18/06/2025
ব্যাংকিং ব্যবস্থা বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে**
অর্থনৈতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন সঙ্কটের মুখে বাংলাদেশ:🏦
(প্রকাশিত: ডেইলি ইন্ডাস্ট্রি, ১৮ জুন, ২০২৫, বুধবার)
বাংলাদেশ বর্তমানে তার অর্থনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম কঠিন সময় অতিক্রম করছে। দেশের আর্থিক ভিত্তি চরম চাপের মুখে রয়েছে—অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা এবং বৈশ্বিক প্রতিকূলতার সম্মিলিত প্রভাবে। ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়েছে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, বিনিয়োগ স্থবির, জনআস্থা তলানিতে এবং মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে চলেছে।
ব্যাংকিং খাতে গভীর সঙ্কট:🏦
দেশের ব্যাংকিং খাত, যা একসময় অর্থনীতির মেরুদণ্ড ছিল, বর্তমানে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। নতুন সরকারের ক্ষমতায় আসার পর ১৪টি ব্যাংকের বোর্ড বাতিল করা হয়। liquidity সংকট ভয়াবহ রূপ নেয়। পাঁচটি দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা তেমন কাজ করেনি।
মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ২৪.১৩ শতাংশ। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এটি শুধু একটি সংখ্যা নয়—এটি দুর্নীতি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং দুর্বল নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার বহিঃপ্রকাশ।”
তীব্র তারল্য সঙ্কট ও ঋণ স্থবিরতা:🏦
ব্যাংকগুলোর গ্রাহক আস্থা হ্রাস পেয়েছে। অনেক ব্যাংক নতুন ঋণ প্রদান বন্ধ করেছে। এ পরিস্থিতিকে #ক্রেডিট_গ্রিডলক হিসেবে অভিহিত করেছেন ড. রহমান—“ব্যাংকগুলো দুর্বল, ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে ভীত—এই অবস্থাই প্রকৃত অর্থনীতিকে শ্বাসরোধ করছে।”
জনআস্থা তলানিতে:🏦
ব্যাংকিং খাতে আস্থার অভাবে জনগণ সঞ্চয় তুলে নিচ্ছে। কেউ সরকারি ব্যাংকে, কেউ এনবিএফআই বা বিকল্প সঞ্চয় মাধ্যম বেছে নিচ্ছে। দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ পরিকল্পনায় নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ড. রহমান সতর্ক করে বলেন, “আস্থা ভেঙে গেলে মজবুত প্রতিষ্ঠানও ধসে পড়ে।”
ব্যবস্থাগত ব্যর্থতা ও বিনিয়োগ স্থবিরতা:🏦
ড. সেলিম রায়হান বলেন, “ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের এই উত্থান নিছক পরিসংখ্যানগত নয়—এটি আর্থিক খাতের ভেতরের গভীর দুর্বলতা প্রকাশ করে।”
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে মুদ্রাস্ফীতি দাঁড়ায় ১১.৩৮ শতাংশে। সরকার ২০২৫ অর্থবছরে তা ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তবে বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় কর্মসংস্থান হ্রাস পাচ্ছে এবং অর্থনৈতিক গতি থেমে গেছে।
নিয়ন্ত্রণ ও সংস্কার প্রয়াস:🏦
নতুন সরকার ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা আনতে ডাটা টেম্পারিং বন্ধ, আন্তর্জাতিক ঋণ শ্রেণিবিন্যাস মানদণ্ড গ্রহণসহ নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
ড. সেলিম রায়হান আরও বলেন, “দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রক ব্যর্থতার ফলেই এই বিপর্যয়। সরকার যে সংস্কার চেষ্টা করছে তা যথার্থ, তবে সফল হতে হলে চাই আন্তরিকতা ও স্বচ্ছতা।”
নীতিগত পদক্ষেপ ও উদ্ধার পরিকল্পনা:🏦
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে, সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন নীতিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে—মনিটারি পলিসি কঠোর করা, সরকারি ব্যয় সংকোচন, বৈদেশিক সহায়তা নেওয়া এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে তদন্ত শুরু করেছে।
সংক্ষিপ্ত মন্তব্য:🖋️
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত এখন এক ভয়াবহ মোড় ঘুরছে। একে শুধুই অর্থনৈতিক সঙ্কট বলে না—এটা এক গভীর বিশ্বাসহীনতার প্রতিচ্ছবি। এখন সময় এসেছে সত্যিকারের শুদ্ধিকরণের। যত দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তত দ্রুতই ফিরে আসবে অর্থনীতির ছন্দ। নয়তো সামনে অন্ধকার।
(বাংলা অনুবাদ)