13/10/2024
আজ ব্রহ্মমধ্ব গৌড়ীয় সম্প্রদায়ে আচার্য শ্রীল মধ্বাচার্যের শুভ আবির্ভাব তিথি-------------প্রারম্ভিক জীবন
শ্রীমধ্বাচার্যের পিতা মধ্যগেহ ভট্ট ও মাতার নাম বেদবতী ৷ মধ্বাচার্যের বাল্য নাম ছিল বাসুদেব ৷ বাসুদেব বাল্যকালে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন, যথাবয়সে উপনয় গ্রহণপূর্বক সমস্ত শাস্ত্র অধ্যয়ন শেষ করে বালক বাসুদেব একদা তার পিতাকে বললেন, “আমি অদ্বৈত-বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ খন্ডন করে জগতে বেদ প্রতিপাদ্য বৈষ্ণবসিদ্ধান্ত প্রচার করব ৷” তখন বাসুদেবের হাতে একটি লাঠি ছিল, ঐ দিকে লক্ষ্য করে বাসুদেবের কথার প্রতিত্তরে পিতা বললেন, “তুমি এখনও বালকমাত্র, তোমার দ্বারা যদি এসব খন্ডন সম্ভব হয়, তবে তোমার হাতের লাঠিটিও মহা-বৃক্ষরুপে পরিণত হওয়া অসম্ভব নয় ৷” একথা শুনে “ভগবানের ইচ্ছায় কোন কিছুই অসম্ভব নয়” এই বলে বাসুদেব লাঠিটি মাটির মধ্যে গেঁড়ে দিলেন এবং তৎক্ষণাৎ উহা মহা-বটবৃক্ষরুপে পরিণত হলো ৷ এই অলৌকিক ঘটনা দেখে বাসুদেব পিতা যার পর নাই বিস্মিত হলেন এবং বুঝতে পারলেন যে তার পুত্র ভগবানের আশীর্বাদপুষ্ট ৷
দীক্ষা ও পরবর্তী জীবন
আচার্য শ্রীমধ্ব অচ্যুতপ্রেক্ষ নামক এক গুরুর নিকট দীক্ষিত হয়ে জগতগুরু শঙ্করাচার্যের দশনামী সম্প্রদায়ের তীর্থ পরম্পরাতে সন্ন্যাসে প্রবিষ্ট হন ৷ মধ্বাচার্য অচ্যুতপ্রেক্ষের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন ৷ এরপর তিনি দ্বিগবিজয়ে বহির্গত হন এবং যুক্তি-তর্কবলে সমস্ত শঙ্করাচার্যের অদ্বৈত আর রামানুচার্যের বিশিষ্টাদ্বৈত মতের অনুসারী পণ্ডিতগণকে পরাস্ত করতে থাকেন ৷ আচার্য্য আনন্দতীর্থ শিষ্যগণের সহিত সর্বত্র বিষ্ণুর মহিমা প্রচারকালে একদা বদরিকাশ্রমে গিয়ে উপস্থিত হন ৷ তারপর বদরিকাশ্রম থেকে ব্যাসাশ্রমে যান, সেখানে ব্যাসদেব সদাস্থিত হলেও স্বীয় যোগবলে সাধারণের নিকট অদৃশ্য থাকেন ৷ কিন্তু তিনি স্বেচ্ছায় মধ্বাচার্যকে দর্শন দেন, তথায় আচার্য মধ্ব ব্যাসদেবের নিকট শিষ্যরুপে অবস্থানপূর্বক স্বয়ং ব্যাসের মুখ থেকে শ্রুতির পরম অর্থ শ্রবণ করেন এবং ব্যাসদেবের অভিপ্রায় অনুযায়ী শাস্ত্রসিদ্ধান্ত প্রচারের উপদেশ লাভ করেন ৷ এরপর আচার্য আনন্দতীর্থ ব্যাসদেবের অভিপ্রেত অনুসারে বেদাদি শাস্ত্রের ওপর দ্বৈতপর ও বিষ্ণুর মাহাত্ম্য প্রতিপাদক ভাষ্য রচনা করেন৷ কথিত আছে মহর্ষি ব্যাসদেব তাঁকে তিনটি শালগ্রাম শিলা উপহার দেন এবং তিনি সুব্রহ্মণ্য, উদিপি ও মধ্যতল নামক স্থানের তিনটি মঠে ঐ শালগ্রাম শিলা প্রতিষ্ঠিত করেন। এর মধ্যে উদিপি নগর মধ্বচারীদের প্রধান তীর্থক্ষেত্র। এছাড়াও তিনি আটটি মন্দির নির্মাণ করেন। সেই আটটি মন্দিরে তিনি রাম-সীতা, লক্ষ্মণ ও সীতা, দ্বিভূজ, কালীয়মর্দন, চতুর্ভূজ, সুবিতল, সুকর, নৃসিংহ এবং বসমত্ম-বিতল এই আট প্রকার মূর্তি স্থাপন করেন।
রচিত গ্রন্থাবলি
• ঋগ্-ভাষ্য
• ঈশ-কেন-কঠ-মুন্ডুক-মান্ডুক্য-তৈত্তিরীয়-ঐতরেয়-প্রশ্ন-ছান্দোগ্য ও বৃহদারণ্যক উপনিষদ ভাষ্য
• ব্রহ্মসূত্রভাষ্য, অনুভাষ্য বা অনুব্যাখ্যান ও অণুভাষ্য
• গীতাভাষ্য ও গীতা তাৎপর্য নির্ণয়
• মহাভারত তাৎপর্য নির্ণয়
• ভাগবত তাৎপর্য নির্ণয়