27/07/2025
আমার বয়স এখন প্রায় চব্বিশ-পঁচিশ বছর। বিশ বছর হওয়ার আগে আমার দ্বীনি অবস্থা উন্নত ছিল। মস্তিষ্ক পরিষ্কার ছিল। ক্লাসে আমি একজন ভালো ও আদর্শ স্টুডেন্ট ছিলাম। কিন্তু কলেজে এডমিশন নেওয়ার পর ভালো অবস্থায় থাকা কোনো অংশেই কারামতের চেয়ে কম নয়। আপনিও আমাদের সহশিক্ষার ব্যাপারে ভালোই অবগত আছেন এবং পড়ালেখা শেষ করে পূত-পবিত্রতা ও সুচরিত্রতার সাথে বের হওয়া যে, কতটা অসম্ভব, তাও জানেন।
যেখানেই যাই, গুনাহের দৃশ্য দৃষ্টিগোচর হয়। সর্বত্র পাপের সয়লাব। এদিকে ঘরের পরিবেশ দ্বীনদার হওয়া সত্ত্বেও গুনাহের আখড়া হয়ে আছে। ভিসিআর ও টেলিভিশনের সমস্ত প্রোগ্রাম আমরা দেখি। দেখতে বাধ্য হতে হয়। কখনো কখনো বন্ধু-বান্ধব ও ক্লাসমেটরাও চলে আসে। একবার তো... (অপ্রকাশযোগ্য হওয়াতে এখানে ঘটনার প্রায় দশ লাইন উহ্য রাখলাম।)
এ জাতীয় আরও অন্যান্য ঘটনার কারণে আমার স্বাস্থ্য ভেঙে গেছে। পড়ালেখা বরবাদ হয়ে গেছে। এর জন্য আমার বিরাট ক্ষতি হয়েছে। আমি এখন ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছি। নিয়মতিই প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে ধাতু বের হতে থাকে। ডাক্তারদের শরণাপন্ন হয়েছি। বহু রকমের চিকিৎসা করেছি, কিন্তু কোনোই উপকার পাচ্ছি না। তারা সকলেই আমাকে বিয়ের পরামর্শ দিয়েছেন। বিয়ে ছাড়া এ রোগ ভালো হবে না বলে তারা জানিয়েছেন। পিতা-মাতাকে আমি এ কথা জানিয়েছি। কিন্তু মাওলানা সাহেব! তারা কিছুতেই গ্র্যাজুয়েট কমপ্লিট করার আগে আমাকে বিয়ে করাবে না। আর এদিকে পড়ালেখা শেষ হতে আমার আরও চার-পাঁচ বছরের অধিক সময় বাকি।
এমতাবস্থায় আমার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়ার নামান্তর। একজন তরুণ শিক্ষার্থীর যদি এই অবস্থায় হয়, তাহলে সে কীভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে?
অনুগ্রহপূর্বক আপনি এ ব্যাপারে আমাকে পরামর্শ দেবেন।
এক. আমি যদি এখন পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে চাকরি নিয়ে বিয়ে করি এবং পিতা-মাতা তাতে সন্তুষ্ট না থাকে, তাহলে আমার জন্য এর অবকাশ আছে কি? এক্ষেত্রে আমি কি পিতা-মাতার অবাধ্য বলে বিবেচিত হব?
দুই. উল্লিখিত অবস্থায় যদি পিতা-মাতা বিয়েতে প্রতিবন্ধক হয় এবং বিবাহ না করার দরুন আমার থেকে কোনো গুনাহ প্রকাশ পায়, তাহলে এর দায় কি তাদের ওপর বর্তাবে?'
পত্রের জবাব__
এক. উদ্ভুদ পরিস্থিতিতে আপনার কোনো নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে অথবা সরাসরি নিজেই আপনার অবস্থা লিখে পিতা-মাতাকে অবগত করুন। তারা যদি পড়ালেখা ছেড়ে চাকরি গ্রহণের ব্যাপারে সম্মত হয় এবং আপনাকে বিয়ে করিয়ে দেয়, তাহলে তারা অসন্তুষ্ট হয়-এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন না। আর যদি তারা তাতে রাজি না হয় এবং আপনার বিয়ে করার সামর্থ্য থাকে, তাহলে আপনি নিজেই বিয়ে করে নিন। আপনার জন্য এই মুহূর্তে বিয়ে করা ফরজ। এমন পরিস্থিতিতে পিতা-মাতার আনুগত্য আবশ্যক নয়। যদি বিয়ে করার সামর্থ্য আপনার না থাকে, তাহলে চাকরি নিয়ে বিয়ের সামর্থ্য অর্জন করে তারপর বিয়ের করুন। আর সামর্থ্য না হওয়া পর্যন্ত রোজা রাখতে থাকুন।
দুই. এমতাবস্থায় যদি আপনি পিতা-মাতার কথানুযায়ী বিয়ে না করেন এবং এর জন্য গুনাহে লিপ্ত হন, তাহলে আপনি ও আপনার পিতা-মাতা সকলেই কবিরা গুনাহের অপরাধী হবেন।
বই- বিয়ে ও রিজিক
বি:দ্র: আপনার জন্য বিয়ে করা ফরজ হয়ে গেলে, এই ক্ষেত্রে পিতা-মাতার আনুগত্য করা আবশ্যক নয় এবং তাদের অবাধ্য হয়ে বিয়ে করলে শরিয়তে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
এবং বিয়ে না করে কোনো গুনাহে লিপ্ত হলে এর দায় পিতা-মাতাকেও নিতে হবে। অর্থাৎ সবারই কবিরা গুনাহ হবে।