18/04/2024
----- The Red Trunk -----
ঈদের ছুটি প্রায় শেষ,কাঠফাটা রোদ আর মাথানষ্ট গরম।সবার ভার্সিটিও বন্ধ, ফাঁকা ঢাকায় ঘুরতে ঘুরতে কোনো এক মোড়ের চায়ের দোকানে বসে আছি ৫ বন্ধু। জয় ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে বলতেছে "আর ভাল্লাগেনা,একটা ট্যুর দরকার।" শাওরির এদিকে মন খারাপ,মেহেদী আর সাকিব ও চোখে চোখে পজিটিভ ইশারা। সবার ইচ্ছে আছে বুঝতে পেরে বললাম চল টাঙ্গুয়ার হাওরে চা খেয়ে আসি, আজকেই যাবো,এখনই যাবো। কেউ কিছু বলার আগেই সবাইকে কল দিলাম,রাজি হলো শুধু ফুয়াদ। সার্থককে অনেকবার বললাম তবে কাজ হলোনা,বাকি বন্ধুরা বেশিরভাগই গ্রামে ঘুরতে চলে গেছে। সব এত তাড়াহুড়ো তে করলাম কেউ যে মানা করবে সুযোগই পেলোনা। যেই কথা সেই কাজ ১ ঘন্টার মাথায় সবাই আমরা সায়েদাবাদে,মেহেদী বলতেছে "ধূর তোদের সাথে আসলেই এমন করস। বের হইসিলাম চা খাইতে এখন নিয়ে যাইতেসোস সুনামগঞ্জ",শাওরির কথা "প্যারা নাই চল, লাগলে ক্লাস আরো দুইদিন করলাম না"
ফুয়াদ বকা দিয়ে বলতেছে,"তোরা এমনে দাড়ায়া সময় নষ্ট করলে থাক তোরা,আমি একাই বসে উইঠা চইলা যাই" এবার হাসতে হাসতে উঠলাম সবাই বাসে। ভোরে পৌছে গেলাম সুনামগঞ্জ, করতে চাইলাম নতুন এক্সপেরিয়েন্স, সবাই যেই রুটে যায় সেদিকেই যাবো তবে হাউজবোটে থাকবোনা থাকবো স্হানীয় কারো বাসায়।একটা হাউজবোটের সাথে কথা বলে অল্প টাকায় ওয়াচ টাওয়ার যাওয়ার ব্যবস্হা করলাম। সেখানেই পানিতে ডুবাডুবি করে পানিতেই চা খেলাম। মনটা একদম জুড়ায় গেলো।সবার খুশিতে টইটম্বুর।
হাওরে আছে ৪৬ টি দ্বীপ গ্রাম,কোনো এক গ্রামের স্হানীয় কারো বাসায় ঠাই নেয়ার এক্সপেরিয়েন্স করার নিয়ত,কেউমা কেউতো ঠাই দিবেই। নৌকায় উঠার আগে বাজার থেকে কিছু কাচা বাজার করে নিলাম, জেনো যার বাসায়ই যাবো খাওয়া নিয়ে সমস্যা জেনো না হয়।
ঘাটে ভিড়ানো বৈঠার এক বড় নৌকা, অনায়াসে আমরা বসতে পারবো,ষাটোর্ধ মাঝি চাচা পান খেয়ে দাঁত আর দাঁত নেই, চাচাকে বললাম কোনো এক দ্বীপ গ্রামের ঘরে ঠাই নিবো যদি তারা পারমিশন দেয় নইলে আবার ফিরে আসবো তবে আগে যাবো টেকের ঘাট, নীলাদ্রি লেক।
চাচা মুচকি হাসি দিয়ে ইশারায় উঠতে বললেন। ভাড়ার কথা জিগ্যেস করায় আবার হাসি দিয়ে ভান্গা গলায় আঞ্চলিক গান গাইতে থাকলেন "আন্ধার ঘরে থাকবিরে তুই,কেউতো দেখবোনা" ফুয়াদ বলতেছে কথা ভাইন্গা নে নইলে পরে কিন্তু বুইড়া চাচা ভাড়ায় কোপ দিবে। চাচার বা হাতে একটা বড় কাটা দাগ দেখা যাচ্ছে তবুও এক হাতে দিব্বি বৈঠা চালাচ্ছে।
ততক্ষণে নৌকা চলা শুরু করেছে,আশে পাশের দৃশ্য দেখে সবাই হারিয়ে গেছি একদম।টেকেরঘাট মূলত পরিত্যক্ত চুনা পাথরের খনি,যা পানিতে ভরাট হয়ে নীল পানির নীলাদ্রি লেক বা Lime Stone Lake এ পরিণত হয়েছে। লেকেই বিকেল,এবার নৌকায় দ্বীপ গ্রামে ঘর খোঁজার পালা।চাচার নৌকায় যাচ্ছি তো যাচ্ছি, না আছে কোনো দ্বীপ না দেখছি কোনো হাউজবোট।আধার ঘন হচ্ছে, এই আধারেও চাচার সেই হাসি দেখা যাচ্ছে, ব্যাপারটা এবার একটু অন্যরকম লাগছে।যেদিকেই যাচ্ছি মনে হচ্ছে গোল গোল ঘুরছি,প্রায় কয়েকঘন্টা ঘুরার পর নাকে মিষ্টির ঘ্রাণ পেলাম,মনে হচ্ছে কেউ হাওরে মিষ্টি বানাচ্ছে,ঘ্রাণের দিকে তাকাতেই ছোট্ট আলো দেখতে পাই।নৌকা কাছে নিতেই দেখি পানির মাঝে একটা ঘর ভেসে আছে,মনে হচ্ছে বন্যায় বেঁচে যাওয়া ঘর,ঘরের চারদিকে পানি। ছোট্ট ঘরটা টিন আর বাশ কাঠ দিয়ে দাড়িয়ে আছে।ক্ষুধা আর ক্লান্তিতে এখানে থাকার অনুমতি চাওয়া ছাড়া আর উপায় দেখছিনা।হাতে থাকা একমাত্র টর্চের আলো বাড়িতে মারছি আর বলছি "কেউ আছে বাড়িতে? কেউ আছেন?" আলোটা ভরাট করলো একটি অবয়ব,এক বৃদ্ধা লাঠি ভড় করে কুজো হয়ে আস্তে আস্তে মাথা বের করলো,আমাদের নৌকা দেখে চোখ বড় করে হাত নেড়ে ইশারায় জিগ্যেস করছে কি চাই??।
নৌকা থামিয়ে কাছে গিয়ে সব বুঝাচ্ছি কিন্তু বুঝছেনা,কথার শোরগোল শুনে বেড়িয়ো আসলো এক যুবতী মেয়ে। আধারেও জেনো চাঁদের মতন জ্বল জ্বল করছে। সব বুঝিয়ে বললাম যে কোনোমতে আজকের রাত থাকার অনুমতি দিতে,সকালেই চলে যাবো।সে বৃদ্ধার কানে ফিস ফিস করে কি জেনো বললো,বলে বললো দাদি রাজি আপনারা আসুন। কয়েক মিনিটের কথায় অপরিচিত এতজনকে বাড়িতে থাকতে দিচ্ছে অবাক লাগলো,একটু থমকে সবাই বললাম এদিকের মানুষ এত ভালো,রাজি করাতে অনেক কষ্ট হবে ভেবেছিলাম। বাড়িতে ঢুকবো তখনই মনে পড়লো নৌকার চাচা,উনার ভাড়া দেয়া হয়নি,সাথে সকালে উনাকে আবার লাগবে এটা বলতে পিছনে ঘুরে দেখি নৌকা নেই।
আজব ব্যাপার,ভাড়া না নিয়ে কই গেলো,আর কয়েকমিনিটে একদম ভ্যানিশ কিভাবে,বৈঠার নৌকা কোনো শব্দ ও পেলামনা। সবাই ভাবছি তখনই যুবতী মেয়েটা বলে "আফনারা চিন্তা করিয়েন না,সকাল হইতো হইতো উনি চলি আইবো" ভাবলাম এদিকের মানুষ হয়তো এমনই। ঘরে ঢুকলাম। আরো অবাক,বাইরে থেকে দেখা ছোট্ট ঘরটা এতটাও ছোট না,বেশ বড়।এটা কেমন স্ট্রাকচার বুঝলাম না। পুরো ঘরে একটা চকি,চকির নিচে দেখা যাচ্ছে একটা পুরোনে দিনের কাঠের বড় লাল ট্রান্ক আর একটা আলনা, আসবাবপত্র এই তিনটা আর অন্য দিকে মাটির কয়েকটি চুলো যেখানে মিষ্টি বানানো হচ্ছে, হাড়িতে রসে মিষ্টি ভিজিয়ে রাখা।ঘরে এখন দুইটা আলো দেখছি,এক হারিকেন আরেকটা সেই যুবতী। অবাক করা বিষয় আধারে তাকে এমন উজ্জ্বল দেখা যাচ্ছে তো যাচ্ছে কিভাবে। নাম জিগ্যেস করায় বললো নাম তার নীলা,বেশ মিষ্টি হাসি তার। তাকে কাচা বাজার বুঝিয়ে দিতেই বলছে,"দাদি শুনতো ও বলতো কম ফারে, এখানত আমি আর দাদিই তাকি।বড় ভাই শহরো চাকরি খরে,মাঝে মাঝে আসে।আমার রসগোল্লা বানাইত ভাল্লাগে,আপনারা ভালো দিনে আইছেন" - ক্ষুধা আর ক্লান্তিতে গল্প বের হচ্ছে না,সবাই একটু হাতমুখ ধুয়ে রান্না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামের চিন্তা করলাম,ঘরের পিছনের দিকে সিড়ি বানানো,সেখানে সবাই হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। সবাই ক্লান্ত,শাওরি বলতেছে বাসাটা কেমন জানি,দাদিটা রহস্যজনক। ফুয়াদ বলতেছে,মাগনা থাকতে পারতেসো শুকরিয়া করো। কথা বলতে বলতে হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকে সবার হাসি হারিয়ে গেলো বিস্ময়ে।আশ্চর্য ঘটনা, নীলা শীতল পাটি বিছিয়ে গরম ধোঁয়া উঠা ভাত,মুরগির গোশত,ডাল নিয়ে আমাদের আনা ওয়ানটাইম প্লেট নিয়ে বসে আছে। আমাদের দিকে পিছনে ঘুরে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলছে আসেন,খেতে বসেন। সর্বোচ্চ ৫ মিনিট লেগেছে আমাদের হাত মুখ ধুতে,এত তাড়াতাড়ি কিভাবে রান্না হলো। সবাই কেমন জানি পাথর হয়ে গেলাম। পাশের চকি থেকে দাদি ইশারা দিয়ে ভান্গা ভান্গা গলা কি জেনো বললো,নীলা বললো "দাদি কইতাসে তাড়াতাড়ি খাইত বসত আপনাদের"।সবাই পাটিতে বসলাম তবে মুখ কেমন জানি হয়ে আছে,নীলা খুশি মনে খাবার বেরে দিচ্ছে আর বলছে "বাড়িতো মেহমান আসেনা অনেকদিন,আইজকা আপনার আইছেন,আইজকে খুশির দিন"
কিছু না বুঝেই সবাই চুপচাপ খাওয়া শুরু করলাম,মাশাআল্লাহ এত স্বাদের খাবার যে সব কিছু ভুলে গেলাম। সবাই মন ভরে খেলাম। একেকজন ৫-৭ প্লেট করে খেয়েছি,সারাদিন না খাওয়া। অবাক কান্ড যতই খাচ্ছি পাতিল থেকে নীলা আরো খাবার আনছে,খাবার জেনো শেষই হচ্ছে না। ভাবলাম হয়তো মানুষ বেশি দেখে নিজেদের থেকেও কিছু বাজার দিয়ে রান্না করেছে,যাওয়ার সময় কিছু টাকা দিয়ে দিবোনে বাজার করতে।খেয়ে দেয়ে সবাই টই টুম্বুর।নীলা রসগোল্লা দিলো,এত নরম আর মজার রসগোল্লা কোথাও খাইনি। নীলা চকিতে বসে দাদির পা টিপে দিচ্ছে, আমরা নিচে শীতল পাটিতে কেউ শুয়ে আছি কেউবা বসা,মিষ্টি খেয়ে আমাদের এবার একটু ঘুম ঘুম ভাব তবে আমার ঘুম নেই। নীলাকে বলছি,"জানেন আপনাকে দেখে আমার অনেক মায়া লাগছে কেনো জানি,মনে হচ্ছে আমি আপনাকে অনেক আগের থেকে চিনি"
নীলা বলছে "কিতা খন ভাইয়া , খেমনে"
"আমার তো কোনো বোন নেই,কেনো জানি আপনাকে দেখে মনে হলো আমার কোনো বোন থাকলে নিশ্চয়ই আপনার মতনই হইতো।" আমার কথায় নীলার হাসি পাল্টে গেলো,এতক্ষণের চাঁদের আলোর হাসি কেমন জানি অশ্রুসিক্ত হাসিতে রূপ নিলো।
নীলা বললো "আফনে আমারে বোন ডাকলেন?আমার ভাইরে দেখিনা অনেকদিন.... "
সাথের সবাই নীলার মন খারাপ খেয়াল করে বললো "আরে আপু,মন খারাপ করার কিছু নেই,আমরা সবাই আপনার ভাই। আপনার বড় ভাই এখানে নাই তো কি হইসে,আমরা আছি এতে খুশি হন। আপনে আমাদের যেই খেদমত করছেন আমরা আবারো আসবো আমাদের এই নীলা বোনের সাথে দেখা করতে"
আবেগঘন এই মুহূর্ত পার করতে করতে সবাই ঘুমিয়ে গেছি।
হঠাৎ মাঝ রাতে কানে কাঠের ঠকঠকানি শব্দ, তীব্র শব্দ। ঘুম ভেন্গে যায়,কাঁচা ঘুমে আধো আধো চোখ খুলে দেখি চকির নিচে থাকা কাঠের লাল ট্রান্ক টা নড়ছে আর শব্দ হচ্ছে, সবাই হতবাক হয়ে নীলা আর দাদিকে খুঁজছি। কেউই ঘরে নেই। ট্রান্কটি নড়েই যাচ্ছে, এত বড় ট্রান্ক একা একা কিভাবে নড়ছে, সবাই কোনো উপায় না পেয়ে ট্রান্কের কাছে যাই।বাইরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে মনে হচ্ছে ঝড় আসবে,আর এদিকে ট্রান্ক নড়েই চলেছে,মনে হচ্ছে এখনি ভিতর থেকে কিছু বেরিয়ে আসবে। ঝড়ো ঠান্ডা আবহাওয়া, তবুও সবার মাথা বেয়ে ঘাম ঝড়ছে,সাহস করে ফুয়াদ আর আমি ট্রান্কের দুইটি লক খুললাম,এবার তুলার পালা। তুলার আগে সবাই সবার দিকে তাকাচ্ছি, কি জানি কি হয়। আমরা খুলার আগেই নাড়াতে নাড়াতে ট্রান্কের ঢাকনা খুলে গেলো। সবাই মরণ চিৎকার করে ছিটকে কয়েক হাত দূরে চলে আসলাম।একটা রক্তাত হাত ট্রান্কের বাইরে ঝুলে ছটফট করতে থাকে। জয় চার্জার লাইট ধরে,সাহস করে সবাই আবারো দাড়ালাম,দূর থেকে লাইটে দেখতে পাই দাদি আর নীলার রক্তাত গলা কাটা দেহ,দাদি নিথর তবে নীলা গোঙ্গানি দিয়ো বলছে "ভাইয়া বাঁচাও,বাঁচাও আমারে......" এই দৃশ্য দেখার পর কিছু মনে নেই,
নিজেদেরকে উদ্ধার করি টেকেরঘাটের পারে,কিছু স্হানীয় লোকজন আমাদের নিস্তেজ উদ্ধার করে,চোখে মুখে পানি দিতে লাফিয়ে উঠি সবাই।যেই বৃদ্ধ আমাদের উদ্ধার করে তাকে সব বলি,
তখন উনি পান চিবানো দাঁতে হাসতে হাসতে একটা পাথরে বসে বলেন "এই খোকা সবাইরে চা দে"।আমরা অবাক বুইড়া হাসে কেন, "বলে আগে চা খায়া লন,কইতাসি" চা খেয়ে মাথাটা একটু খুললো,মস্তিষ্ক টা স্বাভাবিক হলো মনে হয়।
বৃদ্ধা বলছে, আপনাদের কপাল ভালো,নীলা আপনাগোরে ছাইড়া দিসে।এর আগে কেউ-ই ছাড়া পায়নাই একজন ছাড়া,সবার লাশ পানিতে ভাসছে। চা যতটুকু খেয়েছি মুখ থেকে বেরিয়ে আসলো মনে হয়। বললাম সবাই মানে?
মানে বুঝতে ২৫ বছর আগে যাওয়া লাগবো,
এই টেকেরঘাট চুনাপাথর প্রকল্প শুরু হওয়ার পর খুব ভালো চলতাছিলো। কোটি কোটি টাকার ম্যাশিন শত শত শ্রমিক,লাভবান প্রকল্প খুব সুন্দর দিন চলতাছিলো। এলাকায় সুখের সময় কাটতাছিলো।হঠাৎ কিছু সরকারি আমলা আর শ্রমিক নেতারা ফন্দি আটে,পরিকল্পিত ভাবে লাভবান এই প্রকল্পে দেখানো হয় লোকসান। প্রকল্প বন্ধ হয়, এরপর ১৯৯৬ সালের দিকে খনিজ প্রকল্পটিকে বন্ধ কইরা দিলে প্রায় ৪শত শ্রমিক-কর্মচারীকে বিসিআইসির অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে বদলি করা হয়।
সাকিব বলে, এত পেচান কেন,এইগুলার সাথে আমাদের ঘটনার মিল কি?
বৃদ্ধ চাচা বলে,আপনাদের এটাই সমস্যা সব ৫জি গতিতে জানতে চান,সময় নিয়ে সব ভালো মতন না জানলে রহস্য বুঝবেন কেমনে??
ফুয়াদ বলে,চাচা বলেন আপনে।
বৃদ্ধ - তো কই জানি ছিলাম,হ্যা হ্যা চাকরি। তো অনেকে চাকরির বদলি হইলেও,কিছু মানুষ এই দূর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে।তারা এলাকার সন্তান,তারা চায়নাই এই প্রকল্প বন্ধ হোক,তারা চাইসে এই এলাকার উন্নতি।
আর যে আওয়াজ তুইলা সবাইরে এক করছে তার নাম নীল।যার ডাকে সবাই এক জোট হওয়া শুরু করে
কী কিছু বুঝলেন?
আমি বললাম,এই নীল ই কি তাহলেএএএএ.....
বৃদ্ধার সেই হাসি আর দীর্ঘ নিশ্বাস এবার গম্ভীর,
হ্যা ঠিক ধরসেন বাবাজি। নীলই নীলার বড় ভাই। নীলের যখন এখানে চাকরি গেলোগা,শুরু করলো বিদ্রোহ, তখন কিছু অসাধু লোক ওর পিছে লাগলো।নীলের কথায় জোড় ছিলো,সবাই ওরে মানতো।নীলের বাপ মা নাই, বাসায় দাদি আর ফুটফুটে বোন নীলা। পুরা এলাকায় নীলার মতন গুণবতী রূপবতী নাই,অনেকেই চোখ দেয় কিন্তু নীল আগলায় রাখে বোনটারে। নীলের জীবন নিয়া ভয়নাই,ভয় বোনটারে নিয়া।
নীল আন্দোলনের প্রস্তুতি শেষে বাসায় ফিরে বোনটারে দেখতে,বৃষ্টির রাত ছিলো। গভীর রাতে সুমন মাঝির নৌকায় বাড়ি ফিরে,বোন আর দাদিরে সব বলে। নীলা রান্নায় পারদর্শী, মিষ্টি বানানোর হাত ভালো। ভাইয়ের জন্য মিষ্টি বানায়,আদর করে রান্না করে খাওয়ায়। সবাই ঘুমিয়ে ছিলো,এমন সময় মাঝরাতে একদল মানুষ ঘরে ঢুকে নীল রে বাইধা মারতে থাকে,দাদি রেও বাধে,আর নীলাকে সবার চোখের সামনে শয়তান হারামি গুলা ইজ্জত কাইরা নেয়। ভায়ের চোখের সামনে ফুটফুটে ফুলটার গলা কাইটা মারে,দাদিরেও গলা কাইটা ঘরের লাল ট্রান্কে ভরে।কিন্তু কথা আছেনা পাপ বাপরেও ছাড়েনা,নীল কোনো মতে বাঁধ খুইলা সবগুলারে একই ভাবে গলা কাইটা মারে,কিন্তু ওর বাম হাতের রগ কাইটা দেয়ায় সবাইরে মারতে মারতে নীল পানিতে পইরা যায়। সুমন মাঝি রাতে এই কাহিনি আচ পাইয়া গ্রামবাসীরে ডাকে,ভয়াবহ সেই রাতে ওরা আসছিলো সবাইরে মাইরা ঘর পুড়ায় দিতে,কিন্তু রহস্যজনক ভাবে গ্রামের সবাই পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিদ্যুৎ চমকায়া ঘরটায় আগুন লাইগা সব শেষ হইয়া যায়। নীল রে আমরা উদ্ধার করি।
নীল এখন কই?
অনেকেই কয় নীলরে নাকি এখনও মাঝে মাঝে নৌকা চালাইতে দেখা যায় ওর বাড়ির আশে পাশে।
মেহেদী বলতেসে,কাকা সব বুঝলাম?কিন্তু আমাদের সাথে কিভাবে কি মিললো এটা?
এহনো বুঝেন নাই? গতকাল রাইতের আপনাগোর মতন ওদিকে যাওয়া অনেক নৌকার যাত্রীরে রাতের বেলা নীলা দেখা দেয়। সবাই আপনাগোর মতন না,সবাই চায় সুযোগ নিতে।একা সুন্দর মাইয়া,বুইড়া দাদি কিছু করলে কে আটকাইবো?? আর তখনই ফাসে,নীলা ২৫ বছর ধইরা সেই বদলা নিতাসে,এই দ্বিতীয় বার কেউ বাঁইচা ফিরলো। আপনারা ওরে বোন ডাকসেন,বোন কি কখনো ভাইয়ের ক্ষতি করতে পারে?
সব বুঝে এবার আমরা একটু হতভম্ব, আসলে হইলো টা কি।
আর কষ্ট লাগলো নীলার পরিবারের জন্য,কিভাবে শয়তান অমানুষ গুলার হাতে শেষ হয়ে গেলো ফুটফুটে নীলা।
লোকটা লুঙ্গি টেনে হাটতে হাটতে পানির দিকে যাচ্ছে আর বলতেছে,শুকরিয়া আদায় করেন আল্লাহর কাছে আর সবসময় এমন চরিত্রের থাইকেন।
বলতে বলতে একটা নৌকায় উঠবে তখন আমি দৌড়ে তার কাছে গিয়ে জিগ্যেস করি, "আচ্ছা আপনিতো বললেন আমরা দ্বিতীয় যারা বেঁচে ফিরছি,তাহলে প্রথম কে ফিরছিলো?"
লোকটা এবারো হাসল, তবে হাসিটা একদম নীলার সেই অশ্রুসিক্ত হাসির মতন লাগলো, সে বললো
"প্রথম বার ফিরছে নীলার আসল প্রেমিক,যে নীলারে মন প্রাণ দিয়া ভালোবাসছে,এখনও বাসে,ভালোবাসার মানুষরে কি মাইরা ফেলা যায়? ভালোবাসার টানে নীল আর নীলার এই ত্যাগ জেনো এলাকাবাসী ভুইলা না যায় সেই জন্য এই লেকের নাম দিছে নীলাদ্রি লেক।"
কিন্তু মানুষটা কে??
"মানুষটা হইলো রাজু"
এটা বলতেই নৌকা থেকে ভান্গা গলায় মাঝি ডাক দিলো, "রাজু ভাই তাড়াতাড়ি উঠেন"
লোকটা নৌকায় উঠার আগে একটা হাসি দিয়ে নৌকায় উঠে
"আন্ধার ঘরে থাকবিরে তুই,কেউতো দেখবোনা" গানটা গাইতে গাইতে চলে যায়।সব একদম চোখের সামনে ভাসছে,কিছুই আর আড়ালে থাকলোনা। সূর্যের আলোতে ঝলমল করতে করতে যাচ্ছে রাজু,সাক্ষী করে গেলো আমাদের এক অন্যরকম রহস্যের। পিছনে ঘুরেই দেখি সব বন্ধুরাও আমার মতনই অশ্রুসিক্ত চোখে হাসছে, সবাই সবাইকে জড়িয়ে ধরে হাসতে হাসতে চিৎকার করে বলে উঠি আলহামদুলিল্লাহ।
- নামহীন অপূর্ণ
(১৮ এপ্রিল, ভোর ০৫:০৫)
বিঃদ্রঃ এই সম্পূর্ণ গল্প কাল্পনিক, চরিত্র ও নাম গুলাও কাল্পনিক।বাস্তব জীবনের সাথে এর কোনো মিল নেই।