জেপি শাহজাহান ভাই

জেপি শাহজাহান ভাই Dear friends thanks for being with me by following my page
(5)

21/07/2025

আল্লাহ এ কেমন বিপদ দিলা, এই ছোট ছোট শিশুদের উপর
এগুলা যে মানার মত না
তুমি রহমতের মালিক

এক সময়ের প্রাণবন্ত ছিল এই রাস্তা। গ্রামের লোকেরা বলত, এই রাস্তা দিয়ে গেলে নাকি নিঃশব্দে কান পাতলে গাছের ফাঁক দিয়ে ভেসে আ...
20/07/2025

এক সময়ের প্রাণবন্ত ছিল এই রাস্তা। গ্রামের লোকেরা বলত, এই রাস্তা দিয়ে গেলে নাকি নিঃশব্দে কান পাতলে গাছের ফাঁক দিয়ে ভেসে আসে কান্নার আওয়াজ, আর মাঝে মাঝে দেখা যায় এক নিঃসঙ্গ আলো ধোঁয়াশায় মিলিয়ে যাচ্ছে। কেউ কখনও সাহস করেনি রাতে এই রাস্তা দিয়ে হাঁটতে। কারণ রাত নামলেই, এই রাস্তায় অদ্ভুত কিছু ঘটত। আজ সেই রহস্য উদঘাটনের জন্য একজন মানুষ পা রাখল এই অভিশপ্ত পথে।

তার নাম ছিল তানভীর। শহরের মানুষ। পেশায় একজন ফটোগ্রাফার, আর নেশা ছিল পরিত্যক্ত জায়গা আর রহস্যময় স্থান ঘুরে ফটো তোলা। তার ক্যামেরায় ধরা পড়ত এমনসব দৃশ্য, যা স্বাভাবিক চোখে দেখা যেত না। গ্রামের এক বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ তাকে বলেছিল এই রাস্তার কথা—এই পথের শেষ মাথায় নাকি এক প্রাচীন জমিদারবাড়ি ছিল, যেটি ১৯৪৭-এর পর থেকে বন্ধ হয়ে আছে। কেউ ওখানে গেলে ফিরে আসে না।

তানভীরের মনে কৌতূহল চেপে বসল। সে ঠিক করল, রাতে সেই রাস্তায় যাবে। পূর্ণিমার রাত। চারপাশে কুয়াশায় ঢাকা। পথের পাশে সারি সারি বৃক্ষ, যাদের পাতাহীন শাখাগুলো যেন হাওয়ায় নয়, কিছুর অদৃশ্য ইশারায় নাড়ছে। রাস্তার মাঝখানে বিশাল ফাটল—যেন মাটির গভীর থেকে কোন জিনিস উঠে আসতে চাইছে। আর রাস্তার শেষপ্রান্তে, কুয়াশার মধ্য দিয়ে এক ফ্যাকাসে আলো যেন ডাকছে তাকে।

তানভীর সাহস করে এগোতে লাগল। ক্যামেরা অন, বুক ধুকপুক করছে, কিন্তু সে থামছে না। হঠাৎ পেছনে কে যেন ধীরে ধীরে হাঁটছে এমন শব্দ—সে ফিরেও দেখল না। পথের দুইপাশের গাছগুলো যেন কাঁপছে, গা ছমছমে শব্দ আসছে পাতার ফাঁক দিয়ে। বাতাস থেমে গেছে। এমন সময় হঠাৎ তার চোখে পড়ে, দূরের সেই আলোটা যেন আকার নিচ্ছে। আলো নয়, তা একজন মেয়ে! সাদা পোশাক, খোঁপা করা চুল, ভাসছে… হাঁটছে না, পা নেই।

তানভীর থমকে যায়। মেয়েটি ধীরে ধীরে সামনে আসছে। মুখটা পরিষ্কার নয়। যেন কুয়াশায় ঢাকা, কিন্তু চোখ… চোখ দুটো লাল, হাহাকার করছে। তানভীর ক্যামেরা তুলতেই এক ঝটকায় চারপাশ অন্ধকার। সে বুঝতে পারে, সে আর একা নয়। কারা যেন তাকে ঘিরে ফেলেছে। কান্নার আওয়াজ, চাপা গর্জন, আর ছুটে আসা হিমেল বাতাসে সে কেঁপে উঠে।

"ফিরে যা..."—একটা কণ্ঠ, খুব কাছ থেকে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল।

তানভীর দৌড়াতে শুরু করে। কিন্তু পেছনে তাকিয়ে দেখে, গাছগুলো যেন পথ আটকাচ্ছে। রাস্তার সেই ফাটল এখন বড় হয়ে গেছে। আর তার মাঝখান থেকে যেন অদৃশ্য হাত উঠে এসেছে, যা তাকে টানছে। সে বাঁচতে চায়, কিন্তু পা যেন কাজ করছে না।

হঠাৎ করে সব নিস্তব্ধ। তানভীর আর নেই।

পরদিন সকালে গ্রামের লোকেরা দেখে, সেই রাস্তার ঠিক মাঝখানে পড়ে আছে একটি ক্যামেরা। ক্যামেরার স্ক্রিনে শেষ ছবি—একটা বিকৃত মুখ, অর্ধেকটা কুয়াশায় ঢাকা, চোখে আগুন, আর পেছনে অস্পষ্ট জমিদারবাড়ির ছায়া।

এরপর থেকে কেউ আর সাহস করে না ঐ রাস্তায় পা রাখতে। কেউ যদি ভোরে ওখান দিয়ে যায়, শুনতে পায় ক্যামেরার ক্লিক, কিংবা কারো ছুটে পালানোর শব্দ। লোকেরা বলে, তানভীর এখন সেই রাস্তায় আছে—অন্ধকারের ফাঁদে বন্দী হয়ে, সেই মেয়েটার ছায়া হয়ে গেছে সে নিজেও।

কারণ একবার এই রাস্তা যার নাম মনে রাখে, তাকে ফিরতে দেয় না।

গল্প: "শিখরের আলোয় মা ও মেয়ে"ভোরবেলা। সূর্যের প্রথম আলো ছুঁয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের শিখরগুলো, যেন স্বর্গ থেকে নেমে আসা সোনালি আ...
20/07/2025

গল্প: "শিখরের আলোয় মা ও মেয়ে"

ভোরবেলা। সূর্যের প্রথম আলো ছুঁয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের শিখরগুলো, যেন স্বর্গ থেকে নেমে আসা সোনালি আলোর স্রোত বয়ে যাচ্ছে চারদিকে। বাতাসে কুয়াশার গন্ধ, ঠান্ডায় গা শিরশির করে ওঠে। সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছে দুইজন মানুষ—একজন মা, আর তার ছোট্ট মেয়ে। তারা দাঁড়িয়ে আছে বিশাল এক পর্বতের চূড়ায়, চারপাশে শুধু নিস্তব্ধতা, যেন গোটা পৃথিবীটা থেমে গেছে শুধুই তাদের এই মুহূর্তের জন্য।

মায়ের নাম ছিল নীরা, মেয়েটির নাম আরু। শহরের কোলাহল থেকে বহু দূরে, এই পাহাড় তাদের আশ্রয় ছিল না কখনো, বরং এটি ছিল তাদের স্বপ্ন। নীরা একজন একক মা, জীবনের প্রতিটি দিন সংগ্রাম করে মেয়েকে বড় করেছেন। আরু যখন ছোট ছিল, প্রতিদিন ঘুমানোর আগে মাকে জিজ্ঞেস করত, “আমরা কখন পাহাড়ে যাবো মা?”

নীরা প্রতিবার হেসে বলত, “একদিন যাবো, ঠিকই যাবো। শিখরের ওপরে উঠে সূর্যোদয় দেখবো।”
এই স্বপ্নটুকুই ছিল তাদের দিনের ক্লান্তির শেষে সান্ত্বনা।

বছরের পর বছর কেটে গেছে। আরু বড় হয়েছে, কিন্তু নীরার চোখে মেয়েটি যেন সেই ছোট্ট কন্যাটি—যার চোখে ছিল হাজারটা স্বপ্ন। অবশেষে, সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার দিন এসেছিল। তারা পাড়ি জমায় দূর দেশের সেই পাহাড়ে। পায়ে হাঁটা শুরু হয় একেবারে পাদদেশ থেকে। পথ ছিল বন্ধুর, কঠিন, ক্লান্তিকর। কিন্তু দুজনেই জানত, উপরে উঠলেই মিলবে সেই বহু কাঙ্ক্ষিত দৃশ্য।

আর এখন, তারা দাঁড়িয়ে সেই শিখরে। নীরার হাতে মুঠো করে ধরা আছে আরুর ছোট্ট হাত। সামনে অপার বিস্তৃত পাহাড়ের সারি, দূরে সূর্য মাথা তুলছে আকাশের কোল থেকে। দু’জনেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে—মুখে কোনো কথা নেই, শুধু চোখ দিয়ে তারা ছুঁয়ে ফেলছে পুরো বিশ্বটা।

নীরার চোখে জল। কিন্তু সেটা দুঃখের নয়, বরং এমন একটা অনুভূতি যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। সেই সব নিঃশব্দ কষ্ট, ক্লান্ত রাত, একলা লড়াই—সব আজ মিলিয়ে গেছে এই আকাশের নিচে। আরুও হঠাৎ বলল, “তোমার সঙ্গে এখানে আসতে পেরে আমি খুব খুশি মা।”

নীরা মাথা নিচু করে মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন। শীতল বাতাস তাদের চুলে দোলা দিচ্ছে, যেন প্রকৃতি নিজেও এই মিলনের সাক্ষী হতে চায়। পাহাড়ের বুকে সেই দিন রয়ে গেল তাদের গল্প, তাদের প্রতিজ্ঞা, এবং এক অনন্ত বন্ধন।

সেদিন আরু প্রথমবার বুঝেছিল—পাহাড়ে ওঠা শুধু শরীরের নয়, আত্মারও। আর তার মা, সেই একক যোদ্ধা, তাকে জীবনভর বয়ে এনেছেন এক বিশাল শিখরে… ভালোবাসার শিখরে।

গল্প: "রিকশাওয়ালা ও বিদেশি ভদ্রলোক"ঢাকার পুরান শহরের ভিড়ভাট্টা আর সরু গলির মাঝে এক সকাল। সূর্যটা তখন ঠিক মাথার ওপরে উঠে ...
20/07/2025

গল্প: "রিকশাওয়ালা ও বিদেশি ভদ্রলোক"

ঢাকার পুরান শহরের ভিড়ভাট্টা আর সরু গলির মাঝে এক সকাল। সূর্যটা তখন ঠিক মাথার ওপরে উঠে এসেছে। চারপাশে কোলাহল—রিকশার ঘণ্টি, দোকানদারের হাঁকডাক, ফলের ঠেলাগাড়ির ঠুসঠাস শব্দ। এই শহরে হাজারো মানুষ প্রতিদিন বাঁচার লড়াই করে। ঠিক সেই শহরের মাঝখানে হাঁটছিল একজন বিদেশি ভদ্রলোক, নাম তার জনাথন রিড। পেশায় ইতিহাসবিদ, এসেছেন বাংলাদেশে পুরান ঢাকা আর এখানকার সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করতে।

হাতে ছিল একটা ক্যামেরা, চোখে কৌতূহল, আর মুখে একরাশ উদ্দীপনা। হঠাৎই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ে সে। তার চোখ আটকে যায় একজন রিকশাওয়ালার উপর। মধ্যবয়সী মানুষটা, নাম আব্দুল কাদের, তার রিকশা ঠেলে নিয়ে যাচ্ছিল রাস্তার মধ্য দিয়ে। শরীরে পরনে ছিল ধুতি আর পুরনো ফতুয়া, চেহারায় ছিল পরিশ্রম আর অভিজ্ঞতার ছাপ।

জনাথন একটু দ্বিধা নিয়ে এগিয়ে এসে বাংলায় বলে, “রিকশা যাবে?”

আব্দুল একটু হেসে মাথা নাড়ে, “জ্বি হ্যাঁ, উঠেন।”

জনাথন উঠে বসে, কিন্তু হঠাৎ বলে, “আমি একটু চালিয়ে দেখতে চাই। সম্ভব?”
আব্দুল হেসে ফেলে, “চালাবেন নাকি? ঠিক আছে, আমি সাথে থাকি।”

এইভাবে শুরু হয় এক অদ্ভুত বন্ধুত্বের গল্প। জনাথন চালায় রিকশা, আর আব্দুল তার পাশে হেঁটে হেঁটে তাকে পথ দেখায়। চারপাশের মানুষ প্রথমে একটু অবাক হয়, কিন্তু পরে তাদের হাসির খোরাক হয়ে ওঠে এই দৃশ্য।

রিকশা চালাতে চালাতে জনাথন জানতে পারে আব্দুলের জীবনের গল্প—সে ছোটবেলায় গ্রাম থেকে ঢাকায় আসে, বাবা-মা হারিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াত, পরে একজন ভালো মানুষের সহায়তায় রিকশা চালানো শুরু করে। একমাত্র মেয়েকে স্কুলে পড়ায় সে, স্বপ্ন দেখে মেয়েটা একদিন শিক্ষিকা হবে।

আবার আব্দুলও জানতে পারে জনাথনের জীবন—সে ইংল্যান্ডে বড় হয়েছে, কিন্তু সবসময় উন্নয়নশীল দেশের মানুষের জীবন নিয়ে আগ্রহ ছিল তার। নিজের চোখে দেখা আর বোঝার জন্যই সে এখানে এসেছে।

রিকশার হ্যান্ডেল ধরে রাখতে রাখতে জনাথনের চোখে জল চলে আসে, “তুমি একজন যোদ্ধা, আব্দুল ভাই,” বলে সে।

আব্দুল হেসে বলে, “জীবনটা যুদ্ধই তো, ভাইজান। কেউ বন্দুক দিয়ে লড়ে, আমরা প্যাডেল টেনে লড়ি।”

দিনটা শেষে জনাথন আব্দুলকে নিয়ে চা খায় এক দোকানে। পাশেই বসে থাকে আব্দুলের মেয়েটা, স্কুল থেকে ফিরে বাবার জন্য অপেক্ষা করছিল। জনাথন তার জন্য একটা গল্পের বই এনে দেয়, ইংরেজিতে লেখা হলেও ছবিগুলো মেয়েটার চোখে আনন্দ ছড়িয়ে দেয়।

এরপরের কয়েকদিন জনাথন প্রতিদিন আসে আব্দুলের সাথে দেখা করতে। তারা একসাথে ঢাকার পুরান রাস্তাগুলো ঘুরে বেড়ায়, জনাথন রিকশা চালায়, ছবি তোলে, আর আব্দুল তাকে তার গল্প বলে। এভাবে এক ভিন্ন সংস্কৃতির, ভিন্ন ভাষার, ভিন্ন জীবনের দুই মানুষ জড়িয়ে পড়ে এক গভীর বন্ধনে।

বিদায় আসতেই হয় একসময়। জনাথন ইংল্যান্ড ফিরে যাওয়ার দিন এসে যায়। বিদায়ের সময় আব্দুল তাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “আবার আসবেন ভাইজান, আমার মেয়েটা আপনার বইগুলো খুব পছন্দ করেছে।”

জনাথন বলে, “আসব, কথা দিচ্ছি। আর তোমার মেয়ের লেখাপড়ার দায়িত্ব এখন আমার।”

রিকশাওয়ালা আব্দুল চোখে জল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে জনাথনের পেছনে তাকিয়ে। জনাথন ঢাকার কোলাহলে হারিয়ে যায়, কিন্তু তার রেখে যাওয়া বন্ধুত্ব, সহানুভূতি, আর ভালোবাসা থেকে যায় চিরদিনের মতো।

পুরান ঢাকার ভিড়ের মধ্যে এখনো রিকশার চাকা ঘোরে, কিন্তু কোথাও এক কোণে আব্দুল মনে মনে ভাবেন—এই শহরের গলিতে শুধু ঘাম না, হৃদয়ের বন্ধুত্বও জেগে ওঠে… এক রিকশাওয়ালা আর এক বিদেশির গল্পে।

শেষ।

19/07/2025

ঐতিহাসিক গ্রাম্য সংস্কৃতি, বয়াতি জারিগান.....

গল্পের নাম: “মা হাতির যাত্রা”আফ্রিকার বিস্তৃত সাভানার পেছনে সূর্য ঢলে পড়ছে। আকাশ রাঙা কমলা, হালকা নীল আর বেগুনি রঙে ছেয...
19/07/2025

গল্পের নাম: “মা হাতির যাত্রা”

আফ্রিকার বিস্তৃত সাভানার পেছনে সূর্য ঢলে পড়ছে। আকাশ রাঙা কমলা, হালকা নীল আর বেগুনি রঙে ছেয়ে গেছে। বিশাল এক বটবৃক্ষের ছায়ায় দাঁড়িয়ে আছে একটি মা হাতি—তার শরীরে ক্লান্তির ছাপ, চোখে প্রশান্তি। তার পাশে হাঁটছে একটি ছোট হাতির শাবক, তার চোখে জিজ্ঞাসা, উৎসাহ আর একরাশ নির্ভরতা।

এই মা হাতির নাম রমলা, আর শাবকের নাম কানা। রমলা ছিল দলের অভিজ্ঞতম হাতি, বহু বর্ষার ধারা ও খরার রোদে পুড়ে অভিজ্ঞ হয়ে ওঠা এক স্নেহময়ী জননী। সে জানে কোন পথ ধরে হাঁটলে জল পাওয়া যায়, কোথায় বনের গভীরে শিকারি মানুষ লুকিয়ে থাকে। তার মনে গেঁথে আছে বহু প্রজন্মের স্মৃতি। কিন্তু এই বছরটা একটু অন্যরকম। দলটি ছড়িয়ে পড়েছে দূর দূরান্তে খাবার আর জলের খোঁজে। খরা দীর্ঘ হয়েছে, পাতা শুকিয়ে গেছে। ছোট কানা ঠিকভাবে হাঁটতেও শিখেনি, অথচ তাদের পাড়ি দিতে হবে অনেকটা পথ—একটা নতুন জায়গার খোঁজে, যেখানে তারা বাঁচতে পারবে।

রমলা জানত, সাভানার একদম পশ্চিমে একটা পুরনো জলাশয় আছে, সেখানে এখনও কিছু জল টিকে আছে বলে খবর আছে বাতাসে ভেসে আসা হাতিদের আওয়াজে। রমলা সিদ্ধান্ত নেয়—সে একাই কানা-কে নিয়ে সেখানে রওনা দেবে। আর দেরি করলে চলবে না।

তারা হাঁটতে শুরু করল। দিনের আলোয় তারা সাভানা পেরিয়ে চলল, রাতে গাছে গাছে বাদুড়ের ডাক, দূরে হায়েনার চিৎকার—সবকিছুর মধ্যেই মা হাতির বিশাল শরীর যেন একটা দেয়াল তৈরি করে রাখে শাবকের জন্য। কখনও কানা ক্লান্ত হয়ে পড়ে, থেমে যায়। রমলা তার শুঁড় দিয়ে কানা-কে টেনে জাগিয়ে তুলে বলে, “শোনো, সামনে জলের ঘ্রাণ পাচ্ছি, আর একটু গেলে পৌঁছে যাব।” ছোট কানা, মায়ের চোখের ওপর ভরসা করে, আবার হাঁটতে শুরু করে।

তারা পেরিয়ে যায় শুষ্ক নদীখাত, লম্বা ঘাসের প্রান্তর, মাঝে মাঝে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি এসে শরীর ভেজায়, আবার ঝড় উঠে আসে। এক রাতে তারা এক বিষধর সাপের মুখোমুখি হয়—রমলা তার শুঁড় দিয়ে তাকে দূরে ছুঁড়ে ফেলে। কখনও তারা দেখে দূর থেকে শিকারিদের গাড়ির আলো। রমলা আর কানা গা ঝাঁকিয়ে আরেকটা পথ ধরে সরে পড়ে। শাবক জানে না কোথায় যাচ্ছে, কিন্তু তার মায়ের ছায়ায় সে যেন অদৃশ্য এক ভরসার চাদরে ঢাকা থাকে।

অবশেষে, এক ভোরবেলা, সূর্যের প্রথম আলো পড়তেই তারা পৌঁছায় সেই পুরনো জলাশয়ে। অল্প অল্প জল বয়ে চলেছে, পাখিরা সেখানে জড়ো হয়েছে, কিছু তৃণভোজী হরিণ জল খাচ্ছে। রমলা জলে নেমে পড়ে, কানা-কে আহ্বান জানায়। কানা প্রথমে দ্বিধায় থাকে, তারপর ছুটে যায় মায়ের পেছনে, জল ছিটিয়ে খেলে।

বছরের প্রথম জলকণা মুখে নিয়ে কানা চিৎকার করে ডাকে—একটি শিশু হাতির কণ্ঠে যেন জীবনের গান শোনা যায়।

এই জায়গাতেই এখন তারা থাকবে, যতদিন না বাকি দল এসে মিলে যায়। সূর্য মাথার ওপর উঠেছে, কিন্তু রমলার চোখে এখন শুধুই প্রশান্তি। সে জানে, সে তার সন্তানের জন্য নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে। আর কানা—সে জানে, তার মায়ের শুঁড়ের ছায়াতেই পৃথিবীটা সবচেয়ে নিরাপদ।

এভাবেই মায়ের ভালোবাসা আর নেতৃত্বে, এক শাবকের নতুন জীবনের শুরু হয়। সাভানার বিস্তীর্ণ এই পথ ধরে, যুগের পর যুগ এই কাহিনি আবার জন্ম নেয়—এক মা হাতি আর তার সন্তানের অদম্য যাত্রা।

শহরের ব্যস্ততম এক সকালে, পাতাঝরা গাছের সারি বেয়ে মানুষ হেঁটে চলেছে নিজের নিজের গন্তব্যের দিকে। একটা ফোয়ারার সামনে, স্যুট...
18/07/2025

শহরের ব্যস্ততম এক সকালে, পাতাঝরা গাছের সারি বেয়ে মানুষ হেঁটে চলেছে নিজের নিজের গন্তব্যের দিকে। একটা ফোয়ারার সামনে, স্যুট-পরা এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখে কৌতূহল, মুখে সংযমের ছাপ—সে যেন জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে হিসেব করে চলে, যেন প্রতিটি মুহূর্তে সে নিজেকে ধরে রাখে।

ঠিক সেই মুহূর্তেই এক অদ্ভুত দৃশ্য তার চোখে পড়ে। উল্টোপাল্টা জামাকাপড় পরা, চুলে ফুল গোঁজা এক পাগলি মহিলার আগমন হয় রাস্তায়। তার পোষাকে হাজারো রঙের খেলা, মুখভঙ্গিতে অবিন্যস্ত উচ্ছ্বাস আর চোখে একরাশ শিশুসুলভ উজ্জ্বলতা। সে হাসতে হাসতে সামনে এসে দাঁড়ায় ভদ্রলোকের, যেন তাকে বহু দিন ধরে চেনে।

"এই যে স্যুট বাবু! এত গম্ভীর হয়ে আছেন কেন?"—বলে পাগলিটা দুই হাত ছড়িয়ে হাসতে থাকে। ভদ্রলোক একটু ভ্যাবাচ্যাকা খায়, কিন্তু হঠাৎ কেন যেন রাগ না করে শুধু তাকিয়ে থাকে। পাগলির মুখে এমন এক সহজ সরল আনন্দ, যা সে বহু বছর ধরে হারিয়ে ফেলেছে। পাগলিটা আবার বলে, "তোমার টাই টা খুবই খারাপ রংয়ের, জানো? আমি হলে এর বদলে একটা রঙ্গিলা ফুল ঝুলিয়ে রাখতাম!"—বলেই হো হো করে হাসে।

ভদ্রলোক এতদিন ধরে মানুষকে, নিয়মকে, জীবনকে যতটা গম্ভীর চোখে দেখেছে, এই পাগলি যেন সেইসব দেয়ালে এক টুকরো রঙ ছুঁড়ে দিয়েছে। সে কথা না বলে দাঁড়িয়ে থাকে, কিন্তু মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে। পাগলি যেন তার মনটা বুঝে ফেলেছে।

"তুমি জানো?"—পাগলি এবার একটু নিচু গলায় বলে, "এই শহরে সবাই কাঁদে। কেউ অফিসে বসে, কেউ বাসে চড়ে, কেউ ঘরে একা একা। আমি হাসি, কারণ কেউ তো না কেউ তো হাসতে হবে, না?"—এই কথাটা শুনে ভদ্রলোকের বুকের ভেতর কেমন একটা অদ্ভুত চাপ অনুভব হয়। অনেকদিন পর যেন কেউ তাকে এমন করে ছুঁয়ে দিল।

পাগলি তারপর তার ব্যাগ থেকে একটা ছোট্ট কাঠের বাঁশি বের করে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বাজাতে শুরু করে। সুরটা অদ্ভুত, যেন বেদনার সঙ্গে আনন্দের মিশেল। চারপাশের মানুষ কৌতূহলে তাকিয়ে থাকে, কেউ কেউ মোবাইলে ভিডিও করে, আবার কেউ দূরে দাঁড়িয়ে হাসে।

কিন্তু ভদ্রলোক, সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে, সেই সুরের মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলে। তার মনে পড়ে যায় শৈশবের সেই দিনগুলো—যেখানে ছিল না টাই, ছিল না সভা, ছিল শুধু মাঠ, ফুল, আর বাঁশির সুর। তার বুক ভরে ওঠে। সে এবার হাতটা বাড়িয়ে পাগলির কাঁধে হাত রাখে। পাগলি তার দিকে তাকিয়ে হাসে, যেন অনেক দিনের চেনা বন্ধু তারা।

"চলো না, আজকে অফিস বাদ দিই। একটা পিকনিক করে ফেলি!"—পাগলি বলে। ভদ্রলোক কিছু না বলে মাথা নাড়ে। তার চোখে জল জমে, কিন্তু মুখে তৃপ্তির হাসি। সে তার হাতঘড়ি খুলে ফেলে পকেটে রাখে, আর পাগলির হাত ধরে হাঁটা শুরু করে।

মানুষজন তাকিয়ে দেখে, শহরের সবচেয়ে গম্ভীর মানুষটা হেঁটে যাচ্ছে এক পাগলির পাশে, আর তাদের পায়ের নিচে পাতা ঝরছে, মাথার ওপর দিয়ে ভেসে যাচ্ছে হাওয়ার হাসি। শহর জানে না এ কার প্রেম, এ কার বন্ধুত্ব, তবে এটুকু বোঝে—এ এক অন্যরকম ভালোবাসা, যা নিয়মের বাইরে, যা পাগলামির মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক বিশুদ্ধ মানবতা।

এভাবেই, এক স্যুট-পরা ভদ্রলোক আর এক ফুল-গোঁজা পাগলি মিলে শুরু করলো এক নতুন যাত্রা—যেখানে হিসেব নেই, আছে শুধু অনুভব।

চাঁদের আলোয় ভেসে থাকা এক পুরনো গ্রামের নাম ছিল চন্দ্রবিলাস। পাহাড় আর ঝর্ণা ঘেরা সেই গ্রামটি দিনে যেন ঘুমিয়ে থাকত আর রাত ...
17/07/2025

চাঁদের আলোয় ভেসে থাকা এক পুরনো গ্রামের নাম ছিল চন্দ্রবিলাস। পাহাড় আর ঝর্ণা ঘেরা সেই গ্রামটি দিনে যেন ঘুমিয়ে থাকত আর রাত জেগে থাকত ছায়ার চোখে। গ্রামের প্রান্তে এক বিশাল পুরাতন কাঠের দালান, যার জানালা সব বন্ধ, দরজায় তালা, অথচ ভেতর থেকে মাঝেমধ্যে আলো দেখা যেত। গ্রামের লোকজন বলে, ওটা ভূতের বাসা—আত্মারা সেখানে ঘুরে বেড়ায়। তবে কেউই চোখে দেখেনি, শুধু গল্প শোনে কানের পাশে কেউ যেন হেসে ফিসফিস করে বলে—“আমাদের কথা কেউ মনে রাখে না…”

সেই বাড়িতে ছিল দুই ভূত—একজন বড়, একজন ছোট। বড় ভূতের নাম ছিল অ্যালবিন, আর ছোট ভূতের নাম ছিল লুমা। তারা কেউ মানুষকে ভয় দেখাত না, কেউ তাদের ভয় পেলে দুঃখ পেত। কারণ তারা কেউ মৃত্যুর পর দানব হয়নি, বরং স্মৃতির এক কোণে আটকে পড়া দুই প্রান, যারা ভুলে যাওয়া গল্পের ছায়া হয়ে বেঁচে আছে। অ্যালবিন ছিল এককালের বিখ্যাত ঘড়ির কারিগর, তার তৈরি ঘড়ির টিকটিক শব্দে সময় গাইত গান। আর লুমা ছিল তার মেয়ে, যাকে ভালোবাসতেন তিনি সমস্ত প্রাণ দিয়ে। এক রাতে পাহাড় থেকে নামা ঝড় তাদের সব কিছু শেষ করে দেয়। লুমা এক অসুস্থ রাতেই চলে যায় নক্ষত্রদের দেশে, আর অ্যালবিন নিজের হাতে বানানো ঘড়ির পেন্ডুলাম বন্ধ করে, নিজেকে নিঃশেষ করে দেয়।

কিন্তু মৃত্যু তাদের আলাদা করতে পারেনি। তারা ফিরে এসেছিল ছায়া হয়ে। এক পুরনো কাঠের দালানের ঘড়ি এখন আর সময় বলে না, শুধু মাঝরাতে বাজে একটা নরম সুর—যেন কেউ গান করছে অদৃশ্য কারো জন্য।

একদিন সেই গ্রামে আসে দুই ভাই-বোন, নাম রিফাত ও রাইনা। শহরের কোলাহল থেকে পালিয়ে তারা এসেছিল নানুর পুরনো বাড়িতে। রাইনার কৌতূহল ছিল প্রচণ্ড—সে বিশ্বাস করত ভূত আছে, আর তারা সবাইকে ভয় দেখায় না। রিফাত এসব বিশ্বাস করত না, কিন্তু বোনকে ভালোবাসত। এক সন্ধ্যায়, আলো নিভে আসা আকাশের নিচে রাইনা এসে পৌঁছায় সেই পুরনো বাড়ির কাছে। এক ধাক্কায় খোলা দরজা আর হালকা ঝাপসা আলো যেন ডাক দেয় তাকে। রাইনা ঢুকে পড়ে, পেছনে পড়ে থাকে রিফাতের ডাকে ভরা ভয়।

ভবনের ভেতরে ধুলো আর জালের ছায়ায় এক অদ্ভুত আলো ভেসে বেড়ায়। রাইনা ভাবে, সে বোধহয় স্বপ্ন দেখছে। তারপর এক হালকা হাসির শব্দ… সে ঘুরে দাঁড়াতেই চোখে পড়ে—দুই ভূত! সাদা চাদরের নিচে জ্বলজ্বলে চোখ আর মুখভরা হাসি। তারা ভাসছে, বাতাসের মতো নিঃশব্দে।

রাইনা চমকে ওঠে না, কারণ সে ভয় পায় না। সে বলে, “তোমরা কি ভূত?”

ভূত দুটি একসাথে হেসে ওঠে, তারপর বলে, “না রে, আমরা শুধু হারিয়ে যাওয়া গল্প।”

তারা রাইনাকে সব বলে—তাদের অতীত, তাদের গান, সেই ঝড়ের রাত, সেই বন্ধ হয়ে যাওয়া ঘড়ির শব্দ। রাইনা বসে শোনে, আর তার চোখে জল জমে।

তারা বলে, “তুমি কি পারবে আমাদের কথা সবাইকে বলতে? যাতে ভুলে না যায়, যাতে বোঝে ভূত মানেই নয় ভয়ের গল্প। কেউ কেউ কেবল ভালোবাসার ছায়া হয়ে পড়ে থাকে…”

রাইনা রাজি হয়। সে ফিরে আসে ভাইকে নিয়ে, আবার যায়, আবার শোনে, আবার লেখে। ধীরে ধীরে তারা গল্প ছড়িয়ে দেয়, মানুষকে শোনায়। গ্রামের লোকেরা অবাক হয়—তারা প্রথমে ভয় পায়, তারপর বিশ্বাস করতে শেখে।

এক রাতে, পুরো গ্রাম এসে দাঁড়ায় সেই পুরনো ভবনের সামনে। অ্যালবিনের তৈরি ঘড়ির পেন্ডুলাম হঠাৎ করে নিজে থেকে চলতে শুরু করে। সময় আবার গাইতে থাকে। আলো ছড়িয়ে পড়ে জানালায়। আর সেই আলোয়, সবাই এক ঝলক দেখে—দুই ভূত, এক বড়, এক ছোট, একসাথে ঘুরছে আকাশে, হাসছে।

তারপর থেকে কেউ আর ওই বাড়িকে ভূতের বাড়ি বলে না। তারা বলে, ওটা আলোর ছায়া, যেখানে ভূতরা গল্প বলে, ভয় নয়।

---

শেষ।

এগুলা কি জাতীয় মুরগী কে বলতে পারবেন?  পুরস্কার দেওয়া হবে বলতে পারলে  MK Mahi Vlog Alamin's story  মোঃ মামুনুর রহমান Ahan...
17/07/2025

এগুলা কি জাতীয় মুরগী কে বলতে পারবেন? পুরস্কার দেওয়া হবে বলতে পারলে MK Mahi Vlog Alamin's story মোঃ মামুনুর রহমান Ahanaf Labid ゚

এই কুকুর গুলা কোন দেশের কুকুর কে কে বলতে পারবেন?  MK Mahi Vlog Alamin's story  মোঃ মামুনুর রহমান Ahanaf Labid  ゚
17/07/2025

এই কুকুর গুলা কোন দেশের কুকুর কে কে বলতে পারবেন? MK Mahi Vlog Alamin's story মোঃ মামুনুর রহমান Ahanaf Labid ゚

গল্পের নাম: "অভিশপ্ত বৃক্ষের কান্না"চাঁদের আলোয় মোড়া এক নির্জন বন। সময় ছিল অমাবস্যার আগের রাত। কুয়াশা ঘিরে রেখেছে পুরো ব...
17/07/2025

গল্পের নাম: "অভিশপ্ত বৃক্ষের কান্না"

চাঁদের আলোয় মোড়া এক নির্জন বন। সময় ছিল অমাবস্যার আগের রাত। কুয়াশা ঘিরে রেখেছে পুরো বন, আর তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল, ভয়ানক গাছ—যার শিকড় মাটি ভেদ করে বেরিয়ে এসেছে, আর ডালের মাথায় ঝুলছে সবুজ জ্বলজ্বলে আগুনের মতো আলো। গাছটির কাণ্ডে এমন এক মুখ খোদাই হয়ে আছে, যা যেন দুঃস্বপ্নের মতো: চোখে অন্ধকার শূন্যতা, আর মুখ থেকে যেন চিৎকার বেরিয়ে আসছে।

এই গাছটির নাম "অভিশপ্ত বৃক্ষ", আর বনটির নাম কালভয়।

---

গল্প শুরু

অনেক বছর আগে, এই বন ছিল এক সুন্দর রাজ্যের অংশ। রাজ্যের নাম ছিল আরনভীলা, যার রাজা ছিলেন এক নিষ্ঠুর ও লোভী ব্যক্তি—রাজা দুরন্ত রায়। তিনি একবার জানতে পারেন যে কালভয় বনের কেন্দ্রে এক গোপন শক্তির উৎস রয়েছে—এক চিরজীবী আত্মা, যাকে বলা হতো "অমর সত্তা"।

রাজা দুরন্ত তার সৈন্যদের পাঠান বনের গভীরে। তারা খুঁজতে খুঁজতে পৌঁছায় এক বিশাল বটগাছের কাছে। গাছটি তখনও জীবন্ত ছিল, ডালে পাখি বাসা বানাতো, নিচে হরিণ ঘাস খেত। কিন্তু গাছের ভেতরে ছিল সেই আত্মা—এক দয়ালু সাধুর আত্মা, যিনি শত বছর আগে এখানে প্রাণ ত্যাগ করেন এবং বনের রক্ষক হয়ে থাকেন।

রাজা দুরন্ত সেই গাছকে কেটে ফেলতে আদেশ দেন, কারণ গাছ কাটলেই নাকি শক্তি বেরিয়ে আসবে। কিন্তু যখন কুড়াল চালানো হয়, গাছ থেকে রক্ত বের হতে শুরু করে! আর ঠিক তখনই, বাতাস ঘূর্ণি আকারে উঠতে থাকে, মেঘ জমে যায়, আর আকাশে বাজ পড়ে।

গাছের আত্মা তখন ভয়ানক অভিশাপ দেয়:

> “যে আমার শরীর কেটে রক্ত ঝরাল, তার বংশে আর কেউ সূর্য দেখবে না। আমার কান্না গাছের গায়ে থাকবে চিরকাল। আমি হব এক ভয়ঙ্কর রূপে, যেখানে রাত হলেই আমার আত্মা জেগে উঠবে, আর প্রতিশোধ নেবে!”

গাছটি মুহূর্তেই রূপান্তরিত হয়—চোখে ভয়, মুখে মৃত্যু, আর চারপাশে কুয়াশা। তখন থেকে, রাত হলেই সেই গাছ থেকে শোনা যায় কান্নার শব্দ, ফিসফিসানি, আর ভয়ার্ত চিৎকার।

---

বর্তমান সময়

সাতশো বছর পরে।

গ্রামের নাম নবছায়া, যেখানে কেউ কখনও কালভয় বনের ধারে যায় না। গ্রামের এক কিশোর—রিদয়—ছিল খুব কৌতূহলী। সে শুনেছিল গাছের গল্প, আর তার মনে একটাই প্রশ্ন—“গাছ কি সত্যিই কথা বলে?”

এক রাতে, সে একাই যায় সেই বনের গভীরে। চাঁদ ছিল পূর্ণ, কুয়াশা জমে ছিল ঘাসে। সে পৌঁছায় সেই গাছের সামনে, আর গাছের চোখ যেন তাকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। রিদয় হঠাৎ দেখে, গাছের শিকড় যেন নড়ছে... যেন দম নিচ্ছে!

তখনই এক কণ্ঠ ভেসে আসে—

> “আমার কান্না শুনেছো... কিন্তু কেউ কখনো শুনেনি আমার সত্যি কথা...”

গাছ বলতে শুরু করে তার অভিশপ্ত অতীত, রাজা দুরন্তের নির্মমতা, আর তার প্রতিশোধের যন্ত্রণা। রিদয়ের চোখে পানি চলে আসে। সে বলে, “আমি তোমার কষ্ট শেষ করতে চাই, গাছদাদা।”

গাছ তখন বলে, “তুমি যদি আমার কান্নার শেষ করতে চাও, তবে রাজা দুরন্তের রক্তের শেষ উত্তরাধিকারীকে এনে দাও এখানে।”

রিদয় ভাবে, এটা অসম্ভব। কিন্তু সে ইতিহাস ঘেঁটে ঘেঁটে জানতে পারে, গ্রামের জমিদার পরিবারের বংশই ছিল রাজা দুরন্তের উত্তরসূরি। সে জমিদারের এক নাতিকে, আরিব নামের এক ছেলেকে নিয়ে আসে এক রাত।

গাছ তখন বলে, “এই ছেলের রক্তেই আমার অভিশাপ কাটবে, কিন্তু তার জীবন যাবে... সে কি রাজি?”

আরিব অবাক হয়ে বলে, “আমার দাদুর দাদার পাপের জন্য আমি দায়ী না... কিন্তু এই গাছ যদি সত্যিই কষ্ট পাচ্ছে, আমি রক্ষা করব।”

আরিব সামনে এগিয়ে যায়, গাছের শিকড় তাকে জড়িয়ে ধরে, সবুজ আলোতে ঢেকে ফেলে। কণ্ঠস্বর ভেসে আসে, “অভিশাপ শেষ... আমার আত্মা মুক্ত...”

গাছের চোখ বন্ধ হয়ে যায়, মুখ মুছে যায়, কাণ্ডে শান্ত একটা রেখা দেখা যায়। তারপর কুয়াশা হালকা হয়ে আসে, আকাশ পরিষ্কার হয়, পাখিরা ডাকে।

আরিব কোথায় যেন হারিয়ে যায়... সে যেন গাছের আত্মার সাথে মিলিয়ে যায়।

---

শেষ দৃশ্য

বছরখানেক পরে, কালভয় বন নতুন করে সবুজে ভরে যায়। সেই ভয়ঙ্কর গাছ এখন হয়ে গেছে এক শান্ত, ছায়াময় গাছ—যেখানে পাখি বাসা বাঁধে, শিশুরা খেলে।

কিন্তু রাত হলে, গাছের ডালে মাঝেমধ্যে জ্বলতে দেখা যায় সবুজ এক একটি আলো...

লোকেরা বলে—“ওগুলো গাছের কান্না নয়, ওগুলো আত্মার শান্তি।”

---

শেষ।

রুক্ষ লাল মাটির উপরে ঝলসে উঠছে দুপুরের রোদ। গাছপালাহীন, পাথর ছাওয়া সেই মরুভূমির বুক চিরে এগিয়ে যাচ্ছে এক তরুণ বেজি — নাম...
17/07/2025

রুক্ষ লাল মাটির উপরে ঝলসে উঠছে দুপুরের রোদ। গাছপালাহীন, পাথর ছাওয়া সেই মরুভূমির বুক চিরে এগিয়ে যাচ্ছে এক তরুণ বেজি — নাম তার আরু। চোখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, শরীরটায় অদ্ভুত নির্ভরতা। আরুর গন্ধে একটাই লক্ষ্য: প্রতিশোধ।

আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে, এই একই জায়গায়, আরুর বাবা রামু—এক সাহসী বেজি—মারা গিয়েছিল বিষধর এক কোবরার ছোবলে। সেই কোবরার নাম ছিল জহর। মরুভূমিতে তার নাম উচ্চারণ করলেও সবাই কেঁপে উঠত।

জহর ছিল আগুনের মতো রঙের, যেন রোদে পোড়া তামার দাহ। সে শুধু শিকার করত না—সে খেলত ভয় নিয়ে। সে আনন্দ পেত শক্তিশালী শত্রুকে মেরে, তাদের পরিবারকে ধ্বংস করে দিতে।

আরু তখন ছোট ছিল, গর্তের মধ্যে লুকিয়ে থেকে বাবার মৃত্যু দেখেছিল নিজের চোখে। সেদিনই সে শপথ করেছিল—জহরের শেষ সময় সে নিজে আনবে।

সেই প্রতিজ্ঞার আগুন নিয়ে, আজ সে এসেছে মুখোমুখি হতে।

একটা শুকনো ঝোপের পাশে হঠাৎই সে থেমে গেল। বাতাস ভারী হয়ে উঠল। সামনে ঠিক তেইশ কদম দূরে, বালুর ওপর কুণ্ডলী পাকিয়ে বসে আছে সেই লাল-চামড়ার বিষাক্ত ছায়া—জহর।

জহরের চোখ দুটো তীক্ষ্ণ, তার জিভ বের হয়ে বাতাসে ফোঁস করে ওঠে। সে আরুকে দেখেছে।

"তুই এসেছিস শেষবারের মতো," ফুঁসে ওঠে জহর। "তোর বাপকেও তো আমি এমন করেই শেষ করেছিলাম।"

আরু ধীরে ধীরে এগোয়। “তুই আমাকে ভয় দেখাতে পারবি না, জহর। আমি তোর জন্যই জন্মেছি।”

দুজনের মাঝে এক চুল দূরত্বও নেই এখন। চারপাশ নিঃশব্দ। যেন মরুভূমিও নিঃশ্বাস আটকে রেখেছে এই যুদ্ধ দেখবে বলে।

হঠাৎ শুরু হয় লড়াই।

জহর ছোবল মারে বিদ্যুতের গতিতে, কিন্তু আরু পাথরের ফাঁক দিয়ে এক ঝটকায় পাশ কাটিয়ে যায়। সে ঘুরে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে জহরের ফণায়। জহর পেঁচিয়ে ধরে তাকে, শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরে, দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কিন্তু আরু হাল ছাড়ে না। তার চোখে আজ আগুন।

এক ঝটকায় সে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়, মাটিতে পড়ে গিয়ে ধুলো ওড়ায়। জহরের চোখ ধাঁধিয়ে যায়। আরু সেই মুহূর্তেই লাফিয়ে ওঠে এবং তার ধারালো দাঁত বসিয়ে দেয় ঠিক ফণার গোড়ায় — যেখান থেকে বিষ আসে।

জহরের শরীর ঢলে পড়ে। তার ফণা শিথিল হয়। জিভটা বেরিয়ে পড়ে মৃত অবস্থায়।

আরু ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়, চোখে জল, কিন্তু মুখে শান্তির রেখা।

পেছনে লুকিয়ে থাকা মরুভূমির পশুপাখিরা একে একে বেরিয়ে আসে। আজ তারা বাঁচল। এক নতুন প্রভাতের সূচনা হল।

আরু আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে, “বাবা, আমি পেরেছি।”

Address

Fulbaria

Telephone

+8801627323660

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when জেপি শাহজাহান ভাই posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to জেপি শাহজাহান ভাই:

Share