Sukun Publishing

Sukun Publishing শব্দে আঁকা স্বপ্ন...

খালিদের ভেতরটা কেমন যেন দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছিল। নিজের ‘প্রাণহীন’ সালাতের কথা ভেবে একটা অদ্ভুত অপরাধবোধ তাকে তাড়া করে ফিরছিল...
01/08/2025

খালিদের ভেতরটা কেমন যেন দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছিল। নিজের ‘প্রাণহীন’ সালাতের কথা ভেবে একটা অদ্ভুত অপরাধবোধ তাকে তাড়া করে ফিরছিল। সে কি আসলেই নিজেকে ঠকাচ্ছে? এই প্রশ্নটা মাথার ভেতরে ঘুরপাক খাচ্ছিল সারাক্ষণ।

সারাদিনের কাজ শেষে রাতে বিছানায় শুয়ে সে উদ্দেশ্যহীনভাবে ইউটিউব স্ক্রল করছিল। হঠাৎ একটা লেকচারের থাম্বনেইল তার চোখ আটকে দিলো— "আপনার সালাত কি কবুল হচ্ছে?"

বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল। কাঁপা কাঁপা হাতে সে ভিডিওটা প্লে করল।

বক্তা বলছিলেন, ‘আমরা যখন দুনিয়ার কোনো বড় বসের সাথে দেখা করতে যাই, তখন কত প্রস্তুতি নিই! সেরা পোশাক পরি, কথাগুলো মাথায় গুছিয়ে নিই, বিন্দুমাত্র অন্যমনস্ক হই না। কিন্তু যখন রাজাধিরাজ, মহান আল্লাহর সামনে দাঁড়াই, তখন আমাদের মন পড়ে থাকে অফিসের ডেস্কে, বাজারের ব্যাগে...’

প্রতিটি কথা খালিদের বুকে তীরের মতো বিঁধছিল।

বক্তা আরও বলছিলেন, ‘শয়তান আমাদের মনোযোগ নষ্ট করার জন্য হাজারো উপায় বের করে। কখনো সে দুনিয়ার চিন্তা মাথায় এনে দেয়, কখনো আবার সালাতের ভেতরের বিষয় নিয়েই ওয়াসওয়াসা দেয়। যেমন, পাশের মুসল্লি কীভাবে সালাত আদায় করছে, সেদিকে মনোযোগ চলে যায়। কিন্তু মুমিনের কাজ হলো, প্রতিটি বাধাকেই সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করা।

পাশের মুসল্লির সুন্দর সালাত দেখে হতাশ না হয়ে, আল্লাহর কাছে দোয়া করা—"ইয়া রব, আমাকেও এমন সুন্দর সালাত আদায়ের তাওফিক দিন।" শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে হারিয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসাই তো আসল সংগ্রাম।’

লেকচারের এই অংশটা শোনার পর খালিদের হাত থেকে ফোনটা প্রায় পড়েই যাচ্ছিল। একটা শীতল স্রোত তার শিরদাঁড়া দিয়ে বয়ে গেল। তার নিজের সেই প্রাণহীন রুকু-সিজদাগুলো সিনেমার মতো চোখের সামনে ভাসতে লাগলো।

তার মনে হলো, সে প্রতিদিন মহান রবের দরবারে একটা করে খালি খাম পাঠিয়ে দিচ্ছে। খামের উপরে ঠিকানা লেখা, কিন্তু ভেতরে কোনো কিচ্ছু নেই!

বুকের ভেতরটা তার অনুশোচনায় ভেঙে আসছিল। জীবনে প্রথমবারের মতো খালিদ বুঝতে পারল, সে এতদিন কী হারিয়েছে। জীবনের কত সোনালি সুযোগ ছিল আল্লাহর সাথে কথা বলার, সে তা হেলায় নষ্ট করেছে।

চোখের জল মুছে খালিদ উঠে বসল। মনে মনে বলল, ‘আর না, ইয়া রব! আমাকে সাহায্য করুন। আমি আমার হিদায়াতের সালাতকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে চাই।’

খালিদ তার উত্তর খোঁজা শুরু করেছে। এবার আপনার পালা। আপনার অভিজ্ঞতা থেকে এমন একটি পরামর্শ দিন, যা খালিদের এই নতুন যাত্রায় পাথেয় হতে পারে এবং আমাদের সকলের উপকারে আসতে পারে। আগামী পর্বে খালিদ কী সিদ্ধান্ত নিলো, তা আপনার পরামর্শের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি-না তা জানতে খালিদের সাথেই থাকুন।
সুকুন পাবলিশিং
শব্দে আঁকা স্বপ্ন...

#খালিদের_সালাত #একটি_বদলে_যাওয়ার_গল্প #পর্ব_২

ইসলাম একটি সামাজিক ও পারিবারিক জীবনব্যবস্থা। এখানে ইবাদত শুধু নামাজ-রোজার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং পরিবারের প্রতিটি সদস্য,...
01/08/2025

ইসলাম একটি সামাজিক ও পারিবারিক জীবনব্যবস্থা। এখানে ইবাদত শুধু নামাজ-রোজার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং পরিবারের প্রতিটি সদস্য, বিশেষ করে পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের অধিকার আদায় করাও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। এই সম্পর্ক রক্ষা করাকে ইসলামে ‘সিলাতুর রাহমি’ বলা হয়, যা ঈমানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা।


সিলাতুর রাহমি কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?

‘সিলাতুর রাহমি’ অর্থ হলো আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা। ‘রাহম’ বা রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক রাখা, তাদের খোঁজখবর নেওয়া, সাহায্য করা এবং তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন না করা—এসবই এর অন্তর্ভুক্ত। ইসলামে এটিকে এতটাই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে, এর পুরস্কার যেমন বিশাল, তেমনি তা ছিন্ন করার পরিণতিও অত্যন্ত ভয়াবহ।

আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে নিজের ইবাদতের পরেই পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের অধিকারের কথা উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেন, 'আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরিক করো না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট-প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের অধীনস্থদের সাথে সদ্ব্যবহার করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিক ও অহংকারীকে পছন্দ করেন না।' [১]

আত্মীয়দের মধ্যে পিতা-মাতার অধিকার সর্বাধিক। তাদের খেদমত করা, তাদের সাথে কথা বলার সময় বিনয়ী হওয়া এবং তাদের বার্ধক্যে সাহারা হওয়া প্রত্যেক সন্তানের উপর ফরজ।

আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। তাদের একজন বা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না; বরং তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বলো।' [২]

সপ্তাহে অন্তত একদিন বা সুযোগ অনুযায়ী পিতা-মাতার সাথে সাক্ষাৎ করা তাদের অধিকার আদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যদিও নির্দিষ্ট করে 'সপ্তাহে একদিন' দেখা করার কোনো ফরজ বা ওয়াজিব বিধান নেই, তবে এটি একটি উত্তম আমল যা সম্পর্ককে প্রাণবন্ত রাখে।


আত্মীয়তার সম্পর্ক রাখার সুফল—

১। মানসিক প্রশান্তি : সন্তানের সাক্ষাৎ পিতা-মাতার জন্য মানসিক প্রশান্তি ও আনন্দের কারণ হয়।
২। দায়িত্ব পালন : তাদের কোনো প্রয়োজন আছে কি না, তারা সুস্থ আছেন কি না—এসব খোঁজখবর রাখা সন্তানের নৈতিক ও শারয়ি দায়িত্ব।
৩। বরকত লাভ : রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি চায় যে তার রিজিক প্রশস্ত হোক এবং তার আয়ু বৃদ্ধি হোক, সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।' [৩]

পিতা-মাতার চেয়ে বড় আত্মীয় আর কেউ নেই। তাদের সাথে নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ ও খেদমত রিজিক ও জীবনে বরকত লাভের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়। পিতা-মাতা ছাড়াও ভাই-বোন, চাচা-ফুফু, মামা-খালা এবং অন্যান্য রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়দের অধিকার রক্ষা করাও ওয়াজিব।


কীভাবে সম্পর্ক রক্ষা করবেন?

১। সাক্ষাৎ ও যোগাযোগ : সুযোগ ও সাধ্য অনুযায়ী তাদের বাড়িতে যাওয়া, দাওয়াত দেওয়া এবং তাদের দাওয়াতে সাড়া দেওয়া। সম্ভব না হলে অন্তত ফোন বা অন্য মাধ্যমে খোঁজখবর রাখা।

২। আর্থিক সহায়তা : আত্মীয়দের মধ্যে কেউ অভাবগ্রস্ত হলে তাকে সাহায্য করা অন্য যে কাউকে সাহায্য করার চেয়ে উত্তম। এতে সদকা এবং সিলাতুর রাহমি উভয়টির সওয়াব পাওয়া যায়।

৩। উত্তম আচরণ : তাদের সাথে হাসিমুখে কথা বলা, তাদের সম্মান করা এবং তাদের বিপদে পাশে দাঁড়ানো।

৪। ক্ষমা ও উদারতা : কেউ সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইলেও নিজের পক্ষ থেকে সম্পর্ক রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, 'প্রকৃত সম্পর্ক রক্ষাকারী সে নয়, যে সম্পর্কের বিনিময়ে সম্পর্ক রক্ষা করে। বরং প্রকৃত সম্পর্ক রক্ষাকারী তো সে-ই, যার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা হলেও সে তা পুনরায় স্থাপন করে।' [৪]


আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার ভয়াবহ পরিণতি: ইসলামে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করাকে অন্যতম কবিরা গুনাহ বা মারাত্মক পাপ হিসেবে গণ্য করা হয়। এর পরিণতি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতেই ভয়াবহ।

জান্নাতে প্রবেশ করতে না পারা : রাসুলুল্লাহ (ﷺ) স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, 'আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।' [৫]

আল্লাহর অভিশাপ : আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'ক্ষমতা পেলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে। এদের প্রতিই আল্লাহ অভিশাপ করেন, অতঃপর তাদের বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করে দেন।' [৬]

আমল কবুল না হওয়া : আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর কোনো নেক আমল আল্লাহর দরবারে সহজে কবুল হয় না বলেও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

অতএব, পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা নিছক কোনো সামাজিক রীতি নয়, বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। সপ্তাহে অন্তত একদিন বা নিজের সুযোগমতো একটি সময় নির্ধারণ করে পিতা-মাতার সান্নিধ্যে কাটানো উচিত। এর মাধ্যমে যেমন তাদের হক আদায় হয়, তেমনি নিজের জীবন ও রিজিকেও অফুরন্ত বরকত নেমে আসে।
রেফারেন্স:
[১] সুরা আন-নিসা, আয়াত : ৩৬
[২] সুরা আল-ইসরা, আয়াত : ২৩
[৩] সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৮৬; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৫৭
[৪] সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৯১
[৫] সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৮৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৫৬
[৬] সুরা মুহাম্মদ, আয়াত : ২২-২৩
সুকুন পাবলিশিং
শব্দে আঁকা স্বপ্ন…

দৃষ্টির একটি ভুল পদস্খলন ডেকে আনতে পারে আত্মার অতৃপ্তি। যে অতৃপ্তি কখনো মেটার নয়।  কথাটি আমাদের বহুল প্রশংসিত 'চোখের গুন...
31/07/2025

দৃষ্টির একটি ভুল পদস্খলন ডেকে আনতে পারে আত্মার অতৃপ্তি। যে অতৃপ্তি কখনো মেটার নয়।

কথাটি আমাদের বহুল প্রশংসিত 'চোখের গুনাহ' বই হতে নেওয়া।

মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমি কি সত্যি সত্যিই দাঁড়িয়ে আছি সবুজ গম্বুজের পাশে? খোলা আকাশের নিচে এই যে সবুজ গম্বু...
31/07/2025

মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমি কি সত্যি সত্যিই দাঁড়িয়ে আছি সবুজ গম্বুজের পাশে? খোলা আকাশের নিচে এই যে সবুজ গম্বুজ, এর নিচেই তো শুয়ে আছেন মুহাম্মাদুর রাসুল—যাকে ভালোবাসা শুধু আবেগ আর অন্তরের টানই নয়, ঈমানেরও দাবি।

সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!

আমি কি সেই মহা মানবের নিকটতম জায়গাতে দাঁড়িয়ে আছি যিনি আমার জন্মেরও হাজার বছর পূর্বে আমাকে ভালোবেসে গেছেন? ভাবতে ভাবতে আমার শরীরে এক অদ্ভুত শিহরণ জাগে—মনে হয় দুনিয়ার সমস্ত আবেশ আর আবেগ এসে ভর করেছে আমার মনে। কোন ফাঁকে যে চোখ বেয়ে নেমে এলো অশ্রুর শ্রাবণধারা, টের পাইনি।

আমার বিস্ময় যেন কাটছে না কোনোভাবে। নবিজির এত কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছি—ভাবতেই আনন্দ আর আবেগের তুফান তৈরি হচ্ছে মনে। বিস্ময়ের রেশ একটু প্রশমিত হতেই শাইখ আবদুল হাই মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ বললেন, ‘আরিফ ভাই, এই সেই নয়নাভিরাম, ভালোবাসার সবুজ গম্বুজ—যার নিচে শায়িত আছেন আমাদের প্রিয়তম রাসুল।

ঠিক ডানপাশে আছেন তাঁর পরম বন্ধু আবু বাকার আস-সিদ্দিক এবং বামপাশে আছেন পরম আস্থাভাজন উমার ইবনুল খাত্তাব। রাদিয়াল্লাহু আনহুমা। নবি-প্রেমিকদের ভালোবাসা এখানে এসেই একীভূত হয়ে যায়। এটাই আশেকে রাসুলদের ভালোবাসার ক্যান্টনমেন্ট।’

শাইখের কথাগুলো এত মধুর শোনাল, যেন এরচেয়ে তৃপ্তির, এরচেয়ে মনোহর কথামালা আমার কান আগে কোনোদিন শোনেনি।
আমার ঠোঁটে তখন দরুদের গুঞ্জরন। দরুদ পাঠে অন্তর সর্বদাই প্রশান্ত হয়। কিন্তু আজকের দরুদ পাঠে সেই প্রশান্তির মাত্রা যে কোন আসমানে গিয়ে ঠেকেছে বলতে পারি না।

দরুদের প্রতিটা শব্দ যেন হৃদয়ভেদি, যেন তারা আমার কলিজা ফেঁড়ে কুড়িয়ে আনছে প্রিয় রাসুলের জন্য জমিয়ে রাখা সবটুকু ভালোবাসা।
(উল্লিখিত অংশটি সুকুন পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত লেখক আরিফ আজাদ-এর ‘উমরাহ সফরের গল্প’ বই থেকে নেওয়া।)
সুকুন পাবলিশিং
শব্দে আঁকা স্বপ্ন..

দিনের বেলা আমাদের জীবনটা কাটে হাজারো ব্যস্ততায়, মানুষের ভিড়ে, নানা রকম শব্দ আর কোলাহলে। এই ব্যস্ততা আমাদের আত্মাকে ক্ল...
30/07/2025

দিনের বেলা আমাদের জীবনটা কাটে হাজারো ব্যস্ততায়, মানুষের ভিড়ে, নানা রকম শব্দ আর কোলাহলে। এই ব্যস্ততা আমাদের আত্মাকে ক্লান্ত করে ফেলে, ঠিক যেমন সারাদিনের ব্যবহারে আমাদের ফোনের ব্যাটারি ফুরিয়ে যায়।

দিনশেষে আমাদের শরীর যেমন বিশ্রামের জন্য ছটফট করে, আমাদের আত্মারও তখন প্রয়োজন হয় একটু চার্জের, একটু নিরিবিলি সংযোগের। আর সেই আত্মাকে রিচার্জ করার সবচেয়ে শক্তিশালী পাওয়ার ব্যাংকটির নাম হলো ‘সালাতুত তাহাজ্জুদ’।

তাহাজ্জুদ হলো রাতের গভীরের ইবাদত। যখন পুরো পৃথিবী নিস্তব্ধ, যখন আপনার পরিবারের সদস্যরাও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, তখন আপনি নীরবে উঠে দাঁড়াচ্ছেন কেবল একজনের জন্য। তিনি আপনার রব, আপনার স্রষ্টা।

এই সময়টাতে আপনার আর আল্লাহর মাঝে আর কোনো পর্দা থাকে না। আপনার প্রতিটি সিজদা, আপনার চোখের প্রতিটি ফোঁটা অশ্রু সরাসরি আল্লাহর আরশে পৌঁছে যায়। এই সময়কার দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।

অনেকের কাছে রাতের ঘুম ভেঙে তাহাজ্জুদের জন্য ওঠাটা অনেক কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু ভেবে দেখুন, আপনি যাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন, তার সাথে একান্তে কথা বলার জন্য আপনি কি সামান্য ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন না? আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাদের পরিচয় দিতে গিয়ে কুরআনে বলেন: “তারা রাতের সামান্য অংশই ঘুমিয়ে কাটাতো, আর রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত।” [১]

সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ নিজে তাঁদের প্রশংসা করছেন, যাঁরা রাতের আরামের ঘুমকে ত্যাগ করে তাঁর সামনে দাঁড়ায়। তাহাজ্জুদ শুধু কয়েক রাকাত নফল সালাত নয়, এটি হলো আল্লাহর সাথে এক গভীর প্রেমময় আলাপচারিতা। এই সালাতে আপনি আপনার দিনের সব ক্লান্তি, না পাওয়ার বেদনা, আর মনের গভীরের সব কথা উজাড় করে দিতে পারেন।

এই সময়টাতে আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং ডাকতে থাকেন, “কে আছো আমাকে ডাকার মতো? আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার মতো? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।” [২]

আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ) জীবনে কখনো তাহাজ্জুদ বাদ দেননি। তিনি এটিকে এতটা ভালোবাসতেন যে, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার কারণে তাঁর পা ফুলে যেত। কারণ তিনি জানতেন এই সালাতের শক্তি কতখানি। এটি ঈমানকে শাণিত করে, অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে এবং বান্দাকে আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী করে তোলে।

আপনার জীবনে কি অনেক চাওয়া জমে আছে? কোনো গভীর সমস্যায় কি আপনি জর্জরিত? কিংবা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় কি আপনার হৃদয় পূর্ণ? সবকিছুর সমাধান নিয়ে হাজির হন তাহাজ্জুদের মুসল্লায়।

প্রথম প্রথম হয়তো কষ্ট হবে, হয়তো দু-এক দিন মিস হয়ে যাবে। কিন্তু একবার যদি আপনি এই রাতের নীরবতার স্বাদ পেয়ে যান, আল্লাহর সাথে এই গভীর সংযোগের অনুভূতি উপলব্ধি করতে পারেন, তখন আর কোনো অ্যালার্মের প্রয়োজন হবে না। আপনার আত্মার টানই আপনাকে জাগিয়ে তুলবে।

আসুন, আমাদের ক্লান্ত ঈমানকে রিচার্জ করার জন্য এই শক্তিশালী মাধ্যমটিকে আঁকড়ে ধরি। সপ্তাহের শেষে ছুটির দিনে না হয় শুরুটা হোক। কারণ রাতের এই নিভৃত মুহূর্তগুলোই গড়ে দেবে আপনার দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা।
রেফারেন্স:
[১] সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ১৭-১৮
[২] সহীহ আল-বুখারী, হাদীস: ১১৪৫
সুকুন পাবলিশিং
শব্দে আঁকা স্বপ্ন…

একবার ভাবুন তো, একজন মানুষ কতটা অসাধারণ হতে পারেন, যাঁর সান্নিধ্যে এলে কঠিনতম হৃদয়ও মোমের মতো গলে যায়? যাঁর ভালোবাসার স্...
30/07/2025

একবার ভাবুন তো, একজন মানুষ কতটা অসাধারণ হতে পারেন, যাঁর সান্নিধ্যে এলে কঠিনতম হৃদয়ও মোমের মতো গলে যায়? যাঁর ভালোবাসার স্পর্শে জাহেলিয়াতের অন্ধকারে ডুবে থাকা মানুষগুলো পরিণত হয় সোনার মানুষে?

তিনি হলেন আমাদের প্রিয় নবি মুহাম্মাদ (ﷺ)। তাঁর জীবনের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে এমন অসংখ্য ঘটনা, যা আমাদের অবাক করে দেয়, ভাবতে শেখায়। তিনি শুধু একজন বার্তাবাহকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন দক্ষ কারিগর, যিনি সাধারণ মাটির মানুষকে গড়ে তুলেছেন ইতিহাসের সেরা ব্যক্তিত্বে।

এর সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণগুলোর একজন হলেন উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.)। ইসলাম গ্রহণের আগে তিনি কেমন ছিলেন, তা তো আমাদের সবারই জানা। প্রখর মেজাজ, ইসলামের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ আর মুসলিমদের ওপর নির্যাতনে যিনি ছিলেন অগ্রগামী। সেই উমার (রা.)-ই একদিন কোষমুক্ত তলোয়ার হাতে বেরিয়েছিলেন নবিজি (ﷺ)-কে হত্যা করার জন্য।

পথিমধ্যে বোনের ইসলাম গ্রহণের কথা শুনে ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে ছুটে গিয়েছিলেন তাঁর বাড়িতে। কিন্তু সেখানে গিয়ে যখন তিনি বোনের মুখ থেকে পবিত্র কুরআনের আয়াত শুনলেন, তাঁর সেই কঠিন অন্তর মুহূর্তেই বিগলিত হয়ে গেল।

কুরআনের বাণী তাঁর হৃদয়ে এমনভাবে রেখাপাত করল যে, যে তলোয়ার তিনি নবিজি (ﷺ)-কে হত্যা করার জন্য নিয়ে বেরিয়েছিলেন, সেই তলোয়ারই তিনি ইসলামের জন্য উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি ছুটে গেলেন নবিজি (ﷺ)-এর কাছে।
যে উমার (রা.)-কে দেখে সাহাবিরা ভয় পেতেন, সেই উমার (রা.) যখন ইসলামের ছায়াতলে এলেন, তখন তাঁর ইসলাম গ্রহণ মুসলিমদের জন্য প্রকাশ্য বিজয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াল। তাঁর আগমনে মুসলিমরা প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে কাবা প্রাঙ্গণে সালাত আদায়ের সাহস পেলেন।

কী ছিল সেই স্পর্শে, যা উমারের মতো কঠিন হৃদয়ের মানুষকে ‘ফারুক’ বা সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী বানিয়ে দিল? তা ছিল নবিজি (ﷺ)-এর ভালোবাসা, তাঁর প্রজ্ঞা আর তাঁর আধ্যাত্মিক দীপ্তি।

তিনি উমার (রা.)-এর ভেতরের সম্ভাবনাকে দেখতে পেয়েছিলেন। তাই তো তিনি দুয়া করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি উমার ইবনুল খাত্তাব অথবা আবু জাহেল—এই দুজনের একজনকে দিয়ে ইসলামকে শক্তিশালী করুন।’ আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবিবের দুয়া কবুল করেছিলেন।

উমার (রা.)-এর এই রূপান্তর কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিলাল (রা.), খাব্বাব (রা.), আবু যর (রা.)-এর মতো অসংখ্য সাহাবির জীবনও বদলে গিয়েছিল তাঁরই পরশে। তাঁরা এসেছিলেন সাধারণ মানুষ হয়ে, কিন্তু ফিরে গেছেন এমন একেকজন নক্ষত্র হয়ে, যাঁদের আলোয় আজও উম্মাহ পথ খুঁজে পায়। এটাই হলো নবুয়তের জাদু, যা অন্ধকারকে আলোয় আর পাথরকে পরশমণিতে পরিণত করে।

নবিজি (ﷺ)-এর সেই জাদুকরী স্পর্শের গল্প জানতে পড়ুন ইমাম ইবনে কাসীর (রাহ.)-এর কালজয়ী গ্রন্থ ‘সীরাতে ইবনে কাসীর’। বইটি আপনাকে ইসলামের সেই সোনালি যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে, ইন শা আল্লাহ।
সুকুন পাবলিশিং
শব্দে আঁকা স্বপ্ন…

ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া মহান ইমাম, পৃথিবী কাঁপানো বীর, কিংবা জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রবাদপুরুষ—তাঁদের পেছনের গল্পটা আমরা কজন...
30/07/2025

ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া মহান ইমাম, পৃথিবী কাঁপানো বীর, কিংবা জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রবাদপুরুষ—তাঁদের পেছনের গল্পটা আমরা কজন জানি? আমরা তাঁদের কীর্তি নিয়ে আলোচনা করি, তাঁদের মতো হওয়ার স্বপ্ন দেখি। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি, যে নরম হাতের ছোঁয়ায়, যে মমতাময়ী মায়ের কোলে তাঁদের ব্যক্তিত্বের প্রথম বীজ রোপিত হয়েছিল, সেই মায়ের মর্যাদা কতটুকু?

একজন নারী যখন মা হন, তখন তিনি শুধু একটি সন্তানের জন্মই দেন না, বরং তিনি একটি প্রজন্মের ভিত্তি স্থাপন করেন। তাঁর প্রতিটি তারবিয়াত, প্রতিটি নসিহত, প্রতিটি দুয়া সন্তানের ভবিষ্যতকে সুন্দর করে তোলে। যে নারী তাঁর সন্তানকে শৈশবেই রবের পরিচয় করিয়ে দেন, তাঁর অন্তরে সাহাবিদের মতো হওয়ার স্বপ্ন বুনে দেন, তিনিই তো আসল কারিগর।

এই নারীর মর্যাদা কোনো জাগতিক মাপকাঠিতে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। তিনি হয়তো কোনো বড় ডিগ্রিধারী নন, তাঁর হয়তো কোনো কর্পোরেট পরিচিতি নেই। কিন্তু তাঁর হাতেই তৈরি হয় উম্মাহর আগামী দিনের কাণ্ডারি। তাঁর কোল থেকেই উঠে আসে এমন সন্তান, যারা জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে সমুন্নত রাখে।

ইসলাম নারীকে এই মর্যাদাই দিয়েছে একজন নির্মাতার মর্যাদা। একজন মা হিসেবে তাঁর ভূমিকা শুধু রান্নাঘরেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তাঁর আঁচলের ছায়ায় গড়ে ওঠে এক-একটি যুগশ্রেষ্ঠ মানুষ। যে নারী এমন সন্তান জন্ম দেন, যিনি উম্মাহর জন্য আলো হয়ে আসেন, তাঁর চেয়ে সম্মানিত আর কে হতে পারে?

তাই, একজন মুমিন নারীর সারাদিন কাটে শুধু সাংসারিক কাজে নয়, বরং একটি আদর্শ প্রজন্ম গড়ার মহান ইবাদতে। কীভাবে সেই ইবাদতকে আরও সুন্দর করা যায়, কীভাবে একজন মা হয়ে যুগশ্রেষ্ঠ মানুষ গড়ার কারিগর হওয়া যায়—সেই পথের দিশা জানতে পড়ুন ‘মুমিন নারীর সারাদিন’ বইটি।
সুকুন পাবলিশিং
শব্দে আঁকা স্বপ্ন…

কারবালার মর্মান্তিক ঘটনাটি হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় ছিল না। এর পেছনে ছিল সুদীর্ঘ এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, যা ইম...
29/07/2025

কারবালার মর্মান্তিক ঘটনাটি হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় ছিল না। এর পেছনে ছিল সুদীর্ঘ এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, যা ইমাম হুসাইন (রা.)-কে সেই আত্মত্যাগের দিকে পরিচালিত করেছিল।

সুকুন পাবলিশিং-এর সদ্য প্রকাশিত বই ‘যেভাবে ঘটেছিল কারবালা’ অবলম্বনে তৈরি এই ইনফোগ্রাফিকটিতে আমরা কারবালার পেছনের সেই ৫টি মূল কারণ তুলে ধরেছি, যা এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে বুঝতে সাহায্য করবে, ইন শা আল্লাহ।

কারণগুলো হলো—

১। খিলাফত থেকে রাজতন্ত্র: খোলাফায়ে রাশেদীনের পরামর্শভিত্তিক খিলাফত ব্যবস্থার পরিবর্তে উমাইয়া শাসনামলে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের সূচনা হয়, যা ইসলামী শাসনব্যবস্থার মূলনীতি থেকে সরে আসার প্রথম ধাপ ছিল।

২। ইয়াযিদকে মনোনয়ন: হযরত মুয়াবিয়া (রা.) তাঁর পুত্র ইয়াযিদকে পরবর্তী শাসক হিসেবে মনোনয়ন দেন। এই সিদ্ধান্তটি পরামর্শভিত্তিক খিলাফতের ঐতিহ্যকে ভঙ্গ করে এবং অনেক জ্যেষ্ঠ সাহাবি এর বিরোধিতা করেন।

৩। বাই'আত গ্রহণে অস্বীকৃতি: ইয়াযিদের শাসনকে ইসলামি নীতির পরিপন্থী মনে করে ইমাম হুসাইন (রা.), আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রা.)-সহ মক্কা ও মদিনার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্বরা তাঁর হাতে বাই'আত বা আনুগত্যের শপথ নিতে অস্বীকৃতি জানান।

৪। কুফাবাসীদের আমন্ত্রণ: কুফার অধিবাসীরা ইমাম হুসাইন (রা.)-কে খলিফা হিসেবে চেয়ে এবং তাঁকে পূর্ণ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাজার হাজার চিঠি পাঠায়। তারা তাঁকে ইয়াযিদের শাসনের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কুফায় আসার আমন্ত্রণ জানায়।

৫। কুফার পথে যাত্রা ও বিশ্বাসঘাতকতা: কুফাবাসীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইমাম হুসাইন (রা.) তাঁর পরিবার ও সঙ্গীদের নিয়ে কুফার পথে যাত্রা করেন। কিন্তু পথিমধ্যে তিনি কুফার গভর্নর ইবনে যিয়াদের ভয়ে কুফাবাসীদের বিশ্বাসঘাতকতার সংবাদ পান, যা তাঁকে কারবালার প্রান্তরে অবরুদ্ধ করে ফেলে।

সুকুন পাবলিশিং
শব্দে আঁকা স্বপ্ন…

সন্তান প্রতিপালনে আমাদের প্রথম ও প্রধান কাজ কী হওয়া উচিত? কোন শিক্ষাকে দিতে হবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার?  কথাটি আমাদের 'নিকট...
29/07/2025

সন্তান প্রতিপালনে আমাদের প্রথম ও প্রধান কাজ কী হওয়া উচিত? কোন শিক্ষাকে দিতে হবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার?

কথাটি আমাদের 'নিকটজনে নারীর দাওয়াহ' বই হতে নেওয়া।

‘আল্লাহু আকবার’—তাকবিরটা দিয়ে যখন সালাতে দাঁড়াই, তখন মনে হয়, এই তো! দুনিয়ার সাথে সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন। এখন শুধু আমি আর আমা...
29/07/2025

‘আল্লাহু আকবার’—তাকবিরটা দিয়ে যখন সালাতে দাঁড়াই, তখন মনে হয়, এই তো! দুনিয়ার সাথে সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন। এখন শুধু আমি আর আমার রব। কিন্তু কয় সেকেন্ড?

সূরা ফাতিহা শুরু করতে না করতেই কোথা থেকে যেন রাজ্যের চিন্তা এসে মাথায় ভর করে। অফিসের অসমাপ্ত কাজ, বন্ধুর সাথে বলা কটু কথাটা, কালকের পরীক্ষার টেনশন, এমনকি রাতে কী রান্না হবে—সেই ভাবনাও বাদ যায় না। রুকুতে যাই, সিজদায় লুটিয়ে পড়ি, কিন্তু আমাদের মনটা পড়ে থাকে দুনিয়ার হাটে-বাজারে। সালাত শেষ করে যখন সালাম ফেরাই, তখন একরাশ আফসোস এসে ঘিরে ধরে—আমি কি আসলেই সালাত আদায় করলাম?

এই সমস্যাটা বড্ড পরিচিত, তাই না? আমরা অনেকেই এই যান্ত্রিক সালাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।

অথচ সালাত তো ছিল মুমিনের জন্য চক্ষু শীতলকারী, হৃদয়ের প্রশান্তি। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) যখন দুনিয়ার কোনো চাপে থাকতেন, তখন বলতেন, ‘হে বিলাল, সালাতের মাধ্যমে আমাদের শান্তি দাও।’ [১] আর আমরা? আমরা সালাতের ভেতরেই দুনিয়ার অশান্তিগুলোকে বয়ে বেড়াই।

কখনো কি ভেবে দেখেছি, কেন এমন হয়? কারণ, আমরা সালাতের আসল মর্মটাই হারিয়ে ফেলেছি। আমরা ভুলে গেছি, সালাত হলো রবের সাথে আমাদের একান্ত কথোপকথন, আমাদের আরজি পেশ করার সবচেয়ে সেরা মাধ্যম।

আমরা যখন ‘ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতা’ঈন’ বলি, তখন কি মন থেকে অনুভব করি যে, আমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করি এবং শুধু তাঁরই কাছে সাহায্য চাই?

একটা বিস্মৃত অন্তর নিয়ে আদায় করা সালাত কি আল্লাহ চান? যে সালাতে রবের বড়ত্বের চেয়ে দুনিয়ার তুচ্ছ বিষয়গুলো বেশি গুরুত্ব পায়, সেই সালাত কীভাবে আমাদের হৃদয়কে জুড়াবে?

এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ কী? পথ একটাই—সালাতকে নতুন করে চেনা, এর প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি রোকনকে মন থেকে অনুভব করার চেষ্টা করা। দুনিয়াবি চিন্তা আসবেই, শয়তান ওয়াসওয়াসা দেবেই। আমাদের লড়াইটা হলো, এই সব চিন্তার ভিড়েও নিজের মনকে বারবার রবের দিকে ফিরিয়ে আনা। যখনই অন্য চিন্তা আসবে, তখনই নিজেকে প্রশ্ন করা—আমি কার সামনে দাঁড়িয়েছি? এই ভাবনাটাই আমাদের সচেতন করে তুলবে, আমাদের সালাতে প্রাণ ফিরিয়ে আনবে।

যে সালাত অন্তরে প্রশান্তি এনে দেয়, যে সালাত মুমিনের জন্য চক্ষু শীতলকারী হয়, সেই সালাতের স্বাদ কীভাবে ফিরে পাওয়া যায়? কীভাবে দুনিয়াবি চিন্তার জাল ছিন্ন করে রবের সান্নিধ্যে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া যায়? এই গভীর অনুভূতি আর পথচলার দিশা নিয়েই লেখা ‘যে সালাতে হৃদয় জুড়ায়’ বইটি। এটি আপনাকে শেখাবে, কীভাবে আপনার প্রতিটি সিজদা হতে পারে রবের নৈকট্য লাভের এক অনন্য মাধ্যম।

সংগ্রহ করেছেন তো?
রেফারেন্স: [১] সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৮৫
সুকুন পাবলিশিং
শব্দে আঁকা স্বপ্ন…

গভীর রাত। ঘরের সব বাতি নেভানো, শুধু মুঠোফোনের নীল আলোটা মুখে এসে পড়ছে। আঙুলের ডগা দিয়ে চলছে অন্তহীন স্ক্রলিং। একটা রিলস,...
28/07/2025

গভীর রাত। ঘরের সব বাতি নেভানো, শুধু মুঠোফোনের নীল আলোটা মুখে এসে পড়ছে। আঙুলের ডগা দিয়ে চলছে অন্তহীন স্ক্রলিং। একটা রিলস, তারপর আরেকটা। একটা ছবি, তারপর আরও শত শত ছবি।

সময় কীভাবে কেটে যাচ্ছে, তার কোনো হিসাব নেই। আপাতদৃষ্টিতে ব্যাপারটা বেশ নির্দোষ, তাই না? নিছকই বিনোদন, একঘেয়েমি কাটানোর একটা উপায়। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি, এই অন্তহীন স্ক্রলিংয়ের আড়ালে শয়তান আমাদের জন্য কতটা নিখুঁত আর মারাত্মক একটা ফাঁদ পেতে রেখেছে?

এই ফাঁদটা সরাসরি আঘাত হানে আমাদের চোখে, আর সেখান থেকে সোজা আমাদের অন্তরে। ব্যাপারটা অনেকটা মাছ ধরার চারের মতো। নিউজফিডের হাজারো পোস্টের ভিড়ে হঠাৎ এমন কিছু একটা ভেসে ওঠে, যা আমাদের বুড়ো আঙুলটাকে থামিয়ে দেয়। ওই এক মুহূর্তের থমকে যাওয়াই যথেষ্ট।

এরপর শুরু হয় কল্পনার খেলা। একটা ছবি থেকে প্রোফাইলে, প্রোফাইল থেকে আরেকটা লিঙ্কে—আমরা জড়িয়ে পড়ি এক ডিজিটাল গোলকধাঁধায়। যেখান থেকে বের হওয়াটা বড্ড কঠিন। ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রাহ.) হয়তো একারণেই কুদৃষ্টিকে ‘বিষাক্ত তির’ বলেছেন, যা একবার অন্তরে বিঁধে গেলে আর নিস্তার নেই।

এই ডিজিটাল বিষক্রিয়ার প্রভাবটা বড়ই সূক্ষ্ম। আমরা হয়তো সাথে সাথেই টের পাই না, কিন্তু ধীরে ধীরে আমাদের ভেতরটা বদলে যেতে থাকে। যে অন্তরে একসময় আল্লাহর স্মরণে প্রশান্তি মিলত, সেখানে বাসা বাঁধে এক ধরনের অস্থিরতা। সালাতে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়। হালাল সম্পর্কগুলো আর আগের মতো আকর্ষণীয় মনে হয় না। কারণ, আমাদের চোখ যা দেখে, আমাদের অন্তর তা-ই ধারণ করে। আর প্রতিনিয়ত হারাম দৃশ্যে অভ্যস্ত চোখ আর পবিত্রতার স্বাদ অনুভব করতে পারে না।

তাহলে কি এর থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই? অবশ্যই আছে। সেই উপায় আজ থেকে চৌদ্দশ বছর আগেই বাতলে দেওয়া হয়েছে। সমাধানটা হলো—সচেতনতা এবং নিয়ন্ত্রণ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তো শুধু রাস্তার দিকে তাকানোর ক্ষেত্রেই দৃষ্টি অবনত রাখতে বলেননি, এই বিধান তো জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য। অনলাইন জগতটাও এর ব্যতিক্রম নয়।

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, প্রথম অনিচ্ছাকৃত দৃষ্টি তোমার জন্য ক্ষমাযোগ্য, কিন্তু দ্বিতীয়বার তাকানো নয়। স্ক্রল করতে গিয়ে হঠাৎ কিছু সামনে চলে আসাটা হতে পারে সেই প্রথম দৃষ্টি। কিন্তু সেখানে থেমে যাওয়া, জুম করে দেখা বা সেই সম্পর্কিত আরও কিছু খোঁজা—এটাই হলো সেই দ্বিতীয় মারাত্মক দৃষ্টি, যা আমাদের আমলনামায় গুনাহ হিসেবে লেখা হয়ে যায়।

এই ফাঁদ থেকে বাঁচার জন্য আমাদেরকেই সচেতন হতে হবে। আঙুলের প্রতিটি স্ক্রল, প্রতিটি ক্লিক যেন আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়। আমাদের মনে রাখতে হবে, এই চোখ আল্লাহর দেওয়া এক আমানত। এই আমানতের খিয়ানত করার পরিণাম ভয়াবহ।

শয়তান চায়, আমরা যেন এই ডিজিটাল জগতে হারিয়ে যাই, যেন আমাদের দৃষ্টি আর অন্তর দুটোই কলুষিত হয়ে পড়ে। কিন্তু মুমিনের লড়াই তো এখানেই। নিজের নফসের বিরুদ্ধে, শয়তানের এই মারাত্মক ফাঁদের বিরুদ্ধে।

দৃষ্টির এই ভয়াবহ ফাঁদ এবং তা থেকে বাঁচার উপায়গুলো আরও গভীরভাবে জানতে পড়ুন আবু আম্মার মাহমুদ আল-মিসরি রচিত ‘চোখের গুনাহ’ বইটি। এটি আপনাকে শেখাবে, কীভাবে শয়তানের এই মারাত্মক অস্ত্র থেকে নিজের অন্তরকে সুরক্ষিত রাখতে হয়।

আপনার সংগ্রহে আছে তো বইটি?
সুকুন পাবলিশিং
শব্দে আঁকা স্বপ্ন…

আমরা ‘সম্পদ’ বলতে কী বুঝি? সাধারণত আমাদের মাথায় আসে টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি, দামি ডিগ্রি কিংবা উঁচু সামাজিক মর্যাদা। এই...
28/07/2025

আমরা ‘সম্পদ’ বলতে কী বুঝি? সাধারণত আমাদের মাথায় আসে টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি, দামি ডিগ্রি কিংবা উঁচু সামাজিক মর্যাদা। এই সম্পদগুলো অর্জনের জন্য আমরা জীবনের অধিকাংশ সময় আর শ্রম ব্যয় করি।

কিন্তু একজন মুমিনের জীবনে এমন একটি সম্পদ রয়েছে, যা এই সবকিছুর চেয়ে দামী। এই সম্পদ সময়ের সাথে ক্ষয় হয় না, বরং বাড়ে। এটি কেউ চুরি করতে পারে না, বরং এর আলোয় চারপাশ আলোকিত হয়। এই অমূল্য সম্পদের নাম হলো ‘উত্তম চরিত্র’।

ইসলামে ইবাদত কেবল সালাত, সিয়াম, হজ্জ বা যাকাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং একজন ব্যক্তির আচার-আচরণ, তাঁর সততা, তাঁর বিনয়—এই সবকিছুই ইবাদতের অংশ। ভেবে দেখুন, যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, কিন্তু প্রতিবেশীর সাথে কর্কশ ভাষায় কথা বলে, তার সালাত কি তাকে ভেতর থেকে বদলাতে পেরেছে?

যে ব্যক্তি প্রতি বছর রোজা রাখে, কিন্তু ব্যবসায়িক লেনদেনে অসৎ, তার রোজা কি তাকে তাকওয়া শেখাতে পেরেছে? ইবাদত এবং উত্তম চরিত্র—এ দুটি বিষয় পাখির দুটি ডানার মতো। একটি ছাড়া অন্যটি অচল।

আল্লাহর কাছে চরিত্রের মর্যাদা এতটাই বেশি যে, তিনি তাঁর প্রিয় হাবিব (ﷺ)-এর পরিচয় তুলে ধরেছেন তাঁর মহান চরিত্র দিয়ে। তিনি বলেন: “এবং নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের ওপর রয়েছেন।” [১]

যিনি ছিলেন এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ, তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের সনদ ছিল তাঁর চরিত্র। শত্রুরাও তাঁকে ‘আল-আমীন’ বা বিশ্বাসী বলে ডাকত। তাঁর সততা, তাঁর ক্ষমা, তাঁর দয়া আর বিনয় দেখেই অগণিত মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছিল। এটাই উত্তম চরিত্রের শক্তি। এটি তরবারির চেয়েও ধারালো, সবচেয়ে প্রাঞ্জল বক্তৃতার চেয়েও বেশি প্রভাবশালী। আপনার সুন্দর আচরণই হতে পারে ইসলামের নীরব প্রচারক।

আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে ব্যক্তি, যে নৈতিকতায় সর্বোত্তম।” [২] তিনি আরও বলেছেন, “কিয়ামতের দিন মুমিনের পাল্লায় সচ্চরিত্রের চেয়ে অধিক ভারী কোনো বস্তু থাকবে না।” [৩]

সুবহানাল্লাহ! একবার কল্পনা করুন, কিয়ামতের সেই কঠিন দিনে, যখন একটি নেকির জন্য মানুষ ছোটাছুটি করবে, তখন আপনার সুন্দর চরিত্র আপনার নাজাতের জন্য সবচেয়ে ভারী বস্তু হয়ে দাঁড়াবে। আপনার সত্যবাদিতা, আপনার বিশ্বস্ততা, আপনার ধৈর্য আর অন্যের প্রতি আপনার সহানুভূতি—এগুলোই আপনার আসল বিনিয়োগ, আপনার চিরস্থায়ী সম্পদ।

দুনিয়ার সম্পদ আজ আছে, কাল নেই। কিন্তু উত্তম চরিত্র এমন এক সম্পদ, যা কবরেও আপনার সঙ্গী হবে এবং আখিরাতেও আপনার মর্যাদা বৃদ্ধি করবে। তাই আসুন, প্রতিদিন নিজের আমলের হিসাব নেওয়ার পাশাপাশি নিজের চরিত্রের দিকেও একটু তাকাই। নিজেকে প্রশ্ন করি—আমার আচরণ কি আমার পরিচয়ের সাথে ইসলামের সৌন্দর্যকে যুক্ত করছে? আমার কথা ও কাজ কি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর চরিত্রের এক ঝলকও ফুটিয়ে তুলতে পারছে? কারণ দিনশেষে, একজন মুমিনের সেরা পরিচয় তার উত্তম চরিত্র।
রেফারেন্স:
[১] সূরা আল-কালাম, আয়াত: ৪
[২] সহীহ আল-বুখারী, হাদীস: ৩৫৫৯
[৩] জামে আত-তিরমিযী, হাদীস: ২০০২
সুকুন পাবলিশিং
শব্দে আঁকা স্বপ্ন…

Address

66, Paridas Road, Banglabazar
Gandaria
1100

Opening Hours

Monday 10:00 - 19:00
Tuesday 10:00 - 19:00
Wednesday 10:00 - 19:00
Thursday 10:00 - 19:00
Saturday 10:00 - 19:00
Sunday 10:00 - 19:00

Telephone

+8801819887755

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Sukun Publishing posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Sukun Publishing:

Share

Category