14/06/2025
সমঝোতা নির্বাচন, নাকি সময়ের পুনরাবৃত্তি?
✍️ কলাম মাশফিক হেলাল (রাষ্ট্র ও জনগণের পক্ষে)
“মনে রেখো—এক ফোঁটা দিলাম শিশির…”
এই এক ফোঁটার মূল্য কতখানি, তা নির্ধারণ করবে সময়। তবে রাজনৈতিক আকাশে জমে থাকা ঘন মেঘ, সামনের দিনে এক নতুন জলোচ্ছ্বাসের ইঙ্গিত দিচ্ছে—যার কেন্দ্রবিন্দুতে এনসিপি, ইউনূস সরকার, এবং বিএনপি।
রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন উঠেছে, এনসিপি তাদের জুলাই সনদে ঘোষণার মাধ্যমে বলবে, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দল আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে একটি ‘মেটিকুলাস’ পরিকল্পনা, যার নেতৃত্বে আছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অনেকেই বলছেন, এটি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে—একটি একদলীয় নির্বাচন, যার পরিণতি আগে থেকেই নির্ধারিত।
সাংবিধানিক বৈধতার পরও যদি কোনো নির্বাচন একটি বড় অংশকে বাইরে রেখে হয়, তাহলে প্রশ্ন উঠবেই। প্রশ্ন উঠবে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে, প্রশ্ন উঠবে সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে, প্রশ্ন উঠবে, জনগণের ভোটাধিকার কতটা সুরক্ষিত থাকছে?
একটি রাজনৈতিক সত্য হলো, ইতিহাসের অনেক বিতর্কিত অধ্যায়ে বিএনপি, আওয়ামী লীগ কিংবা অন্যান্য দল কেউ-ই পুরোপুরি নির্দোষ নয়। তবে বর্তমানে যেসব আলোচনা শোনা যাচ্ছে—যে বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসবে, জামায়াত হবে পাতানো বিরোধী দল, আর ইউনূস পাবেন "সেফ এক্সিট"—এসব কথার সত্যতা যাচাই করা এখনো অসম্ভব, তবে রাজনীতির গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করলে এমন সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো, বিএনপির উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকে কেন্দ্র করে হওয়া বিতর্ক। বিএনপির তরফে যেখানে তার পদত্যাগ চাওয়া হয়েছিল, সেখানে ইউনূস সরকার তার সঙ্গেই বৈঠক করেছেন। এটি কিছুটা হলেও ড. ইউনূসের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, কারণ একটি দলের সঙ্গে একতরফা আলোচনা কখনোই নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
নির্বাচন যদি হয় একটি সাজানো খেলা—যেখানে ফলাফল আগেই নির্ধারিত—তবে সেটি গণতন্ত্র নয়, বরং গণতন্ত্রের ছদ্মবেশ। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে জনগণই। আর এই খেলায় যারা ‘ফিক্সার’, তারাই হবেন জনরোষের লক্ষ্যবস্তু।
তবুও কেউ কেউ বলছেন, এই নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য হতে পারে একটি দীর্ঘমেয়াদী আশীর্বাদ। আজ পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ শোনা গেছে—বিরোধী দল দমন, একতরফা ভোট, প্রশাসনিক ব্যবহার। কিন্তু যদি এবার বিএনপি ও জামায়াত নিজেরা এমন একটি নাটকীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তাহলে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ সেই দায় থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকতে পারবে।
ড. ইউনূস যদি সত্যিই অতীতের 'ঋণ' শোধ করতে চান—যা ১/১১ সময়কার জটিল রাজনৈতিক অবস্থায় বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল—তবে প্রশ্ন থাকবে, তিনি সেটা করছেন রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের বিনিময়ে? ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং সম্পদের গ্যারান্টি নেওয়ার চুক্তি কি একজন নোবেল বিজয়ীকে মানায়?
সবশেষে বলতেই হয়—সময়ের কাছে একদা সবই ধরা পড়ে। রাজনীতি যেখানে 'সমঝোতা'র মোড়কে 'বাণিজ্য', সেখানে জনগণের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব হারিয়ে যায়। সব ভালো, ভালো না। কিছু মেটিকুলাস পরিকল্পনা হয়তো জাতির জন্য হতে পারে এক দীর্ঘমেয়াদী বিপর্যয়।