10/06/2025
মিতুর কবর: পুনর্জন্মের রাত
লেখক: সান
বর্ষাকাল।
মেঘে ঢাকা আকাশ, বাতাসে গুমোট ঘ্রাণ, আর বৃষ্টি যেন থেমে-থেমে অশুভ কিছু আভাস দিচ্ছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দির এক প্রত্যন্ত গ্রামে সদ্য ফিরে এসেছেন প্রবাসী শাহেদ। মালয়েশিয়ায় তিন বছর কাটিয়ে তিনি যেন এখন অন্য মানুষ—গম্ভীর, দ্রুত সিদ্ধান্তপ্রবণ, এবং কিছুটা আত্মকেন্দ্রিক। দেশে ফিরেই ঘোষণা করলেন বিয়ের তারিখ।
তাড়াহুড়োর মধ্যেই গোটা বাড়ি জেগে উঠলো আলোয়, ব্যস্ততায়, আর অনিশ্চিত উত্তেজনায়।
তবে এই গল্পটা শাহেদের বিয়ের নয়।
এই গল্পটা মিতুর মৃত্যু দিয়ে শুরু।
১. নিথর সেই রাত
মিতু – হাসিখুশি, সদ্য স্নাতক পাস করা মেয়ে। জীবনের প্রতি প্রবল আগ্রহ তার চোখে-মুখে। বিয়ের ঘরোয়া উৎসবে সে ছিল প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু গায়ে হলুদের আগের রাতেই তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় নিজ ঘরে।
ঘরটি তালাবদ্ধ ছিল না।
বিছানায় শুয়ে, চোখ খোলা, ঠোঁট অল্প ফাঁক করা।
ঠিক যেন কিছু বলতে চেয়েও বলা হয়নি।
ডাক্তার ডাকা হয়, verdict সোজা—হার্ট অ্যাটাক।
ময়নাতদন্তের কথা কেউ তোলে না। গ্রামে এসব হয় না।
২. প্রথম দেখার ভয়
দাফনের পরদিন রাতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
কলতলার কাছে আমগাছের নিচে কেউ একজন দাঁড়িয়ে ছিল—সাদা কাপড়ে মোড়া, মাথা নিচু, চুল ঝুলে পড়া।
প্রথমে এক বাচ্চা দেখে। তারপর দু'জন, তিনজন…
চাচা আবিদ নিজে দেখতে যান।
দূর থেকে যেন মনে হয়—এটা মিতু।
কেউ সাহস করে এগোয় না।
কেউ দোয়া পড়ে, কেউ ভয়ে উঠে পড়ে বাড়ির ছাদে।
গ্রামের একজন বয়স্ক লোক বলল, “এইটা স্বাভাবিক না। কবর তার শরীর গ্রহণ করেনি।”
৩. কবরের ভেতর চোখ খোলা
ইমামের নির্দেশে কবর খোঁড়া শুরু হয়।
ঝিরঝিরে বৃষ্টি, মেঘের গর্জন, অন্ধকারে বিদ্যুৎ চমক।
মাটি সরাতেই…
সাদা কাফন চোখে পড়ে।
তিন দিনেও কাপড় প্রায় শুকনো।
আর মৃতদেহের চোখ—একদম খোলা।
আকাশের দিকে তাকিয়ে, এখনো যেন দেখছে কিছু।
ঠোঁট অল্প ফাঁক… সেই একই ভঙ্গি।
চাচা আবিদ বলেন, “এটা পচেনি, এটা এখনো... জেগে আছে।”
৪. অশুদ্ধ গোসল, অশান্ত আত্মা
মেয়েরা পরীক্ষা করে বলে, “পায়ের বুড়ো আঙুলে পানি লাগেনি। নেলপলিশ ছিল।”
ইসলামী রীতিতে এটি শরীরের অশুদ্ধতা।
এমন অবস্থায় কবর আত্মাকে গ্রহণ করে না—এ বিশ্বাসে লাশকে পুনরায় গোসল দেওয়া হয়।
কিন্তু গোসলের শুরুতেই ঘটে বিভীষিকা—
ঠোঁট আবার নড়ে উঠে।
চোখ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসে।
শব্দ হয় না, শুধু নিস্তব্ধতা।
৫. পরের শিকার
রাত আড়াইটায় শেষবার দাফন হয় মিতু।
সবার মুখে ভয়, বুক ধকধক করছে।
পরদিন সকালে…
পুকুরপাড়ে আবিষ্কৃত হল চাচা আবিদের মৃতদেহ।
ভেজা শরীর, কাদায় মুখ থুবড়ে পড়া।
চোখ খোলা, ঠোঁট অল্প ফাঁক—মিতুর মতো।
গুজব ছড়ায়—
“যে তাকে দেখবে, সেই মরবে।”
৬. মিতু একা না!
গ্রামের বয়স্করা একমত—এটা সাধারণ আত্মা নয়।
দূর থেকে ডাকা হয় বিহারের এক তন্ত্রজ্ঞানী পীর।
তিনি আসেন, চোখ বন্ধ করে বসে থাকেন দীর্ঘক্ষণ।
তারপর বলেন,
“এই মেয়ের আত্মা আটকে গেছে। কিন্তু… সে একা নয়।”
“তার সঙ্গে রয়েছে আরও কিছু অন্ধকার, আরও কিছু ‘ছায়া’। এবং সে ফিরে এসেছে সত্য উন্মোচনের জন্য।”
part-2 comment