14/07/2025
বদরুদ্দীন উমর
১৭.০৫ ২০২৩
ভূমিকা
১৯৪৭ সালে ভারত ও বাঙলা ভাগের পর থেকে তৎকালীন শাসন ব্যবস্থা ও শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে অনেক আন্দোলন হয়েছে। জনগণের বিরুদ্ধে দমন পীড়ন, সরকারের ভাষা নীতি, ১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় পরবর্তীতে অনেক উল্লেখযোগ্য আন্দোলন হয়েছে। ১৯৬০ এর দশকে কৃষক ও শ্রমিক এলাকাতে শ্রমজীবীদের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য আন্দোলন হয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে। কিন্তু লক্ষ্য করার বিষয় যে, এইসব আন্দোলনে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে আবেগ ও উচ্ছাসের কমতি না থাকলেও শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে আন্দোলনে জনগণের মধ্যে প্রকৃত গণতান্ত্রিক চেতনা সৃষ্টি ও বিকাশের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছুই করা হয়নি। এইসব বিক্ষোভ আন্দোলনের মধ্যে একটা শক্তির পরিচয় থাকলেও গণতান্ত্রিক চেতনা ও চিন্তাভাবনার অনুপস্থিতিতে তার মধ্যে যথার্থ পরিপক্কতার অভাব থেকেছে। এ কারণে গণতান্ত্রিক আন্দোলন ষাটের দশকে একটানাভাবে চলে এলেও এবং তার পরিণতিতে ১৯৬৯ সালে এক গণঅভ্যুত্থান ঘটলেও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কোন শক্ত বুনিয়াদ বা ভিত্তি তৈরি হয়নি। এ কারণে জনগণের অনেক শক্তিশালী আন্দোলন, এমনকি গণঅভ্যুত্থান সত্ত্বেও, সেই সব আন্দোলনের নেতৃত্ব শেষ পর্যন্ত জনগণের কোন গণতান্ত্রিক ও বিপ্লবী সংগঠনের হাতে না থেকে চলে গিয়েছিল আওয়ামী লীগের মতো একটি জনস্বার্থবিরোধী ও প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলের হাতে, যার নেতৃত্বে ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। গণ আন্দোলনের একজন শীর্ষ নেতা হিসাবে মওলানা ভাসানী ও কমিউনিস্ট পার্টির কোন গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য ভূমিকাই ১৯৬০ এর দশকের
শেষ ভাগে আর থাকেনি। সেই পরিস্থিতিতে ১৯৭০-৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রায় একক রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়ে এখানকার রাজনীতির নিয়ন্ত্রকে পরিণত হয়েছিল। এর ফলে যা হওয়ার তাই ১৯৭১
সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় দেখা গিয়েছিল। বাঙলাদেশ উত্তর পরিস্থিতিতে এ দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের যে চরম দুর্দশা দাঁড়িয়েছিল তার কারণ এসবের মধ্যেই নিহিন ছিল। আজ পর্যন্ত এ পরিস্থিতির কোন উন্নতি না হয়ে তার ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে এই ইতিহাস সকলের জানা।
কমিউনিস্ট নেতৃত্ব ও কমিউনিস্ট পার্টিগুলিই এই পরিস্থিতি সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রেখেছিল। কোন পর্যায়েই তারা জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনা সৃষ্টির জন্য, জনগণকে প্রগতিশীল ও বিপ্লবী রাজনীতিতে শিক্ষিত করার ব্যাপারে কোন প্রচেষ্টা গ্রহণ করেনি। তার কোন প্রক্রিয়া দেখা যায়নি। এর মূল কারণ ছিল তাঁদের নিজেদেরই উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় শিক্ষার অভাব, তাঁদের নিজেদের মধ্যে শ্রেণী চেতনা এবং তাত্তিক শিক্ষা ও চর্চার অভাব ছিল। এসব ক্ষেত্রে তাঁদের দৈন্য দশা যে কত ভয়াবহ ছিল এটা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় দেখা গিয়েছিল। তথাকথিত মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি দেশ থেকে পলায়ন করে ভারতে গিয়ে আওয়ামী লীগের লেজুড়ে পরিণত হয়েছিল এবং ১৯৭৫ সালে নিজেদের পার্টি বিলুপ্ত করে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) এর মতো একটি ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দলের অঙ্গীভূত হয়েছিল। অন্যদিকে, তথাকথিত পিকিংপন্থী কমিউনিস্ট পার্টিগুলি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধকে দুই কুকুরের লড়াই বলে জনগণের থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে তাদের দ্বারা পরিত্যাক্ত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের শেষ দিকে তারা একেবারে ছিন্নভিন্ন হয়ে পরবর্তী কালে বিলুপ্ত হয়েছিল।
বাঙলাদেশে গণতান্ত্রিক ও বিপ্লবী আন্দোলনের এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে ১৯৭৬ সালের আগস্ট মাসে আমরা গঠন করেছিলাম 'বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)'। প্রথম থেকেই আমাদের চেষ্টা ছিল শ্রমজীবী জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কাজ করে তাদেরকে শুধু গণতান্ত্রিক সংগ্রামে সক্রিয় করা নয়, সেই সাথে তাদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা সৃষ্টি ও তার বিকাশ ঘটানোও ছিল আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এ কারণে আমরা মার্কসীয়-লেনিনীয় পদ্ধতিতে রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিশ্লেষণ ও তত্ত্ব চর্চার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলাম। দেশের নানা সমস্যার চরিত্র বিশ্লেষণ ছিল আমাদের মাঠ পর্যায়ের আন্দোলনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার কোনো সুযোগ ও প্রয়োজন এখানে নেই। তবে এ প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার যে, জনগণের বিভিন্ন অংশকে সংগঠিত করার জন্য আমরা একের পর এক শ্রেণী সংগঠন ও গণসংগঠন গড়ে তুলেছিলাম এবং এই সংগঠনগুলির মাধ্যমে জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি ও বিকাশের ক্ষেত্রে এক নোতুন ঐতিহ্য গঠন করেছিলাম। প্রাথমিকভাবে সংগঠনগুলির ঘোষণাপত্রে আমরা দেশের পরিস্থিতির বিশ্লেষণ ও সেই পরিস্থিতিতে সচেতন সংগ্রামের পধ নির্দেশ করেছিলাম। এ ছাড়া প্রতিটি সংগঠন থেকে আমরা নিয়মিত বিশ্লেষণধর্মী রচনা ও প্রচারপত্র প্রকাশ করতাম। এভাবে জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা সৃষ্টি ও তা বিকাশের কর্মসূচী আমরা গ্রহণ করেছিলাম।
সংগঠন ছাড়া কোন রাজনৈতিক সংগ্রামই গঠন ও বিকাশিত করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সংগঠনের প্রয়োজন অপরিহার্য। এই প্রয়োজনের তাগিদেই ১৯৭৬ সালে পার্টি গঠনের পর থেকে আমরা শ্রমজীবী ও মধ্য শ্রেণীর জনগণের মধ্যে কাজ করার জন্য একের পর এক সংগঠন গড়ে তুলেছিলাম।
বাঙলাদেশ লেখক সংগ্রাম শিবির গঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের প্রথম দিকে। পরে ১৯৭২ সালে তার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছিল 'বাঙলাদেশ লেখক শিবির'।
আমাদের সাথে লেখক শিবিরের কোন সম্পর্ক পার্টি গঠনের আগে ছিল না। ১৯৭৬ সালের পর তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ হয় এবং ১৯৭৮ সালে আমরা এই সংগঠনের মধ্যে কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। তারপর অল্প দিনের মধ্যেই বাঙলাদেশ লেখক শিবির আমাদের পরিচালনায় দ্রুত বিকাশ লাভ করতে থাকে। আশির দশকে লেখক শিবির এর প্রায় ৬০টি শাখা বিভিন্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং লেখক শিবির হয়ে দাঁড়ায় বাঙলাদেশের সর্ববৃহৎ লেখক-পাঠকদের এক সংগঠন। এ সময়ে বাঙলাদেশের প্রায় সকল প্রগতিশীল ও বামপন্থী লেখক, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীগণ লেখক শিবিরের সাথে সাংগঠনিকভাবে যুক্ত হন। এই সংকলনে বাঙলাদেশ লেখক শিবিরের একাধিক প্রকাশনা অন্তর্ভুক্ত করা হলো, যার থেকে সুস্পষ্ট বোঝা যাবে এই সংগঠনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও কর্মসূচী আমরা কীভাবে নির্ধারণ করেছিলাম এবং সেই অনুযায়ী সাংগঠনিক কাজ করেছিলাম।
১৯৭৮ সালে আমরা গঠন করি 'বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন'। অল্প দিনের মধ্যেই এই সংগঠন বেশ কয়েকটি জেলায় সংগঠিত হয়। কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি ও কর্মীদের তাত্ত্বিক মান বৃদ্ধির জন্য আমরা অনেক লিখিত বক্তব্য প্রকাশ করি। আমরা নিয়মিতভাবে কৃষকদের সাথে বৈঠকী আলোচনা করি। বিভিন্ন এলাকায় আলোচনা সভার অনুষ্ঠান করি, কেন্দ্রীয়ভাবে প্রশিক্ষণ শিবিরের ব্যবস্থা করি। এ ধরনের কোন কাজ ১৯৪৭ থেকে আজ পর্যন্ত কোন কৃষক সংগঠনেই করা হয়নি। এ ধরনের কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তার কথা কোন সংগঠন চিন্তা পর্যন্ত করেনি। কৃষক সমস্যা বিষয়ক বেশ কিছু রচনা আমরা প্রকাশ করেছিলাম। কৃষক ফেডারেশনের এই সব প্রকাশনা থেকে বাছাই করা কয়েকটি আমরা এই সংকলনের অন্তর্ভুক্ত করেছি।
১৯৮০ সালে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে গঠন করি 'বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন' (টাফ)। কৃষক ফেডারেশনের মত টাফ-এর দ্রুত বিকাশ না হলেও আমরা বেশ কিছু শ্রমিক এলাকায় সংগঠন দাঁড় করাই। আমাদের রীতি অসুযায়ী 'টাফ' এর ঘোষণাপত্র এবং অন্যান্য প্রকাশনার মাধ্যমে আমরা শ্রমিকদের মধ্যে শ্রেণী চেতনা তৈরীর উদ্যোগ নিই। 'টাফ' এর কয়েকটি বাছাই করা প্রকাশনা এই সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হলো।
জনগণের মধ্যে সাধারণভাবে রাজনৈতিক কাজ সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে ১৯৮৭সালের এপ্রিল মাসে আমরা গঠন করি 'গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোট'। এই সংগঠনের কয়েকটি প্রকাশনা এখানে সংযোজিত হলো।
২০০৩ সালে গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটসহ অন্য কতকগুলি বামপন্থী ও প্রগতিশীল সংগঠন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের 'ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট'-কে নিয়ে আমরা গঠন করি 'জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল'। এই উদ্দেশ্যে আহুত সম্মেলনে সারা
দেশব্যাপী বিপুল সাড়া পাওয়া যায়। বড় আকারে এক সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত হওয়ার পর থেকে আমরা এই সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের রাজনৈতিক সক্রিয়তা বজায় রেখেছি। 'জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল' এর আহবানপত্রসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশন্য এই সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হলো।
১৯৭১ সাল থেকেই বাঙলাদেশে গণতান্ত্রিক সরকারের পরিবর্তে একের পর এক ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতাসীন থেকেছে। আওয়ামী-বাকশালী আমল থেকে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার পর্যন্ত বাঙলাদেশে ক্রমশঃ এই ফ্যাসিস্ট শাসনের অবনতি ঘটে চলেছে। বাঙলাদেশের ওপর সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণ এই ফ্যাসিবাদকে শক্তির যোগান দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা ২০০৯ সালে একটি সাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগঠন গড়ে তোলার জন্য গণতান্ত্রিক মহলের কাছে আহ্বান জানাই। এই উদ্দেশ্যে আমরা একটি জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করি। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গণতান্ত্রিক কর্মীরা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। বড় ধরনের এই সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত হয় 'সাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় কমিটি'। এই কমিটির কিছু দলিলপত্র এই সংকলনে অন্তর্ভুক্ত করা হলো।
বাঙলাদেশে নানা ধরনের সংখ্যালঘুর ওপর শোষণ নির্যাতন পূর্ববর্তী সব শাসন আমলের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা হিসেবে চলে আসছে। শুধু তাই নয়, এদিক দিয়ে বাঙলাদেশে পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। এই সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিভিন্ন জাতিসত্তাভুক্ত সংখ্যালঘুদের ওপর শোষণ নির্যাতন সব থেকে ব্যাপক ও বেশি। এই পরিস্থিতিতে তাদের ওপর শোষণ নির্যাতনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তার বিরুদ্ধে আমরা সংগঠিত আন্দোলনের উদ্যোগ নিই। এজন্য বিভিন্ন ধরনের সংখ্যালঘু জাতিসত্তার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ও কর্মীদের সাথে আমরা যোগাযোগ করি। সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের বিরুদ্ধে শোষণ নির্যাতন প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে আমরা একটি সংগঠন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি এবং সেই উদ্দেশ্যে একটি সম্মেলন আহ্বান করি। এই সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা, ত্রিপুরা, মার্মা ইত্যাদি বিভিন্ন জাতিগত সংখ্যালঘুসহ সাঁওতাল, গারো, মুণ্ডা, হাজং ইত্যাদি বহুসংখ্যক সংখ্যালঘু জাতিসত্তার প্রতিনিধিরা বড় আকারে অংশগ্রহণ করেন। ২০১১ সালে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের মিলনায়তনে। সম্মেলনে আগত প্রতিনিধিরা তাঁদের বিরুদ্ধে শোষণ নির্যাতনের বিবরণ দেন, তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। এই প্রাণবন্ত সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত হয় 'জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ'। এই পরিষদের ঘোষণাপত্র এই সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হলো।
এভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য প্রয়োজনীয় একের পর এক সংগঠনের মাধ্যমে আমরা রাজনৈতিক কাজ করে এসেছি। কিন্তু আমরা রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় থাকলেও দেশের বিদ্যমান প্রতিকূল সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য আমরা কোন বড় ধরনের সাফল্য লাভ করিনি। একদিকে সরকারী
নির্যাতন নিপীড়ন এবং অন্যদিকে সাধারণভাবে নোতুন প্রজন্মের মধ্যে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রতি অনীহা ও সাড়ার অভাব আন্দোলনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশের দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগঠিত করার যথাসাধ্য চেষ্টা আমরা করেছি। যে দলিলগুলি এখানে প্রকাশ করা হলো সেগুলি এ ক্ষেত্রে আমাদের উদ্যোগ ও চেষ্টার স্বাক্ষর।
আমাদের এই উদ্যোগের কোন উল্লেখযোগ্য সাফল্য না এলেও এই উদ্যোগের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও মূল্য আছে। কারণ এ ধরনের কোন চেষ্টা অন্য কোন কমিউনিস্ট পার্টি এবং গণতান্ত্রিক সংগঠনের মধ্যে দেখা যায়নি। এই উদ্যোগের বিষয় যাতে ইতিহাস থেকে মুছে না যায় এবং ঐতিহাসিকভাবে বিলুপ্ত না হয় তার জন্যই আমরা এই দলিলগুলি প্রকাশ করলাম। আমরা আশা করি, যাঁরা ভবিষ্যতে বাঙলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাস রচনা করবেন এ দলিলগুলি তাঁরা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা ও ব্যবহার করবেন।
আমরা আরও আশা করি, ভবিষ্যতে এদেশে যাঁরা গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক রাজনীতি সংগঠিত করবেন তাঁরা এই ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত হয়ে বাস্তব পরিস্থিতির বাস্তব বিশ্লেষণ করা এবং এই আন্দোলনকে বৈপ্লবিক রাজনৈতিক লাইনে সংগঠিত ও পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করবেন।