07/01/2025
ছোটবেলায় বাবা একটা বই নিয়ে আসে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও পটভূমি। আমার ১২-১৩ বছর বয়স হবে। বইটাতে কয়েকজন ওয়ার জার্নালিস্ট আর ফটোগ্রাফারের চোখে ময়মনসিংহের যুদ্ধকালীন ভয়ার্ত অভিজ্ঞতা আর আফটার ওয়ার ট্র্যাজেডি খুব সুন্দর ন্যারেটিভে তুলে ধরা হয়। চমৎকার স্টোরিটেলিং। পুরোনো বই বারবার পড়ার অভ্যাস আছে আমার। কিন্তু এই বইটা কখনও দ্বিতীয়বার খোলার সাহস হয়নি। কারণটা বুঝাই।
একটা অংশ এমন ছিলো, ফটোগ্রাফার ছবি তুলছে যুদ্ধের পরে। দেশ স্বাধীন হয়ে বেশ কিছুদিন হয়ে গেছে। উনি দেখলেন মিলিটারিদের বাঙ্কার থেকে বহুত কষ্টে একটা রুগ্ন দেহের মেয়ে উঠে এলো। অপুষ্ট রুগ্ন শরীর দেখে কিশোরী বলে ভুল হবে। দাঁড়ানোর শক্তি নাই, হামাগুড়ি দিয়ে একটা পোস্টে হেলান দিয়ে বসে ছিলেন অনেক্ষন মহিলাটি। দেশ অনেকদিন স্বাধীন হয়ে গেছে। কিন্তু তাকে কেউ জানায় নি। মাসের পর মাস ওই বাঙ্কারে নির্যাতিত হয়েছেন, সূর্যের আলোও দেখেননি। চোখের সামনে এই পুরো ঘটনা দেখে ফটোগ্রাফার তার কর্তব্য ভুলে গেছিলেন। হুশ হওয়ার পর এই বিখ্যাত ছবিটা ক্লিক করেন তিনি।
একটা জায়গায় এক মুক্তিযোদ্ধার জবানিতে বলা ছিলো, নদীতে এক মেয়ের বিবস্ত্র দেহ উপুড় হয়ে ভেসে যাচ্ছে। He thought to himself, মৃত্যুর পরেও তার সম্ভ্রম রক্ষা করছে খোদা। হয়তো তাই সব মেয়ে মানুষের লাশই উপুড় হয়ে ভাসে।
যুদ্ধের বাকি ট্র্যাজেডির একটা বড় অংশ আমার দাদু আর প্রদীপ স্যারের থেকে শোনা। শকুনে ঠুকরে খাওয়া পঁচা লাশ, ছোট বাজারের বধ্যভূমি, খুলি আর কঙ্কালে ভরা ইন্দিরা, অনেক কিছুই জানলাম। ব্রহ্মপুত্রের পার দিয়ে যুদ্ধের পড়ে লাশের গন্ধের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষের স্মৃতিমন্থন, অনেক কিছুই শুনলাম।
এর জন্য ওই বইটা আর দ্বিতীয়বার পড়ার সাহস করিনা। প্রথমবার পরেই কয়েক রাত ঘুমাতে পারিনি। তখন চিন্তা করি সামনে থেকে যুদ্ধ দেখা, বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো আর বীরাঙ্গনাদের কথা।
এরপর দেখি লাইভে এসে ডালিমের মাত্র ২ জন বীরাঙ্গনার খোঁজ পাওয়া নিয়ে হাসাহাসি আর তাকে the legend, the myth বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলা আমার ফ্রেন্ডলিস্টের মানুষজন। People never cease to amuse me.....