13/05/2025
রোহিণী নক্ষত্র : মানব আত্মার চুম্বক
......................................................................
রোহিণী—শব্দটা শুনলেই এক অদ্ভুত কোমলতা জেগে ওঠে মনে। সংস্কৃতে ‘রোহিণী’ অর্থ ‘লালাভ’, ‘বর্ধনশীল’, কিংবা ‘যা বিকাশ ঘটায়’। পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, রোহিণী হলো চাঁদের সবচেয়ে প্রিয় নক্ষত্র। এক মহাজাগতিক ভালোবাসা দুজনের মধ্যে।
বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ
পৃথিবী থেকে দেখা সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাগুলোর একটি- রোহিণী। এর আরেকটা নাম আছে, Aldebaran (আলদেবারান)।
তৌরুস (Ta**us) নক্ষত্রপুঞ্জের অন্তর্গত এই রোহিনীর রং লাল। আর আকৃতি রীতিমত দৈত্যাকার। সূর্যের চেয়ে প্রায় ৪৪ গুণ বড় এবং উজ্জ্বল। রেডিমেট্রিক বিশ্লেষণ বলছে এটি তার আয়ুষ্কালের শেষ দিকে রয়েছে। অর্থ্যাৎ বিশেষ কিছু না ঘটলে খুব কম সময়ই এই রোহিণী আমাদের মাঝে আছে, তারপর ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। আপনি যদি আলোর গতিতে এগুতে থাকেন, তাহলে রোহিণীতে পৌঁছাতে আপনার লাগবে ৬৫বছর। এই নক্ষত্র পৃথিবী থেকে খালি চোখেই দেখা যায়, এবং একে হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্রে রোহিণী নক্ষত্র হিসেবে ধরা হয়।
জ্যোতিষশাস্ত্রে রোহিণীর ভূমিকা
রোহিণী হল চন্দ্রের চতুর্থ নক্ষত্র। এটি ২৭টি নক্ষত্রের মধ্যে সবচেয়ে মোহময়, নান্দনিক এবং প্রেমঘন বলে বিবেচিত।
এর শক্তি: স্থায়ীতা, সৃষ্টি, উর্বরতা, আকর্ষণ, বিলাসিতা, ও প্রেম।
যাদের জন্ম রোহিণী নক্ষত্রে, তারা সাধারণত শিল্পে পারদর্শী, আবেগপ্রবণ, সংবেদনশীল ও অত্যন্ত আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হন। এই নক্ষত্র বৃষ রাশির অংশ আর এর অধিপতি গ্রহ চন্দ্র। ফলে, আবেগ, কল্পনা এবং মায়াবী শক্তি এখানে প্রবল।
মানবজীবনে প্রভাব
রোহিণীর গভীর আকর্ষণক্ষমতা মানুষকে টানে প্রেম, সৃজন আর আত্মনিবেদন পথে।
এটি মনের দরজা খুলে দেয়, চাপা কষ্ট গলে বেরিয়ে আসে কান্না হয়ে, কবিতা হয়ে, বা চিত্র হয়ে। চোখ অশ্রুসিক্ত করে, আর সেই অশ্রু শুদ্ধিকর, নিরাময়কারী।
রোহিণী মানুষকে শেখায়—ভালোবাসা শুধু একমাত্র উপায় নয়, কিন্তু শেষ আশ্রয়ও বটে।
গাণিতিক সৌন্দর্য ও বিন্যাস
রোহিণী ১৩°২০′ থেকে ২৬°৪০′ পর্যন্ত বৃষ রাশিতে বিস্তৃত। এর প্রতিটি পদ। আলাদা আলাদা প্রভাব তৈরি করে মানুষের মানসিক গঠন ও দৃষ্টিভঙ্গির উপর।
পদ ১: বাস্তববাদী চিন্তা
পদ ২: শৈল্পিক দক্ষতা
পদ ৩: আবেগপ্রবণতা
পদ ৪: আত্মসংযোগ ও আধ্যাত্মিকতা
মিথ ও মিস্ট্রি
মিথোলজি অনুসারে চাঁদকে দেবতা বলে বিশ্বাস করতেন কিছু মানুষ। যেকারণে চাঁদকে বলা হতো চন্দ্রদেব। তো এই চন্দ্রদেবের ছিল ২৭ স্ত্রী। তার মধ্যে চাঁদের এক স্ত্রীর নাম-রোহিণী।
মিথ বলছে, চাঁদ এতটা গভীর ভাবে রোহিণীকে ভালোবাসে যে তার উপর মোহাবিষ্ট হয়ে পড়েন। চন্দ্র রোহিণীর প্রেমে এতটাই ডুবে গিয়েছিলেন যে বাকি ২৬ স্ত্রীকে উপেক্ষা করতেন। তখন আরেক দেবতা ব্রহ্মা, চাঁদকে অভিশাপ দেন। এই গল্প চাঁদের কালি-পূর্ণিমার পেছনের একটি ব্যাখ্যা হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। চাঁদের কলঙ্ক বলতে মেই কালো দাগকে বোঝায়—তার প্রেমের ঋণ-দায় যেন চাঁদকে আলো ও অন্ধকারের মধ্য দিয়ে যাওয়া শেখায়।
________________________________________
রোহিণীর পরিবেশ কল্পনায়
কল্পনাভিত্তিকভাবে যদি রোহিণীকে একটা জগৎ ধরা হয়, তবে তা হবে—
নরম আলোয় ভরা,
ফুলে-পাতায় ছাওয়া,
এক ধরণের ধীরগতির সৌন্দর্যে মোড়া একটা নীরব ভূমি—যেখানে কান্নাও কবিতা, প্রেমও আরাধনা।
শেষ কথা
রোহিণী হল অন্তরের নক্ষত্র। যেখানে কেবল আলো নয়, আবেগও জ্বলে। যেখানে চন্দ্র তার নীরব কান্না লুকায়, আর মানব আত্মা নিজের শেকড়ের খোঁজ পায়। রোহিণী মানেই টান।একটা অদ্ভুত চুম্বক শক্তি।মানুষকে যেন অজান্তেই টেনে নেয়—ভালোবাসার, বিচ্ছেদের, সৃষ্টির ও আত্মোত্থানের দিকে।তুমি যদি রোহিণী নক্ষত্রকে বোঝো, তাহলে তুমি বুঝবে—কেন কিছু ভালোবাসা শেষ হয়েও শেষ হয় না। কেন কিছু মানুষ চলে গিয়েও রয়ে যায় বুকের ভেতর।
@জটাংক