24/06/2025
কিস্তি দিয়েই যাই, হোম লোনের ব্যালান্স কমে না! কাহিনী কী, ভাই? (পর্ব-১)
ফেইসবুকে প্রায়ই দেখি অভিযোগ- ব্যাংক থেকে বাড়ি করার কিংবা ফ্ল্যাট কেনার জন্য হোম লোন একবার নিলে নাকি সারা জীবন কিস্তি দিয়ে যেতে হয়। শোধই হয়না। ব্যাংকাররা নাকি হোম লোন নেয়া মানুষের সর্বস্ব কেড়ে নেয়।
আসেন, একটু দেখি, কিস্তি দিয়ে কীভাবে লোন শোধ হয়।
প্রথমে বলি, কিস্তিটা কীভাবে নির্ধারণ করা হয়:
কিস্তি নির্ধারণ হয় একটু অঙ্ক করার মাধ্যমে
EMI = [P x R x (1+R)^N] / [(1+R)^N – 1]
ইএমআই মানে ইকুয়েটেড মান্থলি ইনস্টলমেন্ট
পি মানে প্রিন্সিপাল
আর মানে মাসিক সুদের হার
ধরেন, আপনি ১০০,০০০/- লোন নিলেন। লোনটা ১ বছরে ১২টা কিস্তিতে শোধ দেবেন। সুদের হার ১২%।
তাহলে, আপনার মাসিক কিস্তি দিতে হবে ৮,৮৮৪.৮৮ টাকা।
এই খটোমটো সূত্রটা আপনাদের ব্যবহার করতে হবে না। কিস্তির পরিমাণ আপনার ফোনের ক্যালকুলেটর এপ ই বের করে দেবে। না পারলে বইলেন, আমি শিখিয়ে দেবো।
প্রতি মাসে ৮,৮৮৪.৮৮ টাকা করে দিলে আপনার লোন শোধ হবে। শেষ কিস্তিতে অবশ্য ৮,৭৯৬.৯১ টাকা দিলেই হবে😁।
আসেন, মেকানিজম টা একটু বুঝি।
সিম্পলিসিটির জন্য আমি ধরে নিয়েছি, আপনি ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের এক তারিখে লোন নিয়েছেন।
আপনার প্রথম কিস্তি ডিউ হবে ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে।
পুরো জানুয়ারি মাস ধরে ব্যাংক আপনার কাছে ১০০,০০০/- পাওনা ছিলো। এই সময়ের জন্য ১ লাখ টাকার সুদ দিতে হবে আপনাকে।
তাহলে, আপনার সুদ জমা হয়েছে ১,০০০/- (১২ মাসে ১২%; ১ মাসে ১%; ১ লাখের ১% হইলো ১,০০০)
এখন, আপনি ৮৮৮৪.৮৮ টাকা জমা দিলে ব্যাংক সুদ কেটে নেবে ১,০০০/-
আপনার কাছে ব্যাংকের পাওনা কমবে (আসল টাকা কমে যাবে) ৭,৮৮৪.৮৮ টাকা।
ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে ব্যাংকের মোট পাওনা দাঁড়াবে ৯২,১১৫.১২ টাকা।
মার্চের ১ তারিখে দ্বিতীয় কিস্তি দেবেন আপনি।
ফেব্রুয়ারিতে সুদ জমা হয়েছে ৯২১.১৫ টাকা (৯২,১১৫.১২ এর ১%)
তাহলে ৯২১.১৫ টাকা সুদ দিয়ে দিলে আপনার কাছে ব্যাংকের আসল পাওনা কমবে ৭,৯৬৩.৭৩ টাকা।
মার্চের ১ তারিখে দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার পর ব্যাংকের মোট পাওনা কমে দাঁড়াবে ৮৪,১৫১.৩৯ টাকা।
এভাবে ৩য়, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ৯ম, ১০ম, ১১শ আর ১২শ কিস্তি দেবার পর আপনার মুক্তি ঘটবে লোন থেকে।
দেখেছেন, লোনটাকে ১২ মাসে ধীরে ধীরে মেরে ফেললেন আপনি!
এভাবে লোন শোধ করাকে বলে, 'লোন এমরটাইজেশন'।
ছবিটা একটু ভালো করে দেখেন...
প্রথম মাসে প্রিন্সিপাল শোধ হয়েছে ৭,৮৮৪.৮৮ টাকা
দ্বিতীয় মাসে প্রিন্সিপাল শোধ হয়েছে ৭,৯৬৩.৭৩ টাকা
তৃতীয় মাসে প্রিন্সিপাল শোধ হয়েছে ৮,০৪৩.৩৬ টাকা
মাস যাচ্ছে, প্রিন্সিপাল শোধের পরিমাণ বাড়ছে।
আবার,
প্রথম মাসে সুদ ব্যয় ১,০০০ টাকা
দ্বিতীয় মাসে সুদ ব্যয় ৯২১.১৫ টাকা
তৃতীয় মাসে সুদ ব্যয় ৮৪১.৫১ টাকা
মাস যাচ্ছে, সুদ ব্যয় কমছে।
এই যে মেথড এর কথা বলছি, এটাকে বলে লোন পরিশোধের 'রিডিউসিং ব্যালান্স মেথড'।
আজকে আমরা এক লাখ টাকার লোনের ১ বছরে রিপেমেন্ট শিডিউল দেখলাম।
এর পরে আমরা এক কোটি টাকার লোনের ২০ বছরে রিপেমেন্ট দেখবো।
কথা হবে পরের পর্বে।
লেখা চন্দন আজিজ