28/09/2024
#নামাজে_মন_ফেরানো
📓পর্ব - ৩
মাঝে মাঝে কাজের চাপে খুব অস্থির লাগে। মনে হয় দশ দিক থেকে আমাকে টানা হচ্ছে আর মাঝখানে আমি তব্দা খেয়ে বসে আছি। কোন দিকেই যেতে পারছিনা! তখনই মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে শুনি নামাজের আহবান, "আল্লাহু আকবর ... আল্লাহু আকবর ..." আমাকে ডাকতে থাকে, "নামাজের দিকে আসো! কল্যাণের দিকে আসো!"
তখন এই অগোছালো আমি অন্তত একটা ডিরেকশানে যাবার পথ খুঁজে পাই! এলোমেলো টেবিলটা ওভাবেই ফেলে চলে যাই রবের কাছে নিজের আত্মাকে গুছিয়ে নিতে! এটা যে কতটা উপকারী এবং শক্তিশালী অনুশীলন - যে কোনদিন এর স্বাদ পায়নি তাকে বুঝানো কঠিন।
মুহাম্মদ ফারিস তার "প্রোডাক্টিভ মুসলিম" বইতে নিজের জীবনের এমন একটা ঘটনা লিখেছিলেন যে, একবার তাদের এলাকায় বড় ধরণের বন্যা হয় যার ফলে তাদের বাড়ির অনেকটা অংশই ডুবে যায়। লেখক হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে চোখের সামনে নিজের সাজানো ঘরটাকে বসবাসের অযোগ্য হয়ে যেতে দেখতে থাকে। এরকম পরিস্থিতিতে মাথা ঠিক রাখা দায়!
ঠিক ঐ সময় তিনি শুনলেন যে আযান পড়ছে! সাথে সাথে তিনি মসজিদের দিকে হাঁটা দিলেন। ঐ ওলটপালট অবস্থা থেকে বের হয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর সাথে কথা বলে মনটা শান্ত করে নিলেন। মাথা ঠাণ্ডা হলে পরবর্তী কাজ সম্পাদনের একটা দিশা পেলেন!
যখন প্রচন্ড মন খারাপের দিনে কিছুই করতে ইচ্ছা করেনা, হতাশায় শুধু মনে হয় ঘরের এক কোণে গিয়ে বসে থাকি, তখনই একজন মুসলিম নামাজের জন্যে উঠে দাঁড়ায় নিজের রবের কাছে গিয়ে নিজেকে গুছিয়ে আনতে। আলহামদুলিল্লাহ এভাবেই নামাজ একজন মুসলিমের মনোবল চাঙ্গা করে এবং শক্তি বৃদ্ধি করে।
আসুন "নামাজে মন ফেরানো" সিরিজে আমরা আজকে সানার দ্বিতীয় অংশটুকু জেনে নেই ইনশাআল্লহ,
♦ওয়া তা আ'লা জাদ্দুকাঃ
"জাদ্দুকা" মানে "Determination, Decree", সহজ বাংলায় "ইচ্ছাশক্তি, আইন পাশ করে দেওয়া"। "আ'লা" মানে "Higher, উঁচু, মহান"। তাহলে এর অর্থ দাঁড়ালো - "আল্লাহর ইচ্ছা সবচেয়ে বড়"! আমাদের কত শত ইচ্ছা থাকে, কিন্তু আমাদের ইচ্ছামতন সবকিছু হয়না। তখন আমরা অনেকেই ভেঙ্গে পড়ি, কষ্ট পাই। অথচ, নামাজে প্রতিদিন আমরা সানায় স্বীকার করে নিচ্ছি যে - "আল্লাহ, আমার ইচ্ছার থেকে আপনার ইচ্ছা বড়!"
আমাদের সামান্য জ্ঞান দিয়ে আমরা কোন কাজের কী পরিণাম সেটা বুঝতে পারিনা। কিন্তু যেই রব মহান আল্লাহ, তিনি স্থান, কাল, পাত্র ভেদ করে সবকিছু জানেন। তাঁর থেকে ভালো আর কেউ জানবে না যে, এখন আমার জন্যে এই বিয়ে, চাকরি অথবা কাজ হয়ে যাওয়াটা আসলেই কতটা কল্যাণকর। যে ব্যক্তি "ওয়া তা আ'লা জাদ্দুকা"-র মর্ম বুঝে নামাজে এটা পাঠ করবে, না পাওয়ার কোন গ্লানি তাকে জেঁকে ধরতে পারবে না। তার অন্তর জুড়ে থাকবে প্রশান্তি ইন শা আল্লাহ।
♦ওয়া লা ইলাহা গাইরুকাঃ
"আল্লাহ, আমি আপনি ছাড়া আর কারো ইবাদাত করবো না" - এই পর্যায়ে এসে সানায় আমরা স্বীকার করি নেই যে, আল্লাহ আমাদের প্রভু। আমরা তাঁর গোলাম। আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো সামনে আমাদের মাথা নত করবো না। নিজেদের কামনা-বাসনা এবং নফসের সামনে না।
সমাজে সামনে না, শয়তানের ওয়াসওয়াসার সামনে না! আমরা আল্লাহর থেকে বেশি কোনকিছুকেই গুরুত্ব দিবো না।
আচ্ছা, একটু ভাবি, দিনের মধ্যে পাঁচবার করে যদি আমরা কাউকে নিজে থেকে গিয়ে বলে আসি যে, "তুমি আমার লাইফে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ"। এবং বলার সাথে সাথেই যদি এমন এমন কাজ তার চোখের সামনে করতে থাকি করি যা ঐ ব্যক্তি মোটেও পছন্দ করেন না, তাহলে পরবর্তীতে তার সামনে যেতে আমাদের অনেক লজ্জা লাগবেনা?
কষ্টের কথা কি জানেন, এই কাজটা আমরা দৈনিক আল্লাহর সাথে করে আসছি। এজন্যেই যে বুঝে নামাজ পড়ে, তারা জানেন যে আল্লাহর সাথে সে প্রতিশ্রুতি করেছে, সেই রবের দরবারে এখনি হাজিরা দিতে যেতে হবে। কীভাবে আল্লাহকে এতটা অসন্তুষ্ট করে তাঁর সামনে দাঁড়াই? কীভাবে তাঁর বান্দাকে কষ্ট দিয়ে, তাঁরই বান্দার হক মেরে এসে তাঁকে বলি যে, "ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা"?
আমরা নামাজ পড়ি আর আমাদের মনে হয় - "কই! নামাজ পড়েও তো খারাপ কাজ করেই যাচ্ছি!" এটা আমাদের নিজেদের দুর্বলতা, নামাজের না। আল্লাহ আমাদের ইবাদত, আখলাক এবং ইখলাস আরও বহুগুণে তাওফিক বাড়িয়ে দিক। আমিন।
লেখা :-শারিন সফি অদ্রিতা
সংগ্রহে :-মারিয়াম মির্জা
চলবে……ইন শা আল্লহ