01/04/2025
স্বামী-স্ত্রীর হক সম্পর্কে কিছু হাদীস!!
হাদীস- ১
হাকিম ইবনে মু'আবিয়া (রা) তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আমি আরয করলাম : ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের প্রতি স্ত্রীদের কি হক? তিনি ইরশাদ করলেন- স্বামীর প্রতি স্ত্রীর হক হলোঃ
১. তোমরা যখন খাবার খাবে, তাদেরকেও
খাওয়াবে।
২. যখন বস্ত্র পরিধান করবে, তাদেরকেও পরাবে।
৩. (অন্যায়ের জন্য শাসন করতে গিয়ে) তাদের মুখমন্ডলে আঘাত করবে না।
৪. তাদেরকে অভিশাপ দিবে না।
৫. স্ব-গৃহে ব্যতীত তাদের সাথে মেলামেশা ত্যাগ করবে না । (অর্থাৎ, স্ত্রীর প্রতি ক্রুদ্ধ হয়ে স্বগৃহ ত্যাগ করবে না।) (আবু দাউদ)
হাদীস- ২
আব্দুল্লাহ ইবনে যাম'আ (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- তোমাদের কেউ যেন তার স্ত্রীকে ক্রীতদাসের ন্যায় প্রহার না করে। কেননা দিবস শেষ হওয়ার পর তার সাথে তাকে শয্যা গ্রহণ করতে হবে। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী)
হাদীস-৩
আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি তোমাদেরকে স্ত্রীর প্রতি উত্তম আচরণের উপদেশ দিচ্ছি। তোমরা আমার উপদেশ মেনে চলো । কেননা নারী জাতিকে বাঁকা হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। যদি তাদেরকে (সম্পূর্ণরূপে) সোজা করতে চাও, তাহলে ভেঙ্গে ফেলতে হবে। তাদেরকে ভেঙ্গে ফেলার অর্থ হলো, তালাক প্রদান করা । আর যদি আপন অবস্থায় ছেড়ে দাও, তাহলে বাঁকাই থেকে যাবে। এজন্য আমি তাদের প্রতি উত্তম আচরণ করার উপদেশ দিচ্ছি। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী)
ফায়দা : সোজা করার অর্থ হলো, তাদের কোন আচরণ-উচ্চারণই নিজের (স্বামীর) মনের খেলাফ হতে না দেয়া। কেননা এ ব্যাপারে চেষ্টা করা নিরর্থক। আর যদি এ নিয়ে সীমাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করো, তাহলে তালাক প্রদানের স্তর পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। এজন্য সাধারণ বিষয়ে স্ত্রীর প্রতি উদারতা প্রদর্শন করা উচিত।
তাছাড়া অতিরিক্ত কঠোরতা ও রুক্ষ আচরণের ফলে শয়তান মহিলাদের অন্তরে দ্বীন ও শরীয়ত বিরোধী বিভিন্ন কল্পনা ও কুচিন্তা সৃষ্টি করে।
হাদীস-৪
উম্মে সালামা (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ও মায়মুনা রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমতে উপস্থিত ছিলাম। ইতিমধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (অন্ধ সাহাবী) উপস্থিত হলেন। তখন রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা উভয়ে পরদার ভিতরে চলে যাও। আমরা আরয করলাম, তিনি তো অন্ধ মানুষ, না আমাদেরকে দেখেন আর না আমাদেরকে চেনেন । তখন তিনি বললেন, তোমরাও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখছো না? (তিরমিযী, আবু দাউদ)
ফায়দা : স্ত্রীকে গায়রে মাহরাম থেকে পরদার মধ্যে রাখা, যেন একজন অপরজনকে দেখতে না পায়, এটাও স্ত্রীর একটি হক। এতে স্ত্রীর দ্বীন রক্ষা পায় এবং সে পরদাহীনতার ক্ষতি থেকে বেঁচে যায়। এতে তার পার্থিব উপকারও রয়েছে। কেননা কোন বস্তুর বিশিষ্ট্যতা যত অধিক হবে, তার প্রতি আকর্ষণও ততো অধিক হবে। পরদার মাধ্যমে যেহেতু স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর এক প্রকার বিশিষ্ট্যতা অর্জিত হয়, তাই তার প্রতি স্বামীর আকর্ষণও বৃদ্ধি পায়। ফলে স্ত্রীর হক অধিক পূর্ণ হয় । এতে প্রমাণিত হলো, পরদা স্ত্রীর পার্থিব কল্যাণ লাভেরও একটি মাধ্যম ।
হাদীস-৫
আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যদি আমি কারোর প্রতি কোন মানুষকে সিজদা করার হুকুম করতাম, তাহলে স্ত্রীর প্রতি হুকুম করতাম স্বামীকে সিজদা করার।
হাদীস-৬
ইবনে আবী আওফা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সেই সত্তার কসম যার হাতে মুহাম্মদের জীবন! স্ত্রী যে পর্যন্ত না আপন স্বামীর হক আদায় করবে, তার প্রতিপালকের হক আদায় হবে
না। (ইবনে মাজাহ)
ফায়দা : শুধু নামাজ, রোজা আদায় করেই কোন নারী যেন মনে না করে যে, সে মহান আল্লাহর হক আদায় করে ফেলেছে। কেননা স্বামীর হক আদায় করাও আল্লাহ তা'আলার একটি হুকুম। সুতরাং কোন স্ত্রী যে পর্যন্ত স্বামীর হক আদায় না করবে, ততক্ষণ আল্লাহর হক পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় হবে না।
হাদীস- ৭
আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, সর্বোত্তম নারী কে? উত্তরে তিনি বললেন, ঐ নারী যাকে দেখলে তার স্বামী আনন্দিত হয়, তাকে কোন আদেশ করলে তা পালন করে এবং নিজের ও নিজের সম্পদ সম্পর্কে এমন কিছু করে না যার কারণে তার স্বামী অসন্তুষ্ট হয়। (নাসাঈ)
ফায়দা ঃ দ্বীনি ও দুনিয়াবী যাবতীয় কল্যাণ সাধিত হওয়ার পূর্বশর্ত হলো, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে পরিপূর্ণ সম্পর্ক ও ভালোবাসা অটুট থাকা। আর পরিপূর্ণ সম্পর্ক ও ভালোবাসা তখনি অটুট থাকবে, যদি স্বামী-স্ত্রী একজন অপরজনের পূর্ণাঙ্গ হক আদায় করে।
বস্তুতঃ ইসলাম স্বামী-স্ত্রী প্রত্যেকের জন্য যে হক ও অধিকার নির্ধারণ করে দিয়েছে, তা পূরণ করার মাধ্যমেই পারিবারিক জীবন সুখকর হতে
পারে।