10/06/2025
কার্টেসি : Shahriar Takee Afindi
উন্মাদ আশ্রম’এর মতোন গল্প হক সাহেব কেনো লিখলেন? এর সূক্ষ্ম উত্তর মিলবে উৎসর্গপত্রে— বুদ্ধিজীবী এবং প্রতারকদের।
গল্পে ঠগ জহিরের রঙ্গমঞ্চে কর্তির ব্যবচ্ছেদ থেকে এই ধারণা করা যায় যে, বুদ্ধির চর্চা না করে মানুষ ঠকানো অসম্ভব। জহির চরিত্রে এখন সামাজিক যেকোনো স্তরের মানুষের প্রতিস্থাপন সম্ভব, বিশেষত রাজনীতিবিদ।
২০২১ সালে শুরুর দিকে জানলাম, ভিক্ষুক আশ্রম নামে হক সাহেবের বই আসবে। করোনা মহামরি শুধু মানব শরীর নয়, আক্রমণ করেছিলো বইমেলাকেও। অতঃপর জানা গেলো, ভিক্ষুক আশ্রম প্রকাশিত হচ্ছে না; এপ্রিল মাসে এসে কাঙালসংঘ নামক নয়া উপন্যাসের আবির্ভাব ঘটলো।
দিনে দিনে চার বছর সময়, ২০২৫ সালের বইমেলায় বোধকরি ভিক্ষুক আশ্রম নাম পাল্টে উন্মাদ আশ্রম ধারণ করে প্রকাশিত হলো। মাঝখানে '২৪ বইমেলায় লেখকের দুটো বই এলো, হক সাহেব নিভৃতচারণ ক্ষান্ত দিয়ে ক্যামেরামুখী হলেন— সাক্ষাৎকার আর সোস্যালে উনার এক্টিভিটি বাড়লো। ব্যক্তিগত জীবনেও নানান ঝড়ঝাপটা সইতে লাগলেন। জানা গেলো, অর্থ কষ্টে পড়েছেন বিধায় এক মেলায় দুই বই! '২২ সালে এক প্রবন্ধে লিখেছিলাম কমার্শিয়াল ওবায়েদ হক'কে চাইনে; নিজের লেখা নিজে পড়ে '২৪ সালে হাসলুম খানিক্ষণ।
কাঙালসংঘের পর অর্ধ দশক ক্ষোভ নিয়েই ছিলাম, লেখক নিজের প্রতি অবিচার করছেন। অবশেষে উন্মাদ আশ্রমে এসে সে অভিযোগ উঠিয়ে নিলাম।
পরাবাস্তব ন্যারেটিভ মানেই সমাজ এবং রাজনীতি দুটোকেই প্রশ্নবানে মেরে ফেলা। তবে সে প্রশ্নের কোনো লেবাস থাকবে না, আওয়াজ হবে না কিন্তু পাঠকের করোটির ভেতরে প্রচন্ড চাপ সে সৃষ্টি করবে। পাঠক বিহ্বল হবেন, ভাববেন এবং তার দৃষ্টি সমাজের প্রতি হবে কঠোর।
মানুষ ঠকানোতে পারদর্শী জহিরের প্রতি তাই কোনো টান গল্পে তৈরি হবে না। হক সাহেব নিজেই বলছেন বইটাকে কিংবা বই কিভাবে পড়া উচিত সে সম্পর্কে— “অক্ষর যেমন মানুষের চিন্তাকে মুক্তি দিতে পারে, তেমনি পাশাপাশি বসে অক্ষর শেকলের মতো মানুষের চিন্তাকে বেঁধেও রাখতে পারে।”
শেকল থেকে পরিত্রাণের উপায়ও বলে দিচ্ছেন— চারপাশে তাকিয়েও দেখতে হবে। বই থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান নিজের সামাজিক অবস্থানে প্রয়োগ না করলে সে জ্ঞান শিকল ছাড়া আর কিছু নয়।
অমাবস্যার মতোন কালো কাক কাঠির মতো দুটো পা লাগিয়ে জহিরের জীবনে ‘লাল গোলাম’ হয়ে এসেছিলো, আর বাটপার জহির তার শুকিয়ে যাওয়া এক পা ধরে খুঁড়াতে খুঁড়াতে মার্ডার মামলা থেকে বাঁচার জন্য ১১২ পাতা পর্যন্ত দৌড়ে গেছে। কি পেলো তাহলে জহির? পাঠক?
ওবায়েদ হক জানান— মানুষের সব অহংকার তার দেহের সাথে এক আচলে ফাঁস নিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে পালিয়ে বাঁচে।
[ক্যালিগ্রাফি: সব্যসাচী হাজরার ‘মৃত্যুক্ষুধা’ থেকে অনুপ্রাণিত]