29/06/2025
মুরাদনগরের ঘটনা: সত্য, প্রচার ও অপপ্রচারের ব্যবচ্ছেদ
মুরাদনগরে যা ঘটেছে আর যা রটেছে, তার মধ্যে বিস্তর ফারাক।
সম্প্রতি ফেসবুকজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, মুরাদনগরে বিএনপির এক কর্মী ২৫ বছর বয়সী এক সংখ্যালঘু নারীকে ধর্ষণ করেছে। "বিএনপি কর্মী" এই ট্যাগলাইন দেখামাত্রই লাখ লাখ শেয়ার—ঘটনার প্রকৃত সত্য যাচাই করার আগেই তা ভাইরাল। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, যদি অভিযুক্তের নামের পাশে “বিএনপি” না থাকত—তাহলে কি ঘটনাটি ভাইরাল হতো? নাকি মেয়েটির কপাল খারাপই থাকত?
🔍 কী প্রচার হয়েছে?
ঘটনার প্রচারে বলা হচ্ছে—পূজার সময় পরিবারের অন্যরা মণ্ডপে ব্যস্ত থাকাকালীন, বিএনপির এক কর্মী জোর করে একটি সংখ্যালঘু নারীর ঘরে ঢুকে ধর্ষণ করে। চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে তাকে গণপিটুনি দেয়। এরপর নারী ধর্ষণের মামলা করেন এবং পুলিশ অভিযুক্তকে খুঁজছে।
🧩 কিন্তু আসলে কী ঘটেছে?
স্থানীয় বহু সূত্র জানাচ্ছে, কথিত “ধর্ষক” ও “ভুক্তভোগী” দুজনেই দীর্ঘদিন পরকীয়ায় জড়িত ছিলেন। পূজার সময় সুযোগ বুঝে ....................... হয়, যা পরে পরিবারের হাতে ধরা পড়ে। উভয়কেই মারধর করা হয় এবং ছেলেটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরদিন, পরিবারের চাপ এবং স্বামীর হুমকিতে নারীকে ধর্ষণ মামলা করতে বাধ্য করা হয়—যেখানে পূর্বে শারীরিক সম্পর্ক থাকায় “ধর্ষণের আলামত” তৈরি করতেও খুব একটা সমস্যা হয়নি।
🏷️ রাজনীতির গন্ধ—বাস্তবে কার পরিচয় কী?
প্রচার হয়েছে অভিযুক্ত ফজর আলী একজন বিএনপি কর্মী। কিন্তু স্থানীয় অন্তত ৫০ জনের সাক্ষ্য বলছে, তিনি বরং আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী এবং ১১নং রামচন্দ্রপুর আওয়ামী লীগ নেতাদের দেহরক্ষী হিসেবেও পরিচিত।
📰 অপপ্রচার কীভাবে ছড়ালো?
ঘটনার পরপরই ‘মুরাদনগর লাইভ টিভি’ নামক একটি ফেসবুক পেজ—যার সাথে সাবেক এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের মিডিয়া উইংয়ের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে—সেখানে ফজর আলীকে বিএনপি নেতা হিসেবে তুলে ধরে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালানো হয়। এরপর সংগঠিতভাবে বট বাহিনী তা ভাইরাল করে তোলে।
🤥 বট না হয় বটই, কিন্তু “মানুষরূপী প্রভাবশালীরা”?
যেখানে একজন ব্যক্তি, যাকে অনেকে ‘পীর’ হিসেবে মানে, তিনিও কোনো প্রমাণ ছাড়াই এই অপপ্রচার নিজের টাইমলাইনে ছড়িয়ে দেন—সেটা শুধু দুঃখজনকই নয়, ভয়ঙ্করও।
🧠 অতীত থেকে শিক্ষা না নিলে ভবিষ্যত আরও অন্ধকার
এক সময় আওয়ামিলীগ সরকারের আমলে যেকোনো ঘটনায় দোষ চাপানো হতো বিএনপির উপর। যারা তখন এসব অপপ্রচারে হাত লাগাত, তারাই আজ বিএনপির গন্ধ শুঁকে বেড়ায়—সুবিধামতো কখনো লীগের ছত্রছায়ায়, কখনো বিরোধিতার মুখোশে।
আর সবশেষে, সহজ-সরল জনগণ এইসব নাটকীয়তা বিশ্বাস করে প্রতারিত হয়, ব্যবহৃত হয়, এবং সত্য চাপা পড়ে যায় জোরালো অপপ্রচারের নিচে।