেকর্ড করা ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে তৃতীয় শক্তিশালী।
আমাদের বাংলাদেশ ভারতীয়, ইউরেশীয় এবং মিয়ানমার টেকটনিক প্লেটের মাঝে আবদ্ধ। ফলে এই প্লেটগুলোর নড়াচড়ার ফলে আমাদের দেশে মাঝেমাঝেই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তা ছাড়া ভারতীয় এবং ইউরেশীয় প্লেট দুটো হিমালয়ের পাদদেশে আটকা পড়ে রয়েছে এবং ১৯৩৪ সালের পর তেমন কোনো বড় ধরনের নাড়াচাড়া প্রদর্শন করেনি। এ কারণে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন এই প্লেট দুটো হয়তো নিকট ভবিষ্যতে নড়ে উঠবে যা বড় ধরনের ভূমিকম্পের কারণ হবে। টেকটনিক প্লেটের অবস্থান দেখলে বোঝা যায় যে আমাদের উত্তর ও পূর্বে দুটো বর্ডার বা টেকনিক্যাল ভাষায় ‘ভূচ্যুতি’ রয়েছে যা বাংলাদেশের ভূমিকম্পের কারণ। এ জন্য বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল তথা সিলেট, ময়মনসিংহ এবং তৎসংলগ্ন এলাকা প্রবল ভূমিকম্পপ্রবণ। এর বাইরে ঢাকা ও রাজশাহী অঞ্চলও ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা।
১৮৯৭ সালের ১২ জুন ৮.৭ মাত্রার ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়েক’ ভারতবর্ষকে আঘাত হানে যা আজও পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ভূমিকম্প হিসেবে পরিচিত। এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ভারতের শিলং শহর তবে এর প্রভাব বর্তমান বাংলাদেশসহ বহু দূর পর্যন্ত অনুভূতি হয়েছিল। সে সময়ের ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন মিশনারির বিল্ডিং ভেঙে পড়েছিল এই ভূমিকম্পের কারণে। এ ছাড়াও ঢাকায় ৪৫০ জনের মত নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল যা সেই সময়ের তুলনায় রীতিমত অনেক বড় সংখ্যা।
ভূমিকম্পগুলোর একটা বৈশিষ্ট্য এ অঞ্চলে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মোটামুটি প্রতি একশ বছর পরপর এই অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ১৯১৮ সাল ছিল সর্বশেষ বড় ভূমিকম্পের বছর। এরপর প্রায় এক শ’ বছর কেটে গেছে কিন্তু আর কোন বড় ভূমিকম্প আঘাত করেনি বাংলাদেশকে যা বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলেছে। অনেক আবহাওয়াবিদ এটাও মনে করেন যে ছোট ছোট ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের বার্তা বহন করে। সে হিসেবে বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প যে কোন সময় আঘাত হানতে পারে। আর যদি সেটা ঘটে, তাহলে সেটার ভয়াবহতা হবে মারাত্মক।
তবে স্মরণকালের ইতিহাসে গত ২৫ এপ্রিল শনিবার বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প হয়েছে বলে মনে করছেন আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা। উৎপত্তিস্থল নেপালের লামজং এ এর মাত্রা ছিলো ৭.৯। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এই কম্পনে কেঁপে উঠেছিলো প্রবলভাবে। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও ভুটানেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্প প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক!