
27/06/2025
পুরুষের অহংকার, বউয়ের সততায় চুরমার-:
করিশমা কাপুরের প্রাক্তন স্বামী সঞ্জয় কাপুরের মৃত্যুর পর তার এক বন্ধু তার ফ্ল্যাটে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনতে যান। যেহেতু সঞ্জয় কাপুর আমেরিকার নাগরিক ছিলেন, তিনি থাকতেন লন্ডনে আর তার পরিবার দিল্লিতে থাকে। সে কারণে শেষকৃত্য করার জন্য তার পার্থিব শরীর ভারতে আনার সময় অনেক জটিলতার সৃষ্টি হয়। সেই সমস্ত প্রক্রিয়াকরণের জন্য যখন তার বন্ধু তার ফ্ল্যাটে গিয়ে কাগজপত্র উদ্ধারের চেষ্টা করেন তখন তার হাতে সঞ্জয় কাপুরের লেখা একটা ডায়েরী, একটা ওয়াটারপ্রুফ লকড ল্যাপটপ আসে। সেই ডাইরির ছত্রে ছত্রে দুটি নাম লেখা ছিল কারিশমা আর প্রিয়া।
ডায়েরির প্রত্যেকটা কথা লিখতে গেলে এই লেখাটা অনেক বড় হয়ে যাবে শুধু সংক্ষেপে এটুকু বলি তিনি লিখেছিলেন, তার জীবন থেকে করিশমার চলে যাওয়াটা অপূরণীয় ক্ষতি। করিশমার প্রতি তিনি অন্যায় অত্যাচার করে তিনি দগ্ধ, অনুতপ্ত। তিনি লিখেছিলেন কারিশমা হলেন সুখ শান্তিপূর্ণ একটি গৃহকোণ এর মতো আর প্রিয়া হলেন ঝাঁ চকচকে সব রকম সুবিধে যুক্ত হোটেলে রুমের মত যেখান থেকে সার্ভিস নিতে গেলে পেমেন্ট করতে হয় এবং এরকম আরো অনেক কিছু লেখা ছিল। আর বন্ধ ল্যাপটপে পাসওয়ার্ড প্রটেক্টেড করে সযত্নে রাখা ছিল তাদের ডিভোর্সের পরের সেই সব ফটো যেখানে দুজন বাচ্চার সাথে সঞ্জয় এবং কারিশমা তাদের বিশেষ দিনগুলি এবং ছুটির দিন কাটিয়েছিলেন। তাছাড়া স্পেশালি কারিশমা কাপুরের জন্য একটা ফোল্ডার রাখা আছে পাসওয়ার্ড প্রটেক্টেড করে যেটা লন্ডন পুলিশ খোলার চেষ্টা করছিল। তার ওয়ালেটে দুই সন্তানের সাথে কারিশমা একটা ফটো রাখা ছিল। কারিশমা তার জীবন থেকে চলে যাওয়ার পরে তার সমস্ত অহংকার দম্ভ একেবারেই চূর্ণ হয়ে গেছিল প্রিয়ার আচরণে। তিনি স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছিলেন প্রিয়া তাকে শুধুমাত্র সম্পত্তির জন্য বিয়ে করেছেন। ডায়েরির একটা জায়গায় তিনি লিখেছেন প্রত্যেকদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হতো একটা বিজনেস ডিল সেরে উঠলাম। যেটা তিনি সমস্ত পৃথিবী থেকে লুকোতেন, সব সময় হাসি খুশি থাকার চেষ্টা করে সবকিছু স্বাভাবিক দেখাতেন। অর্থের জন্য কারিশমা কাপুর তাকে বিয়ে করেছেন এই অভিযোগ তিনি ডিভোর্সের সময় এনেছিলেন। অথচ কারিশমা কে ঠকিয়ে অত্যাচার করে, বাড়িছাড়া করে যাকে আনলেন আসলে সে এসেছিলেন অর্থের লোভে....অদৃষ্টের কি পরিহাস। তার ডাইরি এবং ল্যাপটপ এটা প্রমাণ করে যে বাহ্যিকভাবে করিশমার সাথে সম্পর্ক শেষ হলেও অন্তর থেকে তিনি কোনদিনই এই সম্পর্কটা শেষ করতে পারেননি অথচ কারিশমার প্রতি দুর্বলতার কথাও তিনি কোনদিন তাকে জানাতে পারেননি। প্রতিটি মুহূর্তে তিনি কারিশমা এবং তার দুই সন্তানের অভাব বোধ করেছেন। তদন্ত করে সমস্ত দেখে লন্ডন পুলিশের মনে হয়েছে তিনি হয়তো মৃত্যুভয় পাচ্ছিলেন সে কারণে এই কেসটাকে ক্রিমিনাল অ্যাঙ্গেল থেকেও তদন্ত করা হয়েছে।
দিল্লির লোধি রোডের শ্মশানে উনিশে জুন সঞ্জয় কাপুরের পার্থিব শরীর পৌঁছয়। গত ১২ ই জুন সকালবেলা লন্ডনে পোলো গ্রাউন্ডে পোলো খেলার সময় মৌমাছি গিলে সঞ্জয় কাপুর ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে যান এবং অল্প সময়ের মধ্যে তার মৃত্যু ঘটে এ ঘটনার কথা মোটামুটি সবাই জানে। যাই হোক লোধী রোডের শ্মশান ঘাটে জমে থাকা ভিড়ের মধ্যে সবার নজর ছিল কারিশমা কাপুর এর উপর। প্রাক্তন স্বামী, তার দুই সন্তানের পিতার আকস্মিক মৃত্যুতে বিষাদে পূর্ণ চোখ দুটি কালো চশমায় ঢাকা ছিল। না, তিনি কোন সম্পর্কের দাবিতে আসেননি শুধুমাত্র একজন দায়িত্ববান মা, তার দুই সন্তানকে তাদের পিতার শেষযাত্রায় সামিল করার তাগিদে এসেছিলেন। অত্যন্ত ধীর স্থির শান্ত করিশমা নিজের আবেগকে সংযত রেখে সন্তানদের সামলাচ্ছিলেন। এবং সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো অন্তোস্টি ক্রিয়ার সময় সমস্ত নিয়ম কানুন পুরোহিতের থেকে জেনে নিজের পুত্র সন্তানের হাত দিয়ে স্বামীর মুখাগ্নি কারিশমা নিজের তদারকিকে দায়িত্বপূর্ণভাবে সম্পন্ন করেছেন। সঞ্জয়ের বর্তমান স্ত্রী প্রিয়া নাকি শোকে ম্যুহমান থাকার কারণে কারিশমা অন্তিম কার্যে স্ত্রীর সমস্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রিয়া শোকে মূহ্যমান ছিলেন নাকি এই বন্ধ ডায়েরী, ল্যাপটপে তার স্বামীর তার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি দেখে ভয়ে, লজ্জায় মুখ ঢেকে ছিলেন সেটাই বা কে বলতে পারে। কারণ এই প্রিয়ার সাথে অবৈধ সম্পর্কের কারণে সঞ্জয় এবং সঞ্জয়ের পরিবারের লোক কারিশমা কে বাড়িছাড়া করেছিলেন। ডাইরিতে সঞ্জয় লিখেছেন জীবনের অশান্তি থেকে নিস্তার পেতে তিনি রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর চেষ্টা করতেন কিন্তু ঘুমোতে কি পারতেন। তিনি আরো লিখেছেন কারিশমার প্রতি, বাচ্চাদের অধিকার যদি কেউ খর্ব করার চেষ্টা করে তাহলে যেন তিনি আইনি লড়াই লড়েন। কারিশমা চলে যাওয়ার পরে সঞ্জয়ের জীবনে সব ছিল কিন্তু শান্তি, স্বস্তি ছিল না। তাছাড়া সঞ্জয়ের পরিবারের তরফ থেকে তার বড় ভাই সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন ঘটনার আকস্মিকতায় তাদের পরিবার একেবারে শোকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছিলেন। এই বিপদের সময় করিশমা একেবারে বাড়ির ছাদের মত এসে সবকিছু সামলেছেন অথচ এই পরিবারই একদিন প্রিয়ার কারণে কারিশমা কে বাড়িছাড়া করেছিল।
ঘনিষ্ঠরা বলেন এই সবকিছু জানার পরে করিসমা কোন প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে দুজন সন্তানকে নিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করেন। সেরকমই শ্মশানেও তাকে দেখে কোন ভাবে বোঝার উপায় ছিল না যে তাদের সম্পর্কটার সমাপ্তি অত্যন্ত তিক্তভাবে হয়েছিল। শোনা যায় কোর্ট রুমে কারিশমা আর সঞ্জয়ের মধ্যে তীব্র কাঁদা ছোড়াছড়ি হয়েছিল কিন্তু তখনও করিশমা মারাত্মক সংযম দেখিয়েছিলেন, তিনি সংবাদ মাধ্যমের সামনে এসে কোনদিনও তার স্বামীর বিরুদ্ধে অথবা তার বিচ্ছেদ সম্পর্কে কোন কথা বলেননি। সন্তানদের স্বাভাবিক জীবন দেওয়ার চেষ্টায় সমস্ত তিক্ততা অন্তরের অন্তস্থলে রেখে করিশমা বাচ্চাদের নিয়ে সঞ্জয়ের সাথে তাদের সন্তানদের ছুটি অথবা বিশেষ দিনগুলিতে একসাথে কাটাতেন। কিন্তু সঞ্জয়ের শেষ কৃত্য করার সময় হয়তো তার প্রতি আর কোন তিক্ততা ছিল না কারিশমার। কারণ ততক্ষণে তিনি জেনে গেছেন তার স্বামী তার প্রতি করা অন্যায় অত্যাচারের কারণে কতখানি দগ্ধ অনুতপ্ত ছিলেন। একদিন অন্যায় অত্যাচারের শিকার হয়ে তার হৃদয়ের যে দরজা সঞ্জয়ের জন্য তিনি বন্ধ করেছিলেন, সঞ্জয়ের ওয়ালেটের থেকে পাওয়া দুই সন্তানের সঙ্গে তার ফটোটাকে ফ্রেম করিয়ে তার শোবার ঘরে রেখে আবার তিনি সঞ্জয়ের জন্য তার হৃদয়ের দরজা খুলে দিয়েছেন….. কিন্তু সঞ্জয় সেটা জানতে পারলেন না, যেরকম সঞ্জয়ের মৃত্যুর আগে পর্যন্ত করিশ্মা তার মনের কথাটা জানতে পারেননি অথবা সঞ্জয় জানাতে পারেননি।
পৌরুষের দম্ভে অহংকারে সৎ স্ত্রীর প্রতি অন্যায় অত্যাচার করার পরে সব স্বামী কি এইভাবে দগ্ধ অনুতপ্ত হন এবং সেটা মুখে প্রকাশ করতে পারেন না….. ঈশ্বরই জানেন….. কিন্তু সঞ্জয়ের বিষয়টা তার ডায়েরী এবং ল্যাপটপ থেকে জানা গেল…. সব পুরুষ পরকীয়া করার সময় যদি সঞ্জয়ের মত বুঝতে পারতেন যে সৎ স্ত্রীরা হল সুখী শান্ত গৃহকোণ আর পরকীয়ার প্রেমিকারা হল সুবিধা প্রাপ্ত হোটেল যার জন্য মোটা অংকের অর্থ ব্যয় করতে হয়….. আবার কখনো হয়তো অর্থ ব্যয় করতে হয় না উল্টে অর্থ পাওয়াও যেতে পারে কিন্তু তার জন্য নিজের সুখ, শান্তি, পারিবারিক সম্মানকে পরকীয়ার নৈবিদ্য হিসেবে উৎসর্গ করতে হয়....😊
(সংগৃহীত)