01/07/2025
"রাজনৈতিক দলের কর্মী হলে এতক্ষনে দেশ উত্তাল হয়ে যেত, মিডিয়া ভিড় করতো' আরোও কত কি হতো। কিন্তু আজ একজন গরীব গার্মেন্টস শ্রমীক বলে কোন বিচার নেই
কি অপরাধ ছিল তার যেকারণে এভাবে তাকে পিটিয়ে হ*ত্যা করতে হবে?
হৃদয় একটা নাম।একটা ছেলে।
বয়স উনিশ।গাজীপুরের গ্রিনল্যান্ড পোশাক কারখানায় কাজ করত ইলেকট্রিক মেকানিক হিসেবে।
বহুত দিনের স্বপ্ন ছিল—একটা মোটরসাইকেল কিনবে, ঈদের দিন মা-বোনকে উঠিয়ে ঘুরাবে।
তবে সেই স্বপ্নের আগে মালিকের চোখে তার পরিচয় ছিল—“গরিব মিস্ত্রি,অশিক্ষিত মজুর”।
শনিবার সকাল। কারখানায় কিছু গোলমাল হয়। হৃদয় নাকি ‘অফিশিয়াল নির্দেশনা না মেনে’ সার্ভিস দিয়েছিল।
বাকি কর্মীরা বলে— সে শুধু যা খারাপ হয়েছিল ঠিক করছিল।
কিন্তু মালিকপক্ষের কেউ কেউ বলে— "অর্ডার অমান্য।"
তাদের মনে হলো—“একটা গরিব ছেলে এত সাহস দেখায়?”
তাকে ডেকে আনা হয় অফিসে।
তারপর... দরজা বন্ধ।
লোহার রড, পাইপ, বুট, ঘুষি...
পিটিয়ে... থেঁতলে... নিস্তেজ করে ফেলে তাকে।
একজন সহকর্মী দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলেছিল,
— “ভাই, বাঁচান, ওরে মারতেছে।”
জবাব আসে,
— “তোদেরও উচিত শিক্ষা দিতে হবে।”
ঘণ্টা খানেক পর হৃদয়ের নিথর দেহ পড়ে থাকে কারখানার পেছনের ঘরে।হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার বলেন—
“ডেড অন অ্যারাইভাল।”
চোখদুটো অর্ধ খোলা, এক হাত মুঠো করা। যেন কিছু বলতে চেয়েও পারেনি।
এই খবর যেন কেউ না জানে—এমন চেষ্টায় উঠে পড়ে লাগে মালিকপক্ষ।
পুলিশ আসে, ফাইল তৈরি হয়,
“অসুস্থ হয়ে মৃত্যু”
বলা হয়—“হৃদয়ের পরিবার শান্ত আছে।”
তবে হৃদয়ের মা তখন পাগলের মতো দৌড়াচ্ছে হাসপাতালের বারান্দায়,
চিৎকার করে বলছে—
“আমার ছেলে অসুস্থ ছিল না! ওরে পিটিয়ে মারছে… ওর মুখের ওপর পা দিছে!”
কিছু শ্রমিক জানে, দেখে—রাস্তায় নামতে চায়।
তাদের জবাব দেয় রাষ্ট্র।
পুলিশ, র্যাব, জলকামান।
বলা হয়,
— “তথ্য বিভ্রান্তিমূলক।”
আর সাহসী সাংবাদিকতা বলে—
“গুজব ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা।”
একটা জাতীয় দৈনিক এমন শিরোনাম করে,“একটি মহল বেতন না বাড়ানোর ইস্যুতে কারখানায় উত্তেজনা ছড়াতে চায়”
হৃদয়ের নাম একটিও নেই সেই খবরে।
তাকে কবর দেওয়া হয় সন্ধ্যাবেলা।
চারজন শ্রমিক কাঁধ দেয়, এক ভাই ফোনে কান্না চেপে রাখে—
কারণ সে মালয়েশিয়ায়।
মা শুধু একবার জিজ্ঞেস করে—
— “ওরে মারলো ক্যান গো? উনি কি মানুষ আছিল না?”
কেউ উত্তর দেয় না।
এই জুলাই ছিল শ্রমিকের জন্য। ব্যানারে লেখা ছিল “মজুরের অধিকার, দেশের অগ্রগতি।”
কিন্তু হৃদয়ের জন্য এই জুলাই হলো শুধু একটা কাফনের মাস।
হৃদয়ের গায়ে সার্টিফিকেট ছিল না, ডিগ্রি ছিল না কিন্তু গায়ে রক্ত ছিল,
হৃদয়ে স্বপ্ন ছিল।
আর এখন, শুধু কবরের মাটিতে তার নাম—“হৃদয়, পিতাঃ আব্দুল মালেক, মৃত্যুঃ ২০২৫, কারণ: পেটানো।”
রাষ্ট্র চুপ।
মিডিয়া ব্যস্ত “গুজব প্রতিরোধে”।
আর আমাদের বিবেক?
সেটা হয়তো বিক্রি হয়ে গেছে সেই কারখানার আগুনপ্রতিরোধী হেলমেটের টেন্ডারে।
হৃদয়ের নামে কোনো দিবস হবে না।
কিন্তু তার রক্ত লেগে থাকবে আমাদের নীরবতায়
MD RUBEL RANA