21/05/2025
ভয়ংকর গল্প
"কালো পাতার বই”
এটা এমন এক বইয়ের গল্প—যা একবার খুললে, তার প্রতিটি পাতা খুলে দেয় একটি অভিশপ্ত দ্বার… আর শেষ পাতা খোলার আগেই মানুষ হারিয়ে যায় নিজেকে।
---
তুহিন একজন গ্রন্থ সংগ্রাহক। পুরনো, হারিয়ে যাওয়া, রহস্যময় বই খুঁজে বেড়ানোই তার নেশা।
ঢাকার সদরঘাটের এক পুরনো বইয়ের দোকান থেকে সে এক অদ্ভুত বই কিনে আনে—বইটির কোনো নাম নেই, লেখক নেই, প্রচ্ছদও নেই।
বইটা পুরোটা ছিল কুচকুচে কালো, আর তার পাতা গুলো ছিল যেন পুরনো চামড়ায় মোড়া—মাটি আর রক্তের গন্ধ মেশানো।
দোকানদার শুধু বলেছিল,
“যদি পড়তেই চাও, আলো নিভিয়ে পড়ো… কারণ এই বইটা আলো সহ্য করতে পারে না।”
তুহিন সেটাকে ঠাট্টা ভাবল।
সেই রাতে, বইটা বিছানায় নিয়ে পড়া শুরু করল।
প্রথম পাতায় লেখা—
> “এই বই শুধু তারাই খোলে, যাদের মধ্যে অন্ধকার বাস করে।”
দ্বিতীয় পাতায়—
> “তুমি যদি আরেক পাতা পড়ো, তবে তোমার চোখ যা দেখবে, সেটা আর কখনও আগের মতো থাকবে না।”
তুহিন একের পর এক পাতা উল্টাতে থাকে, যেন বইটাই তার মনকে টেনে নিচ্ছে।
প্রতিটি পৃষ্ঠায় ছিল অদ্ভুত ছায়াচিত্র—একজন শিশুর কান্না, একজন নারীর ঝুলন্ত দেহ, এক ঝলকায় কাটা মুখের রক্তাক্ত ছাপ…
আর মাঝেমাঝে, পেছনের ঘর থেকে আসতে থাকে ফিসফিসানি…
“আরেকটা পাতা… আরেকটা…”
তুহিন প্রতিদিন রাত ৩টায় বইটা পড়তে বসে। প্রতিটি রাতের পর তার মুখে ক্লান্তি জমে, চোখের নিচে গাঢ় কালি পড়ে।
তবে তার মাঝেই সে এক ধরনের আনন্দ খুঁজে পায়—একটা অজানা শক্তি, যেটা তাকে স্বপ্নে বলে—
“তুমি শেষ পাতা না পড়া পর্যন্ত মুক্তি পাবে না…”
এক রাতে সে দেখে, বইয়ের ভেতরের পৃষ্ঠাগুলোতে তার নিজের ছবি… প্রথমে তাকে দাঁড়িয়ে, পরে বসে, তারপর ঘুমন্ত অবস্থায়, এবং শেষে—একটা পৃষ্ঠা যেখানে সে ঝুলছে সিলিং ফ্যান থেকে।
তুহিন ভয় পেয়ে বইটা ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
কিন্তু সকালে উঠে দেখে—বইটা আবার টেবিলের ওপর।
সে সেটা পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু আগুনে ছুঁলেও বইটা কালোই থাকে, পোড়ে না, বরং তার গায়ে পুড়ে যায় তুহিনের আঙুল।
তখন থেকেই শুরু হয় বিভীষিকা।
ঘরে আয়নাতে কেউ একজন তাকিয়ে থাকে, অথচ সে ঘরে একা। বাথরুমে ঢুকলে দরজা বন্ধ হয়ে যায়, আয়নার ওপর লেখা ওঠে রক্ত দিয়ে—
“তুমি শেষ পাতা না খুলে পার পাবে না…”
এক রাতে, বইয়ের এক পৃষ্ঠা নিজে থেকেই খুলে যায়।
তাতে লেখা—
> “তুমি যা করো, আমি দেখি। তুমি যা ভাবো, আমি জানি। তুমি যেখানে থাকো, আমি সেখানে।
আমি এখন তোমার ছায়া নই… আমি তোমার আত্মা।”
তুহিন পালানোর চেষ্টা করে, কিন্তু তার বাড়ির দরজা-জানালা আর খোলে না।
সে থানা যায়, মন্দিরে যায়, ওঝা ডাকে। কিন্তু কেউ কিছু করতে পারে না।
অবশেষে, এক অচেনা বৃদ্ধ তার কাছে এসে বলে—
“এই বই মানব লেখা নয়। এটা লেখা হয়েছিল সেই রাতে, যেদিন পৃথিবীতে প্রথম পাপ হয়েছিল।
যারা শেষ পাতা পড়েছে, তারা আর মানুষ থাকেনি।”
তুহিন জানতে চায়—শেষ পাতায় কি আছে?
বৃদ্ধ শুধু বলে—
“শেষ পাতায় রয়েছে নিজের আত্মার দরজা… যেটা একবার খোলা মানে, আর ফেরা যায় না।”
তুহিন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না।
এক রাতে, ঘরে আলো নিভিয়ে, সে শেষ পৃষ্ঠা খুলে ফেলে…
পড়ে না।
সে শুধু চিৎকার করে উঠে—
“এটা তো আমার নাম… আমার মৃত্যু… আমার কবর…!”
আর তারপর?
তুহিনকে আর পাওয়া যায়নি। ঘরে পাওয়া গেছে খোলা অবস্থায় সেই বইটা, যার সব পৃষ্ঠা খালি, শুধু একটা লাইন—
“তুহিন এখানেই আছে।
এই বইয়ে… এই কালো পাতায়।”
আজও কেউ বইটা ছুঁতে চায় না।
কিন্তু যদি তুমি এখনো এই লেখা পড়ছো… তবে সাবধান।
এই গল্পটারও শেষ পৃষ্ঠা বাকি…💀👽