11/03/2024
রামাদানে যে ১০ টি ভুল করা যাবে না—
খুবই গুরত্বপূর্ণ বিষয় ধৈর্য্যের সাথে জেনে নিন। উপকার পাবেন ইনশাআল্লাহ।
[এক.]
সাহরি খাওয়ার পর ফজরের নামাজ আদায় না করে বিছানায় যাওয়া অনিরাপদ। শরীর তখন ক্লান্ত ও অলস থাকে, ফলে কাত হলেই চোখ বুজে আসে; ফজর মিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বরং এ সময়টা সামান্য হাঁটাচলা করে, ইস্তিগফার ও দরুদ পড়ে কাটানো যেতে পারে।
[দুই.]
রামাদানে পুকুরে বা নদীতে সাঁতার কাটা থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ পানি গলা দিয়ে ভেতরে চলে যেতে পারে। অতএব, সতর্ক থাকা দরকার। তাছাড়া, ফরজ গোসল বা সাধারণ অজুতে গড়গড় করে কুলি করা যাবে না এবং নাকের ভেতর পানি দেওয়ার সময়ও যথাযথ সতর্ক থাকতে হবে, যাতে পানি ভেতরে চলে না যায়।
[তিন.]
বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত ইউটিউব, ফেইসবুক এবং অন্যান্য সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করা থেকে যথাসাধ্য বিরত থাকতে হবে। ভালো কিছু দেখতে গেলেও অনেক আজে-বাজে ভিডিওর সাজেশন আসবে। ইচ্ছা না থাকলেও কৌতূহল মেটাতে গিয়ে হয়তো অনেক কিছু দেখা হয়ে যাবে। রোজার মর্যাদা কমবে, অন্তর শক্ত হতে থাকবে এবং মানসিক প্রশান্তি নষ্ট হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না—গান শুনা, মুভি/নাটক দেখা থেকেও বিরত থাকতে হবে।
[চার.]
ফেইসবুক অ্যাপের Watch videos আইকনটি হাইড করে দেওয়া দরকার। কারণ, এটি ফিতনার দরজা খুলে দেয়। শুরুটা হয় সাধারণ কোনো ভিডিওতে ক্লিক করে, এরপর মহাসমুদ্রে গিয়ে খাবি খেতে হয়। হরেক রকমের ভিডিও দেখতে দেখতে রুহানিয়াত (আধ্যাত্মিকতা) হ্রাস পায়; ফলে রোজার মর্যাদা ও মাহাত্ম্য নষ্ট হয়। একই সাথে ইউটিউবের শর্টস, ফেইসবুকের রিল আর টিকটকের ছোট ছোট ভিডিও থেকে সাবধান থাকা জরুরি, যদিও সেগুলো হা*রাম কিছু না হয়।
[পাঁচ.]
অনেকেই রোজার দিনগুলো বেশি বেশি ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেন। এটি একদমই উচিত নয়। রোজার প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইমাম ইবনুল জাওযি (রাহ.) বলেন, যদি কবরবাসীরা একটি দিনের জন্য দুনিয়াতে ফিরতে পারতো, তবে তারা রামাদানের কোনো একটি দিন চাইতো। তাই, যথাসম্ভব নেক আমলে সময়গুলো কাজে লাগানো উচিত।
[ছয়.]
ইফতারকে সুস্বাদু ও জাঁকজমকপূর্ণ করতে গিয়ে অনেকেই ইফতারের পূর্বের মূল্যবান সময়টা নষ্ট করে ফেলেন। অথচ ইফতারের পূর্বমুহূর্তে দু‘আ কবুল হয়। এ সময়ে বেশি করে ইস্তিগফার ও দু‘আ করা উচিত।
[সাত.]
অনেকেই রামাদানে দ্রুত কুরআন খতম করতে গিয়ে তিলাওয়াতের হক আদায় করেন না। বেশি খতমের আকাঙ্ক্ষায় এমনভাবে তিলাওয়াত করেন যে, তিলাওয়াতই সহিহ হয় না। এমন তিলাওয়াতে তেমন ফায়দা হবে না। ধীরে-সুস্থে, আগ্রহ সহকারে, ভালোবাসা নিয়ে কুরআন পড়তে হবে। পরিমাণ কম হলেও আল্লাহ এতে বেশি খুশি হবেন। কোয়ান্টিটির চেয়ে কোয়ালিটিকে প্রধান্য দিতে হবে।
[আট.]
রামাদান মাসে অনেকের খরচ বেড়ে যায়। সাহরি ও ইফতারে থাকে বাহারি আইটেম। এছাড়া রামাদানের শেষ দিকে ইবাদতে উদাসীন হয়ে ঈদের শপিংয়ের জন্য তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। এগুলো একদম অনুচিত। রামাদানের মূল কনসার্ন হওয়া উচিত—অধিক নেক আমল করা, কৃত গু*নাহ মাফ করানো এবং তাকওয়া অর্জন করা।
[নয়.]
রোজায় সময় কাটানোর জন্য অনেকে বিভিন্ন অলস খেলাধুলায় (লুডু, দাবা, কেরাম) লিপ্ত হন, যেগুলোতে ন্যূনতম শরীরচর্চাও হয় না। এই খেলাগুলো এমনিতেই শরিয়ত সমর্থন করে না। আবার কারো দিন কাটে সোশাল মিডিয়াতে ফান-ট্রল করে, গান শুনে, মুভি দেখে। এগুলো সবই রোজার শিক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক; এগুলো আত্মাকে কলুষিত করে।
[দশ.]
অনেকে রামাদানের অর্জনকে ঈদের দিনেই শেষ করে দেন। আড্ডা, গান, নেশা, নাটক-মুভি, গিবত, কুদৃষ্টি—সবকিছু যেন আগের রূপে ফিরে আসে। তারা ভুলে যান—দীর্ঘ এক মাসের কষ্টকর রোজা, তাহাজ্জুদের নামাজ, আন্তরিক মুনাজাত, পবিত্র কুরআনের মধুর তিলাওয়াত, স্পিরিচুয়ালিটি আর ইফতারের আনন্দের কথা। এটি নিজের নফসের প্রতি অবিচার।
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন;"কেউ যদি সওম পালন করেও মিথ্যা বলা ও অপকর্ম ত্যাগ না করে,
তাহলে তার পানাহার বর্জন করাতে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।"
[ সুনান আবূ দাউদ৷ (তাহকিককৃত), ২৩৬২]
সংগৃহীত।