24/06/2023
❝পাঠকের অভিমত❞
মুহাম্মাদ ইসহাক খান
“দিল্লী কলেজ, ইসলামী শিক্ষারব্যবস্থার অজানা ইতিহাস”
– শ্রদ্ধেয় এনামুল করীম ইমাম
বইমেলায় বাঙালিয়ানা থেকে প্রকাশিত চমৎকৃত কয়েকটি বইয়ের একটি। নিশ্চয়ই বইয়ের বিষয়বস্তু আকৃষ্ট করেছে। এখন পর্যন্ত বাঙ্গালিয়ানা প্রকাশিত সবগুলো বই আমাকে আকৃষ্ট করেছে।
তরুণ লেখক। ইতিহাস তাঁর কাজের অন্যতম দিক। আর ইতিহাস মানেই বইটি আমার চাই। বইটির নাম প্রথমেই আমাকে আকৃষ্ট করেছে দু'টি কারণে; দিল্লী কলেজ এবং মুসলিম শিক্ষাব্যবস্থা।
দিল্লী কলেজ, ওয়াও কেমন ছিলো এই প্রতিষ্ঠান! মনে মনে আমার জিজ্ঞাসা। হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী, আল্লামা রশিদ আহমদ গোঙ্গহী, আল্লামা কাসেম নানুতুবী, আল্লামা ইয়াকুব নানুতুবী, শামসুল উলামা মুনশি জাকাউল্লাহ, তবকাতুশ-শু‘আরায়ে হিন্দের লেখক মুনশি কারিমুদ্দিন পানিপথি রহ. এরূপ অসাধারণ সময় ও যুগের উজ্জ্বল নক্ষত্রগণ এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। সকলের উস্তাদ উস্তাযুলকুল মাওলানা মামলুকুল আলী রহ.। আরেক বিস্ময় কে এই মহাগুরু!
দিল্লী কলেজ ও মাওলানা মামলুকুল আলী রহ.। এদুটি ঘোরে হারিয়ে গেলাম। মাত্র ৯-জন ছাত্র ছিলো, ইংরেজরা চেয়েছিলো ভেঙ্গে ফেলতে। সেই প্রতিষ্ঠান কিনা আবার এমন এক মহাগুরুর সংস্পর্শে এসে এমন এমন মহাগুণিজন তৈরী করেছে, যাঁরা হিন্দুস্তানের ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তন করে দিয়ে ছিলেন।
শুধু এদিকেই শেষ নয়, ১৮৫৭ এর সিপাহী বিপ্লবের মূলধারার নেতৃত্ব প্রদানকারী অধিকাংশ ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। বলা হয় সকলে ছিলেন শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ. এর চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ। এনারা কেউ উনাকে পায়নি, তাহলে কী এর পিছনে প্রতিষ্ঠান বা মহাগুরু আল্লামা মামলুকুল আলী রহ. এর কোন যোগসূত্র রয়েছে!
👉বিশাল জিজ্ঞাসা, এ-কোন প্রতিষ্ঠান আর কে এই উস্তাযুলকুল আল্লামা মামলুকুল আলী রহ.। কী এর ইতিহাস।
শিক্ষাব্যবস্থার ইতিহাস টেনেছেন ইসলাম পূর্ব সেই গ্রিক সময় থেকে। খুবই সংক্ষিপ্তাকারে। মূল আলোচনার বিষয় ছিলো, হিন্দুস্তানের শিক্ষাব্যবস্থার ইতিহাস দিল্লী কলেজ পর্যন্ত। চমৎকারভাবে তিনি প্রাচীন গ্রিক থেকে মুসলিম আরব হয়ে হিন্দুস্তান পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থার ইতিহাস এবং এর সিলেবাস ও ক্রমধারা আলোচনা করেছেন।
এতোদিনের ভুল ভেঙ্গে যখন শুনলাম —‘দরসে নিজামি’ নিজামুল মুলকের না, মিশরের আজহার শিয়াদের তৈরী ও সুলতানা আইউবির হাত ধরে এর মুক্তি, মাজহাব ভিত্তিক মাদ্রাসার ব্যাপকতা, নিজামুল মুলকের মাদ্রাসায় হানাফির দরস নিষিদ্ধ, দিল্লী কলেজ থেকে বিখ্যাত দু'টি প্রতিষ্টান ‘দেওবন্দ’ ও ‘সাহারানপুর’ মাদ্রাসার সৃষ্টি তখন বিস্ময়ের বাঁক ছিলো না।
অসাধারণ এক কালেকশন হবে যদি বইটি আপনার পাঠে এবং সংগ্রহে থাকে।
আমার নিকট বারংবার মনে হয়েছে কাফিয়া থেকে জালালাইন থাকাবস্থায় এই বইটি কওমী শিক্ষার্থীদের পড়িয়ে দেওয়া উচিত। সত্য হলো ইতিহাসের পাঠ আমাদের নাই বললেই চলে, যদি আমরা মোটা আওয়াজে বলে থাকি “যে জাতি তার ইতিহাস ভুলে যায়..................”