15/07/2025
ব্যক্তির দ্বীন বনাম উম্মাহর দ্বীন
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে, আমাদের ব্যক্তির দ্বীন ও উম্মাহর দ্বীনের মাঝে পার্থক্য বুঝতে হবে। যখন উম্মাহ তথা সমাজ বা রাষ্ট্রের দ্বীন হুমকির মুখে পড়বে, তখন দ্বীন রক্ষা জীবন রক্ষার ওপর অগ্রাধিকার পাবে। তখন ব্যক্তিকে তার রাষ্ট্র, জনগণ ও উম্মাহর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে। এটাই ইসলামের মূলনীতি।
আর যদি দ্বীন ব্যক্তির সাথে সম্পৃক্ত হয়, তাহলে জীবন রক্ষা দ্বীন রক্ষার ওপর অগ্রাধিকার পাবে। চলুন, একটু আগে উল্লেখ করা আয়াতটিতে আবার চোখ বুলিয়ে নিই। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
مَنۡ كَفَرَ بِاللّٰهِ مِنۡۢ بَعۡدِ اِیۡمَانِهٖۤ اِلَّا مَنۡ اُكۡرِهَ وَ قَلۡبُهٗ مُطۡمَئِنٌّۢ بِالۡاِیۡمَانِ وَ لٰكِنۡ مَّنۡ شَرَحَ بِالۡكُفۡرِ صَدۡرًا فَعَلَیۡهِمۡ غَضَبٌ مِّنَ اللّٰهِ ۚ وَ لَهُمۡ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ ﴿۱۰۶﴾
“কেউ ঈমান আনার পরে আল্লাহর সাথে কুফরি করলে এবং কুফরির জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখলে তার ওপর আপতিত হবে আল্লাহর ক্রোধ, আর তার জন্য রয়েছে মহাশাস্তি; তবে তার জন্য নয়, যাকে কুফরিতে বাধ্য করা হয়েছে, অথচ তার চিত্ত ঈমানে অবিচল ছিল।” সূরা নাহল : ১০৬
আয়াতটি নবিজির মাক্কি জীবনের একটি প্রসিদ্ধ ঘটনার সাথে জড়িত। ঘটনাটি সাহাবি ইয়াসির রা. ও তাঁর পরিবার তথা তাঁর স্ত্রী সুমাইয়া ও তাঁর ছেলে আম্মারকে নিয়ে। তাঁরা ছিলেন নির্যাতিত সাহাবিদের মধ্যে প্রথম সারির। ইয়াসির রা.-এর স্ত্রী সুমাইয়া হলেন ইসলামের প্রথম শহিদ। অত্যধিক নির্যাতনে তিনি শাহাদাতবরণ করেন। তারপর তাঁর স্বামী ইয়াসিরও মক্কার মুশরিকদের নির্যাতনে শাহাদাতবরণ করেন। নিঃসন্দেহে তাঁরা সম্মানের সাথে নিজেদের জীবন দ্বীন রক্ষায় বিলিয়ে দিয়ে গেছেন। কিশোর আম্মার নিজ চোখে তাঁর বাবা-মায়ের ওপর চলা নির্যাতন প্রত্যক্ষ করেছেন। তাঁর চোখের সামনেই তাঁরা শাহাদাতবরণ করেন। বাবা-মায়ের শাহাদাতের পর মক্কার মুশরিকরা তাঁকেও হুমকি-ধমকি দিতে শুরু করে। মক্কার মুশরিকরা আম্মার রা.-কে ততক্ষণ পর্যন্ত নির্যাতন করতে থাকে, যতক্ষণ না তিনি স্বীকার করেন যে, আল্লাহ তাঁর রব নয়। মক্কার মুশরিকরা আম্মার রা.-কে এত পরিমাণ নির্যাতন করে যে, তিনি বলতে বাধ্য হন, মাটির পোকারা তাঁর রব। কিন্তু তারপরও মুশরিকরা আম্মার রা.-কে ছাড়ে না, যতক্ষণ না তিনি মুহাম্মাদ সা.-কে অভিশাপ দেন। অবশেষে তিনি মুশরিকদের নির্যাতনে বাধ্য হয়ে মুহাম্মাদ সা.-কে অভিশাপ দিয়ে তাদের কবল থেকে রক্ষা পান।
এই ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, আম্মার রা.-এর জীবন হুমকির মুখে ছিল। এমতাবস্থায় তিনি দ্বীন রক্ষাকে প্রাধান্য দেবেন, নাকি জীবন রক্ষাকে? আম্মার রা. জীবন রক্ষাকে প্রাধান্য দিয়েছেন আর ইয়াসির ও সুমাইয়া দ্বীন রক্ষাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। আম্মার রা. কাফিরদের নির্যাতনের মুখে কুফরি কথা উচ্চারণ করলেও, অন্তরের দিক থেকে তিনি ছিলেন একজন পূর্ণাঙ্গ মুমিন। তাঁর মতো ঈমানদার খুব কমই আছে। তারপরও নিজের উচ্চারিত কথার জন্য আম্মার রা. মনে মনে ভীষণ কষ্ট অনুভব করতে লাগলেন। তাই তিনি রাসূলের কাছে যান এবং নিজের সাথে ঘটা সবকিছু খুলে বলেন। তিনি রাসূল সা.-এর কাছে কসম করে বলেন, তারা তাঁকে এই এই কথা না বলা পর্যন্ত ছাড়ত না। আম্মার নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত হয়ে কাঁদছিলেন। নবিজি বললেন-আবার যদি তুমি এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হও, তবে একই কাজ করবে। আম্মার রা. প্রকৃতপক্ষে একজন খাঁটি ঈমানদার ছিলেন। রাসূল সা. বলেন-
مُلِئَ عَمَّارٌ إِيْمَانًا إِلٰى مُشَاشِهٖ.
“না, (আম্মার অবিশ্বাসী নয়)। আম্মারের মাথা থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত ঈমানে ভরপুর।” ইবনু মাজাহ : ১৪৭
এখানে দ্বীনের বিষয়টি একজন নির্যাতিত ব্যক্তির সাথে সম্পর্কিত। তাই রাসূল সা. কেবল অনুমতিই দেননি; বরং আম্মারকে আদেশ করেছেন, তিনি যেন নির্যাতনের কবল থেকে নিজের জীবনকে রক্ষা করেন।
ইসলাম পাঠ : মাকাসিদি দৃষ্টিকোণ
ড. তারিক আস সুয়াইদান
অনুবাদ : মু. সাজ্জাদ হোসাইন খাঁন