Reasonable

Reasonable Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Reasonable, Digital creator, Fulbaria.

নীলরতন সরকার হাসপাতালের anatomy বিভাগ এবং শৌভিক।তখন ১৯৯৮ সাল।৩০ সেপ্টেম্বর আসানসোল থেকে পাঁচ বছরের অসুস্থ শৌভিক চিকিৎসার...
24/07/2025

নীলরতন সরকার হাসপাতালের anatomy বিভাগ এবং শৌভিক।
তখন ১৯৯৮ সাল।
৩০ সেপ্টেম্বর আসানসোল থেকে পাঁচ বছরের অসুস্থ শৌভিক চিকিৎসার জন্য কলকাতায় আসে। ভর্তি হয় কলকাতার এস এস কে এম হাসপাতালে। বেশ কিছু দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর বাবার কাছে সে আবদার করে সে আর আসানসোলে ফিরে যাবে না, এই শহর কলকাতাতেই থাকবে। শেষ পর্যন্ত বাবা-মা ওকে একা ফেলে রেখে আসানসোলে চলে যায়। হ্যাঁ, তারপর থেকে শৌভিক একাই এখনও এই শহর কলকাতাতেই আছে। এখন, নিশ্চয়ই আপনার কৌতুহলি মনে প্রশ্ন জাগছে যে শৌভিক কোথায় আছে? কেনইবা আর আসানসোলে ফেরত গেল না? তার এ কি রকম বাবা-মা?
এস এস কে এম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শৌভিকের চিকিৎসকেরা জানালেন খুব দ্রুত শৌভিকের জন্য রক্ত লাগবে। সেই দিনটা ছিল ২৯ অক্টোবর। শৌভিকের বাবা মনিময়, একজন পরিচিত জুনিয়র ডাক্তারকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতার সমস্ত ব্লাড ব্যাঙ্ক ঘুরলেন। রক্ত পাওয়া গেল না। রক্তের অভাবে নয়, দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল শৌভিকের হৃদস্পন্দন। শোকে বিহ্বল হলেন না মনিময়বাবু। বরং তিনি করলেন এক অভিনব প্রতিবাদ। পাকাপাকিভাবে শৌভিকের কলকাতায় থাকার ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করলেন। পাঁচ বছরে পুত্র শৌভিকের মৃতদেহ দান করার মধ্য দিয়ে। নীলরতন মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগ মনিময়বাবুর উদ্যোগকে পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে শৌভিকের পাকাপাকি কলকাতায় থাকার ব্যবস্থা করেন। সত্যি আজও নীলরতন মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগে শৌভিক আছে। লেকচার রুমে কাঁচের বাক্সের মধ্যে ওর কঙ্কালটা আছে। অমানবিকতার বিরুদ্ধে শৌভিক দৃষ্টান্ত হিসেবে আজও বিদ্যমান।

(তথ্য সংগৃহীত)

পুরুষ জলহস্তী কেন নিজ শিশুকে হ ত্যা করে?একবার ভাবুন তো, জলহস্তী পরিবারে ২৪৩ দিন গর্ভধারণের পর একটা শিশু জলহস্তীর জন্ম। ক...
23/07/2025

পুরুষ জলহস্তী কেন নিজ শিশুকে হ ত্যা করে?
একবার ভাবুন তো, জলহস্তী পরিবারে ২৪৩ দিন গর্ভধারণের পর একটা শিশু জলহস্তীর জন্ম। কিন্তু ছেলে সন্তান হলেই বাড়ে যত বিপত্তি। পিতার হাতে ছেলে খু ন। এমন ভাবনায় পরিবারের বাকি সদস্যরা সন্তানকে সারাক্ষণ পাহাড়ায় রাখে, যাতে বাবা তার সন্তানকে হত্যা করতে না পারে। আর বাবা সারাক্ষণই সুযোগ খুঁজে বেড়ায়। একটা ছোট সুযোগই যথেষ্ট; বাবার বিশালাকৃতি মুখের ১ ফুট লম্বা তীক্ষ্ণ দাঁতের আ ঘা তে সন্তানকে হ ত্যা করার জন্য।

কিন্তু বাবার হাতে ছেলে খু নের কেনো এই নৃ শং স তা?

ডাঙ্গায় থাকা প্রাণীদের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম প্রাণী হচ্ছে জলহস্তী। তৃণভোজী এই প্রাণীর ওজন, ১৩০০-১৮০০ কেজি পর্যন্ত হয়। এদের এক একটি দলে ৬-১০ টি পর্যন্ত সদস্য থাকে। যাদের মধ্যে একটিই মাত্র পুরুষ সদস্য। বাকিসব নারী সদস্য। পুরুষ সদস্যটি তার হেরেমে কখনো অন্য পুরুষকে আশ্রয় দিতে চায়না। কারণ, সে কখনো তার রাজত্ব হাতছাড়া করতে চায়না। পরিবারে কণ্যা সন্তানের জন্ম হলে পরম মমতায় সে বড় হয়। আর ছেলে সন্তানের জন্ম মানেই তার রাজত্বের জন্য হুমকি। তাই পুরুষ সদস্যটি সুযোগ পেলে ছেলে জন্মের পরপরই হ ত্যা করে ফেলে। তবে ছেলে সন্তানটি যদি বাবার পায়ে পড়ে বশ্যতা স্বীকার করে, তখন কোন কোন ক্ষেত্রে বাবা তাকে হ ত্যা করে না। তবে সবসময়ই সতর্ক থাকে। রাজ্যের জন্য হুমকি মনে হলে মৃত্যু ব্যাতিত অন্য কোন পথ নেই।

তবে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ছেলে সন্তানটিকে লুকিয়ে বড় করার চেষ্টা করে। তবে সেজন্য ২৪ ঘন্টাই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। এক সময় সন্তান যখন পরিনত হয়, তখন সে বাবার বিরুদ্ধে বি দ্রো হ ঘোষণা করে। তখন পিতা ও সন্তানের মাঝে জীবন মরন লড়াই হয়। সেখানে মৃত্যু বা পরাজয় বরণ করে মৃতপ্রায় হয়ে দলত্যাগ ব্যাতিত ভিন্ন কোন সুযোগ নেন। প্রকৃতিতে আরো কিছু প্রাণীদের মধ্যে এই প্রবণতা দেখা গেলেও জলহস্তীদের মধ্যে এর প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।

কার্টেসীঃ Animal Welfare Society of SAU

রুমে দুটো বিছানা। একটাতে আমি আর স্ত্রী ঘুমাই। 😊অন্যটাতে আমাদের দশ বছরের ছেলে ঘুমায়। এক রাতে ছেলেটা খুব কাশছিলো। ছেলের কা...
18/07/2025

রুমে দুটো বিছানা। একটাতে আমি আর স্ত্রী ঘুমাই। 😊অন্যটাতে আমাদের দশ বছরের ছেলে ঘুমায়। এক রাতে ছেলেটা খুব কাশছিলো। ছেলের কাশির শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম ভেঙে যাওয়াতে এবং ছেলের বিরতিহীন কাশির শব্দ শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। 🙂

ঘুমন্ত স্ত্রীকে ধাক্কা দিয়ে উঠিয়ে তিরিক্ষি স্বরে বললাম,"ছেলে ঘুমাতে পারছে না, আমি ঘুমাতে পারছি না, আর তুমি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছো? লজ্জা করে না?"

হঠাৎ ঘুম ভাঙাতে স্ত্রী হতভম্ব হয়ে গেলো।

তারপর বললাম,"তোমার জন্য ছেলের এই অবস্থা। আমি সারাদিন খেটে খেটে মরছি। আর তুমি আছো শুধু খাওয়া আর ঘুম নিয়ে। ছেলে কী করছে, কী খাচ্ছে, সে খেয়াল আছে? যদি সঠিক ভাবে ছেলের যত্ন নিতে তাহলে ছেলে অসুস্থ হতো না।"

স্ত্রী বললো,"সব বাচ্চাদের অসুখ বিসুখ হয়। এর জন্য কি মায়েরা দায়ী? কোনো মা কি চায় তার বাচ্চা অসুস্থ হোক? আর ছেলের দেখাশোনা একা আমাকে কেনো করতে হবে? তুমিও তো দেখতে পারো?"

স্ত্রীর কথা শুনে এতোটাই রেগে গেলাম যে, তুই তোকারি শুরু করলাম।

"একদম চুপ। একটা কথা বলবি না। আমার খাবি, আমার পরবি, আবার আমার মুখে মুখে তর্ক করবি? আমার ঘরে থাকতে হলে আমি যেভাবে বলবো সেভাবে চলবি। নইলে ঘর থেকে বের করে দেবো।"

স্ত্রী আর কিছু না বলে শোয়া থেকে উঠে ছেলের কাছে গেলো। ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে বিছানায় এলো। আমি ঘুমিয়ে পড়ার আগে টের পেলাম ও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। কাঁদুক। দোষ করবে আবার মুখে মুখে তর্ক করবে!

পরদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি স্ত্রী নেই। ছেলের কাছ থেকে জানলাম স্ত্রী বাবার বাড়ি চলে গেছে। স্ত্রীর চলে যাওয়ার কথা শুনে প্রথমে দেমাক দেখিয়ে বললাম, গেছে ভালো হয়েছে। আপদ বিদায় হয়েছে।

কিন্তু কিছুদিন পরই বুঝতে পারলাম, মহা বিপদে পড়েছি। চাকরি, রান্নাবান্না, ছেলের দেখাশোনা সব মিলিয়ে নাজেহাল হয়ে গেলাম। তবু জেদ করে স্ত্রীকে আনলাম না। কাজের বুয়াকে টাকা বাড়িয়ে দিলাম, যাতে সে প্রতিদিন আসে। ঘরের কাজকর্ম এক রকম চালিয়ে নিচ্ছিলাম। কিন্তু সমস্যায় পড়লাম ছেলেকে নিয়ে। কিছুদিন পর পর ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এতো যত্ন নেয়ার পরও কেনো ছেলে ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়ে বুঝতে পারলাম না। তখন আবিষ্কার করলাম, স্ত্রী থাকাকালীন সময়ে ছেলে এতো অসুস্থ হতো না। অর্থাৎ স্ত্রী যে আমার চেয়ে ছেলের ভালো যত্ন নিতো এটা পরিষ্কার হয়ে গেলো।

এই উপলব্ধির পর সেদিন রাতে স্ত্রীর সাথে যে অযথা বাজে ব্যবহার করেছিলাম তার জন্য অপরাধ বোধ জেগে উঠলো। এবং স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিলাম।

সাথে সাথে স্ত্রীকে ফোন করলাম। কিন্তু সে ফোন ধরলো না। যতোই ফোন করি সে ফোন ধরে না। ফোনে মেসেজ পাঠিয়ে সরি বললাম। আর কখনো এমন করবো না, তাও বললাম। কিন্তু কোনো কাজ হলো না। সে মেসেজ পড়েও দেখলো না।

অতঃপর শ্বশুরবাড়ি যাওয়া ছাড়া অন্য উপায় রইলো না। পরদিনই শ্বশুরবাড়ি গেলাম। অনেকক্ষণ ছিলাম সেখানে। কিন্তু স্ত্রীকে আনতে পারলাম না। সে আমার সামনেই এলো না। বুঝতে পারলাম, সে আমার উপর ভালোই রেগে আছে। পরদিন শ্বশুরবাড়িতে আবার গেলাম। এবার স্ত্রীকে খুশি করার জন্য ওদের বাড়ির সবার জন্য নানা রকম উপহার নিয়ে গেলাম। আর ওর জন্য নিলাম দামী শাড়ি। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হলো না।

মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো। একটা অন্যায়ের জন্য এমন শাস্তি পেতে হবে ধারণা করি নি। রাতে ঘুমাতে পারি না। খাওয়ার রুচি চলে গেলো। সব মিলে বাজে সময় কাটতে লাগলো।

একদিন সকালে অফিসে না গিয়ে পার্কে চলে গেলাম। বিষণ্ণ মনে চুপচাপ বসে থাকলাম। আধ ঘণ্টা পর ছোট্ট একটা মেয়ে ফুল বিক্রি করার জন্য এলো। মেয়েটার মুখটা শুকনো। দেখে বোঝা যায় ক্ষুধার্ত। কিন্তু আমি এখন ফুল নিয়ে করবোটা কী? স্ত্রী নেই। তাই ফুল কেনার প্রয়োজনীয়তা বোধ করলাম না।

মেয়েটাকে বললাম,"ফুল লাগবে না।"

ফুল লাগবে না শুনে মেয়েটার শুকনো মুখ আরো শুকনো হয়ে গেলো।
ঐ শুকনো মুখে বললো,"সকাল থাইকা কোনো ফুল ব্যাচতে পারি নাই। একটা ন্যান না স্যার।"

"স্ত্রী রাগ করে বাবার বাড়ি চলে গেছে। ও থাকলে ফুল নিতাম। কিন্তু এখন ফুলের কোনো প্রয়োজন নেই।"

এসব সাংসারিক কথা ছোট্ট মেয়েটাকে বলা অর্থহীন। তবু কেনো জানি বলে দিলাম।

মেয়েটা আর কিছু না বলে নিরাশ মুখে চলে যেতে লাগলো। চলে যাওয়া মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। নিশ্চয়ই মেয়েটার অনেক সময় ধরে খাওয়া হয় নি।

ডাকলাম মেয়েটিকে,"এই শোনো।"
মেয়েটা ফিরে এলো।
বললাম,"আমি তোমার কাছ থেকে ফুল নেবো। একটা নয়, বেশ কয়েকটা নেবো। তবে আমার একটা কথা তোমাকে শুনতে হবে।"

"কী কথা?"
"ঐ যে একটা রেস্টুরেন্ট দেখতে পাচ্ছো, আমি এখন সেখানে খেতে যাবো। তুমি আমার সঙ্গে যাবে। আমরা দুজন একসাথে খাবো। তোমাকে আমি খাওয়াবো।"

মেয়েটি কী বলবে বুঝতে পারছিলো না। সে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।

বললাম,"এতো ভাবার সময় নেই। আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে। জলদি চলো। খাওয়া শেষ হলে সুন্দর একটা ফুলের তোড়া বানিয়ে দেবে। কী দেবে তো?"

মেয়েটি মাথা নেড়ে বললো, দেবে।

মেয়েটিকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে গেলাম। আমার ক্ষিধে ছিলো না। অনেকদিন থেকেই ক্ষিধে নেই। শুধু মাত্র মেয়েটাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য খেলাম। খাওয়া শেষে সে সুন্দর একটা ফুলের তোড়া বানিয়ে দিলো। মেয়েটিকে সাহায্য করা ছাড়া ফুলগুলো কেনার আর কোনো উদ্দেশ্য ছিলো না। সেই ফুলের তোড়াটি নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।

বাড়িতে ঢুকে চমকে উঠলাম। দেখি স্ত্রী রান্নাঘরে রান্না করছে, আর ছেলে তাকে সাহায্য করছে।

ফুল হাতে আমাকে দেখে স্ত্রী বললো,"কী ব্যাপার, তুমি আজ অফিসে যাও নি? আর হাতে ফুল কেনো? কেউ দিয়েছে, নাকি কারো জন্য কিনেছো? আমি কদিন ছিলাম না, তার মধ্যে এতো কিছু!"

স্ত্রী কী বলছিলো মাথায় ঢুকছিলো না। আমি শুধু আশ্চর্য হয়ে চেয়ে আছি স্ত্রীর দিকে। এতো কাকুতি মিনতি করেও যাকে ফিরিয়ে আনতে পারি নি, সে আজ নিজ থেকে কী করে ফিরে এলো?

স্ত্রীকে দেখে এতো ভালো লাগলো যে, বলার মতো নয়। ইচ্ছে করছিলো খুশিতে ভেউ ভেউ করে কাঁদি।

আচ্ছন্নের মতো স্ত্রীর কাছে এসে বললাম,"নাজনীন, আবার কখনো যদি তোমার সাথে বাজে আচরণ করি তাহলে জুতা দিয়ে মেরো। তবু প্লিজ বাড়ি ছেড়ে চলে যেও না। তুমি না থাকলে এই সংসার জাহান্নাম হয়ে যাবে।"

তারপর ফুলের তোড়াটি স্ত্রীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,"এই ফুলগুলো কেনার কোনো ইচ্ছে ছিলো না। তবু কেনো কিনলাম, এখন বুঝতে পারছি। তুমি আসবে বলে আল্লাহ আমাকে দিয়ে ফুলগুলো কিনিয়েছেন। প্লিজ নাও।"

সে হাসি মুখে ফুলগুলো নিলো।
স্ত্রীর রান্নার দিকে তাকিয়ে এরপর বললাম,"নাজনীন, তুমি চলে যাওয়ার সাথে সাথে আমার ক্ষিধেও হারিয়ে গিয়েছিলো। তুমি ফিরে আসাতে বহুদিন পর আজ আবার ক্ষিধে অনুভব করছি। আজ অনেক ভাত খাবো। দীর্ঘদিনের না খাওয়া ভাত আজ একসাথে খাবো।"

ছেলেটাও সুর মিলিয়ে বললো,"আজ আমিও অনেক ভাত খাবো।"

স্ত্রী বললো,"তোমরা গোসল সেরে টেবিলে এসো। আমি খাবার দিচ্ছি।"

সেদিন সারাদিন ভেবেছি স্ত্রীর এই হঠাৎ ফিরে আসার ব্যাপারটা। ভেবেছি স্ত্রীর ফিরে আসার সাথে ছোট্ট মেয়েটাকে সাহায্য করার কোনো সম্পর্ক আছে কিনা?

সন্ধ্যায় এর উত্তর পেলাম।

সন্ধ্যায় স্ত্রী পড়ার টেবিলে ছেলেকে একটা হাদীস শেখাচ্ছিলো।
স্ত্রী ছেলেকে বললো,"একদিন এক লোক নবীজী (সঃ) কে প্রশ্ন করলো,'ইয়া রাসুলাল্লাহ, কেউ যদি একটা অন্যায় কাজ করে ফেলে তাহলে এর প্রতিকার হিসেবে সে কী করবে?'
নবীজী বললেন,'সে আল্লাহর কাছে তওবা করবে। যার সাথে অন্যায় করা হয়েছে তার কাছে ক্ষমা চাইবে। এবং একটা ভালো কাজ করবে। তাহলে আল্লাহ ঐ অন্যায়ের গুনাহ মাফ করে দেবেন এবং ভালো কাজের পুরষ্কার দেবেন'।"

স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম,"হে আল্লাহ, আপনি অসাধারণ পুরষ্কার দিয়েছেন। অসাধারণ।"

এই ছবিটির শিরোনাম দিতে পারেননি কেউ। এমনকি, এর চিত্রগ্রাহক ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো'র ফটোগ্রাফার নিজেও, ছবিটির শিরোনাম-বিষয়ক প্...
17/07/2025

এই ছবিটির শিরোনাম দিতে পারেননি কেউ। এমনকি, এর চিত্রগ্রাহক ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো'র ফটোগ্রাফার নিজেও, ছবিটির শিরোনাম-বিষয়ক প্রশ্নে চুপ থেকেছেন চিরকাল। ছবির দু'জনের একজন─ মা, সোমায়েহ্‌ মেহরি, ২৯ বছর বয়সী তরুণী; অপরজন তাঁর কন্যা, ৩ বছর বয়সী─ রানা আফগানিপোর। দক্ষিণ ইরানের ব্যাম শহরে বাড়ি তাঁদের। খুব প্রিয়তম মানুষটি─ সোমায়েহ্‌'র স্বামী, রানা'র বাবা─ অ্যাসিড ছুঁড়ে মেরেছিলো স্ত্রী-কন্যার দেহে। চিরতরে চেহারার স্বাভাবিক রূপ হারিয়ে ফেললেন দু'জন মানুষ। আহ্!

বহু চেষ্টা শেষে, মা ও কন্যা, উভয়কেই বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হলেন চিকিৎসকেরা। সুস্থ হওয়ার পরে, এই ছবির দৃশ্যটিই ছিল তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ, হাসপাতালে। কন্যার মুখখানা দেখে, মায়ের বুকের ভিতরে কেমন ছিল ওসময়কার হৃৎপিণ্ডটির ধুকপুক? কেউই জানে না। জানে না, কন্যার ছোট্ট অন্তরটুকু ফেটে যাচ্ছিলো কিনা চিরচেনা মায়ের ওই রূপটুকু চোখে পড়তেই! ফটোগ্রাফার, ক্যামেরার আই-হোলে রেখেছিলেন তাঁর ঝাপসা চোখ। আশপাশ কাঁদছিলো নিশ্চুপে। ওসময়েই, পরস্পরের দিকে, একছুটে দৌড়ে গিয়েছিলেন কন্যা-জননী। বুকে-বুক মেখে, এই চুমুটি রেখেছিলেন তাঁরা, পৃথিবীর বুকে জমা। এই দৃশ্যের কী নাম দেবেন আপনি?

তবুও মানুষ বেঁচে থাকবে, বিলিয়ন বছর আরও বাঁচবে মানুষ। পৃথিবী আর কতো বিলিয়ন বছর পুরনো হলে পর, একজন পিতা তাঁর কন্যাকে বুকে লুকিয়ে রেখে আশ্বাসে বলবেন─ "আছি তো মা! আছি তো!" একজন স্ত্রী ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকবেন না তাঁর স্বামীর সম্মুখে আর কতো বিলিয়ন বছর বয়স হলে মানবজাতির?

একজন মা তাঁর শিশুকন্যাকে ঘুমের ভিতরেই জড়িয়ে ধরে আছেন, অ্যাসিডে দগ্ধ। "ভয় লাগে মা?" পৃথিবী রে!

এরকম আরেকটি হৃদয়বিদারক দৃশ্য না-দেখুক পৃথিবী। মানুষ মানুষকে ভালোবাসুক। রানা, তুমি ভালো থেকো সোমায়েহ্‌'র বুকে। কী আসে যায় রূপে? এমন আর একটি চুমু মানুষ দিতে পারেনি পরস্পরকে মানবেতিহাসে। বড়ো মমতার চুমু। বড়ো দুঃখের চুমু।

Salah Uddin Ahmed Jewel
#যে_দৃশ্যের_নাম_হয়_না

বহুদিন ধরেই একটি ভুল ধারণা প্রচলিত ছিল যে পুরুষেরা যেকোনো বয়সে অনায়াসে বাবা হতে পারেন। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, বয়স ব...
13/07/2025

বহুদিন ধরেই একটি ভুল ধারণা প্রচলিত ছিল যে পুরুষেরা যেকোনো বয়সে অনায়াসে বাবা হতে পারেন। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুক্রাণুর গুণগত মান কমতে থাকে, বিশেষ করে এতে ডিএনএ ক্ষয়ের (DNA fragmentation) হার বাড়ে। এর ফলেই গর্ভপাত, জন্মগত ত্রুটি, অটিজম, এমনকি মা ও সন্তানের স্বাস্থ্য জটিলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

চমকপ্রদ বিষয় হলো, বর্তমানে বিশেষজ্ঞরা শুক্রাণুকে পুরুষদের “ষষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সংকেত” (Sixth Vital Sign) হিসেবে বর্ণনা করছেন। নারীদের মাসিক চক্র যেমন তাদের প্রজনন ও সামগ্রিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে তথ্য দেয়, তেমনি শুক্রাণুর মানও পুরুষের সার্বিক শারীরিক অবস্থা ও সম্ভাব্য স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি জানাতে পারে। প্রচলিত পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হলো: ১. দেহের তাপমাত্রা ২. রক্তচাপ ৩. হৃদস্পন্দনের হার ৪. শ্বাস-প্রশ্বাসের হার ৫. রক্তে অক্সিজেনের মাত্রাগবেষণাগুলো বলছে, গর্ভধারণে সমস্যার পেছনে শুক্রাণুর মান একটি বড় কারণ। প্রজনন বিশেষজ্ঞ ড. টিয়া জ্যাকসন-বে বলেন, একটি দম্পতির গর্ভধারণে সমস্যা হলে প্রায় অর্ধেক ক্ষেত্রেই সমস্যাটি পুরুষের দিক থেকে আসে। হলিউড তারকারা ৬০ বা তারও বেশি বয়সে সন্তান নিচ্ছেন দেখে অনেকেই ভাবে, পুরুষেরা সারাজীবন সন্তান নিতে পারবেন যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর। ২০২১ সালে যুক্তরাজ্যের এক গবেষণায় দেখা যায়, ৪,২৭১ জন পুরুষের মধ্যে ৫১ বছরের বেশি বয়সীদের গর্ভধারণের সফলতা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়।

তবে সমস্যা শুধু গর্ভধারণেই সীমাবদ্ধ নয়; নিম্নমানের শুক্রাণু গর্ভধারণে সমস্যা, গর্ভকালীন জটিলতা এবং সন্তানের স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলে। এর একটি বড় কারণ হল শুক্রাণুতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জেনেটিক ডিএনএ ক্ষয় বা মিউটেশন জমা হওয়া। গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষের শুক্রাণু কোষ প্রতি ১৬ দিনে একবার বিভাজিত হয় এবং প্রতিবছর প্রায় দুটি নতুন জেনেটিক মিউটেশন জমা হয়, যা বয়সভিত্তিক জটিলতার একটি বড় কারণ হতে পারে। আরও আকর্ষণীয় বিষয় হলো, শুক্রাণু টেস্ট করার মাধ্যমে শুধু উর্বরতা নয়, বরং আপনার সার্বিক স্বাস্থ্য সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়। নিয়মিত টেস্ট করে জানা যায় আপনার শুক্রাণুর সংখ্যা, গতি এবং গঠন ঠিক আছে কিনা। যদি কোনো সমস্যা ধরা পড়ে, তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন বা চিকিৎসার মাধ্যমে ঠিক করা সম্ভব।

তবে সবার জন্য শুক্রাণু সংরক্ষণ করা আবশ্যক নয়। যারা ঝুঁকিপূর্ণ চাকরি করেন, যু*দ্ধে যাচ্ছেন, বা পরিবার শুরু করতে আরও অনেক বছর দেরি করতে চান—তাদের জন্য এটি বিবেচনার বিষয় হতে পারে। এ নিয়ে Yale-এর ইউরোলজিস্ট ড. স্ট্যান্টন হোনিগ বলেন, “আপনি যদি ৩০ বছর বয়সে থাকেন এবং ৫ বছরের মধ্যে সন্তান নিতে চান, চিন্তার দরকার নেই। কিন্তু যদি ১৫ বছর পিছিয়ে যান, তাহলে এটা ভাবা যেতে পারে।” এখন অনেক কোম্পানি এক্ষেত্রে বাসায় বসে শুক্রাণু নমুনা দিয়ে টেস্ট ও ফ্রিজ করার সুবিধা দিচ্ছে।কিন্তু কখন সবচেয়ে ভালো সময় শুক্রাণু পরীক্ষা করার জন্য? উত্তর হলো—যখন এই বিষয়ে প্রথম কৌতূহল জাগে বা পরিকল্পনা মাথায় আসে। অর্থাৎ সন্তান ধারণের পরিকল্পনা ভবিষ্যতের জন্য হলেও, বর্তমানেই নিজের স্বাস্থ্য ও উর্বরতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ভবিষ্যতের পিতৃত্ব এখন শুধু একটি স্বপ্ন নয়, বরং সচেতন প্রস্তুতির ফল।

Md Mahdin Al Abrar
Collected

নুহাশ হুমায়ুনকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার মত কিছু নেই। হুমায়ুন আহমেদের স্বপ্নের নুহাশপল্লী যার নামে বিখ্যাত। নুহাশ কিভা...
11/07/2025

নুহাশ হুমায়ুনকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার মত কিছু নেই। হুমায়ুন আহমেদের স্বপ্নের নুহাশপল্লী যার নামে বিখ্যাত। নুহাশ কিভাবে এমন অদ্ভুত ক্ষমতা রাখে, তার এই লেখা না পড়লে বুঝা যাবে না। নুহাশের সরল অথচ বুক ছেঁড়া এই কথাগুলো পড়ে আমি কেঁদেছি। নুহাশ এক জাদুকরী প্রতিভার কারিগর। বন্ধুরা, আপনারাও একটু ধৈর্য ধরে এই লেখাটা পড়বেন। চোখের জল দাওয়াত করে আনতে হয় না। চোখের জল বড্ড অবাধ্য। যারা নুহাশ হুমায়ুনের লেখাটা পড়েন নি, তারা আশা করি পড়বেন।
Courtesy : Mili Sultana

আমার বয়স তখন এগারো। একমাত্র চেনা পথটা ধরে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছি। যাচ্ছি আমার মায়ের বাসা থেকে বাবার বাসায়। অনেকে জানতে চায়, বাবা-মা আলাদা হয়ে গেলে বাচ্চাদের কেমন লাগে। এ প্রশ্নের কোনো জবাব আমার জানা নেই। সত্যি বলতে কী, এটা আমার কাছে অবাক করা কোনো ব্যাপারও নয়। কারণ এই একটা মাত্র জীবনই আমার চেনা। পেছন দিকে যত দূর মনে পড়ে, সব সময়ই ব্যাপারটা এ রকমই ছিল। আমার বোনেরা বলে, একসময় একটা বিশাল সুখী পরিবার ছিল আমাদের। কিন্তু সেসব আমার কাছে গল্পই, প্রায় রূপকথা। আমার মনে পড়ে না, মা-বাবাকে কখনো একসঙ্গে দেখেছি। আমার কাছে এটাই জীবন। আমিও সুখী একটা পরিবারই পেয়েছি, শুধু একটু বিচ্ছিন্ন, এইটুকুই পার্থক্য। আর এই বিচ্ছিন্নতা তো একটা অস্থায়ী অবস্থা, তাই না? একটা বড় ঝগড়া, কিছুদিন তো সময় নেবেই ঠিক হয়ে যাওয়ার জন্য।

সবাই জানতে চায়, মায়ের সঙ্গে থাকা আর সপ্তাহে এক দিন বা তারও চেয়ে কম বাবাকে দেখতে পাওয়ার ব্যাপারটা কেমন? বন্ধুরা জিজ্ঞেস করে, কার সঙ্গে আমি থাকব, সেটা ঠিক করলাম কী করে? এটা কি সিনেমায় যেমন দেখা যায়, কোর্ট, জজ আর প্রচুর নাটকীয়তায় ঠাসা, সে রকম কিছু কি না? ব্যাপারটা আসলে খুবই সোজাসাপ্টা। আমি যে আমার মা আর তিন বোনের সঙ্গে থাকব, সেটা একরকম নির্ধারিতই ছিল, কাউকে বলে দিতে হয়নি। বাবা তো ব্যস্ত মানুষ, আমার যত্ন নেবেন কখন? তাঁর সঙ্গে দেখা হয় সপ্তাহে এক দিন বা তার চেয়েও কম। এ-ইবা খারাপ কী! আর কার সঙ্গে আমি আছি বা নেই, তাতে কী আসে-যায়! আজ, কাল কি পরশু, আবার তো সবাই একসঙ্গেই থাকব। আগেকার সেই সব দিনের মতো।

১১ বছর বয়সে আমি প্রথম নিজস্ব মোবাইল ফোন পেলাম। একদিন বাবার বাসায় গেছি। উনি কথা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন, আমার মোবাইল ফোন আছে কি না। বললাম, নেই। কোনো ভাবান্তর দেখলাম না। শুধু পরদিন একটা ঝকঝকে নতুন ফোন নিয়ে হাজির হলেন আমার কাছে (মানে আমার মায়ের বাসায়)। খুব খুশি হয়েছিলাম। ছোট্ট, ধূসর রঙের একটা সেট। আটটা আলাদা রিংটোন বাজে। টর্চও জ্বলে। তার চেয়ে বড় ব্যাপার, আমাদের স্কুলে আমিই প্রথম, যে নিজস্ব ফোনের মালিক। পরদিন স্কুলে গিয়ে আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে বললাম ফোনের কথা। সে-ও উত্তেজিত। দুজনে মিলে আমাদের গ্রেডের সব সেকশনের ব্ল্যাকবোর্ডে ফোন নম্বর লিখে রাখলাম। দুর্দান্ত একটা দিন কাটল।

আমি দুপুরে ঘুমাতে খুব অপছন্দ করি, এটা কি আগে বলেছি? বিকেলে ঘুমানো আমার খুবই অপছন্দের। পরদিন স্কুল থেকে ফিরে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আমার বোনের ঘরে ঘুমিয়ে পড়লাম। ভেবেছিলাম, অল্প কিছুক্ষণ ঘুমাব। বোন কলেজ থেকে এসে উঠিয়ে দেবে। সে ওঠায়নি। আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুমালাম। ঘুম ভাঙল রাত আটটার দিকে। ভাবলাম, হোমওয়ার্ক ফেলে সারা দিন ঘুমানোর জন্য বকা খেতে হবে। স্কুলের ড্রেসটাও চেঞ্জ করিনি। আমি সারা বাড়ি হেঁটে বেড়াচ্ছি। সবাই বাসায়। রাত আটটা, স্কুল ইউনিফর্ম পরা আমি, সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছি—মাথায় কিছু ঢুকছে না! কেউ আমাকে খেয়ালও করছে না! আমি যেন অদৃশ্য!

আমার বোনই প্রথম জানাল, মা-বাবার ডিভোর্স হয়ে গেছে। এর মানে কী, বুঝতে পারলাম না। সবাই দেখি হতভম্ব, বিপর্যস্ত। অনুমান করলাম, এমন কিছু ঘটেছে, যা সেপারেশনের চেয়েও খারাপ। একটা পরিবার শুধু আলাদা থাকছে, ব্যাপারটা এখন আর মোটেও সে রকম নেই। কিন্তু তাতে এখন যে ঠিক কী দাঁড়াল, মাথায় ঢুকছে না। বুকটা ভার হয়ে গেল। মা আর সব কটি বোন এমনভাবে ভেঙে পড়ল, দেখে অবাক লাগছে। আমারও কেন ওদের মতো খারাপ লাগছে না? কেন আমিও ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে যাচ্ছি না? মনে হলো, হয়তো ওদের মতোন একটা সুখী পরিবারের স্মৃতি আমার নেই, তাই!

প্রথম কয়েকটা মাস সবকিছু গুমোট হয়ে থাকল। কিছু একটা হয়েছে, কিন্তু কেউ সেটা নিয়ে কথা বলছে না। এই না-বলা দুঃখের কোন দিকটা নৈতিক আর কোনটা অনৈতিক, বুঝতে পারছি না। বাবা কি দোষী? তাঁর সঙ্গে কি কথা বলা বন্ধ করে দেব? নাকি এটা তাঁর প্রতি অন্যায় করা হবে? আমি কি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারব? তাতে কি মায়ের প্রতি অবিচার করা হবে? মা কি কষ্ট পাবেন? এসব প্রশ্ন বুকে ভার হয়ে চেপে বসল। কী করব! যা-ই করি না কেন, আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষগুলোর কাউকে না কাউকে প্রচণ্ড কষ্ট দেওয়া হবে। ডিভোর্সের শোকের চেয়েও আমাকে যন্ত্রণা দিচ্ছিল এসব চিন্তা।

তারপর এমন সময় এল, দিনের পর দিন বাবার সঙ্গে দেখা হয় না, কিন্তু ফোনে কথা হচ্ছে সারাক্ষণই। বাবা পেশায় লেখক, অসম্ভব জনপ্রিয়, তবে নিজেকে তিনি বলেন গল্পকার। তাঁর উপন্যাস প্রতিবছর বেস্ট সেলার হয়। তাঁর সিনেমাগুলোও একই রকম জনপ্রিয়। তাঁর টিভি নাটক প্রতি ঈদের প্রধান আকর্ষণ। গল্প লেখার জন্য লেখকদের মাঝেমধ্যে প্রয়োজন পড়ে উদ্ভট সব তথ্যের। তিনি এ রকম অদ্ভুত সব প্রশ্ন নিয়ে আমাকে হুটহাট ফোন করতেন: দশটি বিরলতম ফোবিয়া কী কী? পশুপাখিরাও কি ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে? গোল্ডফিশের স্মৃতি কতক্ষণ থাকে? বাবা আর ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিনের মাঝখানে প্রধান সংযোগবিন্দুটি আমি। এসব জরুরি তথ্যসেবার বাইরেও সারা দিনে কী ঘটল, স্কুলে আজ কী করলাম না-করলাম ইত্যাদি টুকটাক কিছু নিয়ে কথা বলতাম আমরা। খুব অবাক লাগে, ব্যাখ্যা পাই না, কীভাবে সময়ের সাথে সাথে দুজন কাছাকাছি যেতে থাকলাম!

আমার বয়স তখন তেরো। বাবার লাইব্রেরি ঘরে বসে আ ব্রিফ হিস্টোরি অব টাইম পড়ছি। আর উনি লিখছেন। এক দিনে লেখার কোটা শেষ হয়েছে মনে হলে আমরা ডিভিডি কিনতে বেরিয়ে পড়লাম রাইফেলস স্কয়ারের উদ্দেশে। উনি বেছে নেন ওয়ান ফ্লিউ ওভার দ্য কাক্কুস নেস্ট আর নো ম্যানস ল্যান্ড, যেসব ছবি উনি চান যে আমি দেখি। আমি বেছে নিই স্পাইডারম্যান আর স্পেস জ্যাম। কাউন্টারে ছবির স্তূপ জমে গেলে আমি আবার চোখ বোলাতে থাকি কী কী কিনছি। বেছে বেছে বের করি, কোন কোনটা আগে দেখা হয়ে গেছে, দোকানদারেরা বিব্রত হয় (বাবার ভুলো মন, আমি না থাকলে দোকানদারেরা এক মাসে একই ছবি তিন-চার কপি ধরিয়ে দেবে)। আমরা সব ধরনের ছবি দেখি। বাজি ধরে বলতে পারি, ওই বয়সে, অন্য যে কারোর চেয়ে, বাবার সঙ্গে বসে আমি বেশি ছবি দেখেছি। যখন বাবার সঙ্গে থাকি না, ছুটির দিনটা কাটাচ্ছি মায়ের সঙ্গে, মাঝরাতে টেক্সট পাই—‘বাবা, আই মিস ইউ। আই অ্যাম লোনলি।’

বাবা শুধু এতটুকুই বলেন। মা-ও জানতে চান না বাবার সঙ্গে এতটা সময় কেমন কাটল, কী কী ঘটল। অন্তত আমার কাছ থেকে না। একবার শুনেছি চাচির সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন, ‘তুমি তো জানো, ও কেমন কথার ওস্তাদ, কথা দিয়ে কীভাবে মানুষকে বশ করে। কীভাবে লোকজনকে মুগ্ধ করতে হয়, ওর জানা আছে। নুহাশ বাবার বশে চলে গেছে। ও বাবার সান্নিধ্য পছন্দ করে, আপত্তি নেই, বরং আলাদা হয়ে গেলেই আমার খারাপ লাগত। কিন্তু নুহাশ তো জানে না ওর বাবা আসলে কেমন! ওর বাবা ওকে বেড়াতে নিয়ে যায়, একসঙ্গে সিনেমা দেখে। আর পরীক্ষায় খারাপ করলে আমি বকা দিই। তাতে বাবার প্রতি দরদ আরও বাড়ে ওর। কিন্তু সে যে কখনো ওর দায়িত্ব নেবে না, সেটা নুহাশ বোঝে না। আমার খুব ভয় হয়, একদিন ছেলেটা খুব কষ্ট পাবে।’

তাঁর কণ্ঠে রাজ্যের উৎকণ্ঠা। কিন্তু আমি বুঝি না এই উদ্বেগ, এই উৎকণ্ঠা কীসের! তত দিনে দুঃখটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি আমি। মনে মনে একটা তত্ত্ব দাঁড় করিয়ে ফেলেছি, যেটা এখনো মেনে চলি। ভালোবাসা নির্দিষ্ট, প্রত্যেক মানুষের জন্য আলাদা। একজনের থেকে ভালোবাসা কেড়ে নিয়ে অন্যজনের জন্য ভালোবাসা প্রমাণ করা যায় না। চাইলেও সেটা করা সম্ভব নয়। ভালোবাসা ফেরত নেওয়া যায় না, তাই না?

মায়ের বাসা দূরে নয়। বাবা আর তাঁর জগতে আমি আচ্ছন্ন হয়ে থাকি। কৈশোরের প্রথম বছরগুলো কেটেছে বাবার মতো হয়ে ওঠার তীব্র বাসনায়। উনি যা করেন, যা বলেন, যেভাবে বলেন, আমি গভীর অভিনিবেশে লক্ষ করি। যখন উনি কথা বলেন, জগৎ থমকে থাকে। ঘরভর্তি লোকজন সবাই চুপ করে শোনে তার কথা। উচ্চস্বর নন, রাজনীতিবিদদের মতো গলা কাঁপান না, অভিনেতার মতো সৌকর্য দেখান না। তিনি কেবল গল্প বলেন। তাঁর মুখে সবকিছুই গল্প হয়ে যায়। সকালে বেরিয়েছেন মর্নিং ওয়াকে, তা-ও গল্প। দুপুরে কী খেয়েছেন, সেটাও গল্প। সামান্য ঘটনাকেও অসামান্য করে তোলেন তিনি। কী করে করেন, আমার মাথায় ঢোকে না। আয়নার সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকি, তাঁর মতো করে কথা বলার চেষ্টা করি, হাত নাড়ি তাঁর মতো করে, তাঁর মতোই কথার মধ্যে বিরতি দিই। গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠা সব বিরতি। একটা গল্পের মাঝখানে এসে তিনি হয়তো থেমে যান, ভ্রু কুঁচকান, দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নেবেন। আপনি হয়তো ভেবে বসবেন, উনি প্রসঙ্গ ভুলে গেছেন, ততক্ষণে আরেক গল্পে ঢুকে পড়েছেন তিনি, একই রকম মনোমুগ্ধকর আরেকটা গল্প। এই নীরবতা আপনার হূৎস্পন্দন থামিয়ে দেবে। তিনি আরেকবার কথা না বলে ওঠা পর্যন্ত আর সচল হবে না হূদপিণ্ড। আমি তাঁর বই পড়া শুরু করি কেবল এটা দেখতে যে বাচনভঙ্গির মতোই তাঁর লেখাও এমন জাদুকরি কি না। তাঁর লেখা আমার জীবন বদলে দিয়েছে। বন্ধুবান্ধব যখন হ্যারি পটার পড়ছে, আমি পড়ছি হিমু। হিমু তাঁর উপন্যাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্রগুলোর একটি। বুদ্ধিদীপ্ত এই সদানন্দ যুবকটি হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে ঢাকা শহরের রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়ায়। হিমু চরিত্রের প্রতি আমার এই মুগ্ধতা আমার বোনদেরও ভালো লেগেছিল। একজন তো একটা হলুদ পাঞ্জাবিই বানিয়ে দিল। আমাকে সেই পাঞ্জাবি পরা অবস্থায় দেখে বাবা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেন, তাঁর চোখে দ্যূতি খেলা করে গেল। তাঁর কাছে এটা কোনো সামান্য ব্যাপার নয়। তাঁর সৃষ্টিকর্মকে আমি ধারণ করছি। তাঁরই বীজ, আরেকটি বাহনে। তাঁর শিশুর মতো উৎফুল্ল হয়ে ওঠা দেখে আমি অবাক হই! আমি যেবার তাঁকে গিয়ে বললাম, ও-লেভেলে সব বিষয়ে ‘এ’ পেয়েছি, সেদিন এর ধারেকাছে খুশিও দেখিনি। সেদিন শুধু বলেছিলেন, ‘তুমি তো পাবেই। তুমি আমার ছেলে না! এর চেয়ে কম তো আশা করি না বাবা!’

সময় গড়ালে অনেক কিছুই বদলে গেল, তবে একটা রেওয়াজ আমরা বহাল রেখেছিলাম। প্রতি ঈদে ভোর থাকতে চলে যাই বাবার বাসায়, তাঁকে ঘুম থেকে তুলি। তারপর দুজনে রওনা দিই ঈদগাহে নামাজ পড়তে। বয়স যখন আরও কম ছিল, বাবা ভয় পেতেন, লোকের ভিড়ে হারিয়ে যাব কি না। তাই ঘাড়ে তুলে নিতেন আমাকে। গোটা ময়দানের চমৎকার দৃশ্য দেখতে পেতাম পিঠে বসে: সাদা টুপি পরে শত শত লোক আসছে ঈদগাহে নামাজ পড়তে। দূরে ছোপ ছোপ রং—গেটের কাছে বেলুনঅলা ঘুরছে। যখন আঠারো বছর বয়স, নামাজ শেষ হলে বাবা নাশতার দাওয়াত দিতেন। দাওয়াত যে দিতে হতো, এ থেকেই অনেকটা বোঝা যায়—অনেক কিছুই আর আগের মতো নেই। চিপস, চকলেট আর বেবি পাউডারের গন্ধে এখন ভরপুর বাবার বাসাটা। ঝকমকে ম্যাকবুক আর হাইস্পিড ইন্টারনেটে বাসা সজ্জিত। যে অ্যাপার্টমেন্ট একসময় ছিল আমার নিরাপদ স্বর্গ, আমার দ্বিতীয় নিবাস, এখন সেখানে র‌্যাকভর্তি নতুন ধরনের ডিভিডি। টম অ্যান্ড জেরি, ফোর ইন ওয়ান কার্টুন কালেকশন, এইট ইন ওয়ান হিন্দি মুভি কালেকশন। এক বিউটিফুল মাইন্ড-এরই তিনখানা কপি। রাত তিনটায় আর এসএমএস এসে উপস্থিত হয় না, যাতে বলা থাকে, তিনি আমাকে মিস করছেন। আমি মনে মনে তাঁকে বললাম, বেস্ট অব লাক। সুখী হওয়ার জন্য আমাকে আর দরকার নেই তাঁর (গুডলাক বাবা, আশা করি একই ছবি বারবার দেখে সুখে আছ!)। ভালো হতো যদি উনি নিজে আমাকে বলতেন। তা না, আমাকে ট্যাবলয়েড থেকে জানতে হলো তাঁর বিয়ের কথা। আমরা কখনো এ নিয়ে কথা বলিনি। সময় গড়িয়েছে, আর এটা আমাদের দুজনের ভেতরটাকে কুরে কুরে খেয়েছে। একদিন তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ছুটি কীভাবে কাটাব, কোনো পরিকল্পনা আছে কি না। আমি সরলভাবে বললাম, পরিকল্পনা আছে আমার পরিবারের সঙ্গে কাটানোর। বলার পরই তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি অদ্ভুত মন খারাপ করাভাবে তাকিয়ে আছেন। তিনি যে কতটা কষ্ট পেয়েছেন, বুঝতে বেশ কিছুক্ষণ লেগেছিল। অন্য আরেক দিন আমি ফোন করে বললাম, আমি তাঁর বাড়ির রাস্তায়। বললেন, তিনি বাসায় নেই। তাঁর পরিবার নিয়ে বাইরে বেরিয়েছেন। তিনি দেখতে পেলেন না, আমি কতটা কষ্ট পেলাম ।

আমার বয়স তখন উনিশ। ভার্সিটিতে পড়ি। আমার সঙ্গে যারা পড়ে, তারা সবাই আমার চেয়ে কমপক্ষে এক সেমিস্টার ছোট। কারণ, কয়েক মাস আগে বাবার কোলোরেকটাল ক্যানসার ধরা পড়েছে। যখন শুনলাম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি সেমিস্টার ড্রপ দিলাম। বাবা কথাচ্ছলে একদা বলেছিলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে তাঁর ভালো লাগবে। পরের কয়েকটা মাস ভর্তি পরীক্ষার জন্য পড়া শুরু করলাম। মা আর বোনেরা বলল, সিদ্ধান্তটা ঠিক হলো না। কেননা, এত কম সময়ে পরীক্ষায় পাস করা গেলেও ভর্তি হওয়া কঠিন হবে। আমি এত কিছু ভাবছি না তখন, ভর্তি হতে বদ্ধপরিকর। বাসা থেকে বেরোই না, দিনে আট থেকে নয় ঘণ্টা পড়ি। ব্যস্ত সময় কাটে। জীবনের একটা লক্ষ্য খুঁজে পাচ্ছি। আমি তো তাঁকে সারিয়ে তুলতে পারব না, অন্তত তাঁকে গর্বিত করে তুলতে তো পারব! রেজাল্ট বেরোল। আমি তাঁকে দেখতে গেলাম।

বললাম, চান্স পাইনি। উনি হেসে উড়িয়ে দিলেন। আমরা এ নিয়ে হাসাহাসি করলাম। আমি ব্র্যাকে পরের সেমিস্টার ধরলাম, চিকিত্সার জন্য বাবা দেশ ছাড়লেন। গণমাধ্যমওয়ালারা এই জনপ্রিয় লেখকের স্বাস্থ্যের নিয়মিত সর্বশেষ খবর প্রচার করে যাচ্ছে। কোনো দিন বলে, উনি ভালোর দিকে। কোনো দিন লেখে, অবস্থার অবনতি। আর সব সংবাদ শেষ হয় এই একই বাক্য দিয়ে: ‘নিউইয়র্কে তিনি তাঁর পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন...।’ আমি ওই বাক্যটি পড়ার আগেই থেমে যাই। আমি সেপারেশন সইতে পারি, ডিভোর্স মানতে পারি, এমনকি ক্যানসারের খবর সহ্য করতে পারি, কিন্তু নিজেকে অদৃশ্য মনে হওয়া মেনে নিতে পারি না কখনো। শোকে কাতর হতে পারি, কিন্তু নিজেকে কোনো দিন ‘তাঁর ছেলে না’ বলে বোধ করার অনুভূতি সহ্য করতে পারি না।

নিউইয়র্কে দীর্ঘ যন্ত্রণাদায়ক কেমোথেরাপির পর তিনি ঢাকায় ফিরে এসেছেন। ফোন করে আমাকে তাঁর ওখানে ডাকলেন। বললেন, আমার সঙ্গে কিছু কথা আছে। তাঁর বাসায় লোক গিজগিজ করছে। সারা রাত তাদের সঙ্গে কাটালেন তিনি। তাঁর বাসার চারপাশে নিঃশব্দে ঘুরে বেড়ালাম, ভিড়ভাট্টা আমার ভালো লাগে না। অতিথিরা চলে যেতে শুরু করলে তিনি আমাকে এক কোনায় ডেকে নিলেন। আমি একটু একটু কাঁপছি, মনে হলো তিনি সেটা লক্ষ করেননি। বললেন, আমার বোনেদের মিস করেন তিনি, তাদের আরও কাছে পেলে তাঁর ভালো লাগত। মনে মনে বললাম, আর কিছু কি বলার নেই বাবা! আমি অপেক্ষা করছি। তিনি আবার কথা বলতে শুরু করলেন, এখন খুব ধীরে কথা বলেন। বললেন, তাঁর পরিবার নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি চলে গেলে তাদের কী হবে। বললেন, ছোট দুই ছেলের ভবিষ্যৎ কী হবে? দুশ্চিন্তায় রাতে তাঁর ঘুম হয় না। তিনি থামেন। আমি অপেক্ষা করি। অনেকক্ষণ থেমে থাকেন তিনি। আমার হূৎস্পন্দন থেমে থাকে। আমি অপেক্ষা করে যেতে থাকি। তারপর বুঝতে পারি, ব্যাপারটা কী। তাঁর কথা আছে, তবে আমাকে বলার জন্য নয়। আমি ঘুরে দাঁড়িয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে থাকি, ধীর গতিতে। তখনো আশা, তাঁর হয়তো অন্য আর কিছু একটা বলার আছে। তিনি আর কিছু বলেন না। তাঁর থেমে যাওয়াটা কোনো বিরতি ছিল না। তাঁর সঙ্গে সেই শেষ দেখা।

শীত এসে পড়ছে। এখনো আমার বয়স উনিশ। সেদিন তাঁর জন্মদিন। তিনি তখনো নিউইয়র্কে। আমি ভিডিও কলে তাঁকে অভিনন্দন জানালাম। বিনা চুলে তাঁকে চিনতে কষ্ট হলো আমার। শীত দ্রুত চলে গেল। এসে পড়ল আমার বিশতম জন্মদিন। আমি কোনো আয়োজন করলাম না। বাবার এক বন্ধু দরজায় হাজির হলেন। হাতে কেক। কেকে হ্যাপি বার্থডে লেখা নেই। একটা প্লেইন চকোলেট কেক। তাতে লেখা: “বাবা, আই মিস ইউ।’ আমার দিনটা আনন্দের হয়ে গেল। আমার এই ছোট্ট অদ্ভুত পরিবার নিয়ে আমি সব সময়ই সুখী।
সেই বছরের মধ্য জুলাইতে একদিন আমার বোন আমাকে ঘুম থেকে তুলল। বলল, বাবা মারা যাচ্ছেন। তিনি নিউইয়র্কের একটা হাসপাতালের আইসিইউতে অচেতন শুয়ে আছেন। আর এক ঘণ্টা আছে। এক ঘণ্টা পর তাঁর শারীরিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যাবে। তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হবে। বাড়িজুড়ে অসহ্য নীরবতা। প্রায় এ রকমই একটা মুহূর্ত কি আমি আগে কাটিয়েছি! দুপুরের ঘুম আমি ঘৃণা করি।

লেখকেরা কষ্টের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে লেখেন, ‘চোখের সামনেটা ঝাপসা হয়ে গেল,’ বা ‘কীভাবে সময় কেটে গেল জানি না,’ বা মাঝে মাঝে লেখেন, ‘আমি কিছু অনুভব করলাম না।’ ওই একটি ঘণ্টা পেরোতে ঠিক একটি ঘণ্টাই ব্যয় হলো। ফোনটা পেল আমার বোন। সে বলল, বাবা আর নেই। আমার স্মৃতিতে কিছুই ঝাপসা হয়ে গেল না। এর পরের প্রতিটি মুহূর্ত আমি মনে করতে পারি। সবকিছুই আমি অনুভব করেছি। প্রতিটি মেসেজ, প্রতিটি ফোন কল মনে আছে আমার।

যেন আবার জন্ম হলো আমার। মৃত হয়ে জন্মালাম। শূন্য হয়ে জন্মালাম। পরের কয়েকটা দিন চলল প্রতিটি বন্ধু, প্রত্যেক পরিচিতজন এবং প্রত্যেক অপরিচিতের সঙ্গে দেখা করা। যতজন মেয়ে আমাকে ভালোবেসেছে, যারা কোনোদিন আমার কথা ভেবেছে বা ভাবেনি, সবাই এসে আমাকে খুঁজে নিয়েছে, সমবেদনা নিয়ে তাকিয়েছে আমার চোখের দিকে। সব স্নেহ নিংড়ে আমার চোখে তাকিয়েছে তারা, কিন্তু বিনিময়ে সেখানে দেখতে পেয়েছে কেবল শূন্যতা। এটা কোনো ক্ষত না, একটা সেপারেশন না, যেটা সারিয়ে তোলা যায়। এটা বরং ছড়িয়ে পড়ে, শরীরে দানা বাঁধে, হয়ে ওঠে ব্যক্তিগত এক ক্যানসার।

তখন খুব ভোর। আজ ওরা নিউইয়র্ক থেকে বাবাকে নিয়ে আসবে জানাজা আর দাফনের জন্য। সবাই নিঃশব্দে প্রস্তুত হচ্ছে। আমি ঘুম ভেঙে দেখলাম, আয়রন করা সাদা পাঞ্জাবি সুন্দর পরিপাটি ভাঁজ করা আমার বিছানার পাশে। আমার বোন বলল, আর আধা ঘণ্টার মধ্যে আমরা রওনা দেব। আমি কিছু বললাম না। তারা এখনই বেরোবে। আমার প্রস্তুত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। দেখে তারা হতবাক। কিছুক্ষণ কেউ কিছু বলতে পারল না।

‘তুমি কী সত্যি এটা পরে যেতে চাও?’

আমি কিছু বললাম না।

‘সবাই এটা নিয়ে কথা বলবে, বুঝতে পারছ! তোমার ভালো লাগবে না। সবাই ভাববে, সবাই মনে করবে তুমি...’

আমার আরেক বোন তাকে থামিয়ে দিল। এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল।

‘মোটু, তোর যা খুশি তুই পর। তোর যা ভালো লাগে। যা করলে বাবার ভালো লাগবে বলে তোর মনে হয়, তাই কর।’ বোনেরা আমাকে মোটু বলে, পটকা বলে। ছোটবেলায় গোলগাল ছিলাম, সেই ডাকনাম আজও থেকে গেছে।

বাবার মৃত্যু জাতীয় ঘটনা। পুরো দেশ শোক করছে। ক্যামেরা জ্বলে উঠছে। কোথাও নৈঃশব্দ্য নেই, এক মুহূর্তের নির্জনতা নেই। বাবাকে আমার শেষ বিদায় জানানোর মুহূর্তটি লাইভ সম্প্রচার হচ্ছে, সারা দেশবাসীর দেখার জন্য। আমার কিছুই যায়-আসে না। আমি এখানেই থাকতে চেয়েছি। তাঁর জানাজার সময় হয়ে এল। তাঁকে দাফন করার আগে শেষ মোনাজাত। সবার চোখ আমাদের ওপর নিবদ্ধ। ঈদগাহ মাঠে জনসমুদ্রের মধ্য দিয়ে তাঁর মরদেহ বয়ে নিয়ে যাচ্ছি আমি। এই প্রথম যে তিনি আমাকে ছেড়ে যাচ্ছেন, তা নয়। কিন্তু এবারই প্রথম, আমি আমার কাঁধে বহন করতে পারছি তাঁর ভার। এবার আমি জানি, আমি কে। আমি তাঁর সবচেয়ে বড় ভক্ত। তাঁর সবচেয়ে কট্টর সমালোচক। আর তাঁর সবচেয়ে বড় ছেলে। আমি জানি, আমি কে।

এখন আমার ২১ বছর বয়স। একটা খুবই সুবিধাজনক জীবন আমি কাটিয়েছি। এ নিয়ে কক্ষনো কোনো অভিযোগ ছিল না আমার। একটা অসাধারণ মা পেয়েছি আমি, যিনি আমাকে বুঝতে পারেন, আমি যা-ই করি না কেন, সমর্থন জোগান। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বোন পেয়েছি আমি, তাদের সবার এখন নিজেদের সন্তান আছে। মামা হওয়া খুবই চমৎকার এক অভিজ্ঞতা—মজা আছে, কিন্তু দায়দায়িত্ব নেই।

আর আমি এমন এক বাবার গর্বিত সন্তান, যিনি সেরা গল্পগুলো বলতে পেরেছেন। অবাক লাগে, এত কিছুর পরও আমরা অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলাম। ধীরে ধীরে কীভাবে আমরা দূরে সরে গেছি, ভাবতে কষ্ট হয়। যখন একা হই, কোনো কাজ থাকে না, আমার মন ছুটে যায় এক অন্ধকার কোণে, যেখানে একটা ক্ষীণ স্বর ফিসফিস করে বলে, আমি ছিলাম তাঁর নিতান্তই এক সখের বস্তু, অন্য কোথাও সুখ খুঁজে পাওয়ার আগ পর্যন্ত যার দিকে তিনি স্বল্পকালীন মনোযোগ ব্যয় করেছিলেন মাত্র। তাঁর বাহবা পাওয়ার পেছনে আজীবন ছুটেছি আমি, আমার সব আগ্রহ আর অভ্যাস গড়ে উঠেছে এই এক প্রবণতা থেকেই। তা আর ত্যাগ করতে পারিনি। তাঁর জন্যই তৈরি হয়েছি আমি, কিন্তু পর্যাপ্ত হতে পারিনি। ওই ফিসফিস করা কণ্ঠস্বরে আমি কান দিই না, আমার বাবা আর তাঁর গল্প ওই কণ্ঠস্বরের চেয়ে জোরাল। আমার কাছে তিনি নেই, কিন্তু তাঁর গল্পগুলো থেকে গেছে। তিনি আমাকে ভালোবাসতেন। আমি নিশ্চিত, ভালোবাসতেন। হয়তো তাঁর মনোযোগ অন্যত্র সরে গেছে, হয়তো সুখ খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি, আর একা বোধ করেননি। কিন্তু এটা তো ঠিক যে কেউ কারও বিকল্প হতে পারে না। ভালোবাসা ফিরিয়ে নেওয়া যায় না।

কালেক্টেড।

Address

Fulbaria

Telephone

+8801610644288

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Reasonable posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Reasonable:

Share