
14/06/2025
আমি এখনো বেঁচে আছি—এটাই যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! 😓
আসসালামুআলাইকুম,
আমি তানভীর মাহমুদ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একজন ছাত্র।
প্রতিবারের মতো ঈদ শেষে বাড়ি থেকে ফিরে আসছিলাম। দিনে টিকিট না পেয়ে রাত ১০টার বাসে লক্ষ্মীপুর থেকে রওনা হই টঙ্গীর পথে। ভেবেছিলাম ফজরের পরই পৌঁছে যাব, সবকিছুই ঠিকঠাকই ছিল—বাসে যাত্রী পূর্ণ, রাস্তাও ফাঁকা, তাই একটু আগেই পৌঁছে গেলাম।
৩টা ৪০ মিনিটে টঙ্গী-চেরাগ আলী বাসস্ট্যান্ডে নামি। বাসার দূরত্ব মাত্র দেড় কি.মি.— কিছু অটো দেখা গেল, কিন্তু কেউ যেতে চায় না। ১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর একটি অটো আসলো, তাতে তিনজন বসা, সামনে একটা ফাঁকা সিট, ভাবলাম অনেক যাত্রী আছে—আল্লাহ ভরসা।
আমার হাতে তিনটা ব্যাগ, একটা খাবারের, একটা জামা-কাপড়ের, আর একটা স্কুল ব্যাগ কাঁধে। সামনের সিট ছোট, তাই পিছনের সিটে কিছু ব্যাগ রাখলাম। অটো চলতে শুরু করলো, কিন্তু বুকের ভেতর একটা অজানা ভয় কুঁকড়ে উঠছিল—কিছুদিন আগেই আমার এক আত্মীয় এই একই রাস্তায় ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছিল। ৩টা মোবাইল, গহনা আর নগদ টাকাও নিয়ে যায়।
বেশি দূর যাওয়ার আগেই হঠাৎ এক ওভারব্রিজের নিচে অটো দাঁড় করায়। পেছনের দুজন যাত্রী নিজেদের মধ্যে কৌশলে কথা বলতে থাকে। মুহূর্তেই একজন আমার গলা চেপে ধরে, আরেকজন পকেট থেকে ছুরি বের করে। আমি প্রাণপণে চিৎকার করতে থাকি—চারপাশে কেউ নেই, রাস্তাও ফাঁকা।
আল্লাহর রহমতে কয়েক মিনিট পর একটা মাইক্রোবাস চলে আসায় তারা দ্রুত পালিয়ে যায়। অটোচালকও আরেকজনকে নিয়ে চোখের পলকে উধাও। আমি যখন রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, তখন থেকেই ফলো করে। অটোচালকসহ সবাই এ ঘটনার অংশ।
পকেটে হাত দিতেই বুঝলাম—মোবাইল নেই। কাঁধ থেকে ঝুলে থাকা ব্যাগটা রাস্তায় পড়ে ছিল, ওটা তুলে নিই। তখনো বুঝিনি, বাম হাত দিয়ে রক্ত গড়াচ্ছে। একটা কাটা দাগ থেকে টানা রক্ত পড়ছিল—আমি হতভম্ব।
কষ্ট করে হেঁটে Asia ফিলিং স্টেশনের সামনে এলাম। কয়েকজন লোক সহানুভূতির সাথে বললেন—“ভাই, রক্ত বন্ধ করেন, সামনে একটা মেডিকেল আছে।”
গিয়ে দেখি গেট বন্ধ। একজন অচেনা মানুষ একটা জামা বের করে আমার হাত বেঁধে দেন। তাঁর এই সাহায্যটা হয়তো আমাকে বড় ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়েছে। পরে পাশের এক বন্ধুর বাসায় যাই, সে সুন্দরভাবে ড্রেসিং করে দেয়। আল্লাহর রহমতে ছুরির আঘাতটা খুব গভীর ছিল না, তাই বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। কিন্তু গলায় চেপে ধরায় ভেতরের অংশে আঘাত লেগেছে, যা এখনো ব্যথা করছে।
থানায় গিয়ে অভিযোগ করি। কিন্তু আমি জানি, ফলাফল শূন্য।
কারণ, এই রাস্তা প্রতিদিন এই নরকীয় ঘটনার সাক্ষী। এটাই প্রথম নয়, আমার নিজের জীবনেই দ্বিতীয়বার। অথচ কোনো সিসিটিভি নেই, কোনো নিরাপত্তা নেই, কেউ কিছুই করে না। পুলিশ জানে, তবু চুপ।
আজ যদি ছুরিটা একটু গভীরে লাগতো? যদি রাস্তায় ফেলে দেওয়া হতো গাড়ির সামনে?
আজ হয়তো বেঁচে ফিরেছি, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু আগামীকাল যে ফিরবো, তার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই!
প্রতিদিন হাজারো পথচারী এই পথ দিয়ে যায়—ভয়ে, অনিশ্চয়তায়, আর ভাগ্যের উপর ভরসা রেখে। আমাদের জীবনের কি আদৌ কোনো মূল্য আছে?
আমি সাধারণ একজন নাগরিক। হয়তো আমার কণ্ঠস্বর ফেসবুকের নিউজফিডে হারিয়ে যাবে, থানার রিপোর্ট ফাইলেই পড়ে থাকবে। তবুও লিখলাম—কারণ মনে হলো, আজ যদি চুপ থাকি, কাল আর হয়তো লিখে যাওয়ার মতো অবস্থায় থাকবো না।
ক্ষমা চাই সবার কাছে। 🙏🙏
জানি না মৃত্যুও শান্তি বয়ে আনবে কি না—এই পশুর মতো সমাজে মরে গেলেও হয়তো কেউ দয়া করে তাকাবে না।
এই দেশ নিয়ে আর আশা নেই। যদি সম্ভব হয়, পরিবার নিয়ে বিদেশে যান। 😓