09/06/2023
#নতুন_আয়কর_আইনে_পরিবর্তনসমূহ
জাতীয় সংসদে নতুন আয়কর আইন পাসের জন্য বিল আকারে উত্থাপিত হয়েছে। বিদ্যমান আয়কর অধ্যাদেশের সঙ্গে নতুন আইনে বড় মৌলিক পরিবর্তন নেই। তবে কিছু কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
যেমন কোম্পানির সংজ্ঞা পরিবর্তন; কোম্পানিকে প্রতি মাসে উৎসে করের রিটার্ন দাখিল; রিটার্নের প্রমাণ দাখিলে বাধ্যবাধকতায় আরও পাঁচ খাত যুক্ত, বিদেশে ঘুরতে গেলে সম্পদের তথ্য দেওয়া ইত্যাদি। আবার কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাতিলের সুযোগ রাখা হয়েছে। বাড়িভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসায় সাড়ে চার লাখ টাকা পর্যন্ত কর ছাড় দেওয়ার প্রস্তাবও করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ‘আয়কর বিল ২০২৩’ জাতীয় সংসদে তোলেন। পরে বিলটি পাঁচ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। আয়কর আইনে সব মিলিয়ে ২৫টি অধ্যায়, ৩৪৫টি ধারা, ৮টি তফসিল আছে। আয়কর আইনটি বাংলা ভাষায় প্রণীত হয়েছে।
গত বছরের শেষ দিকে আয়কর আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৩৭০ কোটি ডলার ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ। আইএমএফের শর্ত পূরণ করতে আয়কর আইন পাস করানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
আইনটি সম্পর্কে এনবিআরের সাবেক সদস্য (আয়কর নীতি) সৈয়দ আমিনুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোটা দাগে আইনটি ভালো হয়েছে। বাংলা ভাষায় হওয়ায় করদাতাদের জন্য সহজবোধ্য হয়েছে। বর্তমানে আয়কর অধ্যাদেশের ৩৩ জায়গায় কর কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে। নতুন আইনে এত জায়গায় এ ধরনের ক্ষমতার কথা বলা নেই। তবে কর কর্মকর্তা ও করদাতা—উভয়ের এই আইনে অভ্যস্ত হতে সময় লাগবে।’
কিছু কিছু ক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত করদাতাদের চাপ বাড়বে বলে মনে করেন সৈয়দ আমিনুল করিম। তিনি জানান, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াতে কর ছাড় আছে। এখন সাড়ে চার লাখ টাকা বা মোট আয়ের দুই-তৃতীয়াংশ যা কম সেটি প্রযোজ্য হবে। এতে ছোট চাকরিজীবীদের সুবিধা আগের চেয়ে কমবে। এ ছাড়া করদাতাদের সঙ্গে আরও আলোচনা করে আইনটি জাতীয় সংসদে নিয়ে গেলে আরও ভালো হতো বলে মনে করেন তিনি।
এবারের আয়কর আইনে কোম্পানি সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এনজিও, শিল্প ও বাণিজ্য সংগঠন, ফাউন্ডেশন, সমিতি, সমবায় সমিতি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে কোম্পানির সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের করহারসহ অন্যান্য নিয়মকানুন কোম্পানি হিসেবে পরিপালন করতে হবে।
বর্তমানে যেসব কোম্পানি বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে উৎসে কর কাটে, তাদের বছরে দুবার উৎসের করের বিস্তারিত জানিয়ে এনবিআরে রিটার্ন জমা দিতে হয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষ, বিদ্যালয় ব্যতীত অন্য সব কোম্পানি; ফার্ম, ব্যক্তিসংঘ, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে আগের মাসের উৎসে কর আদায়ের রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
বর্তমানে ৩৮টি সরকারি-বেসরকারি সেবা নিতে হলে বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগে। নতুন আইনে এই তালিকায় আরও পাঁচটি খাত ঢোকানো হয়েছে।
এগুলো হলো: ১. নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক সিটি করপোরেশন এলাকায় বাড়িভাড়া বা লিজ গ্রহণের সময় বাড়ির মালিকের; ২. নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক সেবা বা পণ্য গ্রহণকালে ওই পণ্য বা সেবা সরবরাহকারীর; ৩. ট্রাস্ট, তহবিল, ফাউন্ডেশন, এনজিও, ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী সংস্থা, সোসাইটি ও সমবায় সমিতির ব্যাংক হিসাব খুলতে ও চালু রাখতে; ৪. স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি ও কার্টিজ পেপারে ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে নিবন্ধন, লাইসেন্স বা তালিকাভুক্তি করতে বা বহাল রাখতে; ৫. রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে এমন গঠিত কর্তৃপক্ষ বা অন্য সিটি করপোরেশন, পৌরসভায় অনুমোদনের জন্য ভবন নকশার আবেদন দাখিলকালে।
মোট আয়ের ৩ শতাংশ বা নিয়মমাফিক মোট বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ কিংবা ১০ লাখ টাকা—এর মধ্যে যেটি কম হবে, তাই বিনিয়োগজনিত কর রেয়াতের পরিমাণ হবে।
এ ছাড়া নতুন আইনে পুনর্গঠন-মার্জার, ডিমার্জারকে ট্যাক্স নিউট্রাল করে আইনি বিধান করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া স্টার্টআপ পরিবেশ শক্তিশালী করতে স্টার্টআপ স্যান্ডবক্সের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অবশ্য গতবারই সন্নিবেশিত করা হয়। এ ছাড়া কর কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছা ক্ষমতা কমানোর বিধান সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
#সুত্র: প্রথম আলো