28/08/2025
বাংলদেশ ৮৮ এবং সাংগঠনিক ব্যার্থতা:
বাংলাদেশ ৮৮ উদ্যোগটা আসলে শুরু হয়েছিল স্বপ্ন নিয়ে—একটা স্বচ্ছ, গণতান্ত্রিক এবং সদস্যদের অংশগ্রহণমূলক সংগঠন তৈরির স্বপ্ন। প্রস্তাব ছিল একেবারেই সোজা: প্রত্যেকে নিজের জেলায় নিবন্ধিত হবে, জেলা থেকেই আহ্বায়ক নির্বাচন হবে, আহ্বায়করা মিলে গঠন করবে সেন্ট্রাল কাউন্সিল, আর সেই কাউন্সিল তৈরি করবে সংবিধান ও কার্যকর ফাউন্ডেশন। অর্থাৎ সবকিছু চলবে গণতন্ত্রের ভিত্তিতে, আর্থিক লেনদেন থেকে শুরু করে ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত।
কিন্তু এখানেই শুরু হলো অন্য খেলা। কেন্দ্রে বসে থাকা কিছু মুখচেনা লোক নিজেরাই পুরো নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতে চাইলো। নীজ জেলায় গিয়ে তারা কখনোই সাধারণ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসতে পারবে না—এই ভয় থেকেই তারা জেলা ভিত্তিক প্রস্তাবটাকে মাটিচাপা দিল। প্রবাসী নেতাদের যুক্ত করার ক্ষেত্রেও নানা অজুহাত দেখানো হলো, এবং বানানো হলো যাতে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে থাকে তাদের হাতেই। এটাই অনলাইন হাওয়াই কমিটি। মুলত: ঢাকা কেন্দ্রিক ক্ষমতাকে প্রাধান্য দেয়ার কারনেই এই পুরো ব্যাপারটা ঘটে গেলো।
এখানেই শেষ নয়, কৌশলটা ছিল আরও দৃঢ। তারা গোপনে বানিয়ে ফেললো একটা “দ্বি-কক্ষ কমিটি”। এলিট একটা কমিটি তাদের তোষামদকারীদের নিয়ে বানিয়ে নিল ১৩২ জনের এক বিশাল হাওয়াই কমিটি, যেখানে নিজেদের পছন্দের মুখচেনা মানুষ বসানো হলো, কিন্তু জেলার সমন্বয়ক আর সাধারণ কর্মীদের জায়গাই দেওয়া হলো না। গ্রুপে ফলাও করে নিজেরাই সংবিধান বানালো, বিভিন্ন স্বপ্ন দেখিয়ে নিজেরাই ফাউন্ডেশন রেজিস্ট্রেশন করলো, আর গ্রুপের এডমিন পদেও বসিয়ে দিল নিজেদের অনুগতদের। এ যেন গণতন্ত্রের নামে সরাসরি এক নায়কতন্ত্রের ফ্যাসিজম!
সাধারণ সদস্যদের মতামত? কোথাও নেই। যারা এসবের প্রতিবাদ করলো, যারা সত্যটা সামনে আনলো, যারা এই নিয়ে গ্রুপে কথা বলতে চাইলো তাদের উপর চালানো হলো অপপ্রচার, মিথ্যা তথ্য প্রভারণা, বিভিন্ন সভায় কৌশলী অপমান আর গ্রুপে দল বেধে হেয় করার সংস্কৃতি । টাকা খরচ করে এডমিন পদ বিক্রির পরিবেশ হলো, লোভ দেখানো হলো পদ-পদবির, আর সদস্যদের আবেগকে ব্যবহার করা হলো ব্যবসা আর ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার জন্য। এটাই ছিল তাদের আসল উদ্দেশ্যে।
ফল কী হলো? সাধারণ সদস্যরা আগ্রহ হারিয়ে ফেললো। যে প্ল্যাটফর্মে স্বপ্ন ছিল সবার অংশগ্রহণ, সেটাই হয়ে গেল সিন্ডিকেটের খেলাঘর। জেলা ভিত্তিক সাংগঠনিক কার্যক্রম থমকে গেল, আর এর মাঝেই শুরু হলো ভাঙন। বিভিন্ন গ্রুপের সদস্যরা মুখ ফিরিয়ে নিলো, কেউ আলাদা হয়ে বিচ্ছিন্ন গ্রুপে যোগ দিলো, আবার কেউ নতুন গ্রুপ তৈরি করলো। সদস্যদের আবেগ একেবারেই হারিয়ে গেলো, আর জেলার বন্ধুরা নিজেরাই জেলার নামে আলাদা গ্রুপ বানিয়ে একেকজন একেক দিকে ছিটকে পড়লো। এক সময়কার বৃহৎ নেটওয়ার্ক সাংগঠনিক স্থবিরতায় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।
আজ বাংলাদেশের ৮৮ উদ্যোগটা এক মৃত স্বপ্ন। এর দায়ভার এড়াতে পারবে না সেই প্রবাসী সভাপতি, সেই স্বঘোষিত লিডার সদস্য সচিব, আর তাদের হাতের পুতুল এডমিন-মডারেটররা। তারা সবাই মিলে একটা পুরো প্রজন্মের বন্ধুত্ব, বিশ্বাস আর স্বপ্নকে বিক্রি করে দিয়েছে। তারা সদস্যদের প্ল্যাটফর্মকে নিজের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ আর ব্যক্তিগত বানিজ্যের জন্য ধ্বংস করেছে।
এটাই হলো নির্মম সত্য—একটা স্বপ্নের মৃত্যু হলো শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক সাংগঠনিক সূত্র অমান্য করার কারণে। কিছু স্বার্থান্ধ মানুষের হাতে বাংলাদেশ ৮৮ আজ স্বাধীন হয়েও পরাধীন।