25/12/2025
আজকাল সংসারগুলোতে এক অদ্ভুত নীরবতা নেমে এসেছে!
একই ঘরে থাকা দুইজন মানুষ— একই বিছানায় ঘুমায়, একই ছাদের নিচে দিন কাটায়, কিন্তু দিনের শেষে একে অপরের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন মনে করে না।
স্বামী-স্ত্রী একসাথে আছে, কিন্তু পাশাপাশি নয়। দু’জনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকে একটা দীর্ঘ দেওয়াল, ভারী নীরবতা।
না স্বামী স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া হয়েছে, না স্বামী স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্ক, এটা সেই নীরবতা, যেটা ধীরে ধীরে সংসারটাকে ভেতর থেকে খেয়ে ফেলে। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, এটা সেই স্বামী স্ত্রী বুঝতে পারে না।
১) কথাবার্তা কমে গেলে দূরত্ব বাড়ে
একসময় সারাদিনের গল্প জমে থাকত। আজ— “খেয়েছো?” “ঠিক আছি।”
এর বেশি কিছু নেই।
দু’জনেই ক্লান্ত, দু’জনেই ব্যস্ত, কিন্তু সবচেয়ে বেশি— দু’জনেই একে অপরের থেকে দূরে।
কথা না বলার অভ্যাস একদিন কথাহীন সম্পর্ক তৈরি করে।
২) মোবাইল স্ক্রিনে বন্দি অনুভূতি
একই সোফায় বসে, দু’জনেই দুইটা স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকে।
হাসি আসে, কিন্তু সেই হাসি একে অপরের জন্য নয়।
আঙুল স্ক্রল করে চলে, কিন্তু মন আরেকজনের দিকে এক পা-ও এগোয় না।
এই নীরবতা চিৎকারের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর।
৩) কথা বললে ঝগড়া হবে—এই ভয়
অনেক সংসারে কথা কমার কারণ ভালোবাসা শেষ হয়ে যাওয়া নয়, বরং ভয়।
ভয়— কিছু বললে ঝগড়া হবে, ভুল বোঝাবুঝি হবে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
তাই মানুষ চুপ থাকে। আর এই চুপ থাকাই ধীরে ধীরে সম্পর্কের মৃত্যু ডেকে আনে।
৪) অবহেলা জমে জমে অভ্যাস হয়ে যায়
একদিন দু’দিন অবহেলা, তারপর আর খেয়াল থাকে না।
কে কী বলল, কে কাঁদল, কে চুপ হয়ে গেল— কিছুই আর চোখে পড়ে না।
অভ্যাস হয়ে যায় একই ঘরে থেকেও একজন আরেকজনের কাছে অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাওয়া।
৫) দায়িত্ব আছে, অনুভূতি নেই
সংসার চলছে, বাচ্চা বড় হচ্ছে, বিল পরিশোধ হচ্ছে, দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন হচ্ছে।
কিন্তু ভালোবাসা? সংযোগ? বোঝাপড়া?
সেগুলো যেন কোথাও হারিয়ে গেছে।
দায়িত্ব দিয়ে সংসার টেকে, কিন্তু সম্পর্ক বাঁচে না।
৬) নীরব সংসারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুরা
শিশুরা ঝগড়া দেখেও কিছুটা মানিয়ে নিতে পারে।
কিন্তু এই ঠান্ডা নীরবতা, এই আবেগহীন পরিবেশ— তাদের মনে ভয়, অনিশ্চয়তা তৈরি করে।
তারা কথা না বললেও সব বুঝে ফেলে।
শেষে বলবো
সংসার মানে শুধু একসাথে থাকা নয়, একে অপরের সাথে থাকা।
প্রতিদিন একটু কথা, একটু শোনা, একটু অনুভব করা— এই ছোট জিনিসগুলোই সংসারকে জীবিত রাখে।
চুপ থাকাটা সহজ, কিন্তু কথা বলাই প্রয়োজন।
আজ যদি আপনি অনুভব করেন— একই ঘরে থেকেও দূরত্ব বাড়ছে, তাহলে আজই একে অপরকে বোঝার চেষ্টা করুন।
কারণ অনেক সংসার ঝগড়ায় নয়, নীরবতায় ভেঙে যায়।
আর সম্পর্ক ভাঙার আগে একটা কথা বলা অনেক সময় শেষ সুযোগ হয়ে দাঁড়ায়। 💛
লেখক:-হাফেজ আবু নাইম