Ghost Story - ভুতের গল্প

Ghost Story - ভুতের গল্প আমি সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের কিছু সত্য ভৌতিক ঘটনা শেয়ার করতে।

বৃষ্টিতে এক কাপ চা❤️
05/06/2025

বৃষ্টিতে এক কাপ চা❤️

02/04/2025

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাত ১২ টায় ভূত দেখলাম❗🫣 Follow for next part👉 ゚viralシ

27/11/2023

#রক্তজবা ১৪তম/শেষ পর্ব
--তাহলে কী করবেন? আর আমার পিছুই বা নিয়েছেন কেন? আপনাকে কে পাঠিয়েছে? নাকি আপনি আমার কাছে এই মুহুর্তে কোনো কল্পনার চরিত্র?
-আমি সত্য। আমার কোনো কাল্পনিক রুপ নেই। আমি এখানে এসেছি তোমাকে সঠিক পথ দেখাতে। ধরো, এখন তুমি বাড়ি ফিরে গেলে। ডাইনিং রুমে বসে আছে তোমার ভাই এবং সম্মানীয় পিতা ইউনূস সাহেব। সেখানে লাবন্যের সাথে সাথে যেসকল মেয়েকে নিয়ে তুমি ফ্যান্টাসির জগত সৃষ্টি করতে,তারা সবাই এসে অভিযোগ জানাচ্ছে। এমন মুহুর্তে কী করবে তুমি? আর নিজের দোষ ঢাকতে কতজনকেই বা খু*ন করবে মিহির?
-আমি কখনোই তাদের মুখোমুখি হবো না। কখনো না। আমি আমার পরিবারের কারো সামনেই যেতে চাই না। এখান থেকে দূরে পালিয়ে যাবো আমি। তুমি আমার সামনে থেকে চলে যাও প্লিজ। এক মিনিট, তুমি আমার সম্পর্কে এতকিছু কীভাবে জানলে? পুলিশের কেউ? তার মানে আমাকে পুলিশে ধরবে? তারপর আমাকে থানায় ধরে নিয়ে গিয়ে বড় করে ছবি তুলে পত্রিকায় ছাপাবে, তাই না! উঁহু, আমি এমন দৃশ্য দেখতে চাই না।
মিহিরের এমন উতলা অবস্থা দেখে ফেরারি মুচকি হাসলো। সে জানে, এই মুহুর্তে তাকে ঠিক কী উত্তর দিতে হবে। তবুও চুপ করে রইলো। মিহির আবার জিজ্ঞাসা করে,
-আমি আপনার কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ করছি। প্লিজ, আমাকে বলুন।
-অনুরোধ? তুমি তো আমাকে ভয়ও দেখাতে পারতে। আমি একা মেয়ে, এই অন্ধকারে তোমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছি। যে অপরাধের জন্য রুমকির মৃত্যু হলো, যে অপরাধের জন্য তুমি এই রাতে এভাবে পালাতে যাচ্ছো, এখন নিজেই সেই অপরাধ করতে ভয় পাচ্ছো?
মিহিরের শিরদাঁড়া বেয়ে যেন অপমানের ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। সে মিনমিন করে জবাব দেয়,
-আপনি আমার সম্পর্কে সব জেনেই এসেছেন। তাই না? শুধু আপনিই নন, হয়তো আমার চারপাশের প্রতিটি মানুষই জেনে গেছে এখন। হতে পারে-আপনি আমার এনকাউন্টার করতে এসেছেন। যাই করুন, আমি নিজের বিরুদ্ধে আর কোনো প্রমাণ অবশিষ্ট রেখে যাবো না। আপনি জানেন, আমি আজ অব্দি কোনো মেয়েকে ধ*র্ষণ করিনি?
-জানি।
-সত্যিই জানেন? কীভাবে?
-এখন বলার প্রয়োজন মনে করছি না।
- হ্যাঁ, জানতেই পারেন। সেই ক্ষমতা যে আপনার আছে,এতক্ষণে আমি বুঝে গেছি। আমি এখনও বলছি। কোনো মেয়েকে আমি ধ*র্ষণ করিনি। আমার শুধু মেয়েদেরকে নিয়ে একটা আলাদা ফিলিংস, আলাদা রোমাঞ্চ জাগে। বাইরের মানুষের সাথে মেশা বন্ধ করতে করতে আমি ঘরের মধ্যেই নিজেকে বন্দি করে নিয়েছিলাম। তারপর ধীরে ধীরে ইন্টারনেটের নানান রেস্ট্রিকটেড সাইটের ভিডিও দেখা শুরু। একসময় তীব্র নেশা ধরে গেল। বাইরের জগতের মেয়েদেরকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে ভীষণ আনন্দ লাগত। ওদের শরীরের গন্ধ, পারফিউমের নেশাময় ঘ্রাণ আমার কাছে যেন পৃথিবীর সবচেয়ে মোহময় মনে হয়। আমি ওদের কাছে যাই, খুব গোপনে গন্ধ নিই, ওদের ব্যবহারের জিনিস চুরি করে এনে রাতে নিজের শরীরে জড়িয়ে ঘুমাই। আহ, আমার কী যে শান্তির ঘুম হত। আমি মনে মনে কল্পনা করতাম- বিশেষ জৈবিক মুহুর্তে ওদের চোখেমুখের তৃপ্তিময় চেহারা কত সুন্দর! কিন্তু আমি কখনো এগিয়ে গিয়ে কাউকে কাছে ডাকিনি। আমার ভালো লাগা তো ওইটুকুই। কিন্তু মাঝখানে রুমকি কেন যে বুঝে গেল! আমাকে না বুঝলে এতদিন ঠিকই বেঁচে থাকতো। আবার এই লাবন্য মেয়েটাও তেমন!
"তুই আমার ভাইয়ের বউ, তেমনই থাক। তোকে কে বলেছে, আমাকে নিয়ে এতখানি ঘাটাঘাটি করতে?" নাহ, আমারও অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে। লাবন্যকে না বুঝেই ওকে ফলো করতে গেছি। আমার বুঝা উচিত ছিল-হুট করে যাকে তাকে নিয়ে এত বেশি পাগল হওয়া উচিত নয়। এখন তার খেসারত আমাকেই দিতে হচ্ছে! এখন আমি কী করবো? আমার পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই, নেই, কোনো উপায় নেই।
ফেরারি একদৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে থেকে বলে ওঠে,
-কে বলেছে উপায় নেই? তুমি যদি এখন ম*রে যাও, তাহলে কেউ তোমাকে কিচ্ছু বলতে পারবে না। পালিয়ে গিয়ে লাভ কী বলো? সেই কেউ না কেউ ঠিক ধরে ফেলবে। থানা, পুলিশ, বাবা-ভাইয়ের তিরস্কার। কিন্তু ম*রে গেলে কেউ তোমাকে কিছুই বলবে না। বরং কান্না করবে। ভাবো, ভাবো মিহির। ভয়ংকর সময়ের মুখোমুখি হবার আগেই ভাবো। এই মুহুর্তে তোমার বেঁচে থাকা উচিত নয়৷
ফেরারি সেভাবেই ওর দিকে চেয়ে থেকে নানানভাবে তাকে বুঝাতে থাকে-মৃত্যু ভিন্ন তার আর কোনো অপশনই থাকা উচিত নয়। তার প্রতিটি কথা মিহিরের কানে এত বেশি বাজতে শুরু করে যে, মিহির তার দুই হাত দিয়ে নিজের কপাল চেপে ধরে। এমন মুহুর্তে ফেরারি তাকে সেভাবেই ফেলে রেখে পাশ কাটিয়ে সরে যায়। কিছুটা দূরে যেতেই পানিতে একটি মানুষের লাফিয়ে পড়ার শব্দ শুনতে পেল সে। শব্দটা কানে আসতেই একবার পিছন ফিরে তাকিয়ে সে মুচকি হাসে।
**
দুইদিন পর।
বাসার গেটের সামনে মিহিরের লাশ রাখা হয়েছে। বাড়িশুদ্ধ মানুষের কান্নার রোল পড়ে গেছে। কিন্তু লাবন্যের কান্না আসছে না। মানুষকে দেখাতে জোরপূর্বক দুই এক ফোঁটা চোখের পানি বের করার চেষ্টা করছে কেবল। বাড়ির মধ্যে লাশ থাকলে ভেজা চোখে তাকাতে হয়। সামাজিকতা রক্ষার এই নিয়ম। তা সে কান্না আসুক, আর না আসুক। রাফায়েত তার ভাইয়ের পাশেই নির্বাক হয়ে বসে আছে। লাবন্যের মনে শুধু একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে,
"মিহিরের মত একটা ছেলে এত সহজে সুইসাইড করবে? নাকি রাফায়েত তার প্রাক্তণ স্ত্রীর খুনের প্রতিশোধ নিতে ওকে পানিতে ফেলে দিয়েছে?"
সে বারবার আড়চোখে রাফায়েতের দিকে তাকায়। বাসায় পুলিশ ঘুরঘুর করছে। স্থানীয় থানার এসআই,কয়েকজন দারোগা, রাশেদ জামান নামে কীসের যেন এক অফিসার, থানা থেকে বেশ কয়েকজন মেয়ে, আত্মীয়-স্বজন সব মিলিয়ে পা ফেলার জায়গা নেই। লাবন্যের বেশ ভয় ভয় করতে লাগলো। কে মে*রেছে ওকে? আর না মারলে কেনোই বা সুই*সাইড করেছে? কিছুক্ষণ পরেই ময়নাতদন্তের জন্য লাশ পাঠানো হবে। রিপোর্টে কীসব ভয়ংকর তথ্য উঠে আসবে, কে জানে!
লাশ ময়নাতদন্তে পাঠানোর পর সে রাফায়েতের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। রাফায়েত মিটমিট করে ফিরে তাকায়।
-লাবন্য, আমার ভাইয়ের জন্যই রুমকি মা*রা গেছে। গতকাল ভোর অব্দিও আমি বিশ্বাস করিনি। কিন্তু ওর ঘরে এসব খুঁজে পাওয়ার পর…
-মিহিরকে কে মে*রেছে? আপনি?
রাফায়েত অবুঝ বাচ্চার মত ফ্যালফ্যাল করে ওর দিকে ফিরে তাকিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে,
-আমি কেন মা*রতে যাবো? আমি কী মানুষ খুন করি? পুলিশ বলছে-সুইসাইড কেস।
-আপনার প্রিয়তমা স্ত্রীর প্রতি সে যে মস্তিষ্ক বিকৃত আচরণ করেছে, সেটা ভেবে তো যেকোনো পুরুষেরই মাথা গরম হয়ে যাবে। এমনকি, আমার সাথে যা করেছে, সেসব মনে হলে আমার নিজেরই তো ওকে খু*ন করতে ইচ্ছে করছিল।
-তুমি নিজে কাউকে ভাড়া করোনি তো?
লাবন্য এমন করুণ দৃষ্টিতে তাকালো, রাফায়েত আর দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করার সাহস পায় না। কিন্তু ভিতরে ভিতরে দুজনই দুজনকে সন্দেহ করে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর লাবন্য নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াতেই হঠাৎ ফেরারি এসে উপস্থিত হলো। লাবন্য কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
-সরি, আপনাকে তো চিনলাম না। কে আপনি?
ফেরারি তার প্রশ্নের উত্তর দিলো না। শুধু লাবন্যের হাতে দুটি চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে বললো,
-আপনার দেবরের মৃত্যুতে আপনি যে স্বস্তির শ্বাস ফেলছেন, তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। এত সহজে মানুষকে খুশি দেখাতে নেই। সাবধান। আর হ্যাঁ, এই দুনিয়ায় সব মানুষের পরিচয় জানা উচিত নয়। চিরকুট দুটি পড়বেন। আশা করি আপনার মনের সমস্ত প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন। আর যদি না পান, তবে জানার প্রয়োজন নেই।
ফেরারি তাকে চিরকুট দুটো দিয়েই দ্রুত সরে যায়। যাবার আগে রাশেদ জামানের দিকে চেয়ে একবার মুচকি হাসে। ব্যাপারটা কী হলো! লাবন্য চিরকুট দুটি নিয়ে সোজা নিজের ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। মিষ্টি ঘুমোচ্ছে। কিন্তু ঘটনাটা এমনভাবে সাজালো, যেন বাইরের পরিবেশের জন্য মিষ্টির ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে।
সে প্রথম চিরকুটটি খুলে দেখে। সেখানে লেখা আছে,
"ফেরারি,
রাশেদ নামের এক পুলিশ অফিসার আমাকে তার বন্ধুর বোন (লাবন্যের) সাথে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা শেয়ার করেছে। সাসপেন্স-লাবন্যের দেবর মিহির। সব শুনে আমারও ধারণা, ছেলেটি একজন যৌণ বিকৃত সাইকো। শুনেছি, পূর্বে তার ভাইয়ের প্রাক্তণ স্ত্রী মা*রা গেছে। আর এই ঘটনায় লাবন্য মিহিরকে সন্দেহ করছে। ছেলেটা ভয়ংকর সাইকো। যেকোনো সময় বিপদ ঘটাতে পারে।
আমি চাই, এই কেসটা তুমি গোপনে তদন্ত করতে আমাকে সহযোগিতা করবে। মিহিরের উপর যত দ্রুত সম্ভব নজরদারির ব্যবস্থা করো।
ইতি-
রাশেদ জামান, ইনটেলিজেন্স এজেন্সি"
লাবন্য চিরকুটটা পড়ে মনে করার চেষ্টা করে- তার রাশেদ ভাই আরেক এজেন্সীর রাশেদ জামান স্যারের কথা বলেছিল। তার মানে এই রাশেদ জামানই তিনি। আর উনিই একটি মেয়েকে চিঠিটি লিখেছে। এতটুকু সে ক্লিয়ার। এবার সে আরেকটি চিরকুট খোলে। সেটি শুধুমাত্র লাবন্যকে উদ্দেশ্য করেই লেখা হয়েছে।
"লাবন্য,
আপনি নিশ্চিত দুশ্চিন্তা করবেন, আমি কে? আমিই ফেরারি। আর আপনার দেবরকে আমিই মে*রেছি। ঠিক মারিনি। আসলে ওকে সুইসাইড করতে উদ্বুদ্ধ করেছি। বিষয়টা খুলে বলি।
আপনি এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন, মিহিরের কথা আমার অব্দি কীভাবে পৌঁছেছে। রাশেদ জামান আমাকে মিহিরের ব্যাপারটা জানানোর পর আমি তখন থেকেই খোঁজ নেওয়া শুরু করেছি। মিহির সহ আপনার পরিবারের সবার মোবাইল ট্র‍্যাক করেছি। মিহির যখন ছাদে উঠেছে, বাসা থেকে পালিয়েছে-পুরোটা সময় আমি ওকে অনুসরণ করেছি। ও পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল। কিন্তু ওর মত অমন সাইকোকে আমি কীভাবে বাঁচতে দিতাম? তাই সরাসরি ওর সামনে গিয়ে সুই*সাইড করার জন্য ইন্ধন দিয়েছি। আর সেটা কাজেও লেগেছে। মিহির ভয়ে সুই*সাইড করেছে৷ ভাবছেন, এত সহজে কীভাবে রাজি হলো? হ্যাঁ, সহজেই হলো। ওই যে, আমার কাছে ওর গোপন বিষয় ফাঁস হবার তথ্য ছিল। আর তাছাড়া, সাইকোদের একটা ভীষণ কমন আতঙ্ক আছে। ওরা সোস্যালি নিজেদের সম্মান নিজেরা কখনোই ডুবতে দিতে পারে না। আজ থেকে আপনি নিরাপদ।
আর হ্যাঁ, একটা কথা মনে রাখবেন। এ পৃথিবীতে এমন যৌণ বিকৃত, ধর্ষ*ক-এদের কারোর জায়গা নেই। সুযোগ পেলেই উপড়ে দিতে শিখুন।
পুনশ্চ:- মিহিরের তদন্তের রিপোর্ট আমি ব্যবস্থা করে নেবো। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।
ইতি-
বারবার নাম বলার প্রয়োজন আছে? You know, what you have to do. "
চিরকুট দুটো পড়ে এতক্ষণে লাবন্য নিশ্চিত হলো, মিহিরের সাথে কী ঘটেছে। রাশেদ ভাই ইনটেলিজেন্স এজেন্সির অফিসার রাশেদ জামানকে সেদিন সমস্ত ঘটনা খুলে বলেছেন। আর এই রাশেদ জামানই ফেরারিকে নজরদারি করতে বলেছিলেন। কিন্তু ফেরারি কী আর তার মত এক পা এগিয়ে দুই পা থেমে যাওয়া মানুষ? মিহিরের মত সাইকোর জন্য সে হয়তো এই দুনিয়ার সবচেয়ে বড় এন্টি ডোজ! রক্তের কেউ না হয়েও এই মেয়েটি তার বুক থেকে মিহির নামক আতঙ্ককে এক মুহুর্তেই কাটিয়ে দিয়েছে। ফেরারিকে ওর ভীষণ জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ ইচ্ছে করছে।
সে চিরকুট দুটি ছিঁড়ে কুটিকুটি করে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে।
কোথায় গেল সেই মেয়েটি!
তার মত আশির্বাদ মানুষের জীবনে বেশিক্ষণ থাকাটা যে খুব জরুরি, খুব।
(সমাপ্ত)
(প্রিয় পাঠক, ফেরারি কীভাবে মিহিরের খোঁজ জেনেছে,তা চিরকুটেই উল্লেখ আছে। স্বামী-স্ত্রী কাউকেই অপরাধী বানিয়ে গল্পটা নষ্ট করতে চাইনি। আর হয়তো ফেরারিকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন আপনাদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে-ফেরারি আমার সৃষ্টি করা এমন এক চরিত্র,যে মিহিরের মত এমন সাইকো,ধ*র্ষকদের কৌশলে শাস্তি দেয়। ফেরারি সম্পর্কে আরও জানতে আমার লেখা #আলাপন গল্পটি পড়তে পারেন। এছাড়াও এই চরিত্রে আমার পাঠকপ্রিয় উপন্যাস "ফেরারি" তো আছেই। এবং, এই বইমেলায় ফেরারি চরিত্রের দ্বিতীয় থ্রিলার বই "কেউ না জানুক" আসবে। ফেরারি এমন এক চরিত্র, যাকে আমি হাজারবার আপনাদের কাছে জানাতে চাই।)
#রক্তজবা পর্ব-১৪/শেষ
লেখা- Sharifa Suhasini

27/11/2023

#রক্তজবা পর্ব-১৩
বারান্দা থেকে ঘরে একবার উঁকি দিয়ে সে লাবন্যকে দেখে নিলো। লাবন্য ঘুমোচ্ছে। সে পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে মিহিরের নাম্বারে কল দেয়। ওপাশে রিং হচ্ছে, কিন্তু কেউই কল ধরলো না। রাফায়েত বাধ্য হয়ে তার বাবার নাম্বারেই কল করে। ইউনূস সাহেব বেশ কিছুক্ষণ পর রিসিভ করলেন। ঘুম জড়ানো কন্ঠে মিনমিন করে জিজ্ঞাসা করলেন,
-হ্যালো, রাফায়েত? এত রাতে কল দিলি যে? সব ঠিক আছে?
-আছে বাবা,আছে। তুমি মনে হয় ঘুমোচ্ছিলে। একটা জরুরি দরকারে কল দিলাম। মিহিরের নাম্বারে কল দিচ্ছি। কিন্তু ও রিসিভ করছে না৷ তুমি একটু ডেকে দেবে? খুব ইমার্জেন্সি।
ইউনূস সাহেব ঘুমে ঢুলুঢুলু অবস্থায় মিহিরের ঘরে ঢুকলেন। কিন্তু সারা ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজেও তাকে পাওয়া গেল না। "মিহির, এই মিহির", " কী আশ্চর্য! ছেলেটা গেল কোথায়?" এ বাড়ির এমন কোনো কোণা তিনি বাদ রাখলেন না। নেই, সে আর কোথাও নেই। তার শান্তশিষ্ট ছেলেটা হঠাৎ গেল কোথায়? তিনি আবার রাফায়েতকে কল করে মিহিরের উধাও হবার খবরটা জানিয়ে দিলেন।
-রাফায়েত, আমার কিন্তু প্রচন্ড ভয় করছে রে। আমার বোকাসোকা ছেলেটা কোথায় গেল?
ওপাশ থেকে রাফায়েত জানায়,
-বাবা, তুমি চিন্তা করো না। ও আমার কাছে কিছু টাকা নিতে এসেছিল। মনে হয় ট্যুরে যাচ্ছে। তুমি নিষেধ করতে পারো ভেবে জানায়নি।
-তাই বলে তোর ফুপিকেও জানাবে না? ব্যাপারটা আমার মোটেও পছন্দ হলো না। ও এমনিতেই বাইরে চলাফেরা করে কম। যদি কোনো বিপদাপদ হয়ে যায়? তোর আস্কারায় মিহিরের সাহস বেড়ে গেছে।
-বাবা, আমি আছি তো। তুমি একদম চিন্তা করো না। আর কাল সকালেই আমি বাসায় আসছি। এখন ঘুমোতে যাও। প্লিজ বাবা, এভাবে রাগারাগি করে শরীর খারাপ করো না।
ইউনূস সাহেব ফোন রেখে দিলেন। কিন্তু রাফায়েত কান থেকে ফোন নামালো না। তার ভাই কোথায় যেতে পারে?
এই মুহুর্তে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হিসাব করলে দাঁড়ায়-লাবন্যই ঠিক। আর মিহির নিশ্চয় আজকে পুলিশ দেখে ধরা পড়ার ভয়ে কোথাও পালিয়েছে। কিন্তু কোথায় যেতে পারে?
মিহিরের চিন্তায় রাফায়েতের সারারাত আর ঘুম হলো না। একবার বারান্দা, আরেকবার ঘর-এই করেই কে*টে গেল সারারাত। অনেক রাতে মিষ্টির কান্নায় লাবন্যের যখন ঘুম ভাঙে, সে দেখে-রাফায়েত চোখ লাল করে সোফায় বসে আছে।
-এ কী! আপনি ঘুমোবেন না?
-তুমি মেয়েকে খাওয়ানো শেষ করো। আমি সোফাতেই ঘুমিয়ে যাবো।
-তা কী করে হয়?
-হবে। এত চিন্তা করো না।
লাবন্য আর জোরাজুরি করলো না। রাফায়েতকে সে যতটা বোকাসোকা মানুষ ভেবেছিল, সে আসলে একদমই তেমন নয়। আবার নিজের স্বামীকে সন্দেহ করাটাও তার কাছে মানানসই লাগে না। যেটাই ঘটুক, মেনে নিতে হবে। এখন পর্যন্ত রাফায়েতের মধ্যে কোনো ত্রুটি সে পায়নি। মোবাইল ফোনটা বের করে ঘড়ির সময় দেখতে গেলে হোয়াটসঅ্যাপের একটা মেসেজ ভেসে ওঠে। রাশেদ ভাই পাঠিয়ে রেখেছেন। রুমকির পোস্টমর্টেম রিপোর্ট। সাথে রাশেদ ভাই লিখেছেন-
"অনেক কষ্টে যোগাড় করলাম। রিপোর্টটা কনফিউজিং আছে। শুরুতে কেন এটার উপর বেশি জোর দেওয়া হয়নি, বুঝতে পারছি না। তবে আমি রুমকিকে নিয়ে নয়, তোমাকে নিয়ে ভাবছি। ছেলেটি তোমার প্রতি যে অসভ্যতা দেখিয়েছে, তা মানা যায় না। চিন্তা করো না। আমার পক্ষ থেকে আমি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো। ও হ্যাঁ, আরেকটা কথা।
একটা কাজে বের হয়ে ঘটনাটি কথায় কথায় " ইনটেলিজেন্স এজেন্সি" নামের এক গোয়েন্দা এজেন্সির একজন অফিসারের সাথে শেয়ার করেছিলাম। উনার নামও আমার নামের নাম। তবে সম্পূর্ণ নাম রাশেদ জামান। খুব ভালো মানুষ। এখন পর্যন্ত অনেক কেস সামলেছেন। স্যারকে জানালে স্যারও সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন।"
মেসেজটি পড়ে লাবন্য একবার রাফায়েতের দিকে তাকালো। তারপর রিপোর্টটা রাফায়েতের নাম্বারে পাঠিয়ে দিলো।
-মাত্রই দেখলাম,রাশেদ ভাই রিপোর্ট দিয়ে রেখেছেন। আপনাকে আমি ফরোয়ার্ড করে দিয়েছি।
লাবন্য আবার নিজের মোবাইল বন্ধ করে শুয়ে পড়ে। তবে রাশেদ ভাইয়ের মেসেজটির কথা সে আর জানানোর প্রয়োজন মনে করে না। অথচ সে জানতেই পারলো না-তার রাশেদ ভাই নিজের অজান্তেই এই কেসের শেষ অব্দি তথ্য পৌঁছে দিয়েছেন।
রাফায়েত রিপোর্টটা ভালো করে পড়ার চেষ্টা করে। পুলিশি ব্যাপার সেপার সে বোঝে না। তবে কিছু লাইন ঠিক এমনভাবে উল্লেখ করা- রুমকির নখের মধ্যে অন্য কোনো ব্যক্তির চামড়ার অংশ ছিল। কিন্তু এই নিয়ে বিস্তারিত আর এগোনো হয়নি। এতবড় একটা ক্লু পুলিশ কীভাবে এড়িয়ে গেল?
রাফায়েত আর অপেক্ষা করে না। ভোর ঠিক তিনটায় সে কাউকে না জানিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। পথিমধ্যে শুধু লাবন্যকে টেক্সট করে জানায়,
"আমি গেলাম। মিষ্টির খেয়াল রেখো। যদিও ওর খেয়াল তুমি আমার চেয়েও ভালো রাখবে। আর আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না। মিহিরকে নিয়ে মোটামুটি ধরণের একটা ক্লু পেয়েছি। জানি না, কতটুকু সত্য হবে। কাল রাতে মিহিরের খোঁজ নিতে বাবাকে কল দিয়েছিলাম। ও বাসায় নেই।"
লাবন্য সেই টেক্সট পড়ার আগেই রাফায়েত বাসায় পৌঁছে যায়। মিহিরের ঘরে ঢুকে সমস্ত বিছানা তন্নতন্ন করে খুঁজেও প্রমাণ পাবার মত কিছুই পেল না। ঘর জুড়ে লেডি পারফিউমের গন্ধ ভেসে আসছে। সে ভাইয়ের ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার খুলে দেখে, সেখানে বিভিন্ন ব্র‍্যান্ডের ছয়টি পারফিউমের বোতল। অধিকাংশই খালি কিংবা সামান্য অবশিষ্ট আছে। তার মধ্যে একটা পারফিউমের বোতলের দিকে দৃষ্টি পড়তেই তার চোখ কপালে উঠে যায়। এটা তো রুমকির! একবার সে বলেছিল-ওর পছন্দের পারফিউমটা নাকি খুঁজে পাচ্ছে না। পরে আর কখনোই পাওয়া যায়নি। সেটা তাহলে মিহিরই চুরি করে নিয়ে এসেছিল?
বোতলগুলো সাথে নিয়ে সে সোজা ছাদে উঠে যায়। তার ভাই সবসময় ছাদে পায়চারী করে বেড়াত। আশেপাশে নিশ্চয় অন্য ফ্ল্যাটের সাথেও তার একটি সূক্ষ্ম দূর সম্পর্ক গড়ে ওঠার কথা। ছাদে উঠে সে আশেপাশে বেশ কিছু ফ্ল্যাট তো দেখতে পায়, কিন্তু এই সাত সকালে কোনো নারীর আনাগোনার প্রমাণ পাওয়া গেল না। কিন্তু ছাদের উপর কাপড় পোড়ানোর প্রমাণ এখনও স্পষ্ট। সবটা ছাই হয়ে আছে। কিন্তু অন্তর্বাসের হুক এখনও জং ধরে হলেও বহাল তবিয়তে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। সে টুকরোগুলো তুলে ছাইটুকু ঘষেমেজে পরিষ্কার করে ফেললো। এই সমস্ত প্রমাণ পুলিশের কাছে দেওয়া যাবে না। যা করার, সে একাই করবে। শুধুমাত্র একা। তার আপন ছোটভাই এমন জঘন্য কাজ করতে পারে, এত নিচে নামতে পারে? শুধুমাত্র ভাইয়ের জন্যই সে রুমকিকে তার জীবন থেকে হারিয়ে ফেলেছে-এই সত্যটুকু মেনে নিতে রাফায়েতের প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে।
কিন্তু তার সেই কালপ্রিটটা কোথায়? তাকে না খুঁজে সে দম নিবে না।
★ঘটনা দুই।
ভোররাতে মিহির একটি সুনসান ব্রীজের পাশে এসে দাঁড়ালো। এ রাস্তায় দিনের বেলা ছাড়া রাতে খুব একটা গাড়ি চলে না। ব্রীজের উপর থেকে সে নিচের পানির দিকে চেয়ে আছে। কী করবে সে? না, নিজের কাজের প্রতি তার বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। কিন্তু এতটা কাল সে যে পরিবারের কাছে সবচেয়ে নিষ্পাপ ছেলে হিসেবে নাম কুড়িয়েছে, সেটা ধরা পড়লে কীভাবে বাঁচবে? মিহিরের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। এমন মুহুর্তে পাশ থেকে একটি মেয়ে বলে ওঠে,
-সুইসাইড করবে? ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছো।
মিহির চমকে উঠে মেয়েটির দিকে ফিরে তাকায়। লাবন্য কিংবা তার চেয়ে সামান্য একটু বেশি বয়সী, চোখেমুখে শান্ত কিন্তু তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। একবার তাকালেই যেকোনো প্রেমিক পুরুষ তাকে পেতে সাত আসমান এক করতে চাইবে। অথচ মিহিরের এখন ওসব কিছুই মনে হচ্ছে না। বুকের উপর যেন বিশাল ওজনের পাথর চেপে আছে। সে কাঁপা স্বরে জিজ্ঞাসা করলো,
-আমি সুইসাইড করবো, আপনাকে কে বলেছে?
-কেউ বলেনি। তবে তোমার এটাই করা উচিত মিহির। ভেবে দেখো। তোমার ভাইয়ের বউয়ের মৃত্যুর কারণ তুমি। পুলিশ যেকোনো সময়, যেকোনো উপায়ে তোমাকে ধরে ফেলতে পারে। আর তাছাড়া তোমার ভাই রাফায়েত তোমার সম্পর্কে সব জেনে গেছে। বিশ্বাস হচ্ছে না? দাঁড়াও, তোমার ভাই তোমার ভাবী লাবন্যকে মেসেজ করেছে, কল করে জানিয়েছে-তোমার ঘরে কী কী পেয়েছে সে।
এই বলে মেয়েটি একটা ডিভাইস বের করে মিহিরকে সত্যি সত্যিই রাফায়েতের সেই মেসেজটি দেখালো। সে আবার বললো,
-এবার ভয়েস শুনবে? শোনাই?
-না, আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না। আমি ওসব শুনবো না। আর আপনি কে? এসব কোথায় পেয়েছেন? আমার সম্পর্কে এত কথা কীভাবে জানলেন?
-আমি? আমি ফেরারি। ওই যে আকাশ দেখছো, আকাশের তারা খসে যাওয়া দেখাই আমার কাজ। মাঝে মাঝে মানুষও খু*ন করি।
-মানে!
-হ্যাঁ, সত্যি। কিন্তু তোমাকে খু*ন করবো না।
-তাহলে কী করবেন? আর আমার পিছুই বা নিয়েছেন কেন? আপনাকে কে পাঠিয়েছে?
(চলবে…)
পাঠক, এই শেষ অংশটি বিশেষভাবে মনে রাখার চেষ্টা করুন। এইখান থেকে একটু এলোমেলো মনে হতে পারে। কিন্তু শেষ পর্বে নতুন চরিত্রের সাথে সব সংযোগ বুঝতে পারবেন। গল্পটির আর মাত্র একটি পর্ব বাকি আছে। তাই পড়া শেষে অবশ্যই কমেন্টে রেস্পন্স করবেন। আপনারা রেস্পন্স করলে সময় নিয়ে লেখার উৎসাহ পাই।
গল্প- #রক্তজবা পর্ব-১৩

27/11/2023

#রক্তজবা পর্ব ১২
আমি চাই না,আমার ভাই যত নোংরা কাজই করুক, তা সামনে আসুক। তবে তাই বলে রুমকির সাথে যদি এমন কিছু ঘটে থাকে,তাহলে তার শাস্তিও সে পাবে। এমনকি, তোমার সাথে ভুল কিছু করার অপচেষ্টা করার প্রমাণ পেলে সেই শাস্তিও সে পাবে। এখন অনেক রাত হয়ে গেছে। তুমি ঘুমোও,আমি কিছুক্ষণ বারান্দায় বসবো।
রাফায়েত দ্রুত পায়ে বারান্দার দিকে চলে গেল। লাবন্য কিছুটা হতভম্ব হয়েই ওর দিকে চেয়ে রইলো। ভাইয়ের অপকর্মকে প্রকাশে আনবে না, আবার শাস্তিও পাবে- রাফায়েত ঠিক কী করতে চাইছে! লাবন্য ভেবে পায় না। রাফায়েত সত্যিই তার ভাইয়ের এসব কুকর্মের প্রতি প্রতিবাদী থাকবে কি-না, সেটাও নিশ্চিত নয়। কথায় বলে-রক্ত নাকি কথা বলে। একটা দূর পরিবারের মেয়ের প্রতি যত ভালোবাসাই থাকুক, রক্তের সম্পর্কের কাছে সেসব ফিকে হয়ে যায়। রক্তের সম্পর্কের মানুষগুলো যতবড় অপরাধ,অপকর্মই করুক না কেন, তাকে বাঁচাতেই মানুষ উঠেপড়ে লাগে। অথচ অপরাধীকে শাস্তি দেবার সৎ সাহস যদি মানুষের থাকত, তবে কতশত পরিবার, নারী যে বেঁচে যেত! লাবন্যের হঠাৎ কেমন জানি ভয় ভয় করতে লাগলো।
"বড়সড় কোনো ট্র‍্যাপে পড়ে গেলাম না তো? মানুষের উপরে উপরে কত ভদ্রলোকী দেখা যায়। কিন্তু ভিতরের চরিত্র তো বুঝার কোনো অটোমেটিক মেশিন নেই,যার দ্বারা সে চিনতে পারবে।"
সে একবার বারান্দার দিকে উঁকি দিয়ে রাফায়েতকে দেখে নিল। মানুষটা উদাস হয়ে বাইরের অন্ধকারের দিকে চেয়ে আছে। দূরের একটি টেলিফোন টাওয়ারের মাথায় মৃদু আলো দেখা যায়। সেই ক্ষীণ আলোয় সে যে কী আশা খুঁজে পাবার চেষ্টা করছে, কে জানে! লাবন্য কিছুক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রাফায়েতের ঘরে ফেরার অপেক্ষা করে। কিন্তু তার পক্ষ থেকে বিশেষ সাড়া না পেয়ে সে মিষ্টির গায়ে একবার হাত দিয়ে যাচাই করে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো।
অথচ বারান্দা থেকে ভিতরের এই সামান্য দূরুত্বে রাফায়েত টের পেল না-একটা মনের ভিতর তার পরিবার নিয়ে কী পরিমাণ সন্দেহের বীজ বপন হয়েছে। সে যেমনই উদাস হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, তেমনই রইলো। রুমকিকে সে বিয়ে করেছিল নিজের পছন্দে।
এই মুহুর্তে রুমকির গল্পটা জানানো দরকার।
"২০২১ সালে একবার বন্ধুর বিয়ের পাত্রী দেখতে গিয়েছিল রাফায়েত। সেখানেই রুমকির সাথে দেখা। প্রেম-ভালোবাসার ব্যাপারটা সেভাবে ঘটেনি তাদের। রাফায়েত বাড়ি ফিরে সোজা ইউনূস সাহেবের ঘরে ঢোকে। হম্বিতম্বি হয়ে বাবাকে বলে,
-বাবা৷ তুমি আমাকে বিয়ে করতে বলেছিলে না? আমি আসলে মনের মত মেয়ে পাচ্ছি না৷ তবে একটা মেয়েকে আজ দেখেছি। তুমি যদি একটু খোঁজ নিতে, তাহলে আমি এই মেয়েকেই বিয়ে করবো।
ইউনূস সাহেব কপালের ভাঁজ চার দুকুনে আট করে ছেলেকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন,
-তুই ভেবে বলছিস? আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না।
-বাবা, আমি সিরিয়াস। মেয়েটার নাম রুমকি। ছোটখাটো, গোলগাল মুখ। আর সবচেয়ে যেই বিষয়টি ওর মধ্যে আছে, তা হলো-পরিশ্রম। ও ভীষণ পরিশ্রমী একটা মেয়ে। অনার্স পড়ছে, পাশাপাশি তিনটে টিউশনি করে নিজের খরচ চালায়। শুধু তাই নয়, একটা জায়গায় পার্ট টাইম চাকরিও করে। বাবা, যেই ছেলেমেয়েগুলো পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি, ছোটখাটো জব কিংবা নিজে থেকে কিছু করে নিজের খরচটা নিজেই চালাতে জানে, ওদেরকে চোখ বন্ধ করে বিয়ে করে নেওয়া যায়। ওরা জানে, সংসারের সেভিংস কীভাবে রাখতে হয়। ওরা পরিবারের কষ্টগুলো অনুভব করতে পারে। আর আমি বলি-এমন মানুষগুলো এক একটা হিরার টুকরো। এমন হিরার টুকরো মেয়েকে হাতছাড়া করা কী উচিত হবে বাবা?
ইউনূস সাহেব এতদিনে বিয়ের প্রতি বড় ছেলের আগ্রহ দেখে প্রচন্ড আনন্দে যেন বাচ্চাদের মত লাফাতে শুরু করলেন! গলা ঝেড়ে কেঁশে বলে উঠলেন,
-আমাকে শুধু এক সপ্তাহ সময় দে। হিরার টুকরো মেয়েকে কীভাবে এই ঘরে আনা যায়, আমি দেখছি। শুধু তুই যেন পরে ক্যান্সেল করে দিস না।
ইউনূস সাহেব সত্যি সত্যি এক সপ্তাহের ভিতরে রুমকির বাড়ির লোককে রাজি করিয়ে নিয়েছিলেন। আর সেইসাথে মাত্র বারো দিনের মাথায় রুমকিকে ছেলের বউ করে ঘরে এনেছিলেন।
সবকিছুই ঠিক ছিল। কিন্তু একদিন মিহিরের ঘরের পাশ দিয়ে যাবার সময় রুমকি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে মিহিরকে ডেকে উঠেছিল,
-মিহির, ভাই একটা উপকার করো প্লিজ। তোমার ভাইয়ের অফিসের নাম্বার আছে? ওকে একটু কল দেওয়া লাগবে। নাম্বার বন্ধ পাচ্ছি।
মিহির তখন ঘর অন্ধকার করে কম্পিউটারের স্ক্রিণের সামনে বসে অন্য কোনো ফ্যান্টাসির জগতে ব্যস্ত। এমন মুহুর্তে হুট করে রুমকির দিকে তাকিয়ে সে দেখে, রুমকি শাড়ি পরে, সুন্দর করে সেজেগুজে দাঁড়িয়ে আছে। রাফায়েতের সাথে নিশ্চয় কোথাও আউটিং করবে। প্রথমত মিহিরের ফ্যান্টাসির রেশ তখনো কাটেনি। আর দ্বিতীয়ত,সে হঠাৎই রাফায়েতকে প্রচন্ড হিংসা করতে শুরু করলো। ভাইয়ের প্রতি হিংসায় তীব্র বিরক্তি নিয়ে সে রুমকিকে জিজ্ঞাসা করে,
-কী দরকার?
-ও বলেছিল, আজকে বাইরে গিয়ে সবার জন্য কেনাকাটা করতে যাবে। আর সাথে আমাকেও যেতে হবে।
-ওহ। কিন্তু আমার কাছে নাম্বার নেই। আপনি রুমে গিয়ে রিলাক্স হয়ে বসুন। আমি ব্যবস্থা করছি।
রুমকি সহজ মনে তাকে বিশ্বাস করে ঘরে ফিরে যায়। সেইসাথে বারবার আয়নায় নিজেকে দেখতে থাকে। এইতো, আর কিছুক্ষণ পরেই তার স্বামী তাকে নিতে আসবে। প্রাইভেট আউটলেটে কেনাকাটা করবে, খাওয়াদাওয়া করবে এবং এক আধটু খুঁনসুটি। রাফায়েত ওকে দেখে কী মন্তব্য করতে পারে,সেই ভেবেই যেন ওর সময় কাটে না।
অথচ এতকিছুর ভিড়ে মিহির যে দূর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে তাকে দেখছে, তা সে টেরই পেল না।
আর সেই থেকেই রুমকির প্রতি তার আগ্রহের সূচনা।
রুমকি ব্যাপারটা খানিক বুঝত, আর খানিক নিজের মনের ভুল ভেবে এড়িয়ে গেছে।
তবে, শুধু রুমকিই নয়, মিহির মনে মনে এমন শত শত মেয়েকে ভালোবাসে, তাদের সাথে সংসার করে, নিজের একটা আলাদা জগতে তাদেরকে নিয়ে রঙ বেরঙের পসরা সাজায়, যা এই পৃথিবীর কেউ জানত না।
ওর সেদিনের সেই মুহুর্তটাই যে রুমকির জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়, তা রাফায়েত এতদিনে ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি। টের পাবার উপায়ও নেই। মিহির নিজের জগতে নিজেকে এমন সুপরিকল্পিতভাবে আটকে রেখেছে যে, বাইরের সবাই ধরেই নিত-এই ছেলেটা শরমে বাইরের কারো সাথে মেশে না। মেয়েদের দিকে তো ফিরেও তাকায় না। আহা, একেই বলে আদর্শ ছেলে।
অথচ সেই আদর্শ ছেলের মধ্যে কতখানি অনাদর্শ বাসা বেধেছিল, তা কেউ জানতে পারলো না।"
বারান্দা থেকে ঘরে একবার উঁকি দিয়ে সে লাবন্যকে দেখে নিলো। লাবন্য ঘুমোচ্ছে। সে পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে মিহিরের নাম্বারে কল দেয়। ওপাশে রিং হচ্ছে, কিন্তু কেউই কল ধরলো না।
(চলবে…)
পাঠক, গল্প পড়া শেষে অবশ্যই অবশ্যই কমেন্টে রেস্পন্স করবেন। এত ব্যস্ততার মধ্যে গল্প লিখি, আপনারা সাড়া না দিলে ব্যর্থ লাগে। আর রেস্পন্স করলে সময় নিয়ে লেখার উৎসাহ পাই।
#রক্তজবা ১২তম পর্ব

27/11/2023

#রক্তজবা ১০+১১তম পর্ব
সেদিন এত আকুতিমিনতির পরেও মিহির তাকে আর একটি শব্দও উচ্চারণ করার সুযোগ দেয় না। আশেপাশের ছাদে একবার গভীর পর্যবেক্ষণ করে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়িয়ে রুমকির হাত ছেড়ে দেয়! তবে তার আগেই নিজে ঠিকই দূরে সরিয়ে দাঁড়িয়েছিল। মুহুর্তেই দোতলার ছাদ থেকে সোজা নিচের ড্রেনের ঢাকনার উপর পড়ে মুখের বাম পাশ থেঁ*তলে যায় তার। কিছুটা সামনেই বড় রোডের পাশ দিয়ে গলিতে এক ফেরিওয়ালা ঢুকছিল। তাকে দেখে নোমান তড়িৎগতিতে কে*টে পড়ে।
রুমকির মৃত্যুর খবরে বাড়িভর্তি মানুষ হা-হুতাশ করলেও মিহিরের চেহারা দেখে কেউ টেরই পেল না- সেই মূলত রুমকির মৃত্যুর জন্য দায়ী। সবার কান্নার বিপরীতে সে মুখ ভার করে একপাশে মিষ্টিকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। খুব গোপনে সে শিশুটিকে বলেছিল,
-এই মিষ্টি, কান্না করিস না যেন। আমি তোর জন্য আরও সুন্দরী, দেখতে স্মার্ট মা দেখে দেবো। তোর বাবাকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার। শুধু একটু ধৈর্য ধর,কেমন?
মিহির কথা রেখেছে। মিষ্টির জন্য সুন্দরী এবং স্মার্ট একজন মা খুঁজে দিয়েছে। অবশ্য পাত্রীর খোঁজ পেয়েছিলেন তার খালা হোসনে-আরা। এর আগেও দুই একটা পাত্রী দেখেছিল তারা। কিন্তু না মিহির তাদেরকে পছন্দ করেছে, আর না পাত্রীপক্ষ এক বাচ্চার বাপ দেখে রাফায়েতকে পছন্দ করেছে।
লাবন্যকে দেখে মিহিরের ঠিক কতখানি পছন্দ হয়েছিল, তা কেবল সেই জানে। তাকে দেখতে যাবার দিন দীর্ঘ মুহুর্ত আড়চোখে চেয়ে চেয়ে দেখেছে সে। আহামরি সৌন্দর্য সত্যিই নেই। তবুও কীসের যেন এক আর্কষণ ওর মধ্যে আছে, একথা জগতের সব পুরুষই স্বীকার করতে বাধ্য। আর সেই মায়ায় পড়েই সে যে অতিরিক্ত তাড়াহুড়ো করে ফেলেছে, তার ফল এখন বুঝতে পারছে।
সে একবার বাইরে উঁকি দিয়ে ইউনূস সাহেবের অবস্থান দেখে নিলো। মানুষটা আশেপাশে নেই। ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ইতোমধ্যে নিশ্চয় শুয়ে পড়েছে। ব্যাপারটা নিশ্চিত হতে ঘরের বাইরে বেরিয়ে ডাইনিং রুম জুড়ে পায়চারী করে বেড়ালো। না, এই মুহুর্তে কোথাও ইউনূস আহমেদের গতিবিধি নেই। তার মানে এখন সে তার কার্যসিদ্ধি করতে পারবে।
মিহির ঘর থেকে তার এতদিনের লুকিয়ে লুকিয়ে মেয়েদের থেকে সংগ্রহ করা প্রিয় জিনিসপত্রগুলো নিয়ে সোজা ছাদে উঠে যায়। এরপর যতটা আগুনে পড়ানো সম্ভব, সেগুলো সব এক কোণে রেখে তাতে আগুণ ধরিয়ে দিলো। তার চোখের সামনেই তার এত কষ্টে সংগ্রহ করা প্রিয় বস্তুগুলো পুড়ছে। কত রিস্ক, কত দুঃসাহসে সে এসব সংগ্রহ করেছিল, তা একমাত্র সেই জানে। মিহিরের গাল বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। এই বস্তুগুলোকে সে কত ভালোবাসত!
তার সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় লাবন্যের ব্যবহার্য জিনিসের জন্য। তার সর্বশেষ ফ্যান্টাসি তো শুধুমাত্র এই লাবন্যই। তার জন্য মিহির কি-না করেছে!
চোখ বন্ধ করে সে লাবন্যের চেহারাটা মনে করার চেষ্টা করে।
বাসর রাতে লাবন্য রাফায়েতের সাথে ঘনিষ্ঠ হবে-এই ভেবে মিহির নিজের ঘরের দরজা আটকে শরীরের সমস্ত জামাকাপড় খুলে শোক পালন করেছে, ভাইয়ের প্রতি নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে জামাকাপড় ছাড়াই চিৎ হয়ে শুয়ে আকাশের দিকে চেয়েছিল দীর্ঘক্ষণ। সেদিন রাতে লাবন্যকে বিয়ের সাজে সাজানো অবস্থায় কী ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছিলো। মিহিরের খুব ইচ্ছে হচ্ছিল-লাবন্যকে ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু সে অধিকার তার নেই, আছে রাফায়াতের।
তাই হিংসাত্মকপ্রবণ হয়ে লাবন্যকে বিরক্ত করতে সেই তো লুকিয়ে লুকিয়ে লাবন্যের ঘরের দিকে নোংরা ভিডিওর শব্দ ট্রান্সফার করেছিল। কিন্তু তাতেই বা কী বিশেষ লাভ হলো? ঠিকই সে রাফায়েত আর হোসনে-আরা বেগমের কথায় আশ্বস্ত হয়ে ঘরের দরজায় সিটকিনি তুলে দিয়েছিল। পিছনে মিহিরের বুকের ভিতর সব ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছিল, সেদিকে কে খেয়াল করেছে? কেউ না। সবাই ঘুমোনোর পর ছাদের ঠিক এইখানে এসেই মিহির অঝোরে কেঁদেছিল। অথচ লাবন্যকে কোনোদিন তার খুব কাছ থেকে জানা হলো না।
আজও সে সেই একই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে।
*
লাবন্যের ঘুমোতে আসতেই অনেক রাত হয়ে গেল। এই মুহুর্তে ঘড়ির কাঁটায় এগারোটা বেজে, সাত মিনিট। দিন এগারোটা নয়, রাত। সে দিনের সমস্ত কাজ গুছিয়ে ঘরে ফিরে দেখে-রাফায়েত ঘুমোচ্ছে। ভেজা হাত দুটো তোয়ালে দিয়ে মুছে এসে বিছানার পাশে দাঁড়ালো। ওর পাশে ঘুমোতে লাবন্যের প্রচন্ড লজ্জা লাগছে। একেবারে হঠাৎ লজ্জা। অথচ বাসর রাত থেকে সে রাফায়েতের সাথে এক বিছানায় ঘুমিয়েছে, তাও আবার সঙ্কোচ ছাড়াই। এই কয়টা দিন ওর তেমন কিছু মনে হয়নি৷ একদিকে মিষ্টিকে সামলানো, অন্যদিকে মিহিরের প্রতি সন্দেহ, বিয়ে নিয়ে মানসিক দ্বন্দ-এরমধ্যেই তার সময় কে*টেছে। কিন্তু এখন তার চোখের সামনে রাফায়েত ছাড়া জগতের প্রতিটি বস্তুই অন্ধকার, একেবারে নিকষকালো। এই প্রথম ওর নিজেকে কোনো একজনের স্ত্রী হিসেবে অনুভব হচ্ছে।
এই মানুষটা কী ভীষণ সহজ! চোখেমুখে নির্মলতা জমা করে রোজ৷ লাবন্যের ভীষণ ইচ্ছে করছে- বাচ্চাদের মত মানুষটার গালে আলতো ছুঁয়ে আদর করতে। রুমকিরও নিশ্চয় এমন হত? কথাটা মনে হতেই ওর কেমন যেন হিংসা অনুভব হচ্ছে৷ একজন মৃত মানুষের প্রতিও ওর হিংসে হচ্ছে! লাবন্য নিজের মনের অজান্তের কথা ভেবে অবাক হয়ে যায়।
আসলে মেয়েরা নিজের স্বামীর ব্যাপারে প্রচন্ড স্বার্থপর হয়। দিনরাত যে স্বামীর সাথে তারা ঝগড়া করবে, দিনশেষে তাকে দেখতে পাওয়া, কাছে পাওয়াতেই তাদের শান্তি। তাকে অন্য কিছুর সাথে ওরা সহ্যই করতে পারে না৷ তা কেউ-হোক জীবিত কিংবা মৃত। হবেই বা না কেন? মেয়েদের একান্ত নিজের বলতে খুব সামান্য বস্তুই এ জগতে আছে।
-কী ভাবছো?
রাফায়াতের হঠাৎ প্রশ্নে লাবন্য চমকে ওঠে।
-আপনি ঘুমাননি?
-না, তো। জেগেই ছিলাম।
-অথচ এমনভাবে ভান ধরেছেন,দেখে মনে হচ্ছে ঘুমোচ্ছেন। সাংঘাতিক মানুষ তো আপনি।
-তোমার সাথে কথা বলার জন্যই জেগে আছি।
-রুমকির জন্যও থাকতেন?
রুমকির কথা উঠতেই রাফায়েতের মন খারাপ হয়ে যায়। সমস্ত শব্দগুলোও কোথায় যেন হারিয়ে যায় তার। রুমকিকে সে প্রচন্ড ভালোবাসে। তাই বলে সেই ভালোবাসার মূল্যায়ন দেখাতে গিয়ে লাবন্যকে তো সে ঠকাতে পারে না৷ প্রসঙ্গ পাল্টে সে বলল,
-লাবন্য, প্রথমদিন তোমাকে যেমন দেখেছিলাম, এখন মাত্র এই কয়টা দিনে তুমি অন্য কেউ হয়ে যাচ্ছো। আমি তোমার ব্যাপারে বেশ কিছু বিষয় নোটিশ করেছি৷ এখন তুমি কি আমাকে তোমার সমস্যাটি জানাবে? নাকি চুপ করেই থাকবে?
-শুনলে আপনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। বিশাল বড় একটা শক খাবে। আমাকে হয়তো অবিশ্বাসও করতে পারেন। রাফায়েত সাহেব, আপনি আপনার ভাইকে কতটুকু চেনেন? আপনার চেনাজানার বাইরেও তার আলাদা একটি বিশাল চরিত্র ওর মধ্যে আছে, জানেন? আপনার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর রহস্য আপনি জানেন? আপনি চোখে যা দেখছেন, তার অধিকাংশ অংশটাই মিথ্যে।
#রক্তজবা ১১তম পর্ব
রাফায়েত ওর দিকে এমনভাবে তাকালো, যেন এমন কোনো ঘটনা ঘটতেই পারে না, যার জন্য তাকে আলাদাভাবে কিছু জানা লাগবে। পুরো পৃথিবী উল্টে গেলেও তার কাছে তার ভাই মিহির সম্পর্কে সন্দেহ করার মত কোনো বিষয় সে ভাবতেই পারবে না। তবুও স্ত্রীর মন রক্ষার্থে সে প্রশ্ন করে,
-মিহির কী করেছে?
-আমার প্রতি ওর নোংরা দৃষ্টি আছে।
-মানে!
-মানে মানে করবেন না। আপনি একজন বোধবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। তাই বলে অন্ধ বিশ্বাসে অন্ধের মত সব কিছু থেকে নিজের চোখের এত বড় পর্দা করবেন না যে, অন্যেরা আপনাকে এই দুনিয়ার সবচেয়ে বোকা প্রাণী ভেবে ঠকিয়ে যেতে পারে। যা বলেছি, সত্য। আপনার ভাই মিহির, ওর সম্পর্কে আমি অনেক তথ্য পেয়েছি। ওকে যতটা সহজ সরল ভাবছেন, ও তার ধারেকাছেও নেই। আপনি জানেন? আপনার ভাই আমার ব্যক্তিগত গোপনীয় কাপড় ছাদের কোণা থেকে চুরি করে নিজের ঘরে রেখেছে। তাও আবার ড্রয়ারে। শুধু আমার জিনিসই নয়, এরকম বহু মেয়ের জিনিস আমি ওর ড্রয়ারে দেখেছি।
লাবন্য একনাগাড়ে কথাগুলো বললো। রাফায়েত কী বুঝবে আর কী বলবে-সেই নিয়ে পড়ে গেল কনফিউশানে। তার ভাই এমন কাজ করতে পারে? তার ভাই! ব্যাপারটা ওর ঠিক হজম হলো না। আবার লাবন্যকেও অবিশ্বাস করতে পারছে না। সে কিছুটা ইতঃস্তত হয়েই জিজ্ঞাসা করে,
-এসব কবে দেখেছো তুমি?
-এখানে আসার আগে। মিহির নানান সময় নানান অজুহাতে আমার কাছে যাবার চেষ্টা করতো। ভেজা চুলে ছাদে উঠলেই ও লুকিয়ে আমাকে দেখত, মুখোমুখি ধরা পড়ে গেলে প্রশংসা করত। আর আজ সন্ধ্যায় ওর আসার কারণ কী জানেন?
-আমাকে তো বলল,আমার সাথে জরুরি কাজ আছে। পরে আর লাগবে না বলেই বের হয়ে গেল।
-আপনার সাথে জরুরী কোনো কাজই ওর নেই। ও এসেছিল আমার কারণে।
রাফায়েত ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো। সবকিছু কেমন যেন তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। যেই ভাইকে নিয়ে সে ও তার পরিবার শত শত মানুষের কাছে গর্ব করে এসেছে, আত্মীয়-স্বজন মিহিরকে দেখিয়ে নিজেদের ছেলেমেয়েকে শিখিয়েছে-"দেখ, মিহিরের মত হ", সেই ভাইকে নিয়ে লাবন্যের মুখে এত এত অভিযোগ শুনে তার রীতিমতো কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাবার অবস্থা। লাবন্য রাফায়েতের পাশে বসলো। ওর পিঠে হাত রেখে আবার বললো,
-আমি জানি, আপনার হজম করতে কষ্ট হবে। কিন্তু আপনাকে ছাড়া আমি কাকে জানাবো বলুন? ও সন্ধ্যায় এসে বারবার শুধু আমার সাথেই কথা বলার চেষ্টা করে গেছে। আমি যখন দরজা খুলি, সে ঠিক যেন একটা প্রেমিকের মত আমার কাছে অভিযোগ করে বলে উঠলো-"তুমি আমাকে না জানিয়ে চলে এলে কেন"? আপনিই বলুন, আপনার ভাইয়ের কাছে আমি কোন সূত্রে তাকে জানিয়ে আসার জন্য দায়বদ্ধ ছিলাম?
-আর রুমকির মৃত্যু রহস্য সম্পর্কে কী জানি বলছিলে তুমি…
-হ্যাঁ। মিহির আমার প্রতি যেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে, আমার ধারণা-এই একই বিষয়টি রুমকি আপার প্রতিও তার ছিল। হয়তো রুমকি আপা আমার মত সাহস করে কাউকে বলতে পারেনি। আপনি হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন- আমি রুমকির মৃত্যুর কারণ হিসেবে মিহিরকে সন্দেহ করছি কি-না। উত্তর হচ্ছে-না। তবে স্ট্রং ধারণা করছি। রুমকি আপা ছাদ থেকেই পড়ে মা*রা গেছেন। আবার মিহিরকে আমি সবসময় দেখি ছাদে পায়চারী করে বেড়াতে। সেদিন আপনি বাসায় ছিলেন না। ওই মুহুর্তে মিহির যে রুমকির পিছু পিছু অসৎ উদ্দেশ্যে ছাদে ওঠেনি, তার কী নিশ্চয়তা আছে? দু'য়ে দু'য়ে মেলালে উত্তর চার ছাড়া কখনো পাঁচ হবে না রাফায়েত সাহেব।
রাফায়েত কিছুক্ষণ নির্বাক থেকে রুমকির কথাই ভেবে গেল। শেষ কিছুদিন তার আচরণে অনেক পরিবর্তন এসেছিল, মিষ্টিকে কোনো পুরুষের কাছে দিতেও ভয় পেত। তার মত এমন সহজ সরল একটি মেয়ে হঠাৎ মানুষকে ভয় পেতে শুরু করেছিল-এর ভিতর লাবন্যের বলা কারণগুলো ছাড়া আর কী কারণ থাকবে? রুমকির মত সংসারী মেয়ে তো ইচ্ছে করে পাগলামি শুরু করবে না। তার মানে সত্যি সত্যিই মিহিরের কারণে…! ভাইকে নিয়ে এসব ভাবতেও তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। নিজে হাতে আদর-যত্নে তাকে রাফায়েত বড় করেছে। সেই ভাইটিই কি-না তার সংসার ধ্বংস হবার কারণ!
কষ্টে যেন রাফায়েতের বুকের ভিতরটা ফেটে যাচ্ছে। সে তো এই দুনিয়ার কারো ক্ষতি করেনি, ভাইকেও বিন্দুমাত্র বকাঝকা করেনি। অথচ তার সাথেই কি-না এমন জঘন্য ঘটনা ঘটছে! রুমকিকে সে যে কতখানি ভালোবাসে, তা একমাত্র সেই জানে। শুধু কাউকে বুঝতে দেয় না। কিছু ভালোবাসা যে বুকের ভিতর কবর দিয়েও ভালোবাসতে হয়, তা কেবলমাত্র রাফায়েতের মত মানুষগুলোই পারে।
রি মুহুর্তে ব্যাপারটা নিয়ে সে নিজ দায়িত্বে সত্যতা যাচাই করে দেখতে চায়। সেজন্য লাবন্যকে বললো,
-তুমি আর কী কী পেয়েছো?
-আর বিশেষ কিছু নেই। তবে ভাইয়ার বন্ধু মানে রাশেদ ভাইকে দেখলেন না?
-হুম।
-রাশেদ ভাইকে বিস্তারিত খুলে বললাম। উনি আপনার থানার কেউ নন বলে সরাসরি সাহায্য করতে পারবেন না। তবে রুমকি আপার পোস্টমর্টেম রিপোর্টটা খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা করবেন, বলেছেন।
-ওসব করতে নিষেধ করো।
-মানে? কেন? রাশেদ ভাই সাহায্য না করলে কীভাবে কী করবো!
-কিছু করতে হবে না। তুমি শুধু রিপোর্টটা উনি ব্যবস্থা করলে আমার হাতে তুলে দেবে। আর নাহলে আমিই ব্যবস্থা করছি। লাবন্য শোনো…
রাফায়েত লাবন্যের দুইহাত আঁকড়ে ধরে। তারপর ছলছল চোখে ওর দিকে চেয়ে বললো,
-আমি চাই না,আমার ভাই যত নোংরা কাজই করুক, তা সামনে আসুক। তবে তাই বলে রুমকির সাথে যদি এমন কিছু ঘটে থাকে,তাহলে তার শাস্তিও সে পাবে। এমনকি, তোমার সাথে ভুল কিছু করার অপচেষ্টা করার প্রমাণ পেলে সেই শাস্তিও সে পাবে। এখন অনেক রাত হয়ে গেছে। তুমি ঘুমোও,আমি কিছুক্ষণ বারান্দায় বসবো।
রাফায়েত দ্রুত পায়ে বারান্দার দিকে চলে গেল। লাবন্য কিছুটা হতভম্ব হয়েই ওর দিকে চেয়ে রইলো। ভাইয়ের অপকর্মকে প্রকাশে আনবে না, আবার শাস্তিও পাবে- রাফায়েত ঠিক কী করতে চাইছে! লাবন্য ভেবে পায় না.
(চলবে..)
পাঠক, এই পর্বটি যারাই পড়ছেন, "নেক্সট" শব্দ ছাড়া আপনাদের ভালো/মন্দ অনুভূতি শোনার সৌভাগ্য আমার হয়নি। এই পর্বে আপনাদের মন্তব্যগুলো জানতে চাই।
আর প্রতি পর্বেই আমি মিনিমাম হাজার শব্দ রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু আপনাদের মতও লেখালেখির বাইরে কর্মজীবন থাকায় বিশাল সাইজের পর্ব লেখার সময় পাই না।
গল্পটির আর ৩টি পর্ব আছে। লিখতে লিখতে সব সাজিয়ে ফিনিশিং না দিলে গল্পটি অসম্পূর্ণ লাগত।
গল্প:- রক্তজবা (পর্ব:-১১)
লেখা- Sharifa Suhasini

Address

Fulbaria

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Ghost Story - ভুতের গল্প posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Category