24/04/2024
বই পোকা ফয়সাল এবং তার ঋদ্দ্বি
বন্ধু কয়েসের মাধ্যমে পরিচয় হলো সাগরের সাথে, সাগরের মাধ্যমে পরিচয় ফয়সালের সাথে। গত শুক্রবার ফয়সালের বাসায় গেলাম আমরা তিন জন। তার বাসায় গিয়ে আমি পুরোপুরি হতোবোম্ব। একটা বাসায় এতো বই থাকতে পারে, আমার বন্ধু ফয়সালের ঘর ভর্তি শুধু বই আর বই। শুধু বই বললে ভুল হবে কারণ এখানে শুধু বই না খুব দুর্লভ কয়েকশো বই রয়েছে। এই কালেকশনের অনেক বই তোর একাধিকবার তার পড়া। ফয়সাল আমাকে তার কালেকশনের বিভিন্ন ধরণের বইগুলো দেখালো, বেশ কিছু বই সম্পর্কে ধারণা দিলো। এরপর তার বাসায় দুপুরের খাবার শেষ করে আবার তার রুমে গিয়ে বসলাম। এবার আরো অবাক হলাম ফয়সালের কালেকশন দেখে। তার জীবনে সে যত ম্যাগাজিন পড়েছে তার সবগুলো তার কাছে আছে, সে যত দেশে ভ্রমণ করেছে, সেখান থেকে যত লিফটলেট, ব্রোসিয়ার, ম্যাগাজিন, প্লেনটিকিট, ট্যুরপ্ল্যানের পেপার সব কিছু সুন্দর করে ফাইলে সাজিয়ে রেখেছে। একটা মানুষ এতো গোছানো হতে পারে এটা ফয়সালের বাসায় না গেলে জানা হতো না। ফয়সাল মূলত একজন শিল্পপতি, কিন্তু এতো নিরঅহংকার এবং বন্ধুসুলভ সত্যই ভাবা যায় না। মানুষ মানুষের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখে, আমার মনে হয়েছে ফয়সাল ঠিক তেমন একজন মানুষ যার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখার আছে জানার আছে। বেশ কিছু সময় ওর রুমে গল্প করে চারজন বের হলাম ফয়সালের নতুন প্রজেক্ট `ঋদ্দ্বি’ দেখার জন্য। সেখানে গিয়ে পুরো চোখচড়ক গাছ, এটা তো এলাহি কান্ড, পুরো একটা বিল্ডিং জুড়ে `ঋদ্দ্বি’। `ঋদ্দ্বি’ মূলত `ঋদ্দ্বি’ হলো বই পড়া, আর্ট গ্যালারি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কিডস স্টেশনারি শপ, ক্যাফেসহ নানা আয়োজনের একটা স্থান। এখানে রয়েছে কয়েক হাজার বইয়ের কালেকশন। এই বইগুলোর মধ্যে এমনও অনেক বই রয়েছে যেগুলো কয়েকশো বছরের পুরোনো। যে কেউ চাইলে সারাদিন ধরে বই পড়তে পারেন। একটা পুরো ফ্লোর জুড়ে তৈরী করা হয়েছে আর্ট গ্যালারি, যে কেউ চাইলে তার ছবির প্রদর্শন করতে পারবেন। এই আয়োজনগুলো সবই ফয়সালের একান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগ, নিজের পয়সা খরচ করে এসব করা। একজন মানুষ কতটা বই পাগল হলে এমন উদ্যোগ নিতে পারে তা ফয়সালের সাথে দেখা না হলে জানা সম্ভব হতো না। সব কিছু দেখার পর ফয়সাল নিয়ে গেলো তার নিজের রুমে, দেখালো তার স্কুল জীবনের লিখা খাতা, তার বাবার বিয়ের কার্ড, তার দাদার লিখা নোট ডায়রী, তার জীবনের সবগুলো ভ্রমণের হিসাব নিকাশের লেজার শিট, আরো কত কিছু। অনেক দিন পর মনে হলো ফয়সালের মতো বন্ধুর সাথে দিনের পর দিন শুধু বই নিয়ে কথা বলা যায়, আড্ডা দেয়া যায়। সন্ধ্যার কিছু আগে বিদায় নিলাম `ঋদ্দ্বির’ কাছ থেকে। ধন্যবাদ বন্ধু কায়েস এবং সাগরকে। ভালো থাকো সব বন্ধুরা। সময় পেলে `ঋদ্দ্বি’তে গিয়ে সময় কাটাতে পারো। আমি নিশ্চিত মন ভালো হয়ে যাবে।