
07/03/2023
জীবন একটি রঙিন ক্যানভাসের নাম,এই ক্যানভাসে রংতুলির আঁচড়ে তৈরি হয় জীবনের বহুমাত্রিক গল্পের সমাহার। যে গল্পের ভেতরে রয়েছে মানুষের হাসি-কান্না, দুযোর্গ-দুর্বিপাক, ক্ষোভ-হতাশা ও দুঃখ-বেদনার সমরোহ। যে গল্পের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে নানান জানা-অজানা গল্প, রয়েছে কত বিচিত্র সব ভঙ্গিমা,কত উত্থান-পতন আর রহস্যময়তা!
ধরণির পথে পথে বইটির ট্যাগলাইনে বলা হয়েছে 'মুসাফিরের চোখে দিগদিগন্তের জীবন দর্শন',আসলেই তাই। লেখক বিভিন্ন প্রান্তে, বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন সমাজে উঠা-বসার কারণে তাদের সমাজকে গভীরভাবে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাদের জীবনপদ্ধতি অনেক কিছুই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছেন। আর তাই সমাজের ভেতরের অজানা, না বলা গল্পগুলো আমাদের সামনে তুলে ধরতে পেরেছেন। তাদের জীবনের করুণ পরিণতি হওয়ার পিছনে কী কারণ ছিল? তার জন্য সমাজব্যবস্থা কতটুকু দায়ী? এইসব দৃষ্টিকোণ খুব নিখুত করে তুলে ধরেছেন বইয়ের পাতায় পাতায়।
আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে, লেখকের চোখে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের পারিবারিক ব্যবস্থা, তাদের সমাজ ব্যবস্থা, জীবন ব্যবস্থা, তাদের সংস্কৃতির চিত্র, মূল্যবোধ বিষয়গুলো উঠে এসেছে 'ধরণির পথে পথে' বইটিতে। লেখক ইংল্যান্ডের একটি মানসিক হাসপাতালের ডেপুটি ম্যানেজার হিশেবে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ছিলেন। কুয়েতের মানসিক হাসপাতালেও ছিলো তার কর্মক্ষেত্র, যার ফলে তিনি মানসিক অসুস্থ রোগীদেরও খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাদের উপচে পড়া অশ্রুফোঁটার গল্পগুলো গভীর মনযোগ দিয়ে শুনেছেন। আর তাদের জীবনের এই অব্যক্ত কথাগুলো লেখক চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন 'ধরণির পথে পথে' বইয়ে।
বইটি মূলত বাস্তব জীবন থেকে নেওয়া একগুচ্ছ গল্পের সংকলন। ধরণির পথে পথে ঘটে যাওয়া ২৮টি দৃশ্যপট তুলে ধরেছেন লেখক। যার প্রতিটি দৃশ্যপট আপনাকে ভাবিয়ে তুলবে। যে পশ্চিমা জীবনের অন্ধ অনুকরণে আমরা ব্যস্ত, সে জীবন বাস্তবে কতটা কষ্টের, অসহায়ত্বের আর হাহাকারে পরিপূর্ণ—বাস্তব জীবনে লেখক সেগুলোর প্রতীক্ষদর্শী হয়ে যেমন অবাক হয়েছেন তেমনি বইটি পড়ার সময় পাঠক হিশেবেও অবাক হতে হয়।
📖 বই-এর অন্তর্ভাগ 📖
📜সিক্স সেভেনটি ফাইভ,ওয়েলবেক রোড: ইংল্যান্ডের নিউক্যাসল শহরে লেখকের প্রতিবেশী নানীর সাথে বাস করা পিতৃ পরিচয়হীন সন্তান জন্ম নেওয়া শিশুর গল্প।
এই ছোট্ট নিষ্পাপ বাচ্চাটা জানে না তার বাবা কে? কে তার জন্মদাতা? জন্মদাত্রী মা পর্যন্ত জানে না তার সন্তানের জন্মদাতা কে? দেড়-দুই বছরের শিশুকে ফেলে স্পেনে চলে যায় তার জন্মদাত্রী মা। ছোট্ট অবুঝ শিশুটি লেখককে বলে, 'জিয়া,উইল ইউ ব্রিং মাই ড্যাড ব্যাক টু মি?'
📜 একজন মুহাম্মাদ তাওফিক: ফিলিস্তিনের এক নাগরিকের সর্বস্ব হারিয়ে মানসিক হাসপাতালে বাসিন্দা হওয়ার করুণ গল্প। কীভাবে একটি পরিবার ধ্বংস হয়ে মুহাম্মাদ তাওফিক মানসিক হাসপাতালে ঘুরে বেড়ান। যে মানুষটি আজও বিভিন্ন পত্রিকায় তন্নতন্ন করে খুঁজছেন তার স্ত্রী-কন্যার ঠিকানা।
📜 ট্রেসি: "কখনো কি তুমি হয়েছ একা? হয়েছ কি বেদনায় নীল?
এতটা ভালো কি বেসেছো কাউকে,যতটা তোমাতে আমি হয়েছি লীন!"
অবহেলায় জর্জরিত তিরাশি বছরের বৃদ্ধা মায়ের গল্প। নার্সিং হোমে ট্রেসির মুমূর্ষু সিচুয়েশনেও তার সন্তানকে কাছে পায়নি,বিগত নয়টি বছর তার মায়ের একটিবার খোঁজ নিতে পারেনি। মায়ের মৃত্যুতে কেবল একটি শোকবার্তা পাঠিয়ে সেই ছেলেটির দায়িত্ব শেষ করে।
📜 সখি ভালোবাসা কারে কয়: থাইল্যান্ডের একটি মেয়ের ভালোবাসার প্রলোভন গল্প। বর্তমানে তরুণ সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হলো ভালোবাসার প্রলোভন। এই গল্পে আপনি জানতে পারবেন নোপার জীবন্ত লাশের পরিণত হওয়ার ঘটনা।
📜 এক এডওয়ার্ড হজকিন ও তার ভালোবাসা: প্রেমিকা নিকোলা তার কাছ থেকে পালিয়ে বয়ফ্রেন্ডের কাছে চলে যাওয়ার পরও জনাব এডি হজকিন তার প্রেমিকাকে পাগলের মতো করে সারাটিজীবন ভালোবেসে গিয়েছে শুধু তাই নয় মৃত্যুর পূর্বে তার সকল সম্পত্তি নিকোলার নামে উইল করে দিয়ে গেছেন,যার পরিমাণ তিরাশি হাজার পাউন্ড। সাথে একটি গ্রিটিংস কার্ড,যার ওপরে এডি নিজ হাতে লিখেছেন,
'তোমারে এতটা আমি চেয়েছিনু মনে
ভাষাতেও যা যায় না কহন!
তাতেও তোমার মন বিষাদে ভরা!জেনে
ভুলে যাব ভাবনা তোমার-করেছিনু পণ।'
📜 সে আমার ছোটো বোন,বড়ো আদরের: জন্মের পর থেকে, যে বাবা আদর-সোহাগ দিয়ে সন্তানকে লালন-পালন করে আসছে, তার সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে, দীর্ঘদিন সংসার পর হঠাৎ মা দাবি করে সেই সন্তানটি তার নয়!
📜 আমার ও মায়ের মূল্য কত: গল্পটি পড়ার পূর্বে শিরোনাম দেখে হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলাম অনেকক্ষণ যাবত আর মনের ভেতর প্রশ্নসহ ধাক্কা খেয়েছে, "আমার ও মায়ের মূল্য কত।"
কার মূল্য বেশি? ওই জ্যাকপট লটারির, না একটি কুকুরের? না একজন জন্মদাত্রী মায়ের? একটি জ্যাকপট লটারির মূল্য এক পাউন্ড মাত্র, তা জানি। একটি কুকুরের মূল্য আমার জানা নেই। আমার মায়ের মূল্য অবশ্য টাকার অংকে সঠিক জানি না! তবে, এটুকু জানি, সকল সম্পদ তো পরের কথা, আমার পুরো জীবনটাই মায়ের জন্য হাসিমুখে বিলিয়ে দিতে পারি।
হাসপাতালে সেরিব্রাল স্ট্রোক করে মা মারা গেছে। মায়ের মৃত্যুর সংবাদ তার মেয়ে দিতে গিয়ে ওপাশ থেকে তার মেয়ে জানালো, কিছুক্ষণ পরেই টিভিতে জ্যাকপট লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হবে! তিনি সেই লটারি টিকিট কিনেছেন এবং লাইভ ড্রটি টিভিতে দেখবেন তাই এখন যেতে পারবে না! বিষ্ময়ে হতবাক হয়েছি করুণ এই ঘটনাটি পড়তে গিয়ে।
📜 আমি যে মা,আমার কি রাগ করে: পারিবারিক বন্ধন কতোটা ঠুনকো সত্তর বয়স্কা জেসি নিকলসনের গল্পতে সেই চিত্র ভেসে উঠেছে। প্রায় এক যুগের চেয়েও বেশি সময় ধরে স্বামীর সঙ্গে ভালোই সংসার চলছিল। একদিন বলা নেই, কওয়া নেই তার স্বামী উধাও! ফোন করে জানালেন- তিনি আদালতে ডিভোর্স চেয়েছেন,একটু একা থাকতে চান! কিছু দিনের মধ্যেই ডিভোর্স হয়ে গেল। এরপরে সাত-আট বছর পর আবার নতুন করে সংসার শুরু করে নিকের সাথে। দুই যুবতি কন্যা, সংসার আর চাকরি নিয়ে জেসি ব্যস্ত কিছুদিনের মাথায় নিকও চলে গেলে তাকে ছেড়ে। একদিন নিক জেসিকে টেলিফোন করে জানেন, বড়ো মেয়ে রিটা নাকি তার ঔরসজাত সন্তান নয় । জেসি তার নিজের কানকেও এ কথা বিশ্বাস করাতে পারছিলো না। বড়ো মেয়ে রিটা লজ্জায়, অনুশোচনায় জেসিকে ফেলে চলে গেলো আর খামে লিখে পাঠালো-'মা,ক্ষমা করে দিও।'
প্রায় কুড়ি বছর পার হয়ে গেলো, একটিবারের জন্যও জেসির সামনে আসলো না বড়ো মেয়ে রিটা। জেসি সারারাত কেঁদে যান,তার কান্না পাশের কেবিনের রোগীরা পর্যন্ত ঘুমাতে পারে না। আর অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকে,কবে তার বড়ো মেয়ে রিটা আসবে, কবে তাকে একনজর দেখবে।
কারণ, তিনি যে মা! মায়েরা কী আর রাগ করে থাকতে পারে।
📜 একা বড় একা: 'বুঝলে বাছা,সময়কে আমি মূল্য দিইনি।
আজ সময় আমার ওপর প্রতিশোধ নিয়ে তার মূল্য আদায় করে নিচ্ছে!
একাকিত্বের জ্বালায় হাঁপিয়ে ওঠা আশি বয়সের জিমির গল্প। নিঃসঙ্গতাও যে একটা অসুখ এবং তার কোনো ওষুধ যে ডাক্তার দিতে পারে না। লেখকের প্রতিবেশী জিমি। একাত্মতার কারণে ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে আজ তিনি যেন এক অন্য জগতের বাসিন্দা।এই রোগটি আস্তে আস্তে মানসিকভাবে পঙ্গু করে দেয়। জিমির ক্ষেত্রে ঠিক এমনটি হয়েছে। জিমি আয়নার দাঁড়িয়ে নিজেকেই নিজে চিনতে পারছেন না। জীবনের অন্তীম সময়েও তার পাশে কোনো আত্মীয়-স্বজন ছিলো না। তিনি ছিলেন একা, আর এখন মর্গেও পড়ে আছেন একা।
📜 তোমারে করি নমষ্কার: একজন মেয়ে চিকিৎসক ড.শাফিয়া একজন নিরুপায় স্ত্রীর উপকারের গল্প। বাস্তবতার নির্মম পরিহাসে এক বাংলাদেশী যুবতি আরবে আসলে তিনি এখানেও বাড়িওয়ালার শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হন। সে তার প্রতিবাদ করতে গেলে বাড়িওয়ালার ক্ষমতার দাপটে তার সাথে ঘটে যায় আরও উল্টো ঘটনা। মেন্টাল হসপিটাল হয় তার আবাসস্থল। লেখকের সহকর্মী ড. শাফিয়া যিনি তার সর্বস্ব দিয়ে সেই ভুক্তভোগী নারীর প্রাপ্য আদায়ে লড়ে যান। তার সাথে ঘটে যাওয়ার অন্যায়ের প্রতিবাদে এক মহিয়সী নারীর মতো লড়ে গিয়েছেন। যে লড়াইয়ের পরিসমাপ্তি ঘটে তার চিকিৎসা পেশা থেকে অব্যাহতি নেওয়ার মাধ্যমে। তাই তো লেখক সেই মহীয়সী নারীকে আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। কবি রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে গেলে, 'তোমাকে করি নমস্কার!'
📜 হাসি-কান্নার কথকতা: মানুষ রূপী কিছু পশু যারা সহজ-সরল মানুষগুলোকে সারা জীবন ধরে কাঁদিয়েছে তাদের কথা তুলে ধরেছে লেখক।
ধর্ষক যখন শততম ধর্ষণ করার পর ঘটা করে সেঞ্চুরি উদযাপন করে, উল্লাসে-উচ্ছ্বাসে,সাফল্যের বিকৃত বিশ্বাসে হেসে লুটিয়ে পড়ে তখন সেই হাসির পেছনে লুকিয়ে আছে অন্তত একশত ছাত্রীর চাপাকান্না!
যারা কুশলী রাজনীতিক কুটিল চক্রান্তে বাংলাদেশের শত শত গার্মেন্টসে ভাঙচুর আর তান্ডব চালিয়ে কিছু রাজনীতিবিদ,শ্রমিকনেতা হাসছেন বটে,কিন্তু এই ঘটনায় চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়া হাজারো শ্রমিক পেটের দায়ে নীরবে- নিভৃতে কেঁদে চলেছে!
বিখ্যাত সব হাসপাতাল বা ক্লিনিকের সামনে কি আমরা বিনা চিকিৎসার মানুষ মরতে দেখিনি? তাদের সামনে কোনো আশা নেই। অতএব, যন্ত্রণায় কাতরানো পাশাপাশি সবকিছু ছেড়ে দিয়েছেন ওই 'ওপরওয়ালার' কাছে। এই গোষ্ঠী কান্না-ই ওইসব ক্লিনিকমালিক বা চিকিৎসকদের সারাটা মুখ ছড়ানো হাসির উৎস।
উপরোক্ত আলোচ্য শিরোনামের গল্পগুলোসহ, একজন পাঠক হিসেবে বইটির যে গল্পগুলো আমাকে শিহরিত করেছে, চোখের কোণায় জমতে থাকা অশ্রু ফোঁটার কারণ হয়েছে, বিষ্ময়ে হতবাক করেছে আর আমার বোধের দুয়ারে কড়া নেড়েছে এমনই আরও কয়েকটি গল্প হলো—
• কালের নির্মমতার সাক্ষী
• খোকন সোনা বলি শোনো
• সখী ভালোবাসা কারে কয়
• একা, বড় একা
• একজন জাদ আর রাব
• হাসি-কান্নার কথকতা
• টাইম; দ্যা অ্যাভেঞ্জার
• তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়
• শোনো বাহে, জাতিসংঘ তাকেই বলে
• গুড লাক পলিন
📚পাঠ-প্রতিক্রিয়া 📚
ধরণির পথে পথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো পড়তে গিয়ে কখনো আমার চোখ ভিজেছে,কখনো বিস্মিত চোখে থাকিয়ে ছিলাম বইয়ের গল্পের পাতায় পাতায়। গল্পগুলো কখনো শিহরণ দিচ্ছিল, আবার কিছু ঘটনা পড়তে গিয়ে শরীরটা ঘৃণায় ঘিনঘিন করছিলো। আবার কিছু ঘটনা পড়ে চোখ মুছতে মুছতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম।
📓পাঠ পর্যালোচনা📓
পাঠককে আঁকড়ে ধরার জন্য একটা ভালো স্টার্টিং থাকা দরকার। যেটা পড়ে পাঠক নড়েচড়ে বসবে এবং গল্পের প্রতি আগ্রহ পাবে। ''ধরণির পথে পথে'' বইটির গল্পগুলো স্টার্টিং অনেকটা সেরকমই।
প্রতিটি চরিত্রকে শুরু থেকে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করার সময় তাঁর বর্ণনাশৈলী ছিল বেশ শালীন ও শৈল্পিক।
লিটারেরি টুলস হচ্ছে সাহিত্যের অলঙ্কার। মূল গল্পটাকে পাঠকের কাছে শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করার জন্য লেখক এখানে তাঁর মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন।
যে বিষয়গুলো অংসগতি মনে হয়েছে তা হচ্ছে, প্রতিটি গল্পের যে জিনিসটা বেশি চোখে পড়েছে তা হলো— লেখকের ইংরেজি শব্দ ব্যবহারের প্রবণতা, যা আমার মতে বাংলা ভাষায় লেখার সময় ইংরেজি শব্দের ব্যবহারও দূষণীয়।
যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি অংসগতি মনে হয়েছে তা হলো—গল্পের নামকরণেও গানের লাইন ব্যবহার করা।
গল্পে একাধিকবার গানের লাইন এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার অনেকটা বেমানান লেগেছিলো আমার কাছে।
এছাড়া ওভারঅল বলতে গেলে—
আমি মনে করি,ধরণির পথে পথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আপনাকে কাঁদাবে আর এরসাথে সেই সমাজে ভেতরের জগতে আপনি ঢুকতে সক্ষম হবেন। প্রতিটি ঘটনা পড়ে আপনার চিন্তার জগতকে চূর্ণবিচূর্ণ করে নতুন করে ভাবতে শুরু করবে। আমরা যাদের আধুনিক উন্নত সমাজ বলে জানি,তাদের সমাজের করুণ দশা পতনের সীমা ছাড়িয়ে আজ তারা অধঃপতনে কোন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, বইটির ঘটনাগুলো পড়ার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি তা জানতে পারবেন। আরো জানতে পারবেন মধ্যেপ্রাচ্য ও পশ্চিমের সমাজের সমাজ ব্যবস্থা,জীবন ব্যবস্থা,পারিবারিক ব্যবস্থা, নৈতিক মূল্যবোন ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে।
আমাদের তথাকথিত সমাজের মানুষেরা যে পাশ্চাত্য সভ্যতার গুনোগান গায়, বইটি পড়লে তারা সেই পাশ্চাত্য সভ্যতার স্বরূপটা উপলব্ধি করতে পারবে। আশা করি বইটি পাঠকদের ভালো লাগবে, বইটি পড়ে জানতে পারবেন, মানুষের দুর্বোধ্য ও রহস্যময়ের ইতিহাস, মানুষের জীবন দর্শন। যারা জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে উপলব্ধি হয়েছে, সেইসব ভুলগুলো যেনো আমরা না করি,সেই পথে যেনো না যায়। বইয়ের গল্পের নায়কদের যে করুণ পরিণতি হয়েছে, সেই করুণ পরিণতি না যায়, গল্পগুলোর সাথে সেই শিক্ষাও তুলে ধরেছে, 'ধরণির বইয়ে পাতায় পাতায়'।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সম্মানিত লেখক জিয়াউল হক ভাইসহ বইয়ের প্রত্যক্ষও পরোক্ষভাবে জড়িত সকল ভাইকে উত্তম প্রতিদান দান করুক।
•বই: ধরণির পথে পথে।
•লেখক: জিয়াউল হক।
•প্রকাশনী: গার্ডিয়ানপাবলিকেশন্স।
•ক্যাটাগরি: দর্শন বিষয়ক বই।
•মুদ্রিত মূল্য: ৩৫০টাকা।
•পৃষ্ঠা: ২০৮।
• পার্সোনাল রেটিং : ৯/১০
||বুক-রিভিউ ও ফটোগ্রাফি ||
~মঈন উদ্দীন চৌধুরী সাকিব।