26/05/2025
“চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ”—এই বয়সটা যেন এক নিঃশব্দ ঝড়।
জীবনের এই অধ্যায়ে এসে হঠাৎ করেই আমরা বুঝতে শুরু করি—সময় কতোটা দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।
এই বয়সে এসে আমাদের ভিতরে একটা অদৃশ্য ভয় বাসা বাঁধে—বাবা-মাকে হারিয়ে ফেলার ভয়।
চোখের সামনে যাদের একসময় পাহাড়ের মতো শক্ত মনে হতো, তাদের আজ ক্লান্ত, ধীর পায়ে হাঁটতে দেখে বুকের ভেতর এক অজানা ব্যথা চেপে বসে।
একদিন যারা গর্ব করে বলতেন, "আমার ছেলে-মেয়ে এখন অনেক বড় হয়ে গেছে,"
আজ তাদের দিকে তাকিয়ে আমাদের মনে হয়—
"আমার বাবা-মার বয়স হয়ে যাচ্ছে..."
এমন অনুভূতির চেয়ে কষ্টকর কিছু আর নেই।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে, কিংবা ভোরবেলা ঘুম ভেঙে, নিঃশব্দ পায়ে আমরা বাবা-মায়ের ঘরে উঁকি দেই—
সব ঠিক আছে তো?
তারা নিশ্চিন্তে শ্বাস নিচ্ছেন তো?
ওদের মুখে ঘুমের প্রশান্তি দেখলে বুকের ভার যেন একটু হালকা হয়।
একসময় যারা আমাদের হাত ধরে স্কুলে নিয়ে যেতেন,
বৃষ্টির দিনে ছাতা হয়ে মাথায় থাকতেন,
সেই মানুষগুলো আজ চোখে পাওয়ার ওয়ালা চশমা পরে ধুলোমাখা বইয়ের হরফ খুঁজে ফেরেন।
চোখের সামনে এই রূপান্তর দেখা যায়, কিন্তু মেনে নেয়া যায় না।
একটা সময় ছিল, সকালে উঠে তারা আমাদের জানালার বাইরের সবুজ দেখাতেন—
বলতেন, “প্রকৃতির দিকে তাকাও, চোখ ভালো থাকবে।”
আজ আমরা তাদের বলি, “চশমাটা কোথায় মা?”,
ঔষধ খেয়েছো তো বাবা?
চোখের সামনে যাদের আমরা দেবতার মতো দেখেছি,
তাদের হাতের তালু কাঁপতে দেখা, হাঁটতে গিয়ে জুতো খুঁজে না পাওয়া,
অথবা হঠাৎ করেই ভুলে যাওয়া—এইসব মুহূর্ত আমাদের ছিঁড়ে ফেলে।
এই বয়সটা তাই ভয়ঙ্কর সুন্দর।
আমরা বড় হই, আর আমাদের প্রিয় মানুষগুলো ধীরে ধীরে ছোট হতে থাকেন—শরীরে, স্মৃতিতে, সাহসে।
এই যন্ত্রণাটা শুধু তারাই বোঝে, যারা একসঙ্গে বাবা-মাকে দেখতে দেখতে বয়সে চল্লিশ পেরিয়েছে।
এই বয়সটা নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা চাওয়ার, সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা দেয়ার সময়।
কারণ সময় আর থেমে থাকবে না—কিন্তু আমাদের ভালোবাসা যেন একটুও কম না হয়।