23/05/2025
বাসর ঘরে ঢুকলেই এখন ভাষণ শুরু করে দেবে। কান মলতে মলতে বলবে, "এতো রাত পর্যন্ত কোথায় ছিলে? নতুন বৌকে ঘরে রেখে বাইরে ছেলেদের সাথে ঘুরাঘুরি, না? আজকে তোমার ঘুরাঘুরি আমি বের করব। আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন!" বিশ্বাস করেন, সদ্য বিবাহিত স্বামীর সাথে এই ব্যবহার করতে উনি একটুও দ্বিধা করবেন না। টিচার তো! সব জায়গাকেই তিনি ক্লাস মনে করেন। কেন যে নিজের শিক্ষিকাকে বিয়ে করতে গেলাম? আমার বাবা একটা পাগল! না হলে কেউ তার ছেলেকে ষোল বছর বয়সে বিয়ে করায়? তাও ইন্টারে পড়ুয়া এক মেয়ের সাথে!
দিলশাদের মাথায় কথাগুলো ঘুরপাক খায়। সে বাসরঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে ঢুকতে সাহস পাচ্ছে না। তার ভয় হচ্ছে। নার্ভাস লাগছে! তার দশ বছরের ছোট বোন রাইসা এসে বলছে,
— ভাইয়া! তুমি কি ভাবিকে ভয় পাও? ভেতরে যাচ্ছ না কেন?
দিলশাদ লজ্জা পেল। ধুর! রাইসার জন্য উনি সব টের পেয়ে গেলেন। বলল,
— যাবি এখান থেকে! নাকি মাইর দিব!
তাড়া খেয়ে রাইসা দৌড়ে তাদের বড়ঘরে গেল। রাত বাজে এগারোটা। এই বাচ্চাগুলো এখনো ঘুমায় না কেন?
রাইসা দৌড়ে গিয়ে বলল,
— বাবা, একটা কথা বলব।
বোরহান বলল,
— কী কথা, মামুনি?
— এইভাবে না। কানে কানে বলতে হবে।
বোরহান কানটা রাইসার মুখের কাছে নিয়ে গেল তো।
— বলো কী বলবে?
— ভাইয়া না খুব ভীতু। ভয় পাচ্ছে। বাসর ঘরে ঢুকছে না।
ফিসফিস করে বললেও সবাই শুনে ফেলল। দিলশাদের মা, কাকা, কাকি, দাদা, দাদি সবাই কথাটা শুনে এক যোগে বিস্তর হেসে উঠল। বোরহানের বাবা মানে দিলশাদের দাদা জসিম বলল,
— ছোট মানুষ তো! একটু সময় লাগবে!
তারপর আবার এক যোগে বিস্তর হেসে উঠল।
সবাই কী নিয়ে হাসাহাসি করছে সে বুঝতে পারছে। নিশ্চয়ই রাইসা সবকিছু বলে দিয়েছে। এই বোনটার জন্যই সব জায়গায় তার ইজ্জত পাংচার হয়ে যায়। এর মধ্যে তার বন্ধুরা এলো। আসলে তারা সবাই মেহেরুনের কাছে প্রাইভেট পড়ত। হাসান বলল,
— কীরে, শেষ পর্যন্ত নিজের শিক্ষিকাকে বিয়ে করে নিলি?
— তোদের জন্যই তো!
রুমি বলল,
— ঢং করিস না! তুই কি ম্যামকে ভালোবাসিস নি?
দিলশাদ চুপ করে রইল। শরীফ বলল,
— ভয় পাচ্ছিস নাকি! যা ভেতরে!
— তোদের কে আমি...
— ঠিক আছে, আমরা যাই। শুভকামনা রইল তোর জন্য।
আগের দিনের আধাপাকা টিনের বড় বাড়ি। বারান্দার দুই দিকের বড় রুম। প্রতিটা রুমের সাথে এডজাস্ট বাথরুমও আছে। যেই রুমে সে থাকত সেই রুমেই আজ তার বাসর। ইস! ভিতরে ঢুকলেই হয়তো তিনি কানে ধরে টেবিলে বসাবেন। তারপর বলবেন, কিছুদিন পর হাফ ইয়ার্লি এক্সাম। ভালো করে পড়ো। এই অধ্যায় থেকে কম ছে কম পঞ্চাশটা সিকিউ সলভ করবা। ধুর! আর ভাল্লাগে না। অগত্যা তাকে প্রবেশ করতেই হবে। না হলে আবার বন্ধু মহলে সে উপহাসের পাত্র হয়ে যাবে। এমনিতেই বাড়ির সবাই হাসাহাসি করছে।
সে ভয়ে ভয়ে ভেতরে প্রবেশ করল। তারপর দরজার ছিটকিনি আটকে দিল। তিনি বোধ হয় এক্ষুনি উঠে এসে তাকে শাসাতে শুরু করবেন। তাকে অবাক করে দিয়ে মেহরুন কোমল কণ্ঠে সালাম দিল।
— আসসালামুয়ালাইকুম।
দিলশাদ সালামের উত্তর নিল। সে ভয়ে ভয়ে বিছানার কাছে গেল। যদিও সে জানে বাসর রাতে কী করতে হয়! কিন্তু ছোট তো! প্রথম তো! তাই ভয় পাচ্ছে। সে কথা খুঁজে পেল না। সে কাঁপছে। মেহরুন বুঝতে পেরে বলল,
— ফ্রেশ হয়ে আসুন।
"আসুন" শব্দটা তার মগজে ধাক্কা খেল। হঠাৎ তিনি আমাকে "আপনি" করে বলা শুরু করেছেন কেন? আল্লাহ জানে। দিলশাদ অবাক হলেও কিছু বলতে সাহস পেল না। ফ্রেশ হয়ে আসল। এ পর্যন্তও জিজ্ঞেস করল না, মেহরুন ফ্রেশ হয়েছে কি না। মেহরুন নিজে থেকেই বললো,
— চলুন, দুই রাকাত নামাজ পড়ি।
দুইজনে দুই রাকাত করে নামাজ পড়ল। এখন বিছানায় যাবার পালা। খাটটা অনেক সুন্দর ফুল দিয়ে সাজানো। কিন্তু দিলশাদ এই খাটে যাবার সাহস পাচ্ছে না।মেহরুন খাটে গিয়ে বসল। দিলশাদ কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল,
— বালিশটা…!
— কী করবেন!
— আমি আপনার সাথে শোবো না। সোফায় গিয়ে শোবো।
কথাগুলো বলতেই যেন দিলশাদের ঘাম ছুটে গেছে। মেহরুন বুঝতে পেরে বালিশটা এগিয়ে দিল। দিলশাদ সোফায় শুয়েই ঘুমিয়ে গেল। মেহরুন এমনি বসে রইল। কিন্তু একটুও মন খারাপ করল না। কারণ সে জানে এমনটাই হওয়ার কথা ছিল।
কিছুক্ষণ পর দিলশাদ প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় কাঁপছে। মেহরুন কাঁথা নিয়ে গিয়ে তার গায়ে জড়িয়ে দিল। দিলশাদ সজাগ হয়ে গেল।
— আপনি!
— আপনার শীত করছিল, তাই ...
— আচ্ছা ম্যাম, একটা কথা বলুন তো। আজ আপনি আমাকে এত সম্মান দিচ্ছেন কেন?
— গতকালও আমি আপনার টিচার ছিলাম। কিন্তু আজ থেকে আপনি আমার স্বামী। আর স্বামীকে সম্মান করা, স্বামীর মন জোগানো প্রতিটা নারীর জন্য ফরজ। আজ থেকে আপনি আর আমার ছাত্র নন। আজ থেকে আপনি আমার স্বামী। আমার পৃথিবী। আমার সমস্ত সেবা আপনার জন্য।
দিলশাদ মেহেরুনের এমন পরিবর্তনে অবাক না হয়ে পারল না।
চলবে…
#গল্প #দারুচিনি_এলাচ
সূচনা পর্ব
লেখক: আকবর হোসেন