
08/09/2024
জিবরাইলের ডানা ও মো’মেনের জবানবন্দী – বালকের ঈশ্বরচিন্তা
===========================================
প্রয়াত সাহিত্যিক অধ্যাপক শাহেদ আলীর ‘জিবরাইলের ডানা’ পড়বার জন্য তাঁর `শাহেদ আলীর শ্রেষ্ঠ গল্প’ কিনেছিলাম কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটির অফিসের নিচের তলার বিক্রয় কেন্দ্র থেকে। তাঁর এক মেয়ে ডা. বিলকিস আমার বন্ধু আর আরেক মেয়ে স্থপতি দিলশাদ আমার সহপাঠী। অধ্যাপক শাহেদ আলীর নিবাস সিলেট অঞ্চলে। তাঁর স্ত্রী অধ্যাপক চেমন আরা-র নিবাস চট্টগ্রামেই বলে জানি। সেই সুবাদে তিনি চট্টগ্রামের জামাই। জামা্ই হিসেবে চট্টগ্রামবাসীদের কাছ থেকে কী আদর বা সমাদর পেয়েছেন, তা অবশ্য জানা নেই। অধ্যাপক চেমন আরা ১৯৮৫-৮৬ সালের দিকে চট্টগ্রাম গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। আমি তখন কলেজে রোলার স্কেটিং সম্প্রসারণের ব্যাপারে আলাপ করতে আমার স্কেটিং-গুরু আরতুরো গ্রেকো (প্রয়াত, আর্জেন্টাইন)কে নিয়ে তাঁর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।
যাহোক, ‘জিবরাইলের ডানা’-য় ফিরে আসি। বুয়েটে ছাত্র থাকাকালে আমার বুয়েট সহপাঠী ও বন্ধু ওয়াহিদা রহমান চৌধুরীর মা মনোয়ারা চৌধুরী (প্রয়াত) বন্ধু বিলকিসের বাবাকে চিনিয়ে দিতে গিয়ে গল্পটি বলেছিলেন। তারপর অনেক কাল কেটে গেছে। গল্পটা ভুলে গেছি, কিন্তু শিরোনামটা মনে ছিল। তাই সূচিপত্রে গল্পের শিরোনাম দেখে বইটা কিনেছিলাম। ‘জিবরাইলের ডানা’ নিয়ে সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন।
গল্পে এক বালক তার ঘুড়ির মাধ্যমে খোদার আরশে তার প্রার্থনা পৌঁছাতে চায়। ঈশ্বর বা স্রষ্টা সর্বত্র বিরাজমান। কিন্তু যুগে যুগে মানুষ আকাশপানে তাকিয়েছে ঈশ্বরের খোঁজে।
সাহিত্যিক মাহ্বুব-উল আলমের আত্মজীবনীমূলক রচনা ‘মো’মেনের জবানবন্দী’তেও এমন একটা সুর লক্ষ্য করা যায়। সেখানেও বালক মাহ্বুব ও সঙ্গীরা আকাশে ভেসে যাওয়া মেঘের মধ্যে তাদের আল্লাহ্-কে আবিষ্কার করবার প্রয়াস পায় এবং কার আল্লাহ্ কত বড় তা নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়।
[এই ফাঁকে বলে রাখি, `Confessions of a Believer’ শিরোনামে লীলা রায়ের করা ‘মো’মেনের জবানবন্দী’-র ইংরেজি অনুবাদ প্রথম সংস্করণের প্রায় ৬৭ বছর পর অবশেষে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে। ২০২৪ সালের বইমেলা উদ্বোধনের সময় এটির মোড়ক উন্মোচিত হয়। আমেরিকান বংশোদ্ভূত অনুবাদক লীলা রায় মাহ্বুব-উল আলমের বিশিষ্ট বন্ধু সাহিত্যিক অন্নদা শংকর রায়ের স্ত্রী । এটি সম্পাদনা করেছেন বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ও ইংরেজির অধ্যাপক এম হারুনুর রশীদ (আমার অন্যতম মানস-শিক্ষক), তিনি এটির ভূমিকাও লিখেছেন। বইটর প্রচ্ছদ এই অধমের করা।]
আমাদের এক পারিবারিক অনলাইন আড্ডায় ফুপাতো ভাই হোসেন তৌহিদ-উল আলম ( ) প্রায় একই রকম বিষয়ে একটি ইংরেজি বইয়ের (বইয়ের শিরোনাম বা লেখকের নাম মনে নেই) অংশবিশেষ পড়ে শুনিয়েছিল।
মাহ্বুব-উল আলম, শাহেদ আলী এবং অন্য যে লেখক – এঁরা তিন সময়ের লেখক। লেখা তিনটিও তিন সময়ের।
বালকমনের ঈশ্বরচিন্তায় ঊর্ধ্বমুখীনতা বা আকাশমুখীনতা চিরায়ত বলেই মনে হয়। এই চিরায়ত ব্যাপারটিকেই লেখকরা তাঁদের সাহিত্যকর্মে হাজির করেছেন নানান ব্যঞ্জনায়।
বালকমনে ঈশ্বরচিন্তা শুরুই হয় দৃশ্যমান সাকার কিছুকে উপলব্ধি করার মাধ্যমে। প্রকৃতির মধ্যে আর যা দৃশ্যমান আছে, তার কোনোটাই আকাশের মতো সর্বত্র-বিরাজমানতার উপলব্ধি দেয় না। মুসলমানদের ক্ষেত্রে হয়তো সাত-আসমানের রেফারেন্স এই উপলব্ধিকে আরো জোরদার করে তোলে। পরবর্তীকালে সময় এবং বয়সের সাথে সাথে ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী সেই উপলব্ধি সাকার অবতার অথবা নিরাকারে উপনীত হয়।
এই লেখায় উল্লেখিত প্রয়াত ও জীবিত সবার জন্য দোয়া ও শুভকামনা।