07/09/2025
🌍প্রবাসী ও তার স্ত্রী কিভাবে শারীরিক চাহিদা পূরণ করবে ?
🌍মধ্যরাত। আরবের কোনো এক লেবার ক্যাম্পের ঘামে ভেজা, লোহার খাটে শুয়ে ছটফট করছে একটা শরীর। তার চোখে ঘুম নেই। আছে শুধু দেশের মাটির টান, প্রিয়তমার মুখ আর শরীরের গভীরে জ্বলতে থাকা এক আদিম আগুনের হলকা। তার পাঠানো টাকায় কেনা স্মার্টফোনের স্ক্রিনে সে যখন স্ত্রীর মুখ দেখে, তখন ভালোবাসা ছাপিয়ে তার শিরায় শিরায় যে তীব্র, অসহ্য যন্ত্রণা বয়ে যায়—তার খবর কি কেউ রাখে?
🌍ঠিক সেই মুহূর্তে, হাজার হাজার মাইল দূরে, বাংলাদেশের কোনো এক গ্রামের নরম বিছানায় এপাশ-ওপাশ করছে তার স্ত্রী। তার চোখেও ঘুম নেই। চারপাশের নিস্তব্ধতা তাকে জীবন্ত গিলে খেতে আসে। তার একাকীত্ব, তার অতৃপ্ত শরীর—এগুলো কি শুধুই তার ব্যক্তিগত সমস্যা? নাকি আপনার আমার তৈরি করা এই ‘রেমিট্যান্স অর্থনীতির’ সবচেয়ে brutal, সবচেয়ে অমানবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া?
🌍এই প্রশ্নগুলো উচ্চারণ করতে আমাদের ভয় হয়। কারণ এই প্রশ্নগুলোর গভীরে লুকিয়ে আছে এমন এক সত্য, যা আমাদের তথাকথিত ‘পারিবারিক মূল্যবোধ’ আর ‘সামাজিক সম্মান’-এর মুখোশটাকে এক ঝটকায় ছিঁড়ে ফেলে দেবে। এই লেখাটি কোনো দুর্বলচিত্তের মানুষের জন্য নয়। এটি আপনাকে আয়নার সামনে দাঁড় করাবে এবং প্রশ্ন করবে—প্রবাসীর পাঠানো টাকায় দেশের জিডিপি বাড়ে, কিন্তু সেই টাকার বিনিময়ে যে ভালোবাসা আর বিশ্বাস ক্ষয় হয়ে যায়, তার দায় কার?
🌍 পাঠকের প্রতি বিশেষ সতর্কবার্তা
🌍এই লেখাটি আপনার মানসিক স্বস্তি কেড়ে নিতে পারে 💔। এটি আপনার বিবেককে এমনভাবে নাড়া দেবে 🤯, যার প্রভাব আপনার চিন্তায় দীর্ঘদিন থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই, পুরো আর্টিকেলটি নিজ দায়িত্বে পড়ার অনুরোধ রইলো।
রেমিট্যান্স যোদ্ধা নাকি কামনার আগুনে পোড়া জীবন্ত লাশ?
আমরা তাকে ‘রেমিট্যান্স যোদ্ধা’ বলি। দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড বলি। কী দারুণ সব তকমা! কিন্তু এই তকমার আড়ালে লুকিয়ে থাকা জলজ্যান্ত মানুষটাকে আমরা দেখতে পাই না। যে মানুষটা তার যৌবনের শ্রেষ্ঠ বছরগুলো, তার জীবনের সবচেয়ে রঙিন দিনগুলো একটা মরুভূমির বুকে কংক্রিটের জঙ্গলে সঁপে দেয়, তার শরীর আর মনের খবর কে রাখে?
🌍দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর—একজন সুস্থ, সবল যুবক তার সমস্ত জৈবিক চাহিদাকে পাথরচাপা দিয়ে রাখে। তার শরীর বিদ্রোহ করে, মন অন্ধকার পথে হাঁটতে চায়। এই অতৃপ্ত ক্ষুধা, এই তীব্র শারীরিক যন্ত্রণা তাকে ঠেলে দেয় এক ভয়ঙ্কর খাদের কিনারে। কেউ হয়তো মোবাইলের নীল আলোয় নিষিদ্ধ দুনিয়ায় ডুব দিয়ে সাময়িক মুক্তি খোঁজে, কিন্তু সে জানে, এটা বিষ। এই বিষ তার আত্মাকে, তার চরিত্রকে, তার ভালোবাসাকে কুরে কুরে খাচ্ছে।
🌍আর যখন সে পা ফসকে সেই ভুল পথে চলে যায়, তখন এই সমাজই তাকে চরিত্রহীন, নষ্ট বলে দাগিয়ে দেয়। কিন্তু একবারও কি আমরা ভেবে দেখেছি, কেন সে এই পথে গেল? যে সমাজ তাকে পরিবার থেকে, তার স্ত্রীর কাছ থেকে বছরের পর বছর বিচ্ছিন্ন করে রাখে, সেই সমাজ কোন অধিকারে তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলে?
🌍তার হাড়ভাঙা পরিশ্রমে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। তার পাঠানো টাকায় তার সন্তানের স্কুলের বেতন দেওয়া হয়, তার বাবা-মায়ের ওষুধের খরচ চলে, তার স্ত্রীর শখ পূরণ হয়। কিন্তু তার নিজের জন্য কী থাকে? একরাশ একাকীত্ব, অতৃপ্তি আর বিবেকের দংশন। তার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য, তার এই শারীরিক বিপর্যয়ের জন্য আমাদের কি কোনো মাথাব্যথা আছে? নেই। কারণ সে তো মানুষ নয়, সে একটা টাকা ছাপানোর যন্ত্র! তার আবার আবেগ কীসের? শরীর কীসের?
🌍প্রবাসীর স্ত্রীর নীরব দহন – ধৈর্যের আড়ালে এক জীবন্ত আগ্নেয়গিরি
এবার আসুন, ছবির অপর পিঠে। প্রবাসীর স্ত্রীর কথায়। তাকে আমরা ত্যাগের মহীয়সী, ধৈর্যশীলা ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করি। তার ত্যাগকে আমরা মহিমান্বিত করি। কিন্তু এই মহত্ত্বের আড়ালে যে কী পরিমাণ আগুন, কী পরিমাণ কষ্ট আর কী পরিমাণ চাপা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে থাকে, তার খবর কি আমরা রাখি?
🌍একজন যুবতী নারী। যার শরীর আছে, মন আছে, স্বাভাবিক চাহিদা আছে। তাকে থাকতে হচ্ছে স্বামী নামের মানুষটির ছবি বুকে নিয়ে। সে একা হাতে সংসার সামলায়, সন্তান মানুষ করে, সমাজের হাজারটা নিয়ম-কানুন মেনে চলে। কিন্তু রাতের গভীরে, যখন একাকীত্বের অন্ধকার তাকে গ্রাস করে, যখন তার নিজের শরীর তার কাছে অধিকার দাবি করে বসে—তখন সে কী করে?
🌍তার ধৈর্য কি অসীম? সমাজের কড়া নজরদারি, পাড়া-প্রতিবেশীর বাঁকা চাহনি, আর কিছু সুযোগসন্ধানী পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি—এই সবকিছুকে উপেক্ষা করে সে কীভাবে নিজেকে ঠিক রাখে? তার একাকীত্বকে পুঁজি করে পুরনো কোনো বন্ধু যখন গভীর রাতে মেসেঞ্জারে সহানুভূতির নামে বিষ ঢালে, তখন তার ভেতরের বাঁধটা কি একটুও কাঁপে না?
🌍এই যে প্রতিদিনের যুদ্ধ, এই যে নিজের শরীর আর মনের বিরুদ্ধে তার এই নীরব লড়াই—এর কোনো স্বীকৃতি কি আছে? নেই। কারণ সমাজ তাকে শিখিয়েছে, ‘স্বামী বিদেশে কষ্ট করছে, তোমার তো সব আছে। আরামেই তো আছো।’ কী ভয়ঙ্কর পরিহাস! তার সব আছে, শুধু তার জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় মানুষটাই নেই। তার জীবনের বসন্তগুলো এভাবেই খাতার পর খাতা পেরিয়ে যায়।
🌍যদি কোনো মুহূর্তে তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়? যদি সে একবার ভুল করে ফেলে? তখন এই সমাজই তাকে নষ্টা বলে পাথর ছুড়বে। কিন্তু যে সমাজ তাকে এই পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিল, সেই সমাজের কি কোনো দায় নেই? তার এই ত্যাগকে আমরা ‘মহৎ’ বলে আসলে কি তার ওপর এক ধরনের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চাপিয়ে দিচ্ছি না?
🌍ডিজিটাল প্রেম নাকি সম্মানের মৃত্যুফাঁদ?
যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এখন মোবাইল ফোন। ভিডিও কলে প্রিয়জনের মুখ দেখে মনটা জুড়িয়ে যায়। কিন্তু এই প্রযুক্তিই হয়ে উঠতে পারে আপনার সম্মান আর জীবনের সবচেয়ে বড় শত্রু।
🌍শারীরিক দূরত্বের যন্ত্রণা কমাতে অনেক দম্পতি ভিডিও কলে খোলামেলা হন, একে অপরকে দেখে নিজেদের অতৃপ্তিকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। তারা ভাবেন, এটা তাদের একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্ত। কী মারাত্মক ভুল! এই ডিজিটাল পৃথিবীতে কোনো কিছুই ব্যক্তিগত নয়। আপনার ফোনের গ্যালারি, আপনার মেসেঞ্জারের চ্যাট, আপনার ভিডিও কল—কোনো কিছুই নিরাপদ নয়।
🌍এক মুহূর্তের অসতর্কতায় আপনার সেই ‘ব্যক্তিগত’ ভিডিও রেকর্ড হয়ে যেতে পারে। ফোন হ্যাক হতে পারে। আর তারপর? সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়বে ইন্টারনেটে, পর্ন সাইটগুলোতে। আপনার স্ত্রীর মুখ, আপনার সম্মান, আপনার পরিবারের ইজ্জত হয়ে যাবে লক্ষ লক্ষ মানুষের চোখের বিনোদন। ব্ল্যাকমেইলিং, সামাজিক হয়রানি, ডিভোর্স, এমনকি আত্মহত্যার মতো ঘটনাও তখন আর অস্বাভাবিক থাকবে না।
🌍যে ভালোবাসা আর আবেগ তাদের সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখার শেষ অবলম্বন ছিল, সেটাই হয়ে দাঁড়াবে তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় অভিশাপ। তাহলে উপায় কী? তারা কি তাদের আবেগ প্রকাশ করবে না? এখানেই সেই ভয়ঙ্কর দ্বিধা, যেখান থেকে বেরোনোর কোনো সহজ রাস্তা নেই।
সমাধান কোথায়?
এই জটিল এবং সংবেদনশীল পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কোনো জাদুকরী সমাধান নেই। তবে কিছু বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, যা এই যন্ত্রণা কিছুটা হলেও কমাতে পারে। নিচে প্রবাসী স্বামী এবং তার স্ত্রীর জন্য আলাদাভাবে ১০টি করে মোট ২০টি করণীয় উল্লেখ করা হলো:
🌍প্রবাসী স্বামীর জন্য করণীয়
শুধু "কেমন আছো, খেয়েছো?" নয়। নিজের কষ্ট, একাকীত্ব এবং স্ত্রীর অনুভূতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলুন। তাকে অনুভব করান, দূরে থাকলেও মনটা তার কাছেই আছে।
শারীরিক চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন, কাজে ডুবে থাকুন, নতুন কিছু শিখুন। এটি আপনার মানসিক শক্তি বাড়াবে।
🌍নামাজ, রোজা এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া আপনাকে गलत পথে পা বাড়ানো থেকে বিরত রাখবে এবং মানসিক শান্তি দেবে।
পর্নোগ্রাফি বা যেকোনো উত্তেজক কন্টেন্ট থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকুন। এটি আপনার চাহিদাকে কমানোর বদলে আরও বিকৃত করে তুলবে।
🌍অহেতুক সন্দেহ করে তার জীবনকে আরও কঠিন করে তুলবেন না। তার ত্যাগকে সম্মান করুন এবং প্রশংসা করুন।
আর্থিক বিষয়ে স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করুন। তাকে অনুভব করান যে, সে আপনার জীবনের এবং সিদ্ধান্তের একজন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
🌍স্ত্রীর সাথে অন্তরঙ্গ মুহূর্তে ভিডিও কলে খোলামেলা হওয়া থেকে বিরত থাকুন। আবেগের বশে এমন কিছু করবেন না, যা পরে সম্মানহানির কারণ হয়।
কবে দেশে ফিরবেন বা স্ত্রীকে কাছে নিয়ে যাবেন, তার একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করুন। একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অপেক্ষা করাকে সহজ করে তোলে।
🌍স্ত্রীর একাকীত্ব ও কষ্টের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তাকে বকাঝকা না করে তার মানসিক আশ্রয় হয়ে উঠুন।
নিজের স্বাস্থ্য ও মানসিক সুস্থতার দিকে খেয়াল রাখুন। আপনি সুস্থ থাকলেই পরিবারকে ভালো রাখতে পারবেন।
প্রবাসীর স্ত্রীর জন্য ১০টি করণীয়
নিজের একাকীত্ব, কষ্ট এবং অনুভূতির কথা স্বামীর সাথে শেয়ার করুন। কষ্ট চেপে রাখলে তা আরও বাড়বে।
🌍কোনো শখের কাজ, পড়াশোনা, অনলাইন কোর্স বা ছোটখাটো উদ্যোগে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। কর্মব্যস্ততা ও সৃজনশীলতা একাকীত্ব দূর করে।
স্বামীর প্রতি বিশ্বাস রাখুন এবং ধৈর্য ধরুন। ধর্মীয় অনুশাসন ও প্রার্থনা আপনাকে মানসিক শক্তি জোগাবে।
🌍সুযোগসন্ধানী মানুষের সাথে মেলামেশার ক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট সীমানা বজায় রাখুন। নিজের সম্মান রক্ষায় কঠোর হন।
কোনো অবস্থাতেই ব্যক্তিগত বা খোলামেলা ছবি/ভিডিও কারো সাথে শেয়ার করবেন না, এমনকি স্বামীর সাথেও নয়। ঝুঁকি নেবেন না।
🌍বিশ্বস্ত বান্ধবী, পরিবারের সদস্য এবং ইতিবাচক মানুষের সাথে সময় কাটান। নিজেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলবেন না।
আপনার স্বামীও যে বিদেশে কঠিন সময় পার করছেন, তার একাকীত্ব ও কষ্টকে বোঝার চেষ্টা করুন। একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন।
🌍যদি সন্তান থাকে, তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ গড়ার দিকে মনোযোগ দিন। এটি আপনাকে একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যস্ত রাখবে।
স্বামীর পাঠানো অর্থের সঠিক ব্যবহার করুন এবং ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ের পরিকল্পনা করুন।
যদি মানসিক চাপ অসহনীয় হয়ে ওঠে, তবে বিশ্বস্ত বন্ধু, পরিবারের সদস্য বা কোনো কাউন্সেলরের সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না।
🌐🌐🌐
゚