09/04/2025
আহানা, যদি আমি একটি বিষণ্ণ প্রেমের উপন্যাস হতাম, কেমন হতো বলো তো?
নির্ঘুম রাতে, আধো আলোয়, কাঁথার উষ্ণতায় তুমি আমাকে পড়তে। প্রতিটি অক্ষর ছুঁয়ে যেতে গভীর মনোযোগে। হয়তো কোনো ব্যথাতুর মুহূর্তে কয়েকটি লাইন এড়িয়ে যেতে, অন্য পাতায় ডুব দিতে। কিছুক্ষণ পর ভুল বুঝতে পেরে, অনিচ্ছাকৃত বিরক্তি নিয়ে ফিরে আসতে সেই ফেলে আসা শব্দে।
উপন্যাসের সাত নম্বর পৃষ্ঠার সবচেয়ে করুণ পঙ্ক্তিটি যখন তোমার চোখে অশ্রুর ধারা বইয়ে দিত। একটি লোনা ফোঁটা গড়িয়ে পড়ত কাগজের উপর, হয়তো মুছে দিত কোনো বেদনার্ত শব্দ। সেই মোছা দাগ নীল হয়ে থাকত, ঠিক যেমন একটি কিশোরের স্মৃতি তোমার চোখে বিষাদের নীল রঙ এঁকে গেছে।
ছাব্বিশতম পৃষ্ঠায় হয়তো এমন একটি বাক্য থাকত, যা কোনো আবেগের ধার ধারত না। কঠিন বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি, যা তোমার জীবনের কোনো না বলা কথাকে তুলে ধরত। হয়তো হলদেটে পুরোনো কোনো ডায়েরিতে তুমি সেই লাইনটি যত্ন করে লিখে রাখতে।
আমার প্রতিটি ছত্র তুমি আঙুলের ডগা দিয়ে অনুভব করতে, আমার পাতায় লেগে থাকত তোমার উষ্ণ স্পর্শ। ভালোই হতো, যদি আমি সেই উপন্যাস হতাম! পড়তে পড়তে যখন ছিষট্টিতম পৃষ্ঠায় এসে পৌঁছাতে, হয়তো কোনো স্মৃতি ভিড় করত মনে, তোমার ঠোঁটের কোণে বিষণ্ণ হাসির রেখা দেখা দিত। সেই হাসি দেখবার জন্যও আমি অপেক্ষা করতাম।
এভাবেই, দীর্ঘশ্বাস আর তোমার স্পর্শের আঁচে এক সময় শেষ হয়ে যেত আমার পাতাগুলো। তুমি হয়তো ভেজা চোখে বলতে, "যদি আরও কিছুটা সময় থাকত!"
তারপর, একদিন তুমি আমাকে অবহেলায় ফেলে রাখতে কোনো এক ধূসর কোণে। শহরের ধুলোবালি ধীরে ধীরে গ্রাস করত আমার শরীর। সপ্তম পৃষ্ঠার সেই নীল দাগ যেমন অমলিন থাকত, তেমনই রয়ে যেত সেই কিশোরের নীরব প্রতীক্ষা। বহুবছর পর, হয়তো কোনো এক বিষণ্ণ দুপুরে তুমি আবার আমাকে হাতে নিতে। ধুলো সরিয়ে পড়তে শুরু করতে। সাত নম্বর পৃষ্ঠার সেই হারানো শব্দে এসে থমকে যেতে। চেষ্টা করতে সেই শব্দটি মনে করার, কিন্তু ব্যর্থ হতে। স্মৃতির অতলে ডুবে থাকা সেই না পাওয়ার হতাশায়, তুমি হয়তো আবার আমাকে দূরে ছুঁড়ে ফেলতে।
ধন্যবাদ। Thanks....