01/11/2024
#আজকের_খুতবা
#উস্তাদ_আব্দুল_মালেক_দামাত_বারাকাতুহু
জাতীয় মসজিদ বাইতুল মুকাররমের আজকের জুমার বয়ানের সারাংশ৷
খতীব: মুফতি আব্দুল মালেক হাফিযাহুল্লাহ।
১লা নভেম্বর ২০২৪
হামদ ও সানার পর বয়ানের শুরুতে তিনি জুমার দিনের ফজিলত আলোচনা করেন। এরপর বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ তার অধিকাংশ খুতবার শুরুতে তাকওয়া বিষয়ক কয়েকটি আয়াত তেলাওয়াত করতেন। এরমধ্যে সুরা আলে ইমরান, নিসা, আহযাব ও হাশর অন্যতম। আজকে সুরা হাশরের আয়াতের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা জানবো ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তায়ালা আয়াতের শুরু করেছেন 'হে মুমিনগণ' বলে। এটি অত্যন্ত মোহাব্বত ও আবেদনপূর্ণ আহবান। এই আহ্বানের মাধ্যমে তিনি মুমিনদেরকে ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। ঈমানের অন্যতম দিকনির্দেশনা হলো, তাকওয়া অর্জন করা।
তাকওয়া মানে কি, তাকওয়া হচ্ছে আল্লাহর নেয়ামতকে স্মরণ করে, তার সামনে উপস্থিত হওয়ার বিষয়কে মনে ধারণ করে, আল্লাহর নির্দেশিত সকল বিধান পালন করা এবং নিষেধকৃত সকল কাজ থেকে বিরত থাকা।
তাকওয়া মানে শুধু ভয় নয়, কারণ যে ভয়ের পরে করণীয় না থাকে তাকে তাকওয়া বলে না। আরবি
শব্দ ওয়াও, কাফ, ইয়া এই মূল ধাতুর অর্থই হচ্ছে বেঁচে থাকা। অর্থাৎ আল্লাহর নিষেধকৃত সকল কাজ থেকে বেঁচে থাকা।
পাশাপাশি আল্লাহ এই আয়াতে মুমিনদেরকে কিয়ামত দিবসের জন্য কী প্রেরণ করেছে, তা চিন্তা করার আদেশ দিয়েছেন। মুমিনের আসল জীবন হচ্ছে আখেরাতে জীবন। এই আয়াতে আগামীকাল বলা হয়েছে, কারণ আখেরাতের দীর্ঘ জীবনের তুলনায় পুরো দুনিয়ার সময় একদিনের মতোই বা তার চেয়েও কম।
এজন্য প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য হল, কবরে যাওয়ার আগে কবরের প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে নিয়ে যাওয়া।
কবরে যে তিন প্রশ্ন করা হবে তার উত্তর শুধু মুখস্ত করে গেলেই হবে না, বরং যদি সত্যিকার অর্থে নিজের জীবনে তা বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে আরবি না জানলেও কবরে গিয়ে আরবিতে উত্তর দেওয়া সম্ভব হবে।
কবরের প্রশ্ন সমূহের সারমর্ম হচ্ছে, আল্লাহর উপর বিশুদ্ধভাবে পরিপূর্ণ বিশ্বাস এবং ইসলামকে একমাত্র ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শেষনবী শ্রেষ্ঠনবী বিশ্বনবী মেনে তার জীবন বিধানকে বাস্তবায়িত করা। বেদাত এবং জাহিলিয়াতমুক্ত জীবন গঠন করা।
এরপর তিনি তাকওয়ার বিভিন্ন প্রকাশক্ষেত্রের মধ্যে থেকে দুইটি প্রকাশ ক্ষেত্র আলোচনা করেছেন।
প্রথম হলো, জুলুম থেকে বেঁচে থাকা। হাদিসে আল্লাহ রাসুল বলেন, তোমরা জুলুম থেকে বেঁচে থাকো। কারণ জুলুম কেয়ামতের দিন গভীর এবং অনেক অন্ধকারের কারণ হবে। 'একটি জুলুম' বা 'একটু জুলুম' যেটাই হোক না কেন, একজনের উপর জুলুম বা একাধিক ব্যক্তির উপর জুলুম সর্বক্ষেত্রেই জালেমের জন্য হবে, তার জীবনে কোন আলো থাকবে না।
জুলুমের অন্যতম প্রকাশক্ষেত্র হলো, দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেওয়া। বর্তমানে অন্যায়ভাবে সিন্ডিকেট করে যেভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে পুরো দেশের মানুষকে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে পূর্বে কখনোই এমন ছিল না। তারপরও দ্রব্যমূল্য বাড়ানো এবং এভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার ব্যাপারে কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি কোন বাজারে অন্যায় ভাবে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাকে আগুনের বড় জায়গায় বসিয়ে শাস্তি দিবেন।
আজকে যারা সিন্ডিকেট করছে তাদের অপরাধ চোর ডাকাত বা অর্থ আত্মসাৎকারীদের মতই ভয়ংকর এবং তাদের এই অতিরিক্ত উপার্জন পরিষ্কার হারাম।
তাকওয়ার দ্বিতীয় প্রকাশক্ষেত্র হলো, সূরা নিসার প্রথম আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, আদম এবং হাওয়া থেকে তিনি পুরুষ এবং নারী সৃষ্টি করেছেন।
তাই পুরুষের পুরুষ থাকা এবং পুরুষের জন্য আল্লাহর প্রদত্ত সকল বিধান পালন করা ফরজ। নারীর জন্য নারী থাকা এবং নারী হিসাবে আল্লাহ প্রদত্ত সকল বিধান পালন করা ফরজ।
কোন পুরুষ নারীতে রূপান্তর হওয়া অথবা নিজেকে নারী মনে করা, অনুরূপভাবে কোন নারী নিজেকে পুরুষে রূপান্তরিত করা অথবা নিজেকে পুরুষ ভাবা হারাম এবং কবিরা গুনাহ। এটা আল্লাহর সাথে যুদ্ধ করার সমতুল্য। এল জি বি টি বা সমকামিতা একটি রুচিবিরুদ্ধ ঘৃণ্য অপরাধ। এই অপরাধকে সমর্থন কোন মুসলমান দিতে পারে না।
আজকে বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস খোলার কথা গণমাধ্যমে এসেছে, যতটুকু জানি বাংলাদেশ সরকার এখনো এই সিদ্ধান্ত নেননি। আমরা আশা করব সরকার এই সিদ্ধান্ত নিবেন না এবং এই মুসলিম দেশে তারা সেটা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না।
যে জাতিসংঘ ইজরায়েলের জুলুম থেকে ফিলিস্তিনের শিশুদের রক্ষা করতে পারিনি, যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেনি এমনকি ঔষধ ও খাবার পর্যন্ত অনুরোধ করেও ঢুকাতে পারেনি তারা কিভাবে মানবাধিকারের কথা বলে...!
মানবাধিকার শিখতে হবে আল্লাহর কোরআন এবং রাসূলের সুন্নাহ থেকে। আমরা রাসূলের আদর্শ নিজেরা বাস্তবায়ন করব এবং এর দাওয়াত সর্বত্র ছড়িয়ে দিব।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমলের তাওফিক দান করুন। আমিন।
Abu Taw Haa Muhammad Adnan