27/07/2025
১. মুসলিম নারীর পোশাক ব্যাপক প্রশস্ত হওয়া জরুরি, যেন তার সমস্ত শরীর পর-পুরুষ থেকে আচ্ছাদিত থাকে, যারা তার মাহরাম নয়। মাহরামের সামনে সে পরিমাণই খুলবে যতটুকু খোলা রাখার রীতি রয়েছে; যেমন- তার চেহারা, দুই হাতের কব্জি ও দুই পা।
২. পোশাক তার চারপাশ আচ্ছাদনকারী হওয়া চাই। এরূপ স্পষ্ট নয় যা তার চামড়ার রঙ প্রকাশ করে দেয়।
৩. এত সংকীর্ণ নয় যা তার অঙ্গের পরিমাণ স্পষ্ট করে দেয়। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا، قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ، وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلَاتٌ مَائِلَاتٌ، رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ، لَا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ، وَلَا يَجِدْنَ رِيحَهَا، وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا».
“জাহান্নামী দু’ ধরনের লোক এমন আছে যাদের আমি (এখনো) দেখতে পাইনি। একদল লোক, যাদের সাথে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকবে, তা দিয়ে তারা লোকজনকে পিটাবে। আর একদল স্ত্রীলোক, যারা বস্ত্র পরিহিত হয়েও বিবস্ত্রা, যারা অন্যদের আকর্ষণকারিণী ও আকৃষ্টা, উটের ঝুঁকে পড়া কুজের ন্যায় তাদের মাথা। ওরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি তার খুশবুও পাবে না। অথচ এত এত দূর থেকে তার খুশবু পাওয়া যায়।”
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ বলেন, ‘বস্ত্র পরিহিত উলঙ্গ নারী’র ব্যাখ্যায় বলা হয়, সে এমন পোশাক পড়বে যা তার শরীর ঢাকবে না। সে বস্ত্র পরিহিত হলেও প্রকৃতপক্ষে উলঙ্গ। যেমন, পাতলা কাপড় পরিধানকারী, যা তার শরীরের চামড়া প্রকাশ করে দেয় অথবা খুব সংকীর্ণ, যা তার শরীরের ভাঁজ প্রকাশ করে দেয়, যেমন নিতম্ব ও হাতের বাহুর ভাঁজ ইত্যাদি। নারীর পোশাক হবে প্রশস্ত ও মোটা, যা তাকে ঢেকে নেয় এবং তার শরীরের কোনো অংশ ও আকৃতি প্রকাশ করে না।
৪. পোশাকের ক্ষেত্রে পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ না করা। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণকারী নারীর ওপর লা‘নত করেছেন। অনুরূপ লা‘নত করেছেন পুরুষের অঙ্গ-ভঙ্গী গ্রহণকারী নারীদের ওপর। পুরুষের সাথে নারীর সাদৃশ্য গ্রহণ করার অর্থ প্রত্যেক সমাজে যেসব পোশাক পুরুষদের সাথে সেগুলো নারীদের পরিধান করা।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “পুরুষ ও নারীর পোশাকে ব্যবধান সৃষ্টিকারী বস্তু তা-ই যা তাদের প্রত্যেকের সাথে যথাযথ ও সামঞ্জস্যপূর্ণ। পুরুষের জন্য শোভনীয় পোশাক পুরুষরা পরিধান করবে এবং নারীদের জন্য শোভনীয় পোশাক নারীরা পরিধান করবে এটিই শরী‘আতের নির্দেশ। নারীদের প্রতি নির্দেশ রয়েছে তারা ঢেকে থাকবে ও পর্দা করবে, প্রকাশ্যে আশা ও সৌন্দর্য প্রকাশ করা তাদের পক্ষে বৈধ নয়। এজন্য আযান, তালবিয়া, সাফা ও মারওয়ায় উঠার সময় তাদের ওপর আওয়াজ বুলন্দ করার নির্দেশ নেই। ইহরামে তারা সেরূপ কাপড় খুলবে না যেরূপ পুরুষরা খুলে। কারণ, পুরুষদের নির্দেশ করা হয়েছে মাথা খোলা রাখতে, সাধারণ কাপড় পরিধান না করতে, সাধারণ কাপড় বলতে শরীরের মাপে তৈরি পোশাককে বুঝায়, যেমন জামা, পায়জামা, কোর্ট ও মোজা... নারীদেরকে কোনো পোশাক থেকে নিষেধ করা হয়নি। কারণ সে আদিষ্ট ঢেকে থাকা ও পর্দার, তার খিলাফ করা তার পক্ষে বৈধ নয়। কিন্তু তাকে নেকাব ও হাত মোজা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ, এগুলো শরীরের মাপ মতো তৈরি করা, যা তার প্রয়োজন নেই... অতঃপর তিনি বলেন, নারী এগুলো ছাড়াই স্বীয় চেহারা পুরুষদের আড়াল করবে... অতঃপর তিনি বলেন, ‘নিহায়াহ’ গ্রন্থে রয়েছে: পুরুষ ও নারীর পোশাকে পার্থক্য থাকা জরুরি, যার দ্বারা পুরুষরা নারীদের থেকে পৃথকভাবে চিহ্নিত হয়। নারীদের পোশাকে যদি আড়াল করা ও পর্দার বিষয়টি গুরুত্ব পায় তাহলে পর্দার আসল উদ্দেশ্য হাসিল হবে। পোশাক যদি পুরুষদের সাধারণ পোশাক হয়, তাহলে সেটা থেকে নারীদের নিষেধ করা হবে... অতঃপর তিনি বলেন, যদি পোশাকে পর্দা কম হয় ও পুরুষের সাথে সামঞ্জস্য থাকে, তাহলে দু’টি বিবেচনায় তার থেকে নারীদের নিষেধ করা হবে”।
৫. নারী ঘর থেকে বের হওয়ার সময় দৃষ্টি আকর্ষণকারী সৌন্দর্য গ্রহণ করবে না, তাহলে (নিষিদ্ধ) সৌন্দর্য প্রকাশকারী নারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
বইঃ মুমিন নারীদের বিশেষ বিধান
লেখকঃ ড. সালেহ ইবন ফাওযান আল-ফাওযান
অনুবাদকঃ সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনায়ঃ প্রফেসর ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া